আমাদের ডিপার্টমেন্টে বেশ কিছু শিক্ষক 'প্রগতিশীল' হবার ভান ধরেন। ইনি তাদের অন্যতম। আজ ক্লাসে এসেই আমাদের এক হিন্দু সহপাঠী বাদলকে দাঁড় করালেন। এরপর সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আজ তোমাদের সামনে একটা ঘোষণা আছে। এরপর বাদলকে ইশারা করতেই বাদল শুরু করল, 'আগামী ২৮ জানুয়ারি জগন্নাথ হলে আয়োজন করা হয়েছে সরস্বতি পূজা, তোমাদের সবার আমন্ত্রণ'।
স্যার এবার ওর থেকে কথা কেড়ে নিলেন। বললেন, 'সরস্বতি পূজায় সকল ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণ করা নৈতিক দায়িত্ব।'
আমার তো আক্কেল গুড়ুম। কী কয় স্যার?
উনি এবার যুক্তিপাত শুরু করলেন। বললেন, 'সরস্বতি হলো বিদ্যার দেবী। বিদ্যার প্রতি ধর্মনির্বিশেষে আমরা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। মুসলমানদেরকেও দেখবে যে, কখনো বইয়ের অসম্মান হলে সেটাকে কড়জোড়ে সালাম করে। আর সরস্বতি তো অন্য কিছু নয়। বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সুতরাং, তোমরা সকলেই পূজায় যাবে এবং পূজা করবে।'
একটু থেমে আবার শুরু করলেন তিনি। 'ছাত্রজীবনে আমার সাথে একজন নেপালি রুমমেট ছিল। সে যখন তার পূজা শুরু করত, তখন আমিও তার পাশে বসে যেতাম, পূজা করতাম।
পূজায় পড়তে হয়, এমন কয়েক ছত্র শাস্ত্রীয় বাক্য আওড়ালেন স্যার।
ছেলেপেলেরা পুরো ক্লাস জুড়ে হা করে তাকিয়ে দেখছিল স্যারকে।
ডিপার্টমেন্টে এই স্যারের জানার দৌড় খুব কম। ক্লাসে এসে প্রতিদিন আটকে যান। ইংরেজি বলতে চেষ্টা করলেই ভুল করেন। সেই তিনিই আজকে স্বরস্বতিবন্দনা শুরু করে প্রগতিশীলতার ভেক ধরছেন। তাকে কখনো এক ওয়াক্ত নামায পড়তে দেখা যায় নি। অথচ পূজা নিয়ে তার সে কি আবেগ!
ক্লাস শেষে ছাত্ররা বের হয়ে ব্যাপারটা নিয়ে কানাঘুষা শুরু করল। এক বেরসিক তো বলেই ফেলল, 'মা-সরস্বতী খুশি হইয়া উহাকে বর দিবেন কি, তাহার জ্ঞানের দৌড় দেখিয়া কোথায় যে তিনি লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না'!