শিরোনাম দেখে পাঠক হয়তোবা ভাবছেন, আমি একটু বেশি-ই উচ্ছ্বসিত। আসলেই আমি আনন্দে, উত্তেজনায় উচ্ছ্বসিত। আজ আমার জীবনের স্মরণীয় দিনগুলোর একটি। কারণ? আজ হিলারী ক্লিনটনের জনসভায় খুব কাছে থেকে তাঁকে দেখার এবং তাঁর কথা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। হাজারো মানুষের সাথে "Stronger Together" স্লোগানে আমার কণ্ঠও গর্জে উঠেছে।
হ্যাঁ পাঠক, আজকের দিনটির স্মৃতি আমার মতো নগণ্য সাধারণ একজন মানুষের জন্যে অবশ্যই বড় একটি ব্যাপার। কারণ বড় মানুষ যাঁরা, তাদেরকে সব সময় আমরা হয় টেলিভিশনের পর্দায় দেখি, নয়তোবা তাঁরা আমাদের প্রতিদিনের খবরের কাগজের শিরোনাম হন। পৃথিবী নামক গ্রহে তাঁদের মহান কীর্তিগুলো তাঁদের কে নিয়ে গিয়েছে সেই উচ্চতায় যেখানে সাধারণ জনগণের কাছে তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। কাজেই এই মহান মহিয়সী নারীকে সামনা সামনি এক ঝলক দেখার সৌভাগ্য আমার জীবনে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা বইকি!
আজ ২৬ অক্টোবর হিলারী ক্লিনটনের জন্মদিন। জন্মদিনে হিলারী তোমাকে শুভেচ্ছা!
আর মাত্র তের দিন বাকী আছে আমেরিকারে প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের। আগামী ৮ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে কে হবেন আমেরিকার ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারী রডহ্যাম ক্লিনটন? নাকি রিপাবলিকান ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। পুরো বিশ্ব আজ তাকিয়ে আছে দেখার জন্যে কে হবেন আমেরিকার সেই ভাবী প্রেসিডেন্ট। আমার খুব কাছের বন্ধু রবার্ট, যে আমেরিকান হয়েও এ দেশের রাজনীতি বা ইলেকশন নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না, সে আমাকে প্রশ্ন করে বসলো, ”ওয়েল, এইসব জনসভা-টনসভায় গিয়ে কি হবে? রাজনীতিবিদরা সব সময় মিথ্যা বলে, তুমি কি জানোনা সেটা? আর সেই ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা কথা শোনার জন্যে তুমি কয়েক ঘন্টা ড্রাইভ করে হিলারী’র জনসভায় যাবে?
উত্তরে আমি রবার্ট কে বললাম, ”আমেরিকার যে এলাকায় বর্তমানে আমি আছি, সেখান থেকে খুব কাছে আজ হিলারী ক্লিনটন আসছেন। তাঁর এই নির্বাচনী জনসভায় যোগদান আমার জন্যে অনেক বড় একটি সুযোগ। আর যদি বল, আমি কি হিলারী ক্লিনটনকে সাপোর্ট করি? তাহলে জেনে রাখো রবার্ট, কানাডায় আমি কেন, আমার চৌদ্দ পুরুষ যেমন বর্তমান প্রাইম মিনিস্টার জাস্টিন ট্রুডো এবং তাঁর দল লিবারেল পার্টিকে সাপোর্ট করে যাবে, তেমনি আমেরিকায় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারী ক্লিনটনের আমি একজন হার্ডকোর সাপোর্টার।
রবার্ট আমাকে থামিয়ে দিয়ে হিলারীর দোষগুলো বলা শুরু করলো। এবার আমি থামিয়ে দিলাম রবার্টকে শুধু একটা কথাই বললাম,”একমাত্র অশিক্ষিত যারা তারাই অসুস্থ মানসিকতার মাথা নষ্ট ব্যাবসায়ী ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে আমেরিকার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। আমার বিশ্বাস তোমার মতো শিক্ষিত সুস্থ বুদ্ধির মানুষ হিলারী রডহ্যাম ক্লিনটনকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় এবং ইতিহাসের সাথে সাক্ষী হতে চায়।” আমার কথায় রবার্ট মৌন সম্মতি প্রকাশ করলো।
আজকে যেখানে হিলারী ক্লিনটনের জনসভায় গিয়েছিলাম:
Curtis Hixon Waterfront Park
600 N ASHLEY Dr Tampa, Florida 33602
হিলারী’র আজকের জনসভায় ফ্লোরিডা'র ডাউন টাউন ট্যাম্পাতে পৌঁছে গিয়েছিলাম দুপুর ১২.৩০ এর মধ্যেই। কিন্তু গাড়ি পার্কিং নিয়ে বিশাল ঝামেলায় পড়লাম। কাছাকাছি কোথাও কোন পার্কিং নেই। অবশেষে প্রায় ১৫ মিনিট দূরে পার্কিং পেলাম। হেঁটে এসে দাঁড়ালাম কড়া রৌদ্রের মাঝে বিশাল লাইন-এ। এরপর কঠিন সিকিউরিটি চেকিং শেষে জনসভার মূল মঞ্চের কাছে প্রবেশ করলাম। হিলারী ক্লিনটন মঞ্চে এলেন দুপুর তিনটা বেজে পঁচিশ মিনিটে। বক্তব্য রাখলেন প্রায় ২০ মিনিট। তিনটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে তিনি মঞ্চ ত্যাগ করেন।
হিলারী রডহ্যাম ক্লিনটনের সংক্ষিপ্ত বায়োগ্রাফী:
১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর আমেরিকার শিকাগো শহরের ইলিনয়েস - এ হিলারী রডহ্যামের জন্ম। বাবা Hugh Rodham এবং মা Dorothy Emma Howell Rodham – এর ঘরে হিলারী ছিলেন বড়। তাঁর আরও দু’টি ভাই আছে - Hugh Jr. (born in 1950) and Anthony (born in 1954).
হিলারী রডহ্যাম
জীবনের শুরুতে যখন যখন রাজনীতির হাতেখড়ি হয়, তখন কিন্তু তিনি ছিলেন রিপাবলিকানপন্থী। এমনকি ১৯৬৪ সালে ব্যারি গোল্ডওয়াটার যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের জন্যে মনোনীত হন, তখন তরুণী হিলারী এই রিপাবলিকান ব্যাক্তির জন্যে প্রচারণা চালান। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে শিকাগোতে †ডমোক্রেটিকপন্থী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে তিনি ডেমোক্রেটিক সমর্থক হন।
হিলারী এবং তাঁর সহপাঠী ক্লিনটন
আমেরিকার বিখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক তিনি। তাঁরই সহপাঠী বিল ক্লিনটনকে বিয়ে করেন ১১ অক্টোবর, ১৯৭৫ সালে। ১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি আমেরিকার ফার্স্ট লেডি ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ছিলেন আমেরিকান সিনেটর। ২০০৭ সালের শুরুতে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন করার কথা ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী ইলেকশনে তিনি বারাক ওবামাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে নিজের নাম তৎকালীন প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন থেকে প্রত্যাহার করে নেন। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর হিলারী ক্লিনটনকে সেক্রেটারী অব স্টেটের পদটি সমর্পণ করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত হিলারী বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র ক্যাবিনেটে ছিলেন। ২০১৫ সালের বসন্তে হিলারী ক্লিনটন পুনরায় প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন করার ঘোষণা দেন। ২০১৬ সালে তিনি আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম বড় কোন দলের (ডেমোক্রেটিক পার্টি) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়ে ইতিহাস রচনা করেন। পুরো বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে তাঁর আর একটি ইতিহাস রচনার অপেক্ষায়।
আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট এবং আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারী রডহ্যাম ক্লিনটনের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক - এই কামনা করি।
আজকে হিলারী ক্লিনটনের জনসভায় আমার তোলা কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি:
হিলারীর দুই সমর্থক প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে
কড়া রোদের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম বেশ অনেকক্ষণ
এরপর এলো সিকিউরিটি চেকিং-এর পালা
ধীরে ধীরে ভেন্যু এর দিকে এগিয়ে গেলাম
আজকের ভেন্যু এর আরও কিছু ছবি:
এরপর হিলারী মঞ্চে এলেন:
এবং তাঁর বক্তব্য রাখলেন:
বক্তব্য শেষে মঞ্চ থেকে নেমে সমর্থকদের সাথে ছবি তুললেন এবং কুশল বিনিময় করলেন। তাঁর বক্তব্য শেষে ফিরে যাবার আগের কিছু মোমেন্টের ছবি:
এরপর বাসায় ফেরা:
সূত্র:
http://www.biography.com/people/hillary-clinton-9251306#synopsis
https://hillaryspeeches.com/scheduled-events/
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:২৯