দীর্ঘ দিনের গবেষণা এবং অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে আজকের এই লেখাটি লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তবে পাঠকদের কাছে অনুরোধ, ভাববেননা যে, এ সকল অভিজ্ঞতা আমার নিজের শুধু; বরং দীর্ঘ দিন ঢাকা শহরে থাকার কারণেই আমার আশে-পাশের মানুষের কল্যাণে এ বিষয়গুলো আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলাটা অধিকতর শ্রেয়।
যারা ঢাকা শহরে থাকেন এবং নতুন নতুন প্রেম করছেন, বা যাদের প্রেমের বয়স একটু পুরনো, প্রায়শ:ই তারা যে সমস্যাটিতে পড়েন, তা হলো, প্রিয় মানুষটির সাথে কোথায় একটু নিরিবিলি বসে কথা বলা যায়?
গিজগিজ করা মানুষের ভিড়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে আসলেই একটু একান্ত, নিভৃতে কথা বলাটা কঠিন। তাই হয়তোবা সেই এক ঘেয়েমি বি.এফ.সি কিংবা কে.এফ.সি-র কৃত্রিমতায় কিংবা সংসদ ভবনের ফুটপাথে বসে অথবা চন্দ্রিমা উদ্যান বা রমনা পার্কের গাছের নিচে বসেই হকার কিংবা ছিনতাইকারীদের উৎপাত সহ্য করেও প্রিয় মানুষটির সাথে সময় কাটান অনেকে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় রিক্সা কিংবা সি.এন.জি -তেই ভাবের আদান-প্রদান হচ্ছে।
আজকের এই লেখাটি মূলত মধ্যবিত্ত পরিবারের নব্য যুগলদেরকেই উৎসর্গ করছি। উচ্চমধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তদের জন্যে করলাম না কারণ,পকেটে টাকা থাকলে 'রূপসী বাংলা'তেও (প্রাক্তন হোটেল শেরাটন) ডেট করাটা ব্যাপার না।
পুরনো প্রেমিক-প্রেমিকারাও (যাদের ডেটিং প্লেস সম্পর্কিত অনেক বেশি অভিজ্ঞতা) একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন আমার 'রেকমেনডেড' স্থানগুলোর সাথে।
ঢাকা শহরের মধ্যে সুবিধাজনক ডেটিং প্লেসসমূহ:
খাবার রেস্টুরেন্ট:
১. আড়ং -এর 'গ্রাস রুট' ক্যাফে
২. ক্যাফে ম্যাংগো (ধানমণ্ডি এবং গুলশান-২)
৩. সাংহাই ইন (মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি ৬ নম্বর রোড)
৪. কজমো লাউঞ্জ (5A Satmasjid Rd, Dhaka, Bangladesh এবং বনানী, ফোন: 9668773)
৫. বেঙ্গল ক্যাফে (বাড়ি ২৭৫/এফ, রোড ২৭, ধানমণ্ডি, ফোন: ৯১১৩১১৫)
৬. ধানমণ্ডি লেক এবং ৮ নম্বর ব্রিজের কাছে ফুচকার দোকান: সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ডুবে থাকা এ এলাকাটিতে পুলিশের চাঁদাবাজি কিংবা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে পারেন যে কোন সময়। আর দল বেঁধে থাকা উঠতি বয়সের ছেলে-পেলে অথবা লোকাল মাস্তানরা আপনার প্রেয়সীকে দেখে কিঞ্চিত টিজ করলেও কিছুই করার নেই।
৭. নান্দুস (ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর রোড এবং গুলশান)
৮. নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা (মিরপুর রোডের উপরে, চন্দ্রিমাউদ্যানের কাছে): এখানে হালকা খাবার-দাবারের পাশাপাশি মাঝে মাঝে লাইভ গান-বাজনাও উপভোগ করতে পারবেন।
৯. মহাখালীর ব্র্যাক এবং ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় 'সিনামন' রেস্টুরেন্টটাও ভালো।
১০. আলিয়স ফ্রঁসেস এর ক্যাফে (সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে, ল্যাব এইড কার্ডিয়াক সেন্টারের বিপরীতে)।
১১. গ্যোটে ইনস্টিটিউট (জার্মান কালচারাল সেন্টার)-এর চারতলার উপর রুফ-টপ ক্যাফে (ধানমণ্ডি মাঠের কাছে)
১২. চিলি ক্যাফে: রামপুরা-বনশ্রীতে যারা থাকেন, তাদের জন্যে এটি উত্তম স্থান বলেই আমার মনে হয়েছে। বেশ একটা আলো-আঁধারি পরিবেশে গল্প বেশ জমে উঠবে। ঠিকানা: বাসা#২, রোড#২, ব্লক-জে, রামপুরা বনশ্রী, ঢাকা-১২১৯, ফোন: ০১৯৭৩০৪৪৫৬২-৩
১২. যারা লালমাটিয়া এলাকায় থাকেন, তাদের জন্যে লালমাটিয়া গার্লস কজেলের কাছে 'কুটুমবাড়ি' ভালো ডেটিংপ্লেস হতে পারে।
১৩. ছবির হাট: শাহবাগে ঢাকা আর্ট কলেজের বিপরীতে। এখানে একটু সাবধান থাকতে হবে, কারণ উঠতি বয়সের খারাপ ছেলেপেলের অভাব নেই এ জায়গায়।
১৪. ওয়ার্ডস এন পেজেস: এখানকার ক্যাফটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। আগে এই ক্যাফেটি গুলশান ওয়ান্ডারল্যাল্ডের বিপরীতে থাকলেও এখন গুলশান ১ এর ৭ নম্বর রোডে স্থানান্তরিত হয়েছে।
১৫. স্মোক মিউজিক ক্যাফে : ১৫ মে, ২০১২ তারিখে বন্ধুর সাথে এই ক্যাফেটাতে গিয়ে এর প্রেমে পড়ে গিয়েছি। চমৎকার পরিবেশ, সাথে অসাধারণ মেন্যু। কাপলদের জন্যে অতীব উত্তম স্থান। ট্রাই করে দেখতে পারেন। বাড়ি ৯৮, রোড ১১, ব্লক সি, বনানী কমার্শিয়াল এলাকা, ঢাকা-১২১৩। ফোন: ০১৭১০ ৯৭৫ ২৫৭, ৯৮৯ ৫২৬৬।
১৬. দ্য বেঞ্চ ক্যাফে: চমৎকার একটা ডেটিংপ্লেস আর আড্ডার জায়গা। ঠিকানা: House: 80 , Road: 23 , Gulshan-1
ফোন: 9893820, 01712259519
১৭. দ্য এনট্রেন্স: ডেটিং-এর জন্যে এখনও কেউ এই রেস্টুরেন্টটির খবর জানেনা। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধু বা বান্ধবীকে নিয়ে ডেট করে আসুন দ্য এনট্রেন্স থেকে। বিজয়সরণীর সামরিক জাদুঘর সংলগ্ন এই রেস্টুরেন্টটি আমার চমৎকার লেগেছে।
আরও রেস্টুরেন্টের খোঁজ পাবার জন্যে ক্লিক করুন
এছাড়াও বেইলী রোড, ধানমণ্ডি, গুলশান এলাকায় রেস্টুরেন্টের অভাব নেই।
দর্শনীয় স্থান:
১. লালবাগের কেল্লা
২. আহসান মঞ্জিল, সদরঘাট (বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকী সবদিন খোলা)
৩. টি.এস.সি এবং শহীদ মিনার চত্ত্বর
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন এবং সায়েন্স ফ্যাকাল্টি চত্ত্বর
৫. ওয়ান্ডারল্যাণ্ড, গুলশান-২
৬. ধলিপাড়া (শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পিছনে)
ঢাকা শহরের আশেপাশের সুবিধাজনক ডেটিং প্লেসসমূহ:
১. সাভার মিলিটারি ফার্ম: আজেবাজে লোকজন এবং কোন প্রকার হকার এখানে নেই। নিশ্চিন্তে প্রিয় মানুষটির সাথে গল্প করুন।
সাবধানতা: সন্ধ্যার আগে আগেই ঢাকায় ফিরে আসুন। তা নাহলে আমিন বাজারের জ্যামে আটকে যেতে পারেন। আর সন্ধ্যার পর ঢাকা-সাভার রাস্তায় মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেল আরোহী হাইজ্যাকারদের কবলে পড়াটা প্রায় নিশ্চিত।
২. নন্দন পার্ক ও ফ্যান্টাসি কিংডম: নিজস্ব বাহনে যেতে পারলে উত্তম। বাস সার্ভিস-ও বেশ ভালো।
৩. পদ্মার পাড়: চমৎকার একটি জায়গা। তবে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা থাকলে জার্নিটা আরামদায়ক হবে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকার বাবুবাজার অথবা বুড়িগঙ্গা ব্রিজ হয়ে মাওয়া ফেরীঘাট
৪. সোনার গাঁ: যাত্রাবাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জের বাসে উঠে মোগড়াপাড়া নেমে রিক্সাযোগে সোনার গাঁ ঘুরতে যান।
৫. আশুলিয়া: বর্ষার সময় নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, ট্যাক্সিক্যাব আরোহী ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে পারেন যে কোন সময়।
৬. জাতীয় স্মৃতি সৌধ, সাভার
৭. ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক, গাজীপুর
৮. জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
৯. কুমিল্লার ময়নামতি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ওয়ার সিমিট্রি
১০. আশুলিয়ার লিটল ইটালি পিজা শপ
১১. জিন্দা ঐকতান পার্ক:
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে উত্তরা হয়ে টঙ্গী ফ্লাই ওভার পার হবার পর মিরের বাজার চৌরাস্তা থেকে ভূলতার দিকে হাতের ডান পার্শ্বে যে রাস্তা গিয়েছে (কাঁচপুর ব্রিজের দিকে), সেটি ধরে ২ টি বড় ব্রিজ পার হয়ে কিছুদূর গিয়েই হাতের বামে ছোট রাস্তা দিয়ে কিছুদূর গেলেই এই ইকো পার্কটির দেখা মিলবে। এটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মধ্যে পড়েছে। ছুটির দিনে ঢাকার উত্তরা থেকে যাওয়া-আসা মিলে গাড়িতে ২ ঘন্টা ধরে রাখতে হবে।
পার্কের ভিতরে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা লাগবে। নিজস্ব গাড়িতে যাওয়াটাই উত্তম, গাড়ি পার্কিং-এর সু-ব্যবস্থা রয়েছে। মাগরিবের আজানের পর পার্কে থাকা নিষেধ। সপ্তাহে প্রতিদিন পার্কটি খোলা থাকে।
১২. আশুলিয়ার তুরাগ ঘাট: এখানে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে ৫০ টাকা ফি দিয়ে গাড়ি পার্কিং করে নৌকায় ঘুরতে বের হন। ইঞ্জিনবোটও নিতে পারেন। ইঞ্জিনবোটের মাঝি প্রতি ঘন্টা ৫০০ টাকা চাইলেও আপনি সহজে তাতে রাজি হবেননা। কড়া ঝাড়ি দিয়ে তাকে ঘন্টা প্রতি ৩০০ টাকায় রাজী করান।
আর একটা কাজ অবশ্য মানুষ করে বলে শুনেছি। নৌকা ভাড়া করে মাঝি নৌকা নিয়ে তুরাগ নদীর একটু ভিতরে গিয়ে পানির ভেতর থেকে উঠে আসা গাছের সাথে নৌকা বেঁধে দেয়। তারপর মাঝিভাই গাছের উপরে উঠে যায়। বাই দিস টাইম নায়ক এবং নায়িকা (অর্থাৎ যারা ডেটিং-এ যায়) তারা নৌকার ভেতরেই তাদের কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেন। তারপর কাজ শেষে মাঝি ভাইকে ডাক দেয়। মাঝি তখন গাছ থেকে নৌকায় নেমে আসে এবং নৌকা বেয়ে ঘাটে যায়। (কসম আল্লাহর, আমি কখনও নিজে এই কাজ করি নাই।)
রিসোর্ট:
১. যমুনা রিসোর্ট: Bangabandhu Setu, Bhuapur, Tangail, Tel: 0923-476031-4, Head Office: Pragati Insurance Bhaban (7th floor) 20-21, Kawran Bazar, Dhaka 1215, Bangladesh, Tel : 8142971-3
২. রাঙামাটি রিসোর্ট: বুকিং-এর জন্য: Progoti RPRCentre, Kawranbazar, Dhaka-1215
৩. পদ্মা রিসোর্ট বুকিং-এর জন্য: 01712-170330, 01752-987688
পদ্মা রিসোর্ট সংক্রান্ত ব্লগার টুংটাং এর একটি ব্লগ
৪. হোটেল উজান ভাটি এণ্ড রিসোর্ট: আসিফ প্লাজা, কলাবাগান, আশুগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া। ফোন: ০১৭১০৭৫৫৪৯০ (ম্যানেজার), ০৮৫২৮-৭৪৬৪০, ০১৭১১৫৬১১৫৮, ০১৭১১০৩০৬৭৯
আরেকটি আইডিয়া:
সদরঘাট থেকে চাঁদপুরগামী লঞ্চ-এ করে চাঁদপুর দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে পারবেন।
ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ টহল পুলিশ এবং খারাপ লোকজনে ভরা যেসকল স্থান (ভেবে-চিন্তে যাওয়াটাই শ্রেয়):
১. মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন
২. মিরপুর চিড়িয়াখানা
৩. বলধা গার্ডেন
৪. রায়েরবাজার বধ্যভূমি
৫. রমনা পার্ক
৬. গুলশান পার্ক
৭. সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (চারুকলার বিপরীতে)
৮. আগার গাঁও আই ডি বি ভবনের পাশে
৯. মিরপুর তামান্না কমপ্লেক্স (মিরপুর মাজার রোড দিয়ে গিয়ে বেড়ী বাঁধে উঠে কিছুদূর আগালেই হাতের বাম পার্শ্বে)
*'ডেটিংপ্লেস' বলতে প্রিয় মানুষটির সাথে বসে শুধু গল্প করার কথা বোঝানো হয়েছে।