সবাই খুব ভাল করেই জানেন, প্রথম আলো হল সুশীল বামদের পত্রিকা যারা একসময় পূঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলত, তারপর সব ‘বাদ’ বাদ দিয়ে এখন ধনবাদের দিকে ধাবিত হয়েছে। যেই বামের রিকশায় চড়ার সামর্থ্য রাখত না তারা এখন প্রথম আলোর ছাতার নিচে ‘মালদার’ হয়ে গেছে।
নীতিহীন-অস্তিত্বহীন বামনেতা, ইসলামবিদ্বেষী সুশীল , কথিত ‘অসাম্প্রদায়িক’ (আসলে ধর্মহীন-কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ অনুসরণ করলে অবাধ মেলামেশা ও লাম্পট্যে অসুবিধা হয়) গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিককর্মীদের ‘হেডকোয়ার্টার’ হল প্রথম আলো।
এদেশের অধিকাংশ মানুষ পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। কিশোর বয়স থেকে আমাদের বাবামা ছেলেমেয়েদের নিজেদের বিষয়ে সচেতন করতে চেষ্টা করেন। মেয়েরা বুঝতে শেখে তাদের মর্যাদা, ছেলেরা বুঝতে শেখে তাদের দায়িত্ব। এদেশে সন্তানরা কখনও মুরুব্বীদের সামনে বিড়ি সিগারেট ফোকার সাহস পায় না, সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকা নিষেধের পর্যায়ে পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থাকে ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক। খুব বেশি সমস্যা না হলে সন্তানরা পিতামাতার সাথেই থাকেন তাদের মৃত্যু পর্যন্ত। ৪৫ বছরের যে কেউ ৭০ বছরের বৃদ্ধ বাবার ধমক খেয়ে মাথা নিচু করে থাকেন। মদ-জুয়া, বিয়েবহির্ভুত মেলামেশা, মেয়েদের ছেলেবন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, মুরুব্বীদের অবাধ্যচরণ আমাদের সমাজে এখনও তেমন ছায়াবিস্তার করতে পারেনি, কারণ ধর্মীয়ভাবে এগুলো কঠোরভাবে নিষেধ আছে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমরা তাই অনেক শান্তিতে আছি।
কিন্তু প্রথম আলোর কথিত প্রগতিশীলদের চুলকানি সেখানেই। পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করতে না পারলে তাদের ‘প্রগতিশীলতা’ হালে পানি পায় না। তাই তারা মেয়েদের পর্দার বিরোধিতা করে, ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে, যারা ধর্ম পালন করে তাদের ‘সেকেলে’ আখ্যা দিয়ে তামাশার বস্তু বানায়। এরা দিনের বেলায় যতটা সুশীল, রাতের আঁধারে ততটাই নোংরা ও হিংস্র। এদের কাছে কেউই নিরাপদ নয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে প্রথম আলোর শিষ্যদের সুবিধা হয়। কপালে বিশাল টিপ দিয়ে অর্ধউলঙ্গ হয়ে নিজে চলা যায় এবং বাকীরা কেন বোরকা পড়ে সেটা নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় করা যায়।
অপরদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ঐসব ধর্মহীন, ইসলামবিদ্বেষীরা কোনঠাসা হয়ে থাকে। কেউ কেউ প্রিয় রাষ্ট্র ভারতে হানিমুনে চলে যান। আর মালমশলা তৈরি করতে থাকেন কিভাবে এদেশটাকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করা যায়।
উপরের ঐ কার্টুনটি প্রথম আলোয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে। আদতে একটা নিরীহ কার্টুন মনে হতে পারে, কিন্তু সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে দেখবেন এর পিছনে প্রথম আলোর একটা অসৎ উদ্দেশ্য আছে। সেটা পরিস্কার ভাষায় হল- আওয়ামী লীগ সরকারকে উস্কানি দেয়া, বিএনপিকে বিভ্রান্ত করা। নির্বাচন অনিশ্চিত- আর নির্বাচন হলেও তাতে বিএনপি অংশ নিবে কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়। কিন্তু প্রথম আলোর শিশির বাবু আগেভাগে খালেদা জিয়াকে বিজয়ী ঘোষণার উদ্দেশ্য হল দুইটি।
এক, আওয়ামী লীগের ক্ষতে লবণের ছিটা দেয়া। এ প্রসঙ্গে একটা বিশ্লেষণ যোগ করতে চাই। আমাদের বন্ধু মহলে কেউ কেউ থাকেন যাদের ভিতর ঈর্ষা কাজ করে। দোস্ত, তুই তো এবার ফার্স্ট হবি- স্কুলজীবনে এই কথাটি কেউ কেউ এমনভাবে বলত যাতে বোঝা যায় ঐ ব্যাপারটিতে সে ঈর্ষান্বিত বোধ করছে। প্রথম আলোর এই কার্টুনটির মূলেও রয়েছে সেই ক্ষোভ, হতাশা ও ঈর্ষার বহিঃপ্রকাশ। কেননা, যে বিএনপিকে ঠেকানোর যত শত শত কৌশল প্রয়োগ করা হল, সেই বিএনপি-ই আবার ক্ষমতায় আসবে- সেটা মেনে নেয়া যায় না। তাই আওয়ামী লীগ সরকারকে উস্কানী দিয়ে কিভাবে বিএনপির উত্থান ঠেকানো যায় সেটাই প্রথম আলোর মূল লক্ষ্য।
দুই, বিএনপিকে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নির্বাচনমুখী করা। এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোর পোষা সাংবাদিক সোহরাব হাসানের (যার প্রতিটি লেখায় বিএনপির বিরুদ্ধে চর্বিতচর্বণ অভিযোগ থাকবেই) একইদিনে প্রকাশিত একটি কলামের উদ্ধৃতি দিচ্ছি-
''....তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বিএনপি মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বললেও তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আগে বিএনপির নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অনড় থাকলেও এখন তাঁরা ন্যূনতম দাবি পূরণ হলেও নির্বাচনে যাবেন বলে আভাস দিচ্ছেন। তাঁরা এখন সংবিধানের ভেতরেও যেকোনো সমঝোতায় আগ্রহী। কেননা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জনমত জরিপ তাদের পক্ষে। সম্প্রতি নিয়েলসনের জরিপে দেখা যায়, ৪৩ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে সমর্থন করছে, যেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাত্র ৩২ ভাগ মানুষ। ২০০৮ সালে যেই তরুণ প্রজন্ম আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে এনেছিল, সেই তরুণ প্রজন্ম এখন বিএনপির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।''
''তাই, যেকোনো অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়াকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে যেতে অন্তত মুখ রক্ষার জন্য হলেও দুটি বিষয়ে নিশ্চয়তা চায় বিএনপি। এক. নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া; দুই. শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যেকোনো ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী বা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করা।''
উদ্ধৃত অংশটুকু পড়ে মনে হতে পারে যেহেতু বিজয় নিশ্চিত, তাই বিএনপি নির্বাচনে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এভাবে কৌশলে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত করে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিএনপি ও দেশের মানুষকে সাবধান থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪