সম্প্রতি জামাতের শীর্ষ তিন নেতাকে গ্রেফতার নিয়ে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হয়ে উঠল।তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া হলো, কিন্তু আশ্চার্যের ব্যাপার জামায়াতের পক্ষ থেকে কোন বাড়তি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা।তা নিয়ে অনেক হিসাব করলেও রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবিদের হিসাব মিলছেনা।মুল ঘটনা দেখেন এইখানে;
মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে কয়েকশ বাড়িঘরে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের বছরের পর বছর বসবাসের খবর মোটামুটি সবারই জানা। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে দলের নেতা-কর্মীদের বাসস্থলকে জামায়াতের নিরাপত্তা বলয় বলেই মনে করা হয়। কিন্তু কী আশ্চর্য! দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল ও নায়েবে আমিরের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ের তিন নেতাকে গ্রেপ্তারের পরেও জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশে দলটির নেতা-কর্মীদের কোনো তৎপরতাই চোখে পড়ছে না।
শুধু কী তাই, জামায়াত-শিবিরের মতো ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন যেখানে মুহূর্তের মধ্যে একযোগে সারাদেশেই হাজার হাজার ক্যাডার রাস্তায় নেমে পড়ে তারা কি-না ঘরে বসে আছে। এটা আসলে কীসের লক্ষণ! এ নিয়ে নানা প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন পর্যায়ে। প্রশ্ন জামায়াতের রাজনৈতিক সহযোগী বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটেও।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, জামায়াতে ইসলামী আসলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দলের বিভিন্নস্তরকে আরো সংগঠিত করার কাজ করছে সন্তর্পণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক আলাপকালে বলেন, যে রাজনৈতিক দলটির কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা আছে আর আছে সংগঠিত কর্মী বাহিনী তারা এত সহজে পিছু হঠে যাবে, এটা তিনি বিশ্বাস করেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের মতো এমন আশঙ্কা বিভিন্ন মহলেই। আসলেই কী ছেড়ে দেবে জামায়াত? এমন প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সখ্য মোটামুটি প্রকাশ্য। আর পাকিস্তানের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক এই দলটির মাখামাখি নিয়ে তো বিতর্কের শেষ নেই। জামায়াতের বিদেশি মুরবি্বরা বিষয়টিকে কীভাবে নিচ্ছে এবং এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শের কারণেই তোড়জোড় না করে খানিকটা চুপ রয়েছে কি-না জামায়াত, এ নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন তাহলো, জামায়াত আসলে চুপ থেকে নতুন কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত রয়েছে। কী হতে পারে সেই কৌশল? জানতে চাইলে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, তিনি নিশ্চিত জামায়াতে ইসলামী চেষ্টা করছে আন্দোলনের সব পর্যায়ে বিএনপিকে সম্পৃক্ত করতে। ওই বিশ্লেষক মনে করেন, জামায়াত সরকারের সঙ্গে একা লড়াই করতে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে। কিন্তু যদি বিএনপিকে সম্পৃক্ত করতে পারে তাহলে লড়াইটা ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষের শক্তি বনাম বিপক্ষ শক্তির মধ্যে। জামায়াতে ইসলামী ওই সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জামায়াতে ইসলামীর ভেতরের খবর হলো, তারা পাল্টা আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে।
জানা গেছে, দলটির সাময়িক নীরবতায় সরকারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা ঢিলেঢালা মনোভাব দেখালে তার সুযোগ নেবে জামায়াত ও শিবিরের ক্যাডাররা। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদীর দল না-কি রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পরিস্থিতি অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করবে এ নিয়েই শঙ্কা সব মহলে।
দেশের ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পরিবহন, আবাসন শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে জামায়াতের বিনিয়োগ রয়েছে। আর ওই বিনিয়োগ থেকে বছরে কমপক্ষে এক হাজার দুইশ কোটি টাকা আয় হয় বলে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা একাধিকবার সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীই বর্তমানে বাংলাদেশে একমাত্র স্বীকৃত রাজনৈতিক দল, যারা তাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মাসিক হারে বেতন-ভাতা দেয়।
এমন একটি দল শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের সম্ভাব্য খারাপ পরিণতির বিষয়টি আঁচ করেও বসে থাকবে এটি মানতে রাজি নন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাদের শঙ্কা কখন কি জানি না হয়। তবে বাস্তবতা হলো, সারাদেশে এখনো পর্যন্ত এক্ষেত্রে জামায়াত-শিবিরের অর্জন কার্যত শূন্য। বিশেষত আশঙ্কা ছিল গতকাল জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঘিরে জামায়াতে ইসলামী তুলকালাম কাণ্ড ঘটাবে এমন আশঙ্কাই ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি। জোট শরিকদের সমর্থনও খুব একটা পাচ্ছে না জামায়াত। কী হবে দলটির? কী করবে তারা? শঙ্কা তবু থেকেই যাচ্ছে।
সুত্র:বাংলাদেশ প্রতিদিন
আপনারা কে কি ভাবছেন, শেয়ার করেন।জামায়াত কি তাহলে ভয় পাইলো, নাকি কোন মতলব আছে?