তাই মাটির ঘরের খোপে রাখা বাতিটা ঝেড়ে মুছে রেখেছিল। একটা পুরনো খবরের কাগজ কাঠের টেবিলটার উপর সাজিয়ে রেখে তার উপর বইগুলো রেখেছিল; একটা 'শরৎ রচনা সমগ্র' আর 'মকসেদুল মু'মেনীন'। বিয়ের বড় সুটকেসের এককোনায় এ বই দুটো নিতান্ত অবহেলায় এসেছিল এ বাড়ীতে।
দুরের বিল থেকে ডুব দিয়ে ডুব দিয়ে কাঁদা তুলেছিল সে। ওই কাঁদার সংগে কুড়া মেশানো হল। এবার মাটির ঘর লেপা হল।
শাশুড়ি মুখ টিপে হাসলেন, সংসারী মেয়ে পাওয়া ভারী ভাগ্যের ব্যাপার !
লাল চুড়ি পরে মেলায় যাওয়ার মত বিয়েটাকে একটা উৎসবই মনে করেছিল সে। দাদিজানের গল্পের মত রঙিন ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার না এলেও একটা সাজানো রিকশায় চড়ে চলে এলো সে অন্যভুবনে।
'বড় হয়ে গেছি' এই অনুভুতি এসে ভর করল মুহুর্তেই। আর পুতুল নিয়ে খেলতে হবে না। আমার নিজের , ঠিক নিজের করেই পাবো একটা পুতুল। ভাবতে না ভাবতেই বিষম বড় হয়ে ফুলে উঠা পেটটার দিকে তাকাল। একটা পুতুল থাকে ওর ভেতরে। সেও খেলে, খায় কিংবা হয়তো গানও করে নিজের মনে।
আপনমনে বিড়-বিড় করে পুতুলটার সংগে কথা বলে মেয়েটা। সে কথার কোন মাথা-মুন্ডু নেই। চুপিচুপি শুনে ফেললে 'পাগল' ভাবতে পারে কেউ।
সে আর মেয়েটি নেই, এখন সে মা।
-----------
হাসপাতালের বিছানায় এখনো মেয়েটার দেহ পড়ে আছে। চশমা পড়া তরুনী চিকিৎসক ভারী গলায় বললেন, 'এতটা দেরি করে ঠিক করেননি আপনারা!'
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৩