somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোর পথে (ছোটগল্প)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

A fish may love a bird, but where would they live? (Drew Barrymore)
-----------------------
কালো শার্টের সংগে জিন্স প্যান্টে ছেলেটাকে বেশ মানিয়েছে। চুলগুলো একটু কোকড়া কোকড়া, আচড়ানোর প্রয়োজন পড়েনা বোধহয়। হাতের ঘড়িটা অনেক দামী মনে হচ্ছে। কয়েকদিন শেভ না করলে যেমন দাড়ি ওঠে এমন খোচা খোচা দাড়ির সংগে ফর্সা চেহারায় সবচেয়ে আকর্ষনীয় বস্তুটা হল ছেলেটার চোখ। কেমন যেন গম্ভীর অথচ প্রানবন্ত। মোবাইলে কার সংগে যেন কথা বলছে, ভারী গলা আর উচ্চারনগুলো স্পষ্ট। মফস্বলের সরকারী কলেজের সদ্য যোগ দেয়া বাংলার প্রভাষকদের মত। কথা বলার সময় কন্ঠের পাশাপাশি পুরো হাত নাড়িয়ে এমনভাবে কথা বলছে যেন হাতটাও কথা বলছে । জানালার পাশের সিটটা তার। এর পাশেই আমার সিট। ঢাকা থেকে সিলেট। এ জার্নি বাই ট্রেন। সকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়তে ছাড়তে ৮ টা বেজে গেল। অবশ্য ৮ টার আগেই ছেড়ে দিলে আমার পক্ষে ট্রেন ধরা সম্ভব হত না। সাজগোজ করতে গিয়ে সময় নষ্ট করেছি, বিষয়টা তা নয়। তিনমাস পরে বাসায় যাচ্ছি , কি নেব আর কি নেব না; এই ভেবে ব্যাগ গোছাতে গিয়েই দেরি হয়ে গেল। একটা বড় ট্রলি ব্যাগের সংগে ছোট্ট একটা শপিং ব্যাগ নিলাম। বড় ব্যাগটা উপরের তাকে তুলে দিয়ে শপিং ব্যাগটা দুজনের মাঝখানে রেখে দিলাম। জানালার পাশে বসতে পারলে ভাল হত। বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন সাত ঘন্টা কেটে যেত টেরই পাওয়া হত না। আমি একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে বললাম,
'এক্সকিউজ মি, আমি কি জানালার পাশে বসতে পারি ?'
ছেলেটা বলল 'না।'
প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেল। নিজের উপর রাগ লাগছে। কেন যে রিকোয়েস্ট করতে গেলাম। আর ছেলেটাও আশ্চর্য রকমের স্টুপিড। একটা মেয়ে একটা রিকোয়েস্ট করেছে , রাখবেনা ভাল কথা। সেটাতো ভদ্র ভাবেও বলা যায়। স্ট্রেইটকাট নো, কোন মানে হয় ? হেডফোনটা বের করলাম। তাহসানের গান শুনব। আমার মেজাজ খারাপ হলে তাহসানের গান শুনলে মন ভালো হয়ে যায়। ইশ ! এত সুন্দর হয় মানুষের কন্ঠ ? আর তাছাড়া ওর সব কিছুই ভাল লাগে আমার, আমার দেখা সবচেয়ে স্মার্ট ছেলে তাহসান। ওর বউ মিথিলার উপর বেশ হিংসা হয়। তাহসানের মত একটা ছেলে শেষ পর্যন্ত এরকম ক্ষ্যাত মেয়েকে বিয়ে করল।
***
গান শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, টেরই পাই নি। ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশের সিটটা ফাকা। পথে কোন স্টেশনে ছেলেটা নেমে পড়েছে। জানালা দিয়ে খুব বাতাস আসছে। বেশ ভালই লাগছে। একটু ক্ষুধা লেগেছে । বড় ব্যাগ থেকে খাবার নামাতে গিয়ে খেয়াল করলাম, ছেলেটা তার ব্যাগ ফেলে গেছে। ছেলেটার ব্যাগে যোগাযোগের কিছু পাওয়া গেল না। একটা বই পাওয়া গেল। বইটাতেও কারো নাম পাওয়া গেল না। সময় কাটানোর জন্য বইটা পড়তে শুরু করলাম ...

...পাশ্চাত্যের এক ইহুদি যুবকের গল্প। যে আবিষ্কার করে আরবের মরু বেদুইনের অদম্য জীবনের বাকে বাকে বয়ে চলা এক চিরন্তন সত্য। এ সত্যের পথ ধরে শুরু হয় তার নতুন পথ ...

"পথের শুরু ...

...আমি আমার মাথা তুলি এবং কুয়ার বৃত্তাকার কাঁধির উর্ধ্বেদেশে দেখতে পাই আসমানের একটি বৃত্তাকার খণ্ড এবং তাঁরা সমূহ। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি নিশ্চল; আর আমার মনে হলো, আমি যেনো দেখতে পাচ্ছি কী করে ওরা ধীরে ধীরে স্থান বদলে চলেছে যাতে করে ওরা পুরো করতে পারে লাখো-কোটি বছরের চক্র যা কখনো শেষ হবার নয়,
এবং তারপর, আমি না চাইলেও আমাকে ভাবতে হয়, বছরের চক্র যা কখনো শেষ হবার নয়,
এবং তারপর, আমি না চাইলে, আমাকে ভাবতে হয়, বছরের যে স্বল্প কটি পাড়ি আমি পার হয়ে এসেছি তার কথা, সেই অস্পষ্ট বছরগুলি যা আমি কাটিয়েছি আমার শৈশবের গৃহের উষ্ণনিরাপত্তায়, অমন একটি শহরে, যার প্রতিটি অলিগলি ছিলো আমার চেনা পরিচিত.. . তারপর বড় বড় সব নগরীতে, উত্তেজনা ও আশা আকাঙ্খায় ভরপুর নগরীতে কাটানো দিনসব, যা শুধু কিশোরই পারে অনুভব করতে… এরপর এক নতুন জগতে, যেখানে মানুষগুলির চেহার-সুরত প্রথমে মনে হয়েছিলো বিদেশী, কিন্তু কালক্রমে নিয়ে
এসেছিলো এক নতুন অন্তরংগতা এবং
স্বগৃহে ফেরার নতুনতরো অনুভূতি। তারপর.. অপরিচিত… আরো অপরিচিত পটভূমিকায়, মানব-মনের মতোই পুরোনো
সব শহর-নগরে দিন যাপন, দিগন্তহীন
স্তেপ অঞ্চলে, পাহাড়-পর্বতে, যার আদিমতা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়
মানব হৃদয়ের বন্য আদিমতার কথা… এবং
মরুভূমির নির্জন উত্তপ্ত একাকীত্বে গড়িয়ে চলা দিনগুলি ধীরে ধীরি জন্ম নেয় নতুন সত্য-সত্য, যা আমার কাচে নুতন .. এবং সেদিন দীর্ঘ আলাপের পরে, হিন্দুকুশ পর্বতের তুষারের মধ্যে এক আফগান বন্ধু বিস্মিত হয়ে বলে উঠেছিলো.. . ‘কিন্তু আপনি তো মুসলিম; আপনি নিজে তা জানেন না, এই যা।’

পথের শেষ ...

‘লাব্বায়েক! আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক।

সমুদ্রের মতো উদ্বেলিত ভিড়ের মধ্য থেকে কোনো একজন তার গোত্রীয় চিৎকার ছেড়ে ঈমানের ধ্বনি তোলেঃ
আমরা তারই ভাই, যে নিজেকে সমর্পণ করে আল্লাহর নিকট, এবং অপর একজন তার সাথে যোগ দেয়-
‘আল্লাহু আকবর,-আল্লাহ মহান।
আর উপজাতিগুলির প্রত্যেকটি দল এই একই ধ্বনি তোলে। এই মুহূর্তে ওরা আর
গোত্রীয় অহমিকায়মাতাল নযদি বেদুঈন নয়ঃ ওরা এমন মানুষ যারা জানে আল্লাহর রহস্য সত্যি-সত্যি অপেক্ষা করছে ওদের জন্য.. … আমাদের জন্য.. . হাজার হাজার ধাবমান উষ্ট্রের পদধ্বনি আর শত শত ঝাণ্ডার পতপত আওয়াজের মধ্যে ওদের চীৎকারগুলো ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় সাফল্যের তুমুল গর্জনেঃ
আল্লাহ আকবর -আল্লাহ মহান।
এ গর্জন প্রবল বিশাল তরংগের আকারে
প্রবাহিত হয় উটের পিঠে ধাবমান হাজার হাজার মানুষের উপর দিয়ে, বিশাল বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপর দিয়ে, পৃথিবীর প্রত্যেকটি কিনার পর্যন্তঃ
আল্লাহ আকবর-আল্লাহ মহান।
এই লোকগুলি ওদের ক্ষুদ্র তুচ্ছ জীবন ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে বৃহৎ আর ওদের ঈমান এখন ওদের ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে সামনের
দিকে, একত্বে, কোনো জরিপ করা হয়নি এমন সব দিগন্তের দিকে.. .
আকাংখা এখন আর ছোট্ট এবং গোপন
থাকবে না; এর জাগরণ হয়েছে, -চোখ
ধাঁধিয়ে দেয়া সাফল্যের সূর্যোদয়!
মানুষ অকাতর এই সাফল্যের দীর্ঘ পদক্ষেপে এগিয়ে চলে, আল্লাহর দেয়া সকল গৌরব ও দীপ্তির সংগে;
তার পদক্ষেপেই তার উল্লাস, তার জ্ঞানই মুক্তি, তার পৃথিবী এমন একটি মণ্ডল যার নেই কোনো সীমা.. .।
উষ্ট্রগুলির গোশতের গন্ধ, তাদের নিঃশ্বাস এবং হ্রেষাধ্বনি, তাদের অগণিত পায়ের আঘাতে ওঠা বজ্রের আওয়াজ, মানুষের চীৎকার, জীনের পেরেক থেকে ঝুলানো রাইফেলের টুং টুং, ধূলিবালি আর ঘাম ভেতরে এক আনন্দময়, সুখকর প্রশান্তি।
আমি আমার জীনের উপর ঘুরে বসি এবং
আমার পেছনে দেখতে পাই হাজার হাজার সাদা সাদা কাপড়-পর উট সওয়ারদের, ঢেউয়ের পর ঢেউয়ে ভেঙে পড়া জটলা পাকানো ভিড় এবং ওদের ছাড়িয়ে সেই সেতুটি, যার উপর দিয়ে আমি এসেছি।
এর শেষপ্রান্ত রয়েছে ঠিক আমার পেছনে আর এর শুরু ইতঃমধ্যে হারিয়ে গেছে দূর ব্যবধানের কুয়াশায়।"

... পড়তে পড়তে একসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলি। লেখকের সংগে সংগে আমিও চলি এক নতুন গন্তব্যে। যেখানে আলোর মশালে বেদুইনদের সাথে চলেছে লক্ষ-কোটি মানুষ। সাদা সেলাই বিহীন কাপড়ে তাদের অন্তরের একই প্রার্থনা মুখে, একই ধ্বনির সুর-
লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক।

**** গল্পের প্লটে ব্যবহৃত বই 'মক্কার পথ'-লেখক -মুহাম্মদ আসাদ (লিওপোল্ড লুইস)।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×