শুধু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারী মুসলিমদের জন্যই নয়, বিশ্বাসী মানুষের জন্য এর আগেও রোজার বিধান দেয়া হয়েছিল। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রমজান মাসের মহাসম্মানিত ও বরকতময় রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করা হয়। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে রমজান মাসে সিয়াম পালন অর্থাৎ রোজা রাখার যে বিধান দেয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হলো-
সূরা বাকারা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(২:১৮৩) অর্থ- হে ঈমানদারেরা! তোমাদের উপর রোজার বিধান দেয়া হয়েছে, যেমন বিধান দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়াবান অর্থাৎ পরহেজগার (আল্লাহভীরু, সচ্চরিত্র, ধর্মনিষ্ঠ, পাপমুক্ত, নীতিবান) হতে পার-
(২:১৮৪) অর্থ- নির্দিষ্ট/ গণনার কয়েকটি দিনের জন্যে। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ্য অথবা সফরে আছে, অন্য সময়ে/ দিনে সেই নির্দিষ্ট সংখ্যা (রোজা) পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি তাদের ক্ষেত্রে (অর্থাৎ যারা অসুস্থ্য অথবা সফরে আছে তাদের মধ্যে) যারা সামর্থ রাখে- একটির মুক্তিপণ হিসেবে একজন মিসকীনকে খাওয়ানোর; সুতরাং যে স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে তখন তা তার জন্য উত্তম হয়, আর রোজা তো তোমাদের (সবার) জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।
(২:১৮৫) অর্থ- রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে অবতীর্ণ করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্যে হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্যে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এর মধ্যে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ্য কিম্বা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে সহজ করতে চান; তোমাদের জন্যে কঠোরতা/ সংকীর্ণতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার জন্য আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
(০২:১৮৭) অর্থ- হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্মপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত হও এবং অনুসন্ধান কর যা আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন, আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিলিত হইও না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।
....................................
সূরা আল আহযাব (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৩৩:৩৫) অর্থ- নিশ্চয় মুসলিম/ আত্মসমর্পণকারী পুরুষ, মুসলিম/ আত্মসমর্পণকারী নারী, ঈমানদার/ বিশ্বাসী পুরুষ, ঈমানদার/ বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযাব্রত পালনকারী পুরুষ, রোযাব্রত পালনকারী নারী, লজ্জাশীলতা হেফাজতকারী পুরুষ ও হেফাজতকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও স্মরণকারী নারী- তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।
...................................
সূরা আদ দুখান (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৪৪:০২) অর্থ- শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।
(৪৪:০৩) অর্থ- আমি এটি নাযিল করেছি (লাইলাতিন মুবা'রাকাতিন) এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।
(৪৪:০৪) অর্থ- এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাবান/ জ্ঞানগর্ভ বিষয় স্থিরীকৃত হয়-
(৪৪:০৫) অর্থ- আমাদের আদেশক্রমে, আমরাই প্রেরণ করে থাকি-
(৪৪:০৬) অর্থ- তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
...................................
সূরা ক্বদর (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৯৭:০১) অর্থ- নিশ্চয় আমি এই কোরআন অবতীর্ণ করেছি (লায়লাতুল কদরে) মহিমান্বিত রজনীতে।
(৯৭:০২) অর্থ- (লায়লাতুল কদর) মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে তুমি কি জান?
(৯৭:০৩) অর্থ-(লায়লাতুল কদর) মহিমান্বিত রজনী হল হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
(৯৭:০৪) অর্থ- এরই মাঝে অবতীর্ণ হয় ফেরেস্তারা ও আত্মা স্বীয় পালনকর্তার অনুমতিক্রমে প্রতিটি নির্দেশ অনুসারে।
(৯৭:০৫) অর্থ-ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত এটি (এ রজনী) শান্তিময়।
………………………………..
এবার রোজা ভঙ্গ হওয়ার ও ক্ষতির মূল কারণ সংক্ষেপে উল্লেখ করছি-
১/ রমজানে রাতের বেলা হালাল খাওয়া ও স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়া হালাল হলেও, দিনের বেলায় সেই খাওয়ার ও যৌনতার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে সংযম ভঙ্গ করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
২/ আর তাকওয়া বিরোধী অর্থাৎ মুত্তাকিদের পথপ্রদর্শনের জন্য মহান আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন তার বিরোধী যে কোন কর্ম করলে রোজার ক্ষতি হয়, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে রোজা রাখার কোন মূল্য থাকেনা।
৩/ কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ও স্বভাবজাত বা প্রকৃতিগত কারণে নাপাক হলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
উপরে কোন বিষয় বাদ গিয়ে থাকলে তা বলতে পারেন এবং উল্লেখিত বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কোন প্রশ্ন থাকলে তা করতে পারেন। আমার জ্ঞান অনুসারে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব- ইনশাল্লাহ।