যৌনতা দমনের জন্য মানুষ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন কোরে থাকে। কিন্তু এই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া কোন ইমানদারের জন্য শোভা পায়না। কারণ তাকওয়া অর্জনের জন্য অবশ্যই তাকে কণ্টকাকীর্ণ পথে অতি সন্তর্পণে পা ফেলতে হয়। মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করাই যেহেতু একজন বিশ্বাসীর মূল লক্ষ্য, তাই আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাঃ) আদর্শকে জেনে ও চিনে প্রতিটি বিষয়ে অতি সন্তর্পণে পথ চলাই যেন আমাদের মূল লক্ষ্য হয়-
সকল অশ্লীল/ লজ্জাজনক কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে আল-কোরআনের সূরা আরাফ এর ৩৩ নং আয়াতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-
(০৭:৩৩) অর্থ- তুমি বলে দাও, আমার পালনকর্তা হারাম করেছেন যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল/ লজ্জাজনক বিষয়সমূহ এবং সকল গোনাহ এবং অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করা, আল্লাহর সাথে অংশীদার করা, যে বিষয়ে তিনি কখনো কোন সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে এমন সব কথা বলা, যার ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞানই নাই।
এই আয়াত অনুসারে যৌনতার সাথে সম্পৃক্ত যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল/ লজ্জাজনক বিষয় ও গোনাহসমূহ, এমনকি যে কোন বিষয়ে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করাও হারাম হয়ে যায়।
আল-কোরআনে শুধুমাত্র বিবাহিত স্ত্রীদের সাথেই যৌনকর্ম অর্থাৎ সহবাস করার স্পষ্ট ইংগিত দেয়া হয়েছে-
সূরা বাকারা-
(০২:১৮৭) অর্থ- রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।
(০২:২২৩) অর্থ- তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য কর্ষণকারী উর্বর শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যখন খুশি তোমাদের কর্ষণকারী উর্বর শস্য ক্ষেত্রে গমন কর। আর তোমাদের নিজেদের জন্য উৎপাদন (অগ্রীম/আগামী দিনের ব্যবস্থা গ্রহণ) কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।
সুতরাং বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে যৌন ক্রিয়া সম্পন্ন করা অশ্লীলতার নামান্তর এবং হারাম। আর অশ্লীলতা সম্পর্কিত অপরাধগুলোর মধ্যে হস্তমৈথুনও অন্তর্ভূক্ত বলে আমি বিশ্বাস করি। যৌনক্ষুধা মটানোর জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমন করা সীমালঙ্ঘনকারী অপরাধ। আর পশুর সাথে সঙ্গম করা শুধু সীমালঙ্ঘনকারী অপরাধই নয় বরং মানুষের জন্য যা খুবই অপমানজনক ও লজ্জাজনকও বটে। এরূপ জঘন্য কর্মে লিপ্তদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু হস্তমৈথুন যেহেতু সাধারণত এককভাবে, কৃত্রিম উপায়ে ও গোপনে হয়ে থাকে, তাই এটি ‘জিনা’ অর্থাৎ ব্যভিচার, ধর্ষন কিংবা সমকামীতার সমপর্যায়ভূক্ত হিসেবে গণ্য হবেনা। এই অপরাধের জন্য যেহেতু পার্থিব শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয় নাই, তাই এর জন্য কোন কঠিন শাস্তি প্রদান করা সঙ্গত নয় বলেই মনে হয়। তবে এটি যে পাপ তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে এবং এরূপ অবৈধ কর্ম বর্জনের জন্য অবশ্যই সাবধান করতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা কঠোরতা অবলম্বন করাও যেতে পারে।
মহান স্রষ্টা কাম-লালসার অনুসরন কোরে কোন প্রকার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন। তাই হস্তমৈথুনের মত অবৈধ কর্মে আসক্ত হয়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা, বরং এ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। মানুষকে খুবই দুর্বলরূপে সৃজন করা হয়েছে। তাই কখনো অজ্ঞতা বা অসাবধানতা বশত কিংবা উপায়হীন অবস্থায় এরূপ অন্যায় হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে এবং এই অপকর্ম থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকতে হবে। তা না হলে যেমন পার্থিব ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি পরকালীন শাস্তির হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যাবেনা। বাকিটা মহান স্রষ্টার ইচ্ছা।
সূরা নিসা-
(৪:২৭) অর্থ- আল্লাহ তোমাদের প্রতি ফিরতে (ক্ষমা করতে) চান; কিন্তু যারা কাম-লালসার অনুসারী, তারা চায় তোমরাও যেন (তাঁর কাছ থেকে) অনেক দূরে বিচ্যুত হয়ে পড়।
সুতরাং কাম-লালসার অনুসরণ কোরে কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করলে পরিনামে স্রষ্টার সাথে দূরত্বই বাড়ে। তাই যে কোন প্রকার অশ্লীল কর্ম থেকে নিজেকে ফিরিয়ে না নেয়া একজন বিশ্বাসীর জন্য শোভা পায়না। কারণ মহান স্রষ্টার পবিত্র সান্নিধ্য লাভের জন্য নিজেকে ভিতরে ও বাহিরে যথাসম্ভব পুত পবিত্র রাখা চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৭