somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানব রচিত হারাম ও হালাল নির্ণয়ের ফর্মুলার গোমর ফাস-

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হালাল ও হারাম মহান আল্লাহতায়ালার কিতাব অনুসারে সুনির্ধারিত। সরাসরি হালাল ও হারাম সম্পর্কে কম-বেশি করার এখতিয়ার কাউকেই দেয়া হয় নাই। তবে আল-কোরআনের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই রাসূলকে (সাঃ) ভাল ও মন্দ বিষয় নির্ধারণের কিছুটা এথতিয়ার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে মানব রচিত কোন পদ্ধতি বা ফর্মুলায় ফেলে আল্লাহর নির্ধারিত সীমাকে উপেক্ষা কিংবা অতিক্রম কোরে কম-বেশি করার কোন স্কোপ নেই।
.......................................
অথচ ইসলাম সম্পর্কে অভিজ্ঞ একজন বলেছেন-
//কোন ব্যাপারে বৈধ বা অবৈধ পন্থা ঘোষণা করার অর্থাৎ হালাল ও হারাম নির্ণয়ের ৩টি পদ্ধতি আছে-
১. প্রতিটি বৈধ ও অবৈধ পন্থার নাম ঘোষণা করা।
২. বৈধ পন্থা/পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করে বাকি সব পন্থাকে অবৈধ ঘোষণা করা।
৩. অবৈধ পন্থা/পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করে বাকি সব পন্থাকে বৈধ ঘোষণা করা।

যদি ২য় পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, সেক্ষেত্রে অবৈধ হওয়ার জন্য কোন পন্থার নাম উল্লেখের প্রয়োজন হয় না; বরং সেই পন্থার নাম উল্লেখ না করাই পন্থাটির অবৈধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
যেমন ধরুন ফজরের সালাত দুই রাকাত ফরজ যেটা কুরআনের মধ্যে উল্লেখ নেই কিন্তু রাসুল(সঃ) নিজে পড়েছেন এবং শিখিয়েছেন । এবং কোন হাদিসে এরকম পাওয়া যায়না যেখানে রাসুল(সঃ) নিষেধ করেছেন যে ফজরের ফরজ সালাত তিন, চার, পাঁচ বা ছয় রাকাত পড়াই যাবে না । যেহেতু নিষেধ নেই তাহলে কি আমরা দুই রাকাতের পাশাপাশি তিন, চার বা পাঁচ রাকাতও পড়তে পারব? অবশ্যই না । কারন এখানে রাসুলের(সঃ) দুই রাকাত পড়ার মাধ্যমে অন্য যে কোন রাকাত নিসিদ্ধ হয়ে গেছে ।

যারা বুঝার বুঝে নিন এবং কোন নির্দিষ্ট পন্থার নাম উল্লেখ করা না থাকলেই সেটার অবৈধতা অস্পষ্ট হয়ে যায় এ ধরণের অযৌক্তিক দাবির অন্তঃসারশূন্যতা উপলদ্ধি করে নিন।//
…………………………………………
এ বিষয়ে আমি আমার মতামত তুলে ধরছি-

উল্লেখিত ১ম পন্থা-
১. প্রতিটি বৈধ ও অবৈধ পন্থার নাম ঘোষণা করা।
অর্থাৎ ১ম পন্থা = বৈধ পন্থার নাম ঘোষণা করা + অবৈধ পন্থার নাম ঘোষণা করা।

উল্লেখিত ২য় পন্থা-
২. বৈধ পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করে বাকি সব পন্থাকে অবৈধ ঘোষণা করা।
বৈধ হিসেবে পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করা হলেই কি সেগুলো বৈধ পন্থা/ পন্থাসমূহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে যায় না?
সুতরাং এ ক্ষেত্রে ২য় পন্থা = বৈধ হিসেবে পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করা অর্থাৎ ঘোষনা করা + বাকি সব পন্থাকে অবৈধ ঘোষণা করা।

আবার বলা হলো-
[যদি ২য় পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, সেক্ষেত্রে অবৈধ হওয়ার জন্য কোন পন্থার নাম উল্লেখের প্রয়োজন হয় না; বরং সেই পন্থার নাম উল্লেখ না করাই পন্থাটির অবৈধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।]

তাহলে তাদের কথা মতে-
২য় পন্থা = বৈধ হিসেবে পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করা অর্থাৎ ঘোষনা করা + বাকি সব পন্থাকে অবৈধ ঘোষণা না করা।
তাহলে আপনাদের উদ্ভাবিত ২য় পন্থা এবং আপনার বয়ান কি একই রকম হলো?
আরও খুলে বলার প্রয়োজন আছে কি?

উল্লেখিত ৩য় পন্থা-
৩. অবৈধ পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করে বাকি সব পন্থাকে বৈধ ঘোষণা করা।
অবৈধ হিসেবে পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করা হলেই কি সেগুলো অবৈধ পন্থা/ পন্থাসমূহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে যায় না?
অর্থাৎ ৩য় পন্থা = অবৈধ হিসেবে পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করা অর্থাৎ ঘোষণা করা + বাকি সব পন্থাকে বৈধ ঘোষণা করা।

আসলে সবগুলো পন্থাই ঘুরেফিরে একই। পন্থা/ পন্থাসমূহের বয়ান করতে গিয়েই যদি এই অবস্থা হয়!! তাহলে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যার কি হাল হবে ভাই?

উল্লেখিত বৈধ বা অবৈধ পন্থা ঘোষণা করার ৩টি পদ্ধতির উদ্ভাবক যিনিই হন না কেন, এই ফর্মুলার মধ্যে বেধে সব বিষয়ের হালাল ও হারাম নির্ণয়ের ফয়সালা করা সঠিক নাও হতে পারে। কারণ বেসিক্যালি ১, ২ ও ৩ এর মধ্যে তেমন কোন তফাৎ নেই।

সালাতের বিষয়ে যে উদ্হরণটি দেয়া হয়েছে- সেটি এই পদ্ধতির কোনটির মধ্যে পড়ে কি?

এক্ষেত্রে কি ২য় পদ্ধতির কথাই বলা হয়েছে অর্থাৎ "বৈধ পন্থা/ পন্থাসমূহের নাম উল্লেখ করে বাকি সব পন্থাকে অবৈধ ঘোষণা করা"। যেমন ফজরের সালাতে যে দুই রাকাত ফরজ অর্থাৎ অবশ্য পালনীয় বা মিনিমাম করণীয়- তা আমরা রাসূলের (সাঃ) ইবাদত পদ্ধতি থেকে জানতে পারি। এক্ষেত্রে কিন্তু ৩, ৪ ,৫ রাকাত পড়া যাবেই না এ ধরনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন ঘোষণা/ উল্লেখ কোন হাদিছে নেই, আর কুরআনে তো নেই-ই। যেহেতু আমাদের কাছে এখনও হাদিছ গ্রন্থসমূহ মজুদ আছে, তাই এই ২ রাকাত ফরজ সালাতকে আমরা একটি মানদণ্ড হিসেবে মানতে পারছি। কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন, তাই এটি চিরন্তন। কিন্তু যদি কখনো হাদিছ গ্রন্থগুলো নষ্ট কোরে ফেলা হয় বা নষ্ট হয়ে যায়, তখন কি হবে? তখন যদি হাদিছ বিশারদ কোন ব্যক্তি না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে যে যতটা জানেন তাদেরকে সেভাবে অনুসরণ করা ছাড়া কি কোন উপায় থাকবে? সেক্ষেত্রে হাদিছের অবর্তমানে ফজরের সালাতই শুধু নয়, পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা মেনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা কি মুসলিমদের জন্য একেবারেই সম্ভব নয় বলে আপনি বিশ্বাস করেন? যদি কেউ এমনটি বিশ্বাস করেন- তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তার ইমানে ঘাটতি আছে।

প্রাসঙ্গিক ভাবেই আমি এখানে আরেকটি উদাহরণ টানতে চাচ্ছি। এটিকে আপনারা আবার অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দেবার কৌশল ভাবনে না যেন। যেমন কোন্ কোন্ ধরনের খাদ্য মানুষের জন্য উপযোগী আল-কোরআনে তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেইসাথে স্পষ্টভাবে হারাম হিসেবে সরাসরি কয়েকটি জিনিসের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

সূরা আনয়াম (০৬: ১৪৫)
অর্থ- আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে তার মধ্যে এমন কোন জিনিস তো আমি দেখছিনা যা একজন ভোজনকারী মানুষের জন্য হারাম করা হয়েছে- যা সে খেয়ে থাকে; কিন্তু যা মৃত (মরে পড়ে আছে) বা প্রবাহমান রক্ত অথবা শূকরের মাংস - কেননা এ সব অপবিত্র - অথবা যা অবৈধ আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নেওয়ার কারণে, তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালংঘন না করে তা গ্রহণে বাধ্য হলে তোমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

এখানে প্রথমত জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ পৃথিবীর মানুষ খাদ্য হিসেবে কি কি খেয়ে থাকে সর্বজ্ঞ আল্লাহতায়ালা তা জানেন এবং সেই খাদ্যের মধ্যে কয়েকটি জিনিস বাদে আর কোন কিছুকেই ওহীর মাধ্যমে অর্থাৎ আল-কোরআনে সরাসরি হারাম বলা হয় নাই।

এ সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াতগুলো পর্যালোচান করলে দেখা যায়-
(০২: ১৭৩, ২৫৯), (১৬: ০৫, ১৪), (২২: ৩৬, ৩৭), (০৫: ০৩, ০৪), (০৬: ১১৮, ১১৯, ১২১,)

আল-কোরআনে চতুষ্পদ অর্থাৎ চার পায়ে ভর দিয়ে চলা গবাদি অর্থাৎ নিরীহ প্রকৃতির তৃণভোজী পশুর মাংস ও দুধ খাওয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সামুদ্রিক জীব তথা জলচর প্রাণীর (পানি ছাড়া বাঁচতে পারেনা) ব্যাপারে তো অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এই ধরনের খাদ্য মানুষের জন্য উত্তম। আর অন্যান্য যে ধরনের প্রাণীর (যেমন হিংস্র ও্ নখর বিশিষ্ট জলচর, স্থলচর ও উভচর জন্তু) মাংস আমাদের জন্য উপযোগী নয়, সরাসরি খাদ্য হিসেবে সেগুলোর কথা যেমন উল্লেখ করা হয় নাই, তেমনি আবার হারাম হিসেবে সরাসরি নিষিদ্ধ করাও হয় নাই। তাছাড়া প্রাণী জগতের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থেও হয়ত এগুলো খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয় নাই। আসল খবর মহান আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। কিন্তু এগুলোর কথা উল্লেখ করা হয় নাই বলেই কি সরাসরি হারাম সাব্যস্ত করা ঠিক হবে? যে ধরণের খাদ্যগুলো সরাসরি হারাম সাব্যস্ত করা হয় নাই, সেগুলোকে সরাসরি হারাম না ভেবে বরং যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এক্ষেত্রে কোনটা কতটুকু এড়িয়ে চলা আমাদের জন্য উত্তম, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সহী হাদিছের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তাহলে অন্তত পার্থিব ক্ষতি বা অনিষ্টের হাতে থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে।

কোন প্রাণীর মৃত্যু হলে অর্থাৎ স্থলজ, উভচর কিংবা জলজ প্রাণী- স্থলে কিংবা জলের মধ্যে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে তা এবং কোন প্রাণীর দেহ হতে বেরিয়ে আসা তাজা রক্ত এবং শূকরের মাংস- সরাসরি অপরিচ্ছন্ন/ অপবিত্র বলা হয়েছে অর্থাৎ এগুলো মানুষের জন্য খাদ্য হিসেবে একদমই উপযোগী নয়। তাছাড়া আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নেওয়ার কারণে বা উৎসর্গ করার কারণেও কোন হালাল খাদ্য খাওয়াও বিশ্বাসীদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। মোটকথা আল্লাহর গ্রন্থে হারাম/ নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখিত সকল জিনিস খাওয়া বা গ্রহণ করা থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সরাসরি হারাম হিসেবে ঘোষিত কোন খাদ্য গ্রহণ করলে ইহকালে এর কোন ক্ষতি উপলব্ধি করা যাক বা না যাক, এর সুদূরপ্রসারি এবং পরকালীন ক্ষতির হাতে থেকে যে রেহাই মিলবে না সেই বিশ্বাস অবশ্যই রাখতে হবে।

কিন্তু নিরুপায় অবস্থার অর্থাৎ জীবন-মরণ সমস্যার কথা ভিন্ন বলা হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে মৃত বা নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখিত অন্যান্য জিনিস খাওয়া বা গ্রহণ করার ব্যাপারেও সাময়িকভাবে শিথিলতা রয়েছে। তবে হারাম খাদ্য সখের বশে অবাধ্য হয়ে খাওয়া হচ্ছে কিনা, নাকি অন্যান্য অপশন না থাকার কারণে নিরুপায় অবস্থার বাধ্য হয়েই সাময়িকভাবে গ্রহণ করতে হচ্ছে- তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। মহান স্রষ্টা সর্বজ্ঞ এবং তিনি তাঁর সৃষ্টিকে অযথা কষ্ট দিতে চান না। নিঃসন্দেহে একমাত্র তিনিই সূক্ষ্ম বিচারের ক্ষমতা রাখেন।

গৃহপালিত গাধার মাংস খাওয়াকে কেউ কেউ হাদিছের মাধ্যমে চিরদিনের জন্য হারাম সাব্যস্ত করে থাকেন-
১) মূসাদ্দাদ (রহঃ) বারাআ ও ইবন আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। (সহীহ বুখারি অধ্যায়ঃ যবাহ করা, শিকার করা হাদিস নাম্বারঃ ৫১২৮)

২) মুহাম্মাদ (রহঃ) সালামা ইবন আফওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে খায়বার অভিযানে বের হলাম। সেনাবাহিনীর এক ব্যাক্তি বললেনঃ ওহে আমির! যদি আপনি আপনার ছোট ছোট কবিতা থেকে কিছুটা আমাদের শোনাতেন? তখন তিনি সাওয়ারী থেকে নেমে হুদী গাইতে গাইতে বাহন হাকিয়ে নিতে শুরু করলেন। তাতে উল্লেখ করলেনঃ আল্লাহ তাআলা না হলে আমরা হেদায়েত পেতাম না। (রাবী বলেন) এ ছাড়া আরও কিছু কবিতা তিনি আবৃতি করলেন, যা আমি স্বরন রাখতে পরিনি। তখন রাসুলুলাহ জিজ্ঞাসা করলেন: এ উট চালক লোকটি কে? সাথীরা বললেনঃ উনি আমির ইবন আকওয়া। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহম করুন। তখন দলের একজন বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি তার দু’আর সাথে আমাদেরকেও শামিল করলে ভাল হতো না? এরপর যখন মুজাহিদগন কাতার বন্ধী হয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করলেন। এ সময় আমির (রাঃ) তাঁর নিজের তরবারীর অগ্রভাগের আঘাতে আহত হলেন এবং এ আঘাতের দরুন তিনি মারা গেলেন। এদিন লোকেরা সন্ধ্যার পর (পাকের জন্য) বিচ্ছিন্নভাবে অনেক আগুন জ্বালালেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ সব আগুন কিসের? এসব আগুন দিয়ে তোমরা কি জাল দিচ্ছ। তারা বললেন আমরা গৃহপালিত গাধার মাংস জাল দিচ্ছি। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ডেগগুলোর মধ্যে যা আছে, তা সব-ফেলে দাও এবং ভেগগুলোও ভেংগে ফেল। এক ব্যাক্তি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! ডেগগুলোর মধ্যে যা আছে তা ফেলে দিলে এবং পাত্রগুলো ধূয়ে নিলে চলবে না? তিনি বললেনঃ তবে তাই কর। (গ্রন্থঃ সহীহ বুখারি অধ্যায়ঃ দু’আ হাদিস নাম্বারঃ ৫৮৯২)

৩) আবূ আসিম যাহহাক ইবন মাখলাদ (রহঃ) সালামা ইবন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃ) খায়বার যুদ্ধে আগুন প্রজ্বলিত দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এ আগুন কেন জ্বালানো হচ্ছে? সাহাবীগণ বললেন, গৃহপালিত গাধার গোশত রান্না করার জন্য। তিনি বললেন, পাত্রটি ভেঙ্গে দাও এবং গোশত ফেলে দাও। তাঁরা বললেন, আমরা গোশত ফেলে দিয়ে পাত্রটি ধুয়ে নিব কি? তিনি বললেন, ধুয়ে নাও। আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেন, ইবন আবূ উয়াইস বললেন যে, শব্দটি আলিফ ও নুনে যবর হবে। (সহীহ বুখারি অধ্যায়ঃ যুলম ও কিসাস হাদিস নাম্বারঃ ২৩১৫)
………………………………….
*যেহেতু হাদিছে গাধার মাংস খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে, তাই মুসলিম হিসেবে তা এড়িয়ে চলাই উত্তম। কিন্তু তাই বলে কি চিরকালের জন্য সরাসরি হারাম সাব্যস্ত করা উচিত?
*রাসূল (সাঃ) কি গাধার মাংস ভক্ষণ চিরকালের জন্য হারাম সাব্যস্ত করেছিলেন, নাকি তিনি একটি বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু সেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই গাধার মাংস, বিশেষ কোরে গৃহপালিত গাধার মাংস খাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা রেস্ট্রিকশন করেছিলেন?
*যদি শুধুমাত্র হাদিছের উপরে ভর কোরে গাধার মাংস ভক্ষণ চিরকালের জন্য হারাম সাব্যস্ত করা হয়- তাহলে তা কুরআনের সার্বজনীন বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় না কি?

কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। শূকরের মাংস খাওয়া হারাম এবং এর পার্থিব বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ কোরে শূকরের মাধ্যমে প্রায় ৭০ টির মত রোগ ছড়ায় এবং এর চর্বি মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাছাড়া সখের বশে ফুরতি কোরে এই হারাম খাদ্যে উদরপূর্তি করলে পরকালীন জবাবদিহিতার হাত থেকে রক্ষা নেই। এটাই একজন ইমানদারের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

কিন্তু গাধার মাংস খেলে পার্থিব বিশেষ কোন ক্ষতি হয় কিনা তা এখনও জানা যায় নাই। বরং গবেষণায় দেখা গেছে যে, অন্যান্য হালাল প্রাণীর মাংসের মত গাধার মাংসও সম গুণাগুণ সম্পন্ন, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং খুব একটা ক্ষতিকর নয়। বিশেস কোরে এটি আল-কোরআনে উল্লেখিত আন'আম অর্থাৎ চতুষ্পদ গবাদি ও তৃণভোজী প্রাণীর অন্তর্ভূক্ত।

কাজেই একটি বিশেষ সময়ে ও বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গাধার মাংস খেতে বারন করা হয়েছিল, নাকি মানব রচিত ফর্মুলায় ফেলে এটি হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে অর্থাৎ চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে- বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা নুতন কোরে ভাববার দাবি রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×