যারা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানচর্চা ও লেখালেখি করেন তাদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। আশাকরি অংশ নেবেন-
আলে-কোরআন-
সূরা আল বাক্বারাহ (২:১৯৭) নং আয়াতে বলা হয়েছে-
১/ অর্থ- (হজ্জের মাসসমূহ (একান্ত) সুপরিচিত। সে সময়গুলোর মধ্যে যে ব্যক্তি হজ (আদায়) করার মনস্থ করবে (সে যেন জেনে রাখে), হজের ভেতর কোন যৌন সম্ভোগ নেই, নেই কোন অশ্লীল গালিগালাজ ও ঝগড়াঝাটি, আর যতো ভাল কাজ তোমরা আদায় করো আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তা জানেন, (হজের নিয়ত করলে) এর জন্য তোমরা পাথেয় যোগাড় করে নেবে, যদিও আল্লাহর ভয়টাই সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়, অতএব হে বুদ্ধিমান মানুষরা, তোমরা আমাকেই ভয় করো।
২/ অর্থ- হজ্জ্বের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোন পাপ নেই।)
------------------------------
(২:১৯৭) নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হলো যে, হজ্জের মাসসমূহ (একান্ত) সুপরিচিত। সে সময়গুলোর মধ্যে যে ব্যক্তি হজ (আদায়) করার মনস্থ করবে অর্থাৎ শুধু যুল-হ্জ্জ মাসেই নয়, বরং কয়েকটি সুপরিচিত ও পবিত্র মাসের যে কোন সময় একজন মুসলিম যদি হজ করার মনস্থ করেন তাহলেই তিনি তার সেই ব্রত পালন করার অধিকার রাখেন। আল্লাহর স্মরণে আল-কোরআনে উল্লেখিত ফরজ কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য যে কয়েকটি দিনের প্রয়োজন হয় সেই নির্ধারিত দিনের মধ্যেই হজ সমাধা করার কথাই তো মহান স্রষ্টার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
…………………………………..
সূরা আল বাক্বারাহ
[(০২:১৮৯) অর্থ- তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে /'আল-আহিল্লাতি'/ নতুন চাঁদের 'বর্ধিঞ্চু দশাগুলোর' বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার মধ্যে কোন নেকী বা কল্যাণ নেই। অবশ্য নেকী হল আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে। আর তোমরা ঘরে প্রবেশ কর দরজা দিয়ে এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা নিজেদের বাসনায় কৃতকার্য হতে পার।]
সূরা আত তাওবাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
[(০৯:৩৬) অর্থ- নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত/পবিত্র। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন।]
…………………………………….
(০৯:৩৬) নং আয়াতে আরবী শব্দ “আরবা’আতুন” ব্যবহৃত হয়েছে। যা পর পর চারটি মাসকেই নির্দেশ করে।
এই একই শব্দ (০২:২২৬, ২৩৪) নং আয়াতেও ব্যবহার করা হয়েছে-
২ নং সূরা আল বাক্বারাহ
[(০২:২২৬) অর্থ- যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবেনা বলে কসম খেয়ে বসে, তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে। অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ করে নেয়, তবে আল্লাহ ক্ষামাকারী দয়ালু।
(০২:২৩৪) অর্থ- এবং যারা মৃত্যুবরণ করে তোমাদের মধ্য হতে এবং (যারা) ফেলে রেখে চলে যায় নিজেদের স্ত্রীদেরকে, তখন তাদের (স্ত্রীদের) উচিত হলো নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।]
……………………………………
(২:১৮৯) নং আয়াতে বলা হলো এই হজের মাস শুরু হবে যুল-হজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকেই। যেহেতু জীবনে একবার ফরজ হজ করা বাধ্যতামূলক এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেও পবিত্র মাসসমূহের প্রথম মাসে অর্থাৎ ৯ থেকে ১২ই যুল-হজ্জ একবারই ফরজ হজ করেছিলেন। কাজেই আল-কোরআনের নির্দেশ অনুসারে ও রাসূল (সাঃ) এর শেখানো নিয়ম মেনে চারটি পবিত্র (যুল-হজ্জ, মহরম, সফর ও রবিউল আউয়াল) মাসের যেকোন সময় পৃথিবীর সকল মুসলিম ফরজ হজ করার অধিকার রাখেন।
যদি “আরবা’আতুন” এর দ্বারা ক্রমিক চার মাস না বুঝিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বোঝাত, তাহলে (০২:২২৬, ২৩৪) নং আয়াতের ক্ষেত্রে ইদ্দতের বিধান পালন করা কি সম্ভব হত?
সুতরাং এর দ্বারা যে পর পর চারটি মাসকে বোঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করার সুযোগ আছে কি? এভাবেই মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর কিতাবে সত্যাগ্রহীদের জন্য সত্যকে চেনার ও বিশ্বাস করার মত সকল উদারহরণ পেশ করেন।
কিন্তু হায়! রাজনীতির নোংরা চালে কবে থেকে যে মুসলিমদের সেই অধিকার হরণ করা শুরু হলো এবং লক্ষ কোটি মুসলিমের জন্য ফরজ হজ পালনের সময়কে ১২টি মাসের মধ্যকার একটি মাসের কেবলমাত্র চার/পাঁচটি দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কোরে দেয়া হলো- তা কি খতিয়ে দেখার কোন প্রয়োজনই নেই? শুধুমাত্র জিল-হজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখেই হজ করা যাবে, কিন্তু হজের অন্যান্য মাসে হজ করা যাবেই না- এমন কোন নির্দেশ কি সরাসরি রাসূল (সাঃ) দিয়েছেন অর্থাৎ এরূপ কোন সহী হাদিছ আছে কি?
……………………………………
সূরা আত তাওবাহ
[(০৯:৩৭) অর্থ- এই মাস পিছিয়ে দেয়ার কাজ কেবল অবিশ্বাসের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে কাফেরগণ গোমরাহীতে পতিত হয়। এরা হালাল করে নেয় একে এক বছর এবং হারাম করে নেয় অন্য বছর, যাতে তারা গণনা পূর্ণ করে নেয় আল্লাহর পবিত্র মাসগুলোর। অতঃপর হালাল করে নেয় আল্লাহর হারামকৃত মাসগুলোকে। তাদের মন্দকাজগুলো তাদের জন্যে শোভনীয় করে দেয়া হল। আর আল্লাহ অবিথ্বাসী সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।]
……………………………………
সম্মানিত/ পবিত্র মসজিদ কাবা তাওয়াফ করার জন্য মহান স্রষ্টা স্বয়ং চারটি সম্মানিত/ পবিত্র মাসকে নির্ধারণ কোরে দিয়েছেন। এ সময় এহরাম পালনরত অবস্থায় থাকার কারণে কোন অশোভন কাজ করা, আত্মরক্ষা করা ছাড়া কোউকে আক্রমণ বা ঝাগড়া-বিবাদ করা জায়েজ নয়। তবে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলে সমবেতভাবে যুদ্ধ করার পারমিশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন্ অজ্ঞাত কারণে যে তা পিছিয়ে দেয়া হলো তা বোধগম্য নয়। আরবী বারতম ‘যুল-হজ্জ’ মাসের কেবলমাত্র ৮ থেকে ১২ এই পাঁচটি দিনকে হজের জন্য নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে। এর পরবর্তী দিনগুলো ও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ‘মহরম, সফর ও রবিউল আউয়াল’ মাসকে পিছিয়ে দিয়ে এর স্থলে সপ্তম, দশম ও এগারতম ‘রজব, সাওয়াল ও যুল-ক্বাদ’ মাসকে শুধুামাত্র হজের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যে আমাদের অবিশ্বাসের মাত্রাই বৃদ্ধি পেয়েছে- তা বুঝেও কি নিশ্চুপ থাকাটা আমাদের জন্য শোভা পায়?
চারটি পবিত্র মাসে ফরজ হজ পালনের অধিকার হরণ করা হয়েছে। পবিত্র মাসসমূহের ব্যাপারেও হেরফের করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে যে কোন সময় নিয়ত কোরে পবিত্র কাবায় ফরজ হজ পালন করার অধিকার যে মহান স্রষ্টা আমাদেরকে দিয়েছেন- অন্তত এই বিশ্বাসটা অন্তরে ধারন করা ও বলা মুসলিমদের জন্য জরুরী নয় কি?
আমাদের সকল ভুলত্রুটি যেন পরম করুণাময় ক্ষমা করেন এবং সত্যকে জানার ও মানার মধ্য দিয়ে সরল ও সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করেন-
……………………………………..
মন্তব্য ও প্রশ্ন
....................
১) এক ভাই মন্তব্য করেছেন-
আপনার প্রশ্নগুলোর ছোট্ট করে একটি জবাব শুনে নিন। মহানবী সা. জীবনে মাত্র একবার হজ্জ করেছেন। হজ্জ করর সময় বলেছিলেন, ‘আমি যেভাবে কাজ করছি তোমরা সেগুলো দেখে দেখে করো’। পরের বছর হজ্জের আগেই নবীজী সা. এর ওফাত হয়। তিনি আর হজ্জ করতে পারেননি। এরপর পৃথিবীতে কেবল নবীজীর সহচরবর্গ তথা সাহাবাগণ বেঁচে থাকেন। তারা ছিলেন ইসলাম বোঝার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত মানুষ। সেই সাহাবাগণের মধ্য থেকে একজন সাহাবীও উল্লিখিত দিনগুলো ব্যতীত অন্য কোনো দিনে হজ্জ করেননি। এমনকি এ ব্যাপারে কেউ কথাও বলেননি। তাহলে চৌদ্দশ বছর পরে এসে তাদের চেয়ে কুরআন বেশি বোঝার চেষ্টা করবো?
…………………………
আমার জবাব-
ভাই, মাত্র চোদ্দশ বছর পার করেই হাপিয়ে গেলেন- আরও চৌদ্দশত কিংবা হাজার হাজার বছর পর কিন্তু সত্য সমহিমায় প্রকাশিত হবেই, ইনশাল্লাহ। এর মাঝে যাদেরকে চেনার তদেরকে মহান স্রষ্টা ঠিকই চিনে নেবেন।
বেহেশ্তি যুবকগণের সরদার ইমাম হোসেনের (রাঃ) সেই সংকটময় অবস্থায় তাঁর পাশে দাঁড়াবার মত এবং ন্যায়ের পক্ষে তার হাতকে শক্ত করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত সাহাবাগণ কি সবাই মৃত্যুবরণ করেছিলেন?
সাহাবাগণের চরিত্র অবশ্যই অনুসরনীয়। কিন্তু তাই বলে তাদের প্রত্যেকের সকল সিদ্ধান্ত ও মতামতকে যে সঠিক মানতে হবে এমন কোন কণ্ডিশন আল-কোরআনে আছে কি?
........................................
২) এক ভাই মন্তব্য করেছেন-
উল্লিখিত বিষয়ের সঙ্গে হঠাৎ করে হযরত হুসাইন রা。কে নিয়ে আসার কী অর্থ?
সে যাই হোক, তাহলে হযরত হুসাইন রা。কি উল্লিখিত দিনগুলোর বাইরে হজ্জ করতেন? রেফারেন্সসহ উল্লেখ করবেন আশা করি। আমিও তো একজন শিক্ষানবিস, আমি আপনার কাছ থেকেও শিখতে চাই।
//চৌদ্দশত কিংবা হাজার হাজার বছর পর কিন্তু সত্য সমহিমায় প্রকাশিত হবেই, ইনশাল্লাহ//
তাহলে এমন কোনো সত্য আছে কি যেটা নবীজীর যুগে প্রকাশিত হয়নি। এখনো গোপন আছে। আর পরবর্তীতে সেটা প্রকাশ হবে। তাহলে ‘আজ আমি তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম- কুরআনের এমন আয়াতের মর্মার্থ কী? ‘যে ব্যক্তি এমন কিছু নিয়ে আসবে যা এই দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত (বিদআত) এই হাদীসের মানেও বা কী?
........................................
আমার জবাব-
আপনি বলেছেন- //হযরত হুসাইন রা。কি উল্লিখিত দিনগুলোর বাইরে হজ্জ করতেন? রেফারেন্সসহ উল্লেখ করবেন আশা করি। আমিও তো একজন শিক্ষানবিস, আমি আপনার কাছ থেকেও শিখতে চাই।//
জি ভাই, শেখার শেষ নেই। আমিও এখনও শিখছি। আর মৃত্যু পর্যন্ত এই ছিলছিলা জারি রাখতে চাই।
হযরত হোসেন (রাঃ) এবং তার পরবর্তী আমলেও পৃথিবীতে মুসলিমদের সংখ্যা খুব বেশি ছিলনা। সে সময় তাদের হজব্রত পালন করার জন্য সেই কয়েকেটি দিনই যথেষ্ট ছিল। তাই হাজিদের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে করুণ মৃত্যুর ঘটনা তাদের আমলে হয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সে কারণে তাদের যুগে এসব নিয়ে ভাববার খুব একটা প্রয়োজন হয়নি।
আপনি বলেছেন- //তাহলে এমন কোনো সত্য আছে কি যেটা নবীজীর যুগে প্রকাশিত হয়নি। এখনো গোপন আছে। আর পরবর্তীতে সেটা প্রকাশ হবে।//
আল-কোরআনের বিধান সার্বজনীন ও সর্বকালের জন্য প্রেরিত হয়েছে এবং তা অবশ্যই পরিপূর্ণ। তাই এখানে কিয়ামত পর্যন্ত সকল সমস্যা সমাধানের পথই খোলা রাখা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনই পরম সত্যের উৎস। এর উপরে সত্য নাই এবং যা বিশ্বনবী রাসূল (সাঃ) এর উপরেই নাজিল হয়। সব যুগেই ছদ্মবেশীরা সত্যকে লুকানোর জন্য ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে এবং কিছুটা সফলও হয়েছে। কিন্তু তাদের এই সাফল্য ক্ষণকালের জন্য। আবার অনেকে অতিরিক্ত রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে সত্য থেকে দূরে সরে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু চিরন্তন সত্যকে পাশকাটিয়ে রাখা তো কখনই সম্ভব নয়।
রাসূল (সাঃ) ছিলেন এসব কিছুর ঊর্ধে। তিনি হলেন সর্বকালে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য ও মুক্তমনের সত্যপন্থী মহামানব। তাই তো বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি বলেছিলেন-
(শোন, এখানে যারা উপস্থিত আছ তাদের কর্তব্য হবে, যারা আজ এখানে উপস্থিত নেই তাদের কাছে এই নির্দেশ ও বাণীগুলো ঠিকমত পৌঁছে দেয়া। অনুপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে কেউ হয়ত এর মর্ম তোমাদের চেয়ে উত্তমরূপে বুঝবে ও সংরক্ষণ করবে।)
পবিত্র কোরআনের বাণীর সংরক্ষণ করার অঙ্গিকার করেছেন মহান স্রষ্টা নিজেই। তাই তাঁর সেই বাণী মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই। ইচ্ছাকৃত বিকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃত যথাযথভাব ব্যাখ্যা করতে না পারার কারণে সাময়িকভাবে হয়ত গরমিল ঘটছে। তবে মূল কিতাব কিন্তু মূল অবয়বে এখনও হাতের কাছেই আছে। চোদ্দ হাজার কিংবা লক্ষ বছর পরও তা এমনই থাকবে। নানা মুনির নানা মতের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে মানুষেরই প্রয়োজনে প্রকৃত সত্য সমিহিমায় ঠিকই প্রকাশিত হবে- ইনশাল্লাহ।
ধন্যবাদ-
…………………………………….
৩) এক ভাই মন্তব্য করেছেন-
এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর আমি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি । আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি যে হাজ্জ যদি চার মাসের যে কোন সময় করা যেত তাহলে সেখানে একটা মহা বিশৃংখলার সৃষ্টি হত। কিভাবে তা ভাবার দায়টা আপনার উপরই দিলাম ।
…………………………
আমার জবাব-
ঠিক আছে। হজের বিষয়টি আপনি এড়িয়ে যেতে চাইলে তো কিছু বলার নেই। তবে আপনি বিশৃঙ্খলার কথা বলেছেন। তাই বলছি।
বিশৃঙ্খলা কি এখন নেই। হাজিদের পদতলে পিষ্ট হয়ে হাজিদের নির্মম মৃত্যু- এর চেয়ে মহাবিশৃঙ্খলা আর কি হতে পারে? তাছাড়া আছে ফ্লাইট জট। এখন তো আবার যাচাই-বাছায়েরে পর্ব শুরু হচ্ছে। ফলে যারা হজের নিয়ত করবেন তাদের সবাই যে এই পাঁচ দিনেও হজ করার সুযোগ পাবেন না তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
মহান স্রষ্টা বাণীকে প্রাধান্য না দেবার কারণেই তো এসব ঘটছে। আমি পবিত্র কোরআনের আয়াতের বক্তব্যের বাহিরে নুতন কিছু বলেছি কি?
ধন্যবাদ-
......................................
৪) একজন প্রশ্ন করেছেন-
ভাই, আপনার যুক্তির কোন ভিত্তি দেখতে পাচ্ছিনা । রাসুলের হাদিস হল কুরানের ব্যাখ্যা । সুতরাং রাসুল (সাঃ) যেভাবে কুরানককে বুঝেছেন এবং আমল করেছেন আমাদেরও সেভাবেই করতে হবে । আর এটা মানতে না পারলে নিজেকে মুছলমান হিসাবে দাবি করে লাভ কি হবে সেটা ভাবার বিসয়। রাসুল (সাঃ) যখন যেভাবে হজ্জ করেছেন সাহাবিরাও সেভাবে পালন করেছেন এবং আমরাও সেভাবেই করছি । আপনার যুক্তি এতে মানুসের কস্ট হয় এবং মাঝেমাঝে মানুস মারাও যায় । বাসে ট্রেনে বিমানে নৌকায় চড়ে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুস মারা যাচ্ছে তাহলে আমরাকি চলাচল বন্ধ করে ঘরে বসে থাকব নাকি? জন্ম মৃত্যু এসব আল্লাহ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন সেটা যেখানে যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবেই হবে । আর হজ্জে এরকম না যে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুস মারা যায় ।
আপনার অবস্থান পরিস্কার করুন- আপনি কি হাদিস মানেন নাকি মানেননা?
.............................
আমার জবাব-
ভাই, আমি কিন্তু স্পষ্টভাবেই বলেছি- //আল-কোরআনের নির্দেশ অনুসারে ও রাসূল (সাঃ) এর শেখানো নিয়ম মেনে আল-কোরআনে উল্লেখিত চারটি পবিত্র (যুল-হজ্জ, মহরম, সফর ও রবিউল আউয়াল) মাসের যেকোন সময় পৃথিবীর সকল মুসলিম ফরজ হজ করার অধিকার রাখেন।//
কাজেই এখানে হাদিছ না মানার প্রশ্ন আসেনা। হাদিছ না মানলে রাসূল (সাঃ) এর শেখানো পদ্ধতি জানার ও মানার কথা বললাম কেন?
তবে এটা ঠিক যে, আল-কোরআনের বাণীর উপরে কিংবা তার সমকক্ষ হিসেবেও কোন বাণীকে আমি মেনে নিতে প্রস্তুত নই। রাসূলের (সাঃ) নাম ভাঙ্গিয়ে কখন কে কি বলল, আল কোরআনের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য না থাকলেও তা আমাকে মেনে নিতে হবে- এতটা অন্ধ সাজতে আমি রাজি নই।
আমি আল-কোরআনের নাথে সাংঘর্ষিক কোন হাদিছকে সহী মানিনা বলেই তো জানতে চেয়েছি- //শুধুমাত্র জিল-হজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখেই হজ করা যাবে, কিন্তু হজের অন্যান্য মাসে হজ করা যাবেই না- এমন কোন নির্দেশ কি সরাসরি রাসূল (সাঃ) দিয়েছেন অর্থাৎ এরূপ কোন সহী হাদিছ আছে কি?//
............................................
৫) একজন মন্তব্য ও প্রশ্ন করেছেন-
বাসে ট্রেনে বিমানে নৌকায় চড়ে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, তাই বলে আমরা কি চলাচল বন্ধ করে ঘরে বসে থাকব নাকি? জন্ম মৃত্যু এসব আল্লাহ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন সেটা যেখানে যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবেই হবে । আর হজ্জে এরকম না যে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায়।
............................
আমার জবাব-
না ভাই, ঘরে বসে থাকে তো নিতান্তই অলস প্রকৃতির কিংবা চলাফেরা করতে অক্ষম মানুষেরা। জন্ম মৃত্যু আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন তা তো আমার অজানা নয়। কিন্তু তাই বলে অসাবধানতা ও প্রশাসনিক দুরবস্থার কারণে মানুষ মরতেই থাকবে, কিন্তু সবাই গালে হাত দিয়ে ”আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়া গেছে” টাইপ শেমলেস কথা বলে পূণ্য কামাইয়ের ধান্দা করতে থাকব আর ”আপনি বাঁচলে বাপের নাম” এই মনোভাব নিয়ে বোধহীন ও স্বার্থপরের মত আঙ্গুল চুষতে থাকব, যুগপোযোগী কোন পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টাও করব না কিংবা কিছুই বলব না– এভাবে নম নম কোরে স্রষ্টার কাছে পরপারে জবাবদিহিটা ঠিকমত দেয়া যাবে কি? মুক্তি মিলবে কি? তাও আবার হজের মত একটা ইবাদত করতে গিয়ে মানুষের পাযের নিচে পিষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু। আমরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি যে এসব আমাদের আত্মাকে ছুঁতেই পারেনা। এরূপ আত্মকেন্দ্রিক অন্তর নিয়ে যেন মহান স্রষ্টার সামনে আমাকে দাঁড়াতে না হয়। অন্তত মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর যে কিতাব পাঠিয়েছেন সেই বাণীর বক্তব্যকে প্রকাশ করার ও সেভাবে ইবাদত করার কেথা সবার সামনে তুলে ধরেছি– এই আলোচনা তার সাক্ষী হয়ে থাক।
..............................................
৬) একজন মন্তব্য করেছেন-
আপনার এই বক্তব্য so called understanding রাশাদ খালিফা অথবা সমমনা কোন website থেকে নেওয়া। আর আপনিও তাদের একজন অনুসারী এতে আর সন্দেহের অবকাশ নেই।
........................
আমার জবাব-
প্রথমেই বলে রাখি আপনার উল্লেখিত মি. রাশাদ খলিফাকে আমি চিনি না। তাই তাকে অনুসরণ করার প্রশ্নই আসেনা। রাশাদ খলিফা কিংবা অন্য কে কি বলল তা মুখ্য বিষয় নয়। তাদের সেই কথা কিংবা এ্যটিচুড আল-কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক নাকি সমধর্মী সেটাই দেখার বিষয়। যদি আল-কোরআন মুখি কারো কোন কথা আমার কথার সাথে মিলে গিয়ে থাকে- তাতে তো আমার করার কিছু নেই এবং এটাই স্বাভাবিক। আর আমি একমাত্র আল্লাহ, আল্লাহর কিতাব আল-কোরআন এবং সেই অনুসারে তাঁর রাসূলকেই অনুসরণ করতে সর্বদাই প্রস্তুত। কিন্তু এর ব্যত্যয় আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
................................................
৭) একজন মন্তব্য করেছেন-
এখানে শুধু হজ্জ করার নিয়তের কথা বলা হয়েছে। চার মাসের কোন মাসে কত তারিখে কিভাবে হজ্জ করতে হবে এসব কিছুই বলা হয় নাই। এবং পরের অংশে কি কি কাজ করা যাবেনা সেসব বিষয় বলা হয়েছে। এটা ঠিক নামাযের মত। আল্লাহ কুরআনে নামায আদায় করার কথা বলেছেন কিন্তু নামাযের সব খুঁটিনাটি বিষয়গুলি বলে দেননি এবং এই খুঁটিনাটি বিষয় জানার জন্য আল্লাহ তাঁর রাসুলে(সঃ) অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
............................
আমার জবাব-
আমার মনে হচ্ছে আপনি ভুল ধারনায় আছেন। কারণ সূরা আল বাক্বারাহ (২:১৯৭) নং আয়াতে বলা হয়েছে-
[হজ্জের মাসসমূহ (একান্ত) সুপরিচিত। সে সময়গুলোর মধ্যে যে ব্যক্তি হজ (আদায়) করার মনস্থ করবে (সে যেন জেনে রাখে), হজের ভেতর কোন যৌন সম্ভোগ নেই, নেই কোন অশ্লীল গালিগালাজ ও ঝগড়াঝাটি, আর যতো ভাল কাজ তোমরা আদায় করো আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তা জানেন, (হজের নিয়ত করলে) এর জন্য তোমরা পাথেয় যোগাড় করে নেবে, যদিও আল্লাহর ভয়টাই সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়, অতএব হে বুদ্ধিমান মানুষরা, তোমরা আমাকেই ভয় করো।]
প্রথমত (২:১৯৭) নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হলো যে, হজ্জের মাসসমূহ (একান্ত) সুপরিচিত। অর্থাৎ যুল-হজ্জ মাসের নাম থেকেই প্রমাণিত হয় যে এই মাসটি হজ শুরুর মাস হিসেবে অনেক আগে থেকেই সুপরিচিত ছিল।
এরপর সূরা আল বাক্বারাহ (০২:১৮৯) নং আয়াতে বলা হলো-
[তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে /'আল-আহিল্লাতি'/ নতুন চাঁদের 'বর্ধিঞ্চু দশাগুলোর' বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার মধ্যে কোন নেকী বা কল্যাণ নেই। অবশ্য নেকী হল আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে। আর তোমরা ঘরে প্রবেশ কর দরজা দিয়ে এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা নিজেদের বাসনায় কৃতকার্য হতে পার।]
সুতরাং এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, সেই সুপরিচিত যুল-হজ্জ মাসের নুতন চাঁদ দেখেই হজের নিয়ত ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
এবার (২:১৯৭) নং আয়াতের পরবর্তী অংশের বক্তব্যের দিকে লক্ষ্য করুন। বলা হলো, "সে সময়গুলোর মধ্যে যে ব্যক্তি হজ (আদায়) করার মনস্থ করবে" অর্থাৎ শুধু যুল-হ্জ্জ মাসেই নয়, বরং কয়েকটি সুপরিচিত ও পবিত্র মাসের যে কোন সময় একজন মুসলিম যদি হজ করার মনস্থ করেন তাহলেই তিনি তার সেই ব্রত পালন করার অধিকার রাখেন। আল্লাহর স্মরণে আল-কোরআনে উল্লেখিত ফরজ কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য যে কয়েকটি (চার থেকে পাঁচ)) দিনের প্রয়োজন হয় তা রাসূল (সা) আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং চারটি মাসের যে কোন সময় সেই কয়েকটি দিন নির্ধারণ করে হজ সমাধা করার কথাই তো মহান স্রষ্টার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর রাসূল (সাঃ) এর শেখানো নির্ধারিত নিয়মে হজ সমাধা করার ব্যপারে তো আমার কোন আপত্তি নেই।
.................................................
৮) একজন মন্তব্য করেছেন-
সুরা বাকারাতে “আরবা’আতুন" মানে পর পর চারটি মাসকেই নির্দেশ করে। তার মানে যে (০৯:৩৬) নং আয়াতেও পর পর চারটি মাসকেই নির্দেশ করবে এই ধারনাটা ঠিক না।
........................
আমার জবাব-
মক্কা নগরিতে [মক্কা বিজয়ের আগে যে শহরকে আল-কোরআনের (০৩:৯৬) নং সূরায় 'বাক্কা' এবং বিজয়ের পর (৪৮:২৪) নং সূরায় 'মক্কা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে] অবস্থিত সম্মানিত/ পবিত্র মসজিদ 'কাবা' তাওয়াফ করার জন্য মহান স্রষ্টা স্বয়ং চারটি সম্মানিত/ পবিত্র মাসকে নির্ধারণ কোরে দিয়েছেন। আল-কোরআনের অন্তত ১৩ টি সুরায় সম্মানিত/ পবিত্র মসজিদ হিসেবে মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।
আর “সম্মানিত/ পবিত্র মাস” এবং “সম্মানিত/ পবিত্র মসজিদের” কথা একই সাথে সূরা মায়েদার (০৫:০২) নং আয়াতে স্পষ্ট করেই তুলে ধরা হয়েছে যেন মানুষ ভুল না করে বসে-
[হে মুমিনগণ! হালাল মনে করো না আল্লাহর নিদর্শনসমূহ এবং সম্মানিত/ পবিত্র মাসসমূহকে এবং হরমে কুরবানীর জন্যে নির্দিষ্ট জন্তুকে এবং ঐসব জন্তুকে, যাদের গলায় কন্ঠাভরণ রয়েছে এবং ঐসব লোককে যারা সম্মানিত/ পবিত্র গৃহ অভিমুখে যাচ্ছে, যারা স্বীয় পালনকর্তার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে। যখন তোমরা এহরাম থেকে বের হয়ে আস, তখন শিকার কর। যারা সম্মানিত/ পবিত্র মসজিদ থেকে তোমাদেরকে বাধা প্রদান করেছিল, সেই সম্প্রদায়ের শুত্রুতা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।]
এবার লক্ষ্য করুন, “সম্মানিত/ পবিত্র মাস” কয়টি তা সূরা আত তাওবাহ (০৯:৩৬) নং আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে-
[নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে “চারটি সম্মানিত/পবিত্র”। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন।]
ঠিক এরপরেই একই সূরা আত তাওবাহ (০৯:৩৭) নং আয়াতে চারটি সম্মানিত/পবিত্র মাস আগে পিছে করার কারসাজি করা হতে পারে সে সম্পর্কেও বিশ্বাসীদেরকে জানিয়ে দেয়া হলো-
[এই মাস পিছিয়ে দেয়ার কাজ কেবল অবিশ্বাসের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে কাফেরগণ গোমরাহীতে পতিত হয়। এরা হালাল করে নেয় একে এক বছর এবং হারাম করে নেয় অন্য বছর, যাতে তারা গণনা পূর্ণ করে নেয় আল্লাহর পবিত্র মাসগুলোর। অতঃপর হালাল করে নেয় আল্লাহর হারামকৃত মাসগুলোকে। তাদের মন্দ কাজগুলো তাদের জন্যে শোভনীয় করে দেয়া হল। আর আল্লাহ অবিথ্বাসী সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।]
সুতরাং যুল-হজ্জ মাসের নুতন চাঁদ দেখে যেমন হজের নিয়ত ও প্রস্তুতি গ্রহণের ইংগিত দেয়া হয়েছে, তেমনি সম্মানিত/ পবিত্র মসজিদ তাওয়াফ করার জন্য যে চারটি সম্মানিত/ পবিত্র মাসকে নির্ধারণ করা হয়েছে তা আগপিছ করার কোন সুযোগ নেই বলেও স্পষ্টভাবে হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। তাই সেই মাসগুলো যে পর পর চারটি মাস সে ব্যপারে সন্দেহ পোষণ করার কোন অবকাশ নেই।
কিন্তু কোন্ অজ্ঞাত কারণে যে হজের এই মাসগুলো পিছিয়ে দেয়া হলো তা বোধগম্য নয়। আরবী বারোতম ‘যুল-হজ্জ’ মাসের কেবলমাত্র ৮ থেকে ১২ এই পাঁচটি দিনকে হজের জন্য নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে। এর পরবর্তী দিনগুলো ও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়- ‘মহরম, সফর ও রবিউল আউয়াল’ মাসকে পিছিয়ে দিয়ে এর স্থলে সপ্তম, দশম ও এগারতম- ‘রজব, সাওয়াল ও যুল-ক্বাদ’ মাসকে শুধুামাত্র হজের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যে আমাদের অবিশ্বাসের মাত্রাই বৃদ্ধি পেয়েছে- তা বুঝেও কি নিশ্চুপ থাকাটা আমাদের জন্য শোভা পায়?
৮ থেকে ১২ যুল-হজ্জ হজ করার ব্যপারে আমার তো কোন আপত্তি বা দ্বিমত নেই। কিন্তু তাই বলে চারটি সম্মানিত/ পবিত্র মাসের অন্য সময়ে ফরজ হজ পালনের অধিকার হরণ করাও সঠিক নয়। তাছাড়া পবিত্র মাসসমূহের ব্যাপারেও হেরফের করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে যে কোন সময় নিয়ত কোরে পবিত্র কাবায় ফরজ হজ পালন করার অধিকার যে মহান স্রষ্টা আমাদেরকে দিয়েছেন- অন্তত এই বিশ্বাসটা অন্তরে ধারন করা ও বলা মুসলিমদের জন্য জরুরী নয় কি?
.............................................
৯) একজন প্রশ্ন করেছেন-
হজ্জের মধ্যে একটি দিন আছে যাকে আরাফাত বলা হয়- আপনি এটাকে কিভাবে নির্ধারণ করবেন?
হাদিসে আছে যারা হজ্জে যায়নি তারা আরাফাতের দিনে রোযা রাখলে দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায় । আপনার বোঝ অনুযায়ী যদি চার মাস ধরেই হজ্জ করা হয় তাহলে যারা হজ্জে যাননি তারা আরাফাতের দিন কোনটি সেটি কিভাবে জানবেন? নাকি তারা চার মাস ধরেই রোযা রাখবেন?
.............................
আমার জবাব-
মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে হজের ফরজ কাজগুলো সম্পর্কে স্পষ্টভা্বেই উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে জানতে হলে হজ সম্পর্কিত সকল আয়াতগুলো দেখে নিন। অন্তত এই ফরজগুলো ঠিক ঠিক মত পালন করলে এবং অন্তর পরিশুদ্ধ রাখলেই ইনশাল্লাহ হজ হয়ে যাবে। এরপর রাসূলের (সাঃ) সুন্নাত যিনি যতটা পালন করবেন তিনি ততটা সোয়াব পাবেন, ইনশাল্লাহ।
জী ভাই, হজের নিয়ত করার পর একটি নির্দিষ্ট সময়ে আরাফাত নামক স্থানে উপস্থিত হয়ে একান্ত মনে আল্লাহকে স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এই চারটি মাসের মধ্যে হজের জন্য নিয়ত করার পর নির্ধারিত দিনগুলোর মধ্যে যিনি যখন এই স্থানে উপস্থিত থাকবেন- সেটাই তার জন্য আরাফাতের দিন বলে গণ্য হবে। আর হাদিছে যে বিষয়টি এসেছে তা হাজিদের জন্য নয়। তাছাড়া এ সম্পর্কে যেহেতু আল-কোরআনে কোন বক্তব্য নেই, তাই আমার মাথা ব্যথাও নেই। রমজানের ফরজ রোজা সঠিকভাবে পালন করাকেই আমি যথেষ্ট মনে করি।
..................................................
১০) একজন প্রশ্ন করেছেন-
রাসুল(সঃ) যা দিয়েছেন, যেভাবে শিখিয়েছেন আমাদেরকেও সেভাবেই মানতে হবেঃ
…….রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা (সূরা আল হাশর আয়াত ৭)
................................
আমার জবাব-
পবিত্র কোরআনের কোন আয়াত আংশিকভাবে কোট করা মারাত্মক অপরাধ এবং এতে অন্তরের বক্রতাই বৃদ্ধি পায়। অনেকে (৫৯:০৭) নং আয়াতের এই অংশটুকু (রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা) ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে রাসূলকে (সাঃ) হালাল/ হারামের বিধানদাতা বানিয়ে নিজেদের অভিরুচি অনুযায়ি মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু এটি এর পূর্বের আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়লে আসল বক্তব্য সহজেই বুঝে নেয়া যায়-
সূরা আল হাশর (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৫৯:০৬) আল্লাহ নির্বাসিত ইহুদিদের (বনু-বনুযায়রের) কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
(৫৯:০৭) আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়; আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
*সূরা আনফালে গনীমত (যুদ্ধ জেহাদের ফলশ্রুতিতে লব্ধ সম্পদ) ও ফায় (যুদ্ধ বা জেহাদ ছাড়াই শত্রুরা যে সম্পদ ফেলে পালিয়ে যায়) এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই আয়াতে ফায় এর সম্পদের হকদার নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা হকদার নির্দিষ্ট করার নির্দেশ দেবার পর কে কতটুকু পাবে তার ভার রাসূল (সাঃ) উপর ন্যাস্ত করার ইংগিতও দিয়ে দিয়েছেন এবং এই ক্ষেত্রে রাসূলের (সাঃ) এর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়াকে তাঁরই আনুগত্য করার সাথে তুলনা করে সেই নির্দেশকেই জোরদার করেছেন।
ঠিক একইভাবে বলা যায় যে, মহান আল্লাহতায়ালা সালাত/ নামাজ সম্পর্কেও তাঁর কিতাবে বিস্তারিতই বলেছেন। আর এর সাথে মিল রেখে রাসূলের (সাঃ) সুন্নত পালন করাতে কোন সমস্যা নেই। বরং সেটাই উত্তম। এ সম্পর্কে বিস্তারিত-
এবার আল্লাহর নাম নিয়ে নিচের আয়াতগুলোর প্রতি মনোযোগ দিন-
সূরা আল জাসিয়া (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৪৫:০৬) এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি তোমার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথ রূপে। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর তারা কোন হাদিছে (কথা, গল্প, খবর) বিশ্বাস স্থাপন করতে চায়?
(৪৫:০৭) প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর দুর্ভোগ।
(৪৫:০৮) সে আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে, অতঃপর অহংকারী হয়ে জেদ ধরে, যেন সে আয়াত শুনেনি। অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।
(৪৫:০৯) যখন সে আমার কোন আয়াত অবগত হয়, তখন তাকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করে। এদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
(৪৫:১০) তাদের সামনে রয়েছে জাহান্নাম। তারা যা উপার্জন করেছে, তা তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে তারাও নয়। তাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।
(৪৫:১১) এটা সৎপথ প্রদর্শন, আর যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
……………………....................
১১) একজন মন্তব্য করেছেন-
বর্তমানে আমাদের সমাজে একদল বেরিয়েছে যারা সর্ব প্রকারের হাদিস অস্বীকার করে। এরা প্রকৃতপক্ষে কুরআনকে অনুসরণ করেনা। এরা হল “আহলে হাওয়া” অর্থাৎ এরা এদের নিজেরদের প্রবৃত্তির অনুসরণকারী। এদের ব্যাপারে রাসুল(সঃ) ভবিষ্যৎ বানীর মাধ্যমে তার উম্মতকে সাবধান করেগিয়েছিলেন এভাবে-
[আল-মিক্বদাম ইবনু মাদীকারিব আল-কিনদী হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: অচিরেই কোন ব্যাক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাবো তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (মহানাবী বলেন) সাবধান! নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ (সুনানে ইবনে মাজাহ অধ্যায়ঃ ১/ রাসুল (সাঃ)’র সুন্নাতের অনুসরণ| হাদিস নাম্বার: ১২)।]
............................
আমার জবাব-
আপনার উল্লেখিত এই হাদিছে দু'টো মেসেজ দেয়া হয়েছে-
১/ সরাসরি রাসূলের (সাঃ) মুখনিঃসৃত যে সব হাদিছ আছে তা অস্বীকার করা যাবেনা।
২/ আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ হতে হবে।
সুতরাং এখানে সহী ও জাল হাদিছ চেনার জন্য উত্তম উপায়ও বলে দেয়া্ হয়েছে। সাবধানতা অবলম্বনের জন্য এই ইংগিত দেয়া হয়েছে যে, কোন হাদিছের বক্তব্য যদি আল-কোরাআনের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতের বক্তব্য যদি সেই বিষয় সম্পর্কিত কোন হাদিছের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে সেই অযুহাতে আয়াতটি বর্জন করা মোটেই ঠিক হবে না। বরং সেই হাদিছটির বর্ণনাকারী যতই নামকরা ব্যক্তি হন, কিংবা হাদিছের সূত্র যতই মজবুত হোক না কেন, সেই হাদিছটি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধই থাকবে।
আমাদের সকল ভুলত্রুটি যেন পরম করুণাময় ক্ষমা করেন এবং সত্যকে জানার ও মানার মধ্য দিয়ে সরল ও সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করেন-
ধন্যবাদ-
.........................................
১২) একজন মন্তব্য করেছেন-
আপনার পোস্টের অরিজিন হয়ত আপনার আমার জন্মেরও অনেক আগে। এটা আপনার নিজের আবিস্কার হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে নিজের মনকে প্রশান্ত করতে হয়ত পারবেন কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির যুগে এটা কতটা সফল হবে এটা একটু ভেবে দেখবেন দয়াকরে। যাইহোক, ধরেই নিলাম এটা আপনার নিজের গবেষণার ফসল। একটু হলেও মনে তৃপ্তি পাবেন আশা করি!। অবশ্য নিজের ধংশের জন্য সবসময় অন্যকে অনুসরণ করার দরকার পড়েনা, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণই যথেষ্ট যেমনটি আল্লাহ বলেছেনঃ
[আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? (সূরা আল জাসিয়া আয়াত ২৩)]
.......................
আমার জবাব-
কোন কিছু নুতন কোরে আবিষ্কার কোরে বাহবা কুড়ানোর বিষয়ে আমার কোনই আগ্রহ নেই। আমার আগে বা পরে যিনিই যা কিছুই বলে থাক, তা যদি আল্লাহর পবিত্র কিতাবের বাণী যথাযথ রূপে প্রচারের উদ্দেশ্যেই করা হযে থাকে- তাহলে তার যোগ্য প্রতিদান একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালাই দিতে পারেন। অন্য কেউ নয়। অযথা বাহবা কুড়ানো একজন প্রকৃত ইমানদারের কাজ নয়। সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থেকে আলাহ প্রদত্ত সত্য বাণীকে সবারে সামনে স্বমহিমায় প্রকাশ করাই যেন আমাদের মূল উদ্দেশ্য হয়। তাছাড়া যা আল্লাহর কিতাবে আগে থেকেই বিদ্যমান- যারা তা নুতুন কোরে আবিষ্কার করার দাবি করবেন- তারা নিতান্তই অবুঝ কিংবা ছোট মনের।
যারা আল-কোরআনের বাণীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করে এবং আল্লাহতালার স্পষ্ট বক্তব্য উপেক্ষা কোরে তার সাথে সাংঘর্ষিক ও রাসূল (সাঃ) এর নামে চালানো ও বানানো হাদিছে বিশ্বাস ও অনুসরণে বদ্ধপরিকর, প্রকৃত অর্থে এখানে তাদের উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছে-
[আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? (সূরা আল জাসিয়া আয়াত ২৩)]
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন-
[এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি তোমার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথ রূপে। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর তারা কোন হাদিছে (কথা, গল্প, খবর) বিশ্বাস স্থাপন করতে চায়? সূরা আল জাসিয়া (৪৫:০৬)]
এখানে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, আল-কোরআনের আয়াতগুলো মোটেই ভাসাভাসা নয়, বরং রাসূলের (সাঃ) কাছে যথাযথ রূপেই আবৃতি করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে যে, স্পষ্টভাবে আবৃতি কৃত এই নিদর্শনই হলো 'আল-কোরআন'। সুতরাং যারা আল-কোরআনের স্পষ্ট বক্তব্য উপেক্ষা করবে এবং অসম্পূর্ণ ভেবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে (তিনি যেই হোক না কেন) তাদের খেয়াল-খুশী মত উপাস্য স্থির কোরে তার কথা ও কর্মকে আল্লাহর স্পষ্ট আয়াতের উপরে স্থান দেবে, তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়ার কথাই বলা হয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, যারা আল্লাহর কিতাব আল-কোরআনকে সবার উপরে স্থান দেবে, তারা এই সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকবে- ইনশাল্লাহ।
...............................................
১৩) একজন প্রশ্ন করেছেন-
এই মাসগুলি যে আগে থেকেই সুপরিচিত অর্থাৎ মানুষ এই মাসগুলির নাম আগে থেকেই জানত এটার কোন দলিল আছে কি আপনার কাছে?
যেহেতু কুরআনে এই মাসগুলির কোন নাম উল্লেখ নাই এবং কুরআন বলছে যে এগুলি সুপরিচিত। সুতরাং এটা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে মুহাম্মাদ (সঃ) এবং তাঁর সময়কার সবাই এই মাসগুলির নাম জানত, ঠিক কিনা?
(০৯:৩৬) নং আয়াতে বলা হয়েছে "নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে( مِنْهَآ) চারটি সম্মানিত/পবিত্র" এখানে বলা হয়েছে مِنْهَآ যার দ্বারা বার মাসের মধ্যে থেকে যেকোন চারটি মাসকে অথবা পর পর চারটি মাসকেউ বুঝানো যেতে পারে । এটা বুঝার জন্য দেখতে হবে রাসুল(সঃ) এই আয়াতটিকে কিভাবে বুঝেছেন । এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসুল(সঃ) বলেনঃ
[আবদুল্লাহ ইবন আবদুল ওয়াহাব (র)………….আবূ বকর (রাযিঃ) কর্তৃক নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আল্লাহর যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করে সেদিন যেভাবে কাল (যামানা) ছিল তা আজও অনুরূপভাবে বিদ্যমান। বারমাসে এক বছর, তন্মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকাদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররম আর মুযার গোত্রের রজব যা জামিদিউসসানী ও শাবান মাসদ্বয়ের মধ্যবর্তী। [ বুখারীঃ ৪৩০২)]
........................
আমার জবাব-
জী, আল-কেরাআনে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "হজ্জের মাসসমূহ (একান্ত) সুপরিচিত"। আর এই সুপরিচিত চারটি মাসের প্রথম মাস যুল-হ্জ্জ। কারণ প্রথমত এর নাম এবং দ্বিতীয়ত রাসূল (সাঃ) এই মাসের চাঁদ দেখে হজ শুরু করার নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছেন। আর আমি বার বার বলেছি যে, তাঁর দেখানো সেই নিয়ম মানতে তো আমার কোন আপত্তি নেই।
হাঁ, যেহেতু আল-কোরআনে সুপরিচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কাজেই নিশ্চয় মুহাম্মাদ (সঃ) এবং তাঁর সময়কার সবাই এই মাসগুলির নাম জানতেন।
এ সম্পর্কে আপনি যে হাদিছটি উল্লেখ করেছেন তার বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, যেহেতু আল্লাহর কিতাবে আছে, তাই এই হাদিছে সম্মানিত/ পবিত্র মাসের সংখ্যা চারটি ঠিকই বলা হয়েছে। কারণ সরাসরি এটাও পাল্টে দিলে তো গোড়াতেই গলদ ধরা পড়ে যেত। তাই টেকনিক খাটিযে ধারাবাহিক ভাবে 'যিলকাদ, যিল-হাজ্জ ও মুহাররম' মাসের নাম উল্লেখ কোরে তারপর তার সাথে 'রজব' মাস অর্থাৎ যা জামিদিউসসানী ও শাবান মাসদ্বয়ের মধ্যবর্তী মাসকে যুক্ত কোরে দেযা হলো। অথচ রাসূল (সাঃ) স্বয়ং চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে প্রথম মাসের চাঁদ দেখে কখন ও কিভাবে হ্জ শুরু করতে হবে তার নিয়ম দেখিয়ে দিলেন। অথচ তার পরের 'মুহাররম' মাসকে ঠিক রেখে হজের সময় 'রজব' ও 'যিলকাদ' মাসে পিছিয়ে দেয়া হলো। এ সম্পর্কে (০৯:৩৭) নং আয়াতেই বিশ্বাসীদেরকে সাবধান করা হয়েছে। এই হাদিছটি যে সহী নয় তা বুঝে নেয়া কি খুব কঠিন বিষয়। যেখানে রাসূল (সাঃ) হজ শুরু করলেন যিল-হজ্জ মাসের চাঁদ দেখে। আবার আল্লাহতায়ালা সম্মানিত/ পবিত্র চারটি মাসকেই হজের জন্য নির্ধারণ করলেন এবং এই সময়ের মধ্যে হজ করার কথা জানিয়ে দিলেন। আর চারটি মাসের প্রথম মাস যে "যুল-হজ্জ" তা জানাবার জন্য স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এই মাসের চাঁদ দেখেই হজ শুরুর সময়টা জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যিল-হজ্জ মাসই হজের জন্য নির্ধারিত সম্মানিত/ পবিত্র ও সুবিদিত চারটি ধারাবাহিক মাসের মধ্যকার প্রথম মাস। যেহেতু চাঁদ দেখে হজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং মাসসমূহে হজ পালনের কথা বলা হয়েছে। কাজেই একবার চাঁদ দেখার পর ধারাবাহিকভাবে চারটি মাস সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পুরো সময়টাই হজের মাস হিসেবেই গণ্য হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। অথচ চার মসের সেই সুনির্দিষ্ট সময়ের ধারাবাহিকতাকে ক্ষুন্ন কোরে তা কয়েক মাস পর বেখাপ্পাভাবে 'রজব' ও 'যিলকদ' মাসে পিছিয়ে দেয়া কি অস্বাভাবিক নয়?
.........................................
১৪) একজন প্রশ্ন করেছেন-
এই (০৫:০২) নং আয়াতে আরবিতে কি বলা হয়েছে সেটা কি খেয়াল করেছিলেন? এখানে الشَّهْرَ الْحَرَامَ বলা হয়েছে যার মানে "একটি সন্মানিত মাস", "সম্মানিত মাসসমূহ" না, কারন এখানে একবচন ব্যাবহার করা হয়েছে যার বহু বচন হল الشُّهُورِ (৯:৩৬)। এখানে শুধু একটি সন্মানিত মাসের কথা বলা হয়েছে, সুতরাং এই আয়াত অনুসারে সন্মানিত মাস হল একটি। কিন্তু অন্য আয়াত অনুসারে চারটি। এখন আপনি কিভাবে বুঝবেন যে এখানে চার মাস নাকি এক মাস বুঝাচ্ছে?
...........................
আমার জবাব-
জী, খেয়াল করেছি। বিষয়টা যত জটিল ভাবছেন, ততটা জটিল নয়। সম্মানিত/ পবিত্র চারটি মাসের কথা মহান আল্লাতায়ালা নিজেই ঘোষণা করেছেন। আবার এই আয়াতে এটাই নিশ্চিত করা হয়েছে যে, যিল-হজ্জ মাসের চাঁদ দেখে হজ শুরু হলেও শুধু এই একটি মাসই নয়, বরং এই চারটি (যিল-হজ্জ, মহরম, সফর ও রবিউল আউয়াল) মাসের প্রত্যেকটি মাসই যেমন সম্মানিত/ পবিত্র, তেমনি ধারাবাহিকভাবে চারটি মাসের পুরো সময়টাই সম্মিলিতভাবে "একটি সম্মানিত/ পবিত্র মাস", যা পবিত্র ঘর কাবা তাওয়াফ তথা হজের জন্য যোগ্য ও সুনির্ধারিত।
...............................................
১৫) একজন পাঠকের মন্তব্য-
যদি আপনার “বোঝা” সঠিক হয় তাহলে আয়াতটি এরকম হওয়া দরকার ছিল- “আল্লাহ তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক” যেহেতু আপনাদের মতে রাসুলের কোন কিছু দেওয়ার বা নিষেধ করার কোন এখতিয়ার নেই।
..............................
আমার জবাব-
না ভাই, আমাদের বা কারো নিজস্ব কোন মতের কথা এখানে অবান্তর।
(সূরা আল হাশর ৫৯ আয়াত ৭) নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আপনি যা বলেছেন তা যে খুবই ভাসাভাসা- আপনি নিজেও হয়ত সেটা উপলব্ধি করেন। কিন্তু তারপরও জিদ ধরে আছেন এবং অযথা অন্যদিকে মোড় দেবার চেষ্টা কোরে নিজেরই ক্ষতি করছেন। যাই হোক, এক্ষেত্রে "রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর"- এখানে সমস্যার কি দেখেলেন? এভাবে বলাটাই সঠিক হয়েছে এবং মহান আল্লাহ কোন বিষযকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য এমনই স্পষ্ট কথা বলেন। আমাদের জন্য এখানে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। যেমন অনেক সময় আমিও কিছু বিষয়ে ডিসিশনের ভার আমার স্রীর উপরে ছেড়ে দিয়ে সন্তানদেরকে এভাবেই বলে থাকি- "তোমাদের আম্মু পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি দিলে তোমরা যাবে, আর যাওয়ার অনুমতি না দিলে যাবেনা"। কোন নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এভাবে স্পষ্ট কথা বললে কোন ফাঁক থাকেনা এবং এতে অন্য কিছু বোঝায় না বরং কথার গুরুত্ব বাড়ে।
আল্লাহর মতকে প্রাধান্য দেয়াই একজন ইমানদারের প্রধান কর্তব্য। আর তাই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (সাঃ) যখন যতটা ক্ষমতা দিয়েছেন তা নিযে লুকোচুরি নয় বরং টু-দি-পয়েন্ট প্রকাশ করতে ও মানতে সর্বদাই প্রস্তুত। কিন্তু তাই বলে এধারকা মাল উধার কোরে এক জিনিসকে আরেক জিনিসের সাথে গুলিয়ে ফায়দা হাছিল করা মোটেই উচিত নয়।
আমি কিন্তু আপনাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম-
*শুধুমাত্র জিল-হজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখেই হজ করা যাবে, কিন্তু হজের অন্যান্য মাসে হজ করা যাবেই না- এমন কোন নির্দেশ কি সরাসরি রাসূল (সাঃ) দিয়েছেন অর্থাৎ এরূপ কোন সহী হাদিছ আছে কি?
*তাছাড়া আমি পবিত্র কোরআনের বক্তব্যের বাহিরে নুতন কিছু বলেছি কি?
আপনি বোধহয় আমার বক্তব্য বুঝতে পারছেন না। আমি তো এই দিনগুলোতে হজ করার বিপক্ষে নই। আমিও বিশ্বাস করি এই দিনগুলোতে হজ করলে আমার হজ ঠিকই হয়ে যাবে এবং সেইসাথে হজের জন্য নিধারিত চারটি মাসের যে কোন সময় হজ করার পথও খোলা আছে।
সাহাবী কিংবা তাবেঈগণের আমলে পৃথিবীতে যে মুসলিমদের সংখ্যা খুব বেশি ছিলনা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সে সময় তাদের হজব্রত পালন করার জন্য সেই কয়েকেটি দিনই যথেষ্ট ছিল। তাই হাজিদের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে করুণ মৃত্যুর ঘটনা তাদের আমলে হয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সে কারণে তাদের যুগে এসব নিয়ে ভাববার খুব একটা প্রয়োজন হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালা যা জানেন, আমরা তা জানিনা। সময়ের প্রয়োজনে আমরা ধীরে ধীরে সত্যকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে শিখি। সবজান্তা স্রষ্টা তাঁর রাসূলকে (সাঃ) যে জ্ঞান ও সংবাদ দান করেছেন তা কেবলমাত্র তখনকার জন্য নয়, বরং কিয়ামত পযন্ত সমস্যা সমাধানের সকল পথ খোলা রেখেই তিনি বিধান প্রেরণ করেছেন। তিনি ভাল করেই জানতেন যে, এমন এক সময় আসবে যখন বিশ্বের কোটি কোটি ধমপ্রাণ মুসলিমের হজব্রত পালনের জন্য শুধু যুল-হ্জ্জ মাসের পাঁচটি দিনই যথেষ্ট হবেনা। যুগের প্রয়োজনে বিশ্বাসীরা যেন কোন সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে না পড়েন এবং প্রতিকুলতা উত্তরণে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি না হয় সে কারণে মহান স্রষ্টা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) হজের জন্য শুধুমাত্র এই পাঁচটি দিনকে নিদিষ্ট কোরে দেন নাই। মুসলিমগণ একদিন ঠিকই বুঝতে পারবেন এবং নিজেদের প্রয়োজনেই হজের জন্য নিধারিত সম্মানিত/ পবিত্র চারটি মাসের প্রতিটি দিনকে মহান আল্লাহর স্মরণে বাহিত করবেন।
সূরা আল জাসিয়া (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৪৫:০৭) প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর দুর্ভোগ।
(৪৫:০৮) সে আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে, অতঃপর অহংকারী হয়ে জেদ ধরে, যেন সে আয়াত শুনেনি। অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।
সুতরাং আর জিদ ধরে না থেকে আল্লাহর কিতাবকে প্রধান্য দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
............................................
১৬) একজন পাঠকের যুক্তিপূর্ণ মন্তব্য-
আপনি যদি সহী ও জাল নির্বিশেষে সকল হাদিছই অস্বীকারকারীদের দলভূক্ত হয়ে থাকেন- তাহলে মন্তব্য দিয়ে কোন লাভ হবে না। তবে আপনি ততটা কট্টর নন বলেই আমার মনে হয়।
//////////////////////////////////
আপনার দুটি প্রশ্ন-
১/ সুতরাং এর দ্বারা যে পর পর চারটি মাসকে বোঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করার সুযোগ আছে কি?
২/ শুধুমাত্র জিল-হজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখেই হজ করা যাবে, কিন্তু হজের অন্যান্য মাসে হজ করা যাবেই না- এমন কোন নির্দেশ কি সরাসরি রাসূল (সাঃ) দিয়েছেন অর্থাৎ এরূপ কোন সহী হাদিছ আছে কি?
////////////////////////////////
ভাই 'সত্য', আপনার এই প্রশ্ন দুটির সঠিক জবাব দেয়ার মত পারফেক্ট দলিল আমার জানা নাই। সম্ভবত আপনারও জানা নেই বলেই হয়ত জানতে চেয়েছেন। আপনার এই জানার আকাঙ্খাকে আমি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাইনা। যদিও আাপনি বেশ কন্ফিডেন্টলি আপনার বক্তব্য পেশ করেছেন, কিন্তু তারপরও হজের বর্তমান পদ্ধতিকে অবজ্ঞা কিংবা অস্বীকার তো নয়ই, বরং তা মেনে চলার পক্ষেই বলতে চেয়েছেন। সম্ভবত আপনি বোধহয় শুধু "হজের মাসসমূহ" এবং এই মাসসমূহ "চারটি পবিত্র মাস কিনা" তা নিয়েই দন্দে আছেন।
এখন যেভাবে হজ পালন করা হচ্ছে, সেটা যেহেতু সহী পথেই হচ্ছে, সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেভাবে পালন করাই হজ আদায়ের জন্য যথেষ্ট। তবে কেন আল্লাহতায়ালা দিনসমূহ না বলে মাসসমূহের কথা বললেন- তা ভাববার বিষয় বৈকি।
বর্তমানে পৃথিবীতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২০৮ কোটিতে পৌছেছে। গত বছরের তুলনায় যা প্রায় ৪ কোটি বেশি। ভবিষ্যতে যে তা এমনটি থাকবেনা তাতে কোন সন্দেহ নেই। যদি আজ থেকে ৫০০ – ৯০০ বছর পরে কখনো তা বর্তমানের তুলনায় ৯ – ১০ গুণ বেশিতে গিয়ে ঠেকে, তখন প্রতি বছর হাজীদের সংখ্যাই দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটিতে। যা বর্তমানে সমগ্র সৌদি আরবের জনসংখ্যার প্রায় ২ গুণেরও বেশি। সুতরাং সেই সময় তো অনেক কিছুই নুতন কোরে ভাবতে হবে। তবে সেই ভাবনা ও পরিকল্পনা নিশ্চয় মৌল কিতাব আল-কোরআনের দিকনির্দেশনাকে উপেক্ষা কোরে নয়। কিয়ামত পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেবার জন্য যতটুকু স্বাধীনতা, সুযোগ ও শিথিলতা মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সার্বজনীন কিতাবে দিয়ে রেখেছেন- তার অনেক কিছুই এখন বেমানান ঠেকলেও, সুদূর ভবিষ্যতে সংকট উত্তরণে সেই চরম সত্যকে বাস্তবায়ন করা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
রাসূলের (সাঃ) সহী হাদিছকে উপেক্ষা করা কিংবা হাদিছের দোহাই দিয়ে কুরআনের পরিষ্কার নির্দেশনাকে একেবারে নাকচ কোরে দেয়া- আমার কর্মের সাথে খাপ খায় না। তাই এসবের গুরু দায়িত্ব ভবিষ্যত যোগ্য প্রজন্মের হাতেই ন্যাস্ত থাক। সময়ের প্রয়োজনে ও বিশ্বাসী মানুষের কল্যাণে তারাই সেই পরম সত্য সমূহকে প্রকাশ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন কোরে নেবেন।
আপনি যে বিষয়টির অবতারণা করেছেন, শুধুমাত্র তার কারণে আপনাকে হাদিছ অস্বীকারকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা আমার বিচারে সঠিক নয়।
অহেতুক আপনাকে কিংবা কাউকেই তার স্বাধীন মত প্রকাশে বাঁধা দেয়ার পক্ষপাতি আমি নই। তবে সরাসরি পবিত্র গ্রন্থ কুরআন ও রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা কটূক্তি করা হলে একজন মুসলিম হিসেবে সেই ধরনের বক্তব্যর বিরোধীতা ও কাটছাট করার পক্ষেই আমি থাকব। তবে আপনার ক্ষেত্রে সেটা এখনও প্রযোজ্য নয় বলেই আমার মনে হয়।
যারা দলিয়ো মতামত কিংবা ধর্মের বাণী প্রচার ও প্রসারে কাজ করছেন তাদেরকে অবশ্যই সহনশীল, জ্ঞানী ও উদার মনোভাবাপন্ন হতে হয়। তাদের মনে রাখতে হবে যে, মানুষ মাত্রই চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে এবং ভিন্নতা থাকতেই পারে। যতটা পারা যায় কারো মত প্রকাশে বাঁধা দেয়া মোটেই উচিত নয়। কারণ তাহলে ভুল শুধরানোর সুযোগ দেয়া ও নেয়ার পথটি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তা চেতনা বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় এবং এক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের গড়া একটি সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই বলে আবার ভাববেন না যে আমি নিজস্বতাকে উপেক্ষা কোরে মিথ্যা ও মন্দকে আলিঙ্গন করার কথা বলছি। না, কখনই না। তবে আমাদের মনে রাখা উচিত, স্বকিয়তা অক্ষুন্ন রেখেই নতুনকে গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জন করতে না পারলে কোন জনগোষ্ঠী যতই উচ্চমর্যাদার দাবিদার হোক না কেন, নিঃসন্দেহে তারা সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পিছিয়ে যেতে বাধ্য।
ধন্যবাদ-
...........................
আমার জবাব-
না ভাই, আমার মধ্যে কোন দন্দ নেই। মহান আল্লাহর দলিলই যথেষ্ট। এর পরে আর কোন দলিলের প্রয়োজন নাই।
যতই দিন যাচ্ছে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে সকল ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যাও বাড়ছে, বিশেষ কোরে ইসলামের অনুসারীদের বৃদ্ধির যে হার তাতে ভবিষ্যতে হজের জন্য মনুষ্য নির্ধারিত কয়েকটি দিন যথেষ্ট হবেনা, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আল্টিমেটলি মহান আল্লাহর সুনির্ধারিত চারটি মাসকে রেশনিং পদ্ধতিতে ভাগ কোরে হজের ব্যবস্থা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৬