আল-কোরআন অনুসারে বুঝে শুনে হাদিছ মানার বিষয়ে বক্তব্য পেশ করায় আমাকে অনেক সময় আল-কুরানি ও হাদিছ অস্বীকারকারী হিসেবে আখ্যা দেযা হয়ে থাকে। আমি কত ওয়াক্ত সালাত আদায় করি তা নিয়েও প্রায়শই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ইসলামের মৌল গ্রন্থ আল-কোরআনে সালাত/ নামাজ সম্পর্কে কোন স্পষ্ট নির্দেশ আছে কিনা সে বিষয়ে এবং সেই সাথে সালাত সম্পর্কে আমি যা জানি, বিশ্বাস করি ও মানি তা সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
সালাত অর্থাৎ নামাজ মুসলিমদের জন্য মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে সবচেযে বড় উপহার। সোকেসে সাজিয়ে রাখার জন্য নয় বা প্রাণহীন অঙ্গভঙ্গির জন্যও নয়, বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে এর শাশ্বত সৌন্দর্যকে উপলব্ধির মধ্য দিয়ে আত্মিক উন্নতি অর্জন ও কল্যাণপ্রাপ্ত হওয়ার জন্যই এই অমূল্য উপহারটি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ইমানদার হওয়ার পরও ছোটখাট মতভেদের কারনে কঠিন ভেবে অনেকে নামাজ থেকে পালিয়ে বেড়ান। তাই নামাজ কায়েমের পদ্ধতিকে ভীতিপ্রদ ও জটিল নয়, বরং রাসূলের (সাঃ) প্রদর্শিত সহজ-সরল পন্থায় সবার সামনে উপস্থাপন করা চাই। মূলত অজ্ঞতার কারনেই মানুষ স্রষ্টা প্রদত্ত শান্তি প্রাপ্তির এই বেহেস্তি নেয়ামতের পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাই সত্য তথ্য যেমন নিজেকে জানতে হবে, তেমনি অন্যকে জানানোর প্রয়াস নিতে হবে। কারন নামাজকে উপেক্ষা করা বা শুধুমাত্র লোকদেখানো গৎবাধা ক্রিয়াকর্ম হিসেবে নেয়া নয়, বরং বিশুদ্ধ চিত্তে ও রাসূলের (সাঃ) প্রদর্শিত সহজ-সরল পন্থায় নামাজ কায়েমের মধ্যেই বিশ্বাসীদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।
আল-কোরআনে নামাজ কায়েম অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ-
আল-কোরআন-
সূরা ত্বোয়া-হা (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২০:১৪) অর্থ- আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম/প্রতিষ্ঠা কর।
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:১০৩) অর্থ- অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন সালাত/নামায কায়েম/প্রতিষ্ঠা কর। প্রকৃত পক্ষে সালাত/নামায বিশ্বাসীদের উপর সুনির্দিষ্ট সময়েই ফরয করা হয়েছে।
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০২:৪৩) অর্থ- আর নামায কায়েম/প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দান কর এবং রুকু কর রুকুকারীদের সাথে।
(০২:১১০) অর্থ- তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।
আল-কোরআনে সরাসরি 'পাঁচ' শব্দটি না থাকলেও যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা থেকে দৈনিক 'পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ' যে মুসলিমদের জন্য ফরজ করা হয়েছে তা স্পষ্ট। রাসূল (সাঃ) নিজে মসজিদে উপস্থিত থেকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করেছেন এবং নামাজের প্রতিটি ধাপ কিভাবে সম্পন্ন করতে হবে অন্যদেরকেও তা হাতে-কলমে শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই বাস্তব শিক্ষাটি সব কালে এবং বর্তমানেও সেভাবেই পালন করা হচ্ছে। তাই ফরজ নামাজের ওয়াক্ত নিয়ে কারো মধ্যেই তেমন কোন দ্বিমত নেই। আর ফরজ নামাজের রাকাতের বিষয়টি এতটাই প্র্যাকটিকাল যে, সবকালেই পৃথিবীর সর্বত্র সব মুসলিমই ফজরের ২ রাকাত, জুহুরের ৪ রাকাত, আছরের ৪ রাকাত, মাগরীবের ৩ রাকাত এবং ইশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজ নির্দ্বিধায় আদায় করেছেন, এখনও করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। আল-কোরআনে (০৪:১০৩) সুনির্দিষ্ট সময়েই নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে। সেই দিকনির্দেশনা অনুসারে দিনের বিশেষ বিশেষ সময়ের যে হিসেবে পাওয়া যায় তাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় সূচী স্পষ্টভাবেই বুঝে নেয়া যায়।
কোন কোন সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করতে হবে সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা-
১/ ফজর- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪), (০৭:২০৫), (৩০:১৭), (৩৮:১৮) ও (৫০:৩৯)
২/ জহুর- আয়াত নং (১৭:৭৮), (৩০:১৮) ও (৫০:৩৯)
৩/ আছর- আয়াত নং (১১:১১৪), (০২:২৩৮), (৩০:১৭) ও (৩৮:১৮)
৪/ মাগরিব- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪) ও (০৭:২০৫)
৫/ ইশা- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪), (৩০:১৮) ও (৫০:৪০)
...................................................
"ফজর সালাতের" নির্দেশ-
সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(০৭:২০৫) অর্থ- আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে (ফজর) ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না।
bil-ghuduwi= in the mornings
wal-āṣāli= and (in) the evenings
সূরা আর-রূম (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩০:১৭) অর্থ- সুতরাং আল্লাহর মহিমা স্মরণ কর সূর্যাস্তের পূর্বে (যখন তোমরা সন্ধ্যায় পৌঁছাও) এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) (যখন তোমরা সকালে পৌঁছাও)।
ḥīna= when
waḥīna= and when
tum'sūna= you reach the evening
tuṣ'biḥūna= you reach the morning
'Times of the Prayers' of Sahih Bukhari.
529: Narrated Qais: Jarir said, "We were with the Prophet and he looked at the moon--full-moon--and said, 'Certainly you will see your Lord as you see this moon and you will have no trouble in seeing Him. So if you can avoid missing (through sleep or business, etc.) a prayer before the sun-rise (Fajr) and a prayer before sunset ('Asr), you must do so.' He then recited Allah's Statement: And celebrate the praises Of your Lord before The rising of the sun And before (its) setting." (50.39) Isma'il said, "Offer those prayers and do not miss them.
সূরা ছোয়াদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩৮:১৮) অর্থ- আমি পর্বতমালাকে তার অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকালে (ফজর) ও বিকালে তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত;
(bil-ghuduwi= in the mornings)
bil-'ashiyi= in the afternoon
সূরা ক্বাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৫০:৩৯) অর্থ- অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
......................................................
"জহুর সালাতের" নির্দেশ-
সূরা আর-রূম (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩০:১৮) অর্থ- এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, নিশাকালে এবং যখন তোমরা মধ্যাহ্নে (জহুর) থাক।
wa'ashiyyan= and (at) night
tuẓ'hirūna= you are at noon
..................................................
"আছর সালাতের" নির্দেশ-
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০২:২৩৮) অর্থ- সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের (আছর) ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।
(১/ ফজর -> ২/ জহুর -> ৩/ মধ্যবর্তী নামায = আছর -> ৪/ মাগরিব -> ৫/ ইশা)
(wal-ṣalati= and the prayer)
(l-wus'ṭā= the middle)
Tafsir Ibn Kathir - Quran Tafsir
Furthermore, Allah has specifically mentioned the Middle prayer, which is the `Asr prayer according to the majority of the scholars among the Companions,
সূরা ছোয়াদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩৮:১৮) অর্থ- আমি পর্বতমালাকে তার অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকালে ও বিকালে (আছর) তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত;
(bil-ghuduwi= in the mornings)
bil-'ashiyi= in the afternoon
সূরা ক্বাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৫০:৩৯) অর্থ- অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আছর) আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
................................................
"মাগরিব সালাতের" নির্দেশ-
সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(০৭:২০৫) অর্থ- আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে (ফজর) ও সন্ধ্যায় (মাগরিব)। আর বে-খবর থেকো না।
bil-ghuduwi= in the mornings
wal-āṣāli= and (in) the evenings
সূরা হুদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১১:১১৪) অর্থ- আর নামায প্রতিষ্টা কর দিনের দুই প্রান্তেই (ফজর ও আছর) এবং রাতের নিকটবর্তী অংশে (মাগরিব ও ইশা); প্রকৃতপক্ষে সৎকর্ম অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।
.................................................
"ইশা সালাতের" নির্দেশ-
সূরা আর-রূম (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩০:১৮) অর্থ- এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, নিশাকালে (ইশা) এবং যখন তোমরা মধ্যাহ্নে (জহুর) থাক।
wa'ashiyyan= and (at) night
tuẓ'hirūna= you are at noon
সূরা ক্বাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৫০:৪০) অর্থ- রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও।
সূরা হুদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১১:১১৪) অর্থ- আর নামায প্রতিষ্টা কর দিনের দুই প্রান্তেই (ফজর ও আছর) এবং রাতের নিকটবর্তী অংশে (মাগরিব ও ইশা); প্রকৃতপক্ষে সৎকর্ম অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।
.....................................................
অতএব দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েমের নির্দেশ-
আল-কোরআন -
সূরা বনী ইসরাঈল (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১৭:৭৮) অর্থ- নামায কায়েম করুন সূর্য ঢলে পড়ার সময় (জহুর ও আছরের নামাজ) থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত (মাগরিব ও ইশার নামাজ) এবং প্রত্যুষের কোরআন পাঠ (ফজরের নামাজ); প্রকৃত পক্ষে প্রত্যুষের কোরআন পাঠ তো সাক্ষী-স্বরূপ।
Tafsir Ibn Kathir - Quran Tafsir
(Perform the Salat from midday.) Hushaym narrated from Mughirah from Ash-Sha`bi from Ibn `Abbas: "Midday means when the sun is at its zenith.'' This was also reported by Nafi` from Ibn `Umar, and by Malik in his Tafsir from Az-Zuhri from Ibn `Umar. This was the opinion of Abu Barzah Al-Aslami and Mujahid, and of Al-Hasan, Ad-Dahhak, Abu Ja`far Al-Baqir and Qatadah. It is also understood to generally ﴾ refer to the times of the five prayers. ﴿ Allah said;
(from midday till the darkness of the night,) meaning darkness, or it was said, sunset. This was understood to mean Zuhr `Asr, Maghrib and `Isha'.
(and recite the Qur'an in the early dawn.) meaning Salat Al-Fajr
সূরা হুদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১১:১১৪) অর্থ- আর নামায প্রতিষ্টা কর দিনের দুই প্রান্তেই (ফজর ও আছর) এবং রাতের নিকটবর্তী অংশে (মাগরিব ও ইশা); প্রকৃতপক্ষে সৎকর্ম অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।
Tafsir Ibn Kathir - Quran Tafsir
(And perform the Salah, at the two ends of the day) "This is referring to the morning prayer (Subh) and the evening prayer (Maghrib).'' The same was said by Al-Hasan and `Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam. In one narration reported by Qatadah, Ad-Dahhak and others, Al-Hasan said, "It means the morning prayer (Subh) and the late afternoon prayer (`Asr).'' Mujahid said, "It is the morning prayer at the beginning of the day and the noon prayer (Zuhr) and late afternoon prayer (`Asr) at the end of the day.'' This was also said by Muhammad bin Ka`b Al-Qurazi and Ad-Dahhak in one narration from him.
(and in some hours of the night.) Ibn `Abbas, Mujahid, Al-Hasan and others said, "This means the night prayer (`Isha').'' Ibn Al-Mubarak reported from Mubarak bin Fadalah that Al-Hasan said,
(and in some hours of the night.) "This means the evening (Maghrib) and late night (`Isha') prayers. The Messenger of Allah said, (They are the approach of the night: Maghrib and `Isha'.) The same was said by Mujahid, Muhammad bin Ka`b, Qatadah and Ad-Dahhak (that this means the Maghrib and `Isha' prayers).
....................................................
নামাজের সময় কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়ানো, কোরআনের কিছু অংশ পাঠ এবং রুকু ও সিজদা করার নির্দেশ-
আল-কোরআন -
কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ-
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০২:১৪২) অর্থ- এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।
(০২:১৪৪) অর্থ- নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের (কাবা) দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে।
(০২:১৪৮) অর্থ- আর প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে একেকটা কিবালা/দিক, যে দিকে সে মুখ করে; অতএব তোমরা সৎকাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতা কর। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
(০২:১৪৯) অর্থ- আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের (কাবা) দিকে ফেরাও- নিঃসন্দেহে এটাই হলো তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাস্তব সত্য। বস্তুতঃ তোমার পালনকর্তা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবহিত নন।
(০২:১৫০) অর্থ- আর তুমি যেখান থেকেই বেরিয়ে আস এবং যেখানেই অবস্থান কর না কেন, সেদিকেই (কাবা) মুখ ফেরাও, যাতে করে মানুষের জন্য তোমাদের সাথে ঝগড়া করার অবকাশ না থাকে। অবশ্য যারা অবিবেচক, তাদের কথা আলাদা। কাজেই তাদের আপত্তিতে ভীত হয়ো না। আমাকেই ভয় কর। যাতে আমি তোমাদের জন্যে আমার অনুগ্রহ সমূহ পূর্ণ করে দেই এবং তাতে যেন তোমরা সরলপথ প্রাপ্ত হও।
কোরআনের কিছু অংশ পাঠ করার নির্দেশ -
সূরা আল আনকাবুত (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২৯:৪৫) অর্থ- আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদৃষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।
সূরা মুযযামমিল (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৭৩:২০) অর্থ- আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর; তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
রুকু ও সিজদা করার নির্দেশ-
সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(০৭:২০৬) অর্থ- নিশ্চয়ই যারা তোমার পরওয়ারদেগারের সান্নিধ্যে রয়েছে, তারা তাঁর বন্দেগীর ব্যাপারে অহঙ্কার করে না এবং স্মরণ করে তাঁর পবিত্র সত্তাকে; আর তাঁকেই সেজদা করে। [সেজদাহ্]
সূরা আত তওবা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৯:১১২) অর্থ- ওরা তওবা (অনুতাপ) করে, উপাসনা করে, আল্লাহর প্রশংসা করে, রোজাব্রত পালন করে, রুকু ও সিজদা করে, সৎকর্মের নির্দেশ দেয়, অসৎ কর্ম নিষেধ করে, এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণ করে; তুমি বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দাও।
নামাজের আগে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল/ ওজু/ তইয়ম্মুম এর নির্দেশ-
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:৪৩) অর্থ- হে ঈমাণদারগণ! নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা যখন তোমরা নেশাগ্রস্ত থাক, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, আর নাপাক অবস্থাতেও না, যতক্ষণ না গোসল করে নাও, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা তোমরা নারীদের সংস্পর্শে আস এবং পানি না পাও, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও- তখন মুখমন্ডল ও হাতকে মোছেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।
সূরা আল মায়েদাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৫:০৬) অর্থ- হে ঈমাণদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। আর যদি তোমরা অপবিত্র/ নাপাক থাক, তখন বিশেষভাবে পবিত্র হয়ে নাও, আর যদি তোমরা রুগ্ণ হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা নারীদের সংস্পর্শে আস, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পাক-পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তখন তোমাদের মুখ-মন্ডল ও হাতগুলো মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।
নামাজের সময় গঠনগত বিশেষ সৌন্দর্যকে ঢাকার জন্য পোষাক পরিধানের নির্দেশ-
সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(০৭:২৬) অর্থ- হে বনী-আদম! আমরা তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা নিবারণ করে এবং যা শোভাবর্ধক; আর তাকওয়া/ পরহেজগারী/ আল্লাহভীতির পোশাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
(০৭:৩১) অর্থ- হে বনী-আদম! তোমাদের গঠনগত বিশেষ সৌন্দর্যকে ধরে রাখ (ঢেকে নাও) প্রত্যেক (নামাজের সময়) মসজিদের/ সিজদা-স্থলের/ ইবাদতগাহের সন্নিকটে এলে; খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।
নামাজের পূর্বে (০৪:৪৩), (০৫:০৬) পাক-পবিত্র হওয়া এবং নামাজের সময় (০৭:৩১) শরীরের গঠনগত বিশেস সৌন্দর্যকে ঢাকার জন্য (০৭:২৬) পোষাক পরিধান করা, (০২:১৪৪) কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে স্মরন করা, (৭৩:২০) আল-কোরআনের কিছু অংশ পাঠ এবং (০২:৪৩), (০৯:১১২) রুকু ও সিজদা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই নামাজে এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে মেনে চলার চেষ্টা করা মুসলিমদের জন্য ফরজ।
আল্লাহতায়ালার নির্দেশানুযায়ী রাসূলের (সাঃ) অনুসরণ করা সম্পর্কীত আল-কোরআনের বাণী-
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:৬৪) অর্থ- বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তার অনুসরণ করা হয়। যখন তারা নিজেদের উপর জুলুম করেছিল, তখন যদি তোমার কাছে আসত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম-দয়ালু রূপেই পেত।
সূরা আল আহযাব (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৩৩:২১) অর্থ- নিশ্চয় তোমাদের জন্যে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে, যে কারো জন্যই যিনি আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,
আমরা আগেই দেখেছি যে, আল-কো্রআনে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত/নামাজ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (৩৩:২১) নং আয়াতে জানিয়ে দেয়া হলো, রাসূলের (সাঃ) মধ্যে বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম নমুনা রয়েছে। কাজেই (০৪:৬৪) নং আয়াত অনুসারে আল-কোরআনে প্রদত্ত আল্লাহতায়ালার স্পষ্ট নির্দেশানুযায়ী রাসূলের (সাঃ) অনুসরণ করাই উত্তম। ছোটখাট মতভেদ ভুলে রাসূল (সাঃ) যেভাবে নামাজ কায়েম/প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর দেখানো সেই নিয়ম ও সময়ের মধ্যে যথাযথভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম/প্রতিষ্ঠার জন্য সহী হাদিছ অনুসারে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে নামাজের সময় মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করা, কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়ানো, কোরআনের কিছু অংশ পাঠ এবং রুকু ও সিজদা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ এবং এ ক্ষেত্রে রাসূলের (সাঃ) দেখানো পদ্ধতিকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহতায়ালা যেন সত্যকে জানার ও সঠিকভাবে মানার এবং তাঁর প্রদর্শিত সরল পথে চলার তৌফিক দান করেন-
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৮