এই হাদিছটি উল্লেখ কোরে একজন প্রশ্ন করলেন-
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৩ :: অধ্যায় ৪৭ :: হাদিস ৭৬৫
ইয়াহইয়া ইব্ন বুকায়র (রঃ)……….. মায়মূনা বিনত হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) এর অনুমতি না নিয়ে তিনি আপন বাদীকে আযাদ করে দিলেন। তারপর তার ঘরে নবী (সাঃ) এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! আপনি কি জানেন আমি আমার বাদী আযাদ করে দিয়েছে? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ ? মায়মূনা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শুনো ! তুমি যদি তোমার মামাদেরকে এটা দান করতে তাহলে তোমার জন্য তা অধিক পুণ্যের হত। অন্য সনদে বাকর ইব্ন মুযার (রঃ) …………. কুবায়ব (র) থেকে বর্ণিত যে, মায়মুনা (রাঃ) গোলাম আযাদ করেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো-
১/ দাসদের মুক্তি দেওয়া ও অন্য কাউকে দান করে দেওয়ার মধ্যে কোনটাকে সেই সময়ে উত্তম মনে করা হতো?
২/ উপরের হাদিস থেকে আপনার কি মনে হয়? রসূল সোঃ) ঐ দাসীকে মুক্ত করতে আদৌ আগ্রহি ছিলেন কিনা?
৩/ এই হাদীস এর গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে দ্বিমত থাকলে জানাবেন।
............................................................
(হাদিছটির গ্রহণযোগ্যতা নয়, বরং এর ব্যাখ্যার গ্রহণযোগ্যতা কতটা তা নিয়ে নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে)
............................................................
জবাব দাতা বললেন-
আল-কোরআন-
সূরা আল বালাদ (মক্কায় অবতীর্ণ )-
(৯০:১০) অর্থ- বস্তুতঃ আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি।
(৯০:১১) অর্থ- অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি।
(৯০:১২) অর্থ- আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি?
(৯০:১৩) অর্থ- তা হচ্ছে দাসমুক্তি
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ )-
(২:১৭৭) অর্থ- সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
আল-কোরআনের প্রত্যক্ষ নির্দেশ যেখানে দাসমুক্তির কথা বলে, সেখানে পরোক্ষভাবে কোন হাদিছের হাওলা দিয়ে আল্লাহর বাণীর বিপরীত নির্দেশ রাসূল (সাঃ) কখনই দিতে পারেন না। মুক্ত করে দেয়া কোন দাস/দাসিকে আবারও বন্দী জীবনে ফিরিয়ে দেবার কথা রাসূল (সাঃ) ভেবেছেন, এমনটি ভাবাও গোনাহ্। সম্ভবত এই হাদিছের বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় নাই। কিংবা নিজেদের স্বার্থে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে-
...........................................................
প্রশ্ন কর্তার প্রশ্ন ও মন্তব্য-
আপনি বলেছেন-//মুক্ত করে দেয়া কোন দাস/ দাসিকে আবারও বন্দী জীবনে ফিরিয়ে দেবার কথা রাসূল (সাঃ) ভেবেছেন, এমনটি ভাবাও গোনাহ্।//
উপরের হাদিসটি আরেকবার পড়ে দেখুন......
মুক্ত করে দেয়া কোন দাস/ দাসিকে আবারও বন্দী জীবনে ফিরিয়ে দেবার কথা রাসূল (সাঃ) ভেবেছেন..
উপরের হাদিস এইরকম কোন ধারনা দেয় না।
হাদিসে মুহাম্মদ (সাঃ) হযরত মায়মুনা বিন্তে আল হারিসা কে একটি উপদেশ দিয়েছেন, তা হল....
দাসী মুক্ত না করে বরং তোমার চাচা/মামা কে দিয়ে দিলেই অধিক সওয়াব পেতে....
এখানে মুক্ত করে দেয়া কোন দাস/দাসিকে আবারও বন্দী জীবনে ফিরিয়ে দেবার কথা বলা হয়নি,
যে জন্য আমি আপনার কাছে জানতে চেয়েছি ..রসূল সোঃ) ঐ দাসীকে মুক্ত করতে আদৌ আগ্রহি ছিলেন কিনা?
ধন্যবাদ।
.................................................
জবাব দাতা বললেন-
Volume 3, Book 47, Number 765
Narrated Kurib: the freed slave of Ibn 'Abbas, that Maimuna bint Al-Harith told him that she manumitted a slave-girl without taking the permission of the Prophet. On the day when it was her turn to be with the Prophet, she said, "Do you know, O Allah's Apostle, that I have manumitted my slave-girl?" He said, "Have you really?" She replied in the affirmative. He said, "You would have got more reward if you had given her (i.e. the slave-girl) to one of your maternal uncles."
আপনি বলেছেন- //দাসী মুক্ত না করে বরং তোমার চাচা/মামা কে দিয়ে দিলেই অধিক সওয়াব পেতে..//
(দাসী মুক্ত না করে বরং) - এই অংশটা আপনি কোথায় পেলেন?
যেহেতু এখানে একের অধিক অর্থাৎ দুইটি বা দুইয়ের অধিক পুরষ্কার/ সোয়াব প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এখানে দাসমুক্তির সাথে সাথে সেই মুক্ত মেয়েটির ভাল-মন্দ তদারকির ভার তার মামার উপর অর্পণের ইংগিতই বহন করে-
এই কথার মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) ঐ দাসীকে মুক্ত করতে আদৌ আগ্রহী ছিলেন না- এমন উল্টোভাবে ভাবা ঠিক নয়।
........................................................
প্রশ্নকর্তা আবারও বললেন-
হযরত মায়মুনা বিন্তে আল হারিসা দাসীকে সত্যিকার অর্থে মুক্ত করেছিলেন তাই তিনি বলেছেন....(I have manumitted my slave-girl)
পক্ষান্তরে মুহাম্মদ (সাঃ) এর যে কথায় আপনি ......
//দাসমুক্তির সাথে সাথে সেই মুক্ত মেয়েটির ভাল-মন্দ তদারকির ভার তার মামার উপর অর্পণের ইংগিতই বহন করে-.......// বলছেন
সেখানে দাসী মুক্তির শব্দ টি (manumit) সম্পূর্ন অনুপস্হিত।
বলা হয়েছে.... (You would have got more reward if you had given her (i.e. the slave-girl) to one of your maternal uncles.")
আমরা একজন আরেকজনকে যেমন বই, বিভিন্ন প্রকার জিনিস পত্র উপহার হিসাবে দেই উপরের বোল্ড করা এই অংশটি //দাসী মুক্ত না করে বরং তোমার চাচা/ মামা কে দিয়ে দিলেই অধিক সওয়াব পেতে..// আমার কাছে তেমনটাই মনে হয়।
অন্তত এখানে দাসী মুক্তির শব্দ টি (manumit) অনুপস্হিত যা হযরত মায়মুনা বিন্তে আল হারিসার কথায় ছিল।
ধন্যবাদ।
.........................................................
জবাব দাতা বললেন-
যেহেতু (manumit) শব্দ টি হযরত মায়মুনা বিন্তে আল হারিসার কথায় ছিল। তাই তা আবারও উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিলনা।
আপনি উপহার হিসিবে দেয়ার কথা ভাবছেন- আপনার কাছে বা অন্য কারো কাছে এমনটি মনে হলে হতে পারে- কিন্তু আল-কোরআনের বিপরীত কোন চিন্তা-ভাবনা রাসূল (সাঃ) করেছেন- এমনতর মনগড়া ভাবনা ভাবা আমার / কোন বিশ্বাসীর) পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।
আমি সেই মুক্ত মেয়েটিকে অসহায়ভাবে একাকি ছেড়ে না দিয়ে মামার অভিভাবকত্বে দেয়ার কথা ভাবছি। কারণ মুক্ত মানুষকে উপহার হিসেবে দেয়া সম্ভব নয়, বরং ভল-মন্দ তদারকির জন্য কোন অভিভাবকের তত্তাবধানে দেয়া যেতে পারে।
ধন্যবাদ-
..........................................................
প্রশ্নকর্তা এবার বললেন-
এখন পর্যন্ত ধর্ম বিষয়ক আলোচনায় দুইজনের লেখা ভাল লাগে,আপনি তার মধ্যে একজন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
.........................................................
জবাব দাতা বললেন-
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই-
মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের জ্ঞানকে আরও বৃদ্ধি ও সহীহ্ করে দেন-
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৮