বছরের দুইটি দিন সন্ধ্যা রাত থেকে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম। অবশ্য রোযার সময় সেই অপেক্ষাটা ছিলো অন্য রকম আনন্দের। আব্বার জন্য অপেক্ষা। ঢাকা থেকে বাড়ি আসবেন ঈদের পোশাক নিয়ে। সেই অপেক্ষা! কিন্তু আব্বা অফিস শেষ করে ইফতার করে আমাদের জন্য কেনাকাটা করতেন। তারপরেই রওয়ানা হতেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। অবশেষে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মধ্যরাত। ততক্ষণে আমি ঘুমিয়ে কাদা। তবু আব্বা সেই মধ্যরাতেই ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যখন খেতে বসতেন, তখন আমাকেও ঘুম থেকে ডেকে তোলা হতো। আব্বার সাথে বসে ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়ে খাওয়ার জন্য আর ঈদের পোশাক দেখার জন্য। আমিই ঘরের বড় সন্তান ছিলাম বিধায় আদরটা একটু বেশিই পেয়েছি। তাছাড়া ভাইকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা যাবে না বলে ওকে ডাকাও হতো না সেই মধ্যরাত্রিতে। শেষবার যখন গ্রামে ঈদ করলাম, আব্বা তখন আমার জন্য নিয়ে গেলেন গাঢ় সোনালী রংয়ের একটি স্কার্ট আর কালো রংয়ের এক জোড়া পাম্পশু। স্কার্টের দাম কত ছিলো জানা হয়নি তখন। তবে জুতা জোড়া ছিলো আমার কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। আব্বাকে অনেক আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম সেই বার ঈদে আমাকে এক জোড়া পাম্পশু কিনে দেওয়ার জন্য। তাই একশত টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই জুতা জোড়া। ওহ! সাথে বেড়ালের তুলতুলে নরম শরীরের মত মখমল কাপড়ের কালো রংয়ের একটা ভ্যানিটি ব্যাগ। আব্বা বাড়ি যেতেন আটাশ বা ঊনত্রিশ রোযার সময়। তাই ঈদের আগের দুই দিন সযতনে লুকিয়ে রাখতাম সেসব কমদামী কিন্তু মহামূল্যবান পোষাকগুলো। আব্বা হয়তো সেগুলো তখন কিনে নিয়ে যেতেন ঢাকার কোন হকার মার্কেট থেকে। কিন্তু সেসব কমদামী কেনাকাটি আমাদের মুখে সুখের হাসি ফোটানোর জন্য ছিলো প্রয়োজনের চেয়েও বেশির মতই। সকালে ঈদের পোষাক পরে সেমাই খাওয়া। তারপর সেই কালো ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে চাচাতো বোনদের সাথে পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়ি যাওয়া। অঁজো পাড়া গাঁ। সালাম করলে সালামি পেতাম দুই টাকা করে, সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা, তবে সেটা খুব স্বচ্ছল পরিবার হলে পাওয়া যেতো। কিন্তু কারো বাড়ি থেকেই খালি হাতে ফেরানো হতো না। তবে সেই দুই টাকা সালামি পাবার আনন্দ যে কতখানি নিখাদ ছিলো সে বলে বোঝানো যাবে না। হাজার টাকা সালামিতেও এখন সেই আনন্দ লেশমাত্রও খঁজে পাই না। খুজতে গেলে কেবল ওয়ার্ডসওয়ার্থের সেই লাইন দুটি খুঁজে পাই _____________
But yet I know, where'er I go,
That there hath past away a glory from the earth.