somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিভোর্স, একটি মেয়ে ও সমাজ (পর্ব -২)

২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিভোর্স, একটি মেয়ে ও সমাজ (পর্ব -২)

আয়মান এক্ষেত্রে হয়তো তৎক্ষণাৎ তার অভিভাবকদের জানাতে পারতো, বাবার বাড়ি যেতে পারতো কিংবা শ্বশুড়ালয়ের কারো কাছে অভিযোগ করতে পারতো। কিন্তু তার বাবার বাড়ি আর শ্বশুড় বাড়ির দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় বাবার বাড়ির কারো শরণাপন্ন হতে পারলো না, আর শ্বশুড়বাড়ির কেউ তার প্রতি সদয় না থাকায় কারো কাছেই অভিযোগ করতে পারলো না। বিয়ে করে প্রবাসে যাবার পর প্রথমবার স্বামীর দেশে আসা। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক থাকার কথা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। মেয়েটি এধরনের দুর্ব্যবহার স্বামী দেশে থাকাকালীন তিন মাস সহ্য করলেও ডিভোর্সের কথা বলেনি। বরং বিয়েতে প্রাপ্ত গলার গহনাটিও বিক্রি করে দেয় স্বামীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য। কিন্তু এরপর স্বামী আবার ছুটি শেষে প্রবাসে চলে যাবার পর শুরু হল আরো ঝামেলা। পরবর্তিতে আবার এগারো মাস পরেই স্বামী আয়মানকে না জানিয়েই দেশে আসে। স্বামী এসে ঐ রাতেই আয়মানকে বড় দুই ভাইসহ নিতে আসলে আয়মানের বাবা তাকে তখন দিল না। আয়মানের বাবা-মা মেয়ের বিচ্ছেদের কথা চিন্তা করে। তাই আর মেয়েকে স্বামীর সাথে পাঠায়নি। কিন্তগুণধর মেয়ে জামাই ও তার শ্বশুড়ালয়ের লোকেরা আয়মানদের পুরো এলাকা হন্নে হয়ে বলে বেড়ালো মেয়েটির অন্য এক ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল এবং তাকে সেখানে পাত্রস্থ করা হয়েছে। তাই আয়মানের বাবা মা এখন তাকে দিতে চাচ্ছে না। এক পর্যায়ে আয়মানের বাবাকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আসামী করে মামলা দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। আয়মান দেন মোহরানার দাবি ছেড়ে দিয়ে তালাকের কথা বললেও স্বামীর বাড়ির লোকজন টাকা আত্মসাতের হুমকি দেয়। মোহরানার দাবি ছাড়ার পর হয়তো অন্যক্ষেত্রে এত ঝামেলা হবার কথা ছিল না। যেহেতু মেয়ে অর্ধেক জমির মালকিন, তাই তারা টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, ও দশ ভরি স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগ এনে জমির মালিকানা আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকায় শালিস ডাকা হলে সেখানে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে না। ফলে স্বামী আর জমির মালিকানা পুরোটা আদায়ের সুযোগ পায় না। ফলে এলাকার মুরুব্বিরা মেয়ের খোরপোষের বহণ, পড়ালেখা করানোর দায়িত্ব স্বামীকে বহণ করতে হবে এই মর্মে আবার বলতে গেলে একরকম জোরপূর্বকই মিটমাট করে দেওয়া হয়। আয়মান অর্ধেক জমির মালকিন না হলে বোধহয় বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বামীর এত আপত্তি থাকতো না। আর আয়মানও সমাজে তার পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে যেতে রাজি হয়। এই ঘটনার পর স্বামী আবার প্রবাসে চলে যায় প্রায় এক বছর হয়। এবার ভরণপোষণের টাকা দিলেও দু'জনার মধ্যেকার দূরত্বটা কিছুতেই কমলো না। বরং বেড়েই চলেছে। মানসিক নির্যাতনও সেই আগের মতই আছে। দুরত্বটা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়েই চলে গিয়েছে যে আয়মান আর এখন একসাথে থাকার কথা ভাবতে পারে না। কিন্তু ডিভোর্সের কথাও জোর দিয়ে পরিবারে বলতে পারে না। কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। আমাদের সমাজে ডিভোর্সড একটি মেয়েকে নব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই ভাল চোখে দেখা হয় না। শরঞ্চলে এই প্রভাব কিছুটা কম হলেও মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে নেতিবাচক চোখে দেখা হয়। ছেলে ডিভোর্স দেক বা মেয়ে ডিভোর্স দেক, দোষী হিসেবে মেয়েটিকেই দেখা হয়। মেয়েটি যখন ঘর হতে বের হয় তখন আড়চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নানা সমালোচনা করা হয়। আর ডিভোর্সের পরে যখন মেয়েটির আবার বিয়ের কথা চিন্তা করা হয়, তখন পাত্র হিসেবে সকলে আরেকজন ডিভোর্সড বা মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিকেই হাজির করে। যদিও একজন ডিভোর্সড ছেলে অনায়াসেই একজন অবিবাহিতা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে ফেলতে পারে। একজন ডিভোর্সড মেয়েকে অবিবাহিত ছেলের জন্য ঘরের বউ করে আনার ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা চিন্তা করে, মেয়েটি ভাল হলে প্রথম স্বামীর ঘর করলো না কেন? আর ছেলেরা চিন্তা করে তাদের যৌন তৃপ্তির কথা। কারণ একজন কুমারী মেয়ে আর একজন ডিভোর্সড মেয়ে কখনো সমান যৌন তৃপ্তি দিতে সক্ষম নয়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, এটা প্রাকৃতিক অক্ষমতা। বিধাতা নারীকে সেই ক্ষমতা দেয়নি। অবশ্য ডিভোর্সড পাত্রী সুন্দরী হলে সেক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অবিবাহিত ছেলের বউ করেও নেয়া হয়। কিন্তু যখন একটি অসুন্দর ডিভোর্সড মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করা হয়, তখন মধ্যবয়স্ক আরেকজন ডিভোর্সড পুরুষকেই হাজির করা হয়। এক্ষেত্রে মেয়েটি শিক্ষিতা এবং অন্যান্য গুণের অধিকারিণী হলেও সেসব দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়।

সবশেষে একটি বিষয় লক্ষণীয়, ডিভোর্সড মেয়েদের পরবর্তিতে এতোটা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হলেও বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় সম্প্রতি ডিভোর্সের প্রবণতা বাড়ছে। ঢাকা টাইমসের ২৪শে এপ্রিল ২০১৪ ইং তারিখের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উত্তর অংশের জরিপ অনুযায়ী ২০১২ সালে ডিভোর্স হয়েছে ৩১৩৯টি, এর মধ্যে স্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ২৯৬৮টি এবং স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত ১৩১টি। ২০১৩ সালে ডিভোর্স হয়েছে মোট ৩৭৩২টি, স্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ৩৭০৮টি এবং স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত ২৪টি। ২০১৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ডিভোর্স হয়েছে ২৩৩টি, স্বমী কর্তৃক প্রদত্ত ২৬৯টি, স্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ৬৬৪টি।
ডিভোর্সের হার দ্রুত বাড়ার কারণ হিসেবে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার হার বৃদ্ধি, আর্থিক পরনির্ভরশীলতা হ্রাস ও ডিভোর্সের ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতা আগের চেয়ে শক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমি বলবো আরো একটি সূক্ষ কিন্তু মূল কারণ আমাদের দৃষ্টির অন্তরালেই রয়ে গেছে। সেটি হল স্বামী কর্তৃক ডিভোর্স হলে পুরো দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা ডিভোর্স দিলে দেনমোহরের টাকা মাফ করে ডিভোর্স দেয়। ফলে প্রায় সময়ই স্বামীর দোষ থাকলেও ডিভোর্সের কথা আসলেই স্বামী তার স্ত্রীকে ডিভোর্সের দিতে বলে। এতে করে মেয়েদের তরফ থেকেই ডিভোর্সের সংখ্যা সম্প্রতি বেড়েছে। তাই বলে ঢাকার এক অংশের জরিপ দেখে সারা দেশেই ডিভোর্সের ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে এটা ভাবার অবকাশ নেই।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×