১.
জীবনের এই সময়ে এসে নিজেকে বড় বেশি নিঃস্ব- রিক্ত লাগছে। এই হতভাগ্য জীবনে কিছুই পাইনি।যা পেয়েছি তা কেবল বুকের যন্ত্রণাই বাড়িয়েছে , আমার দারিদ্রের একমাত্র আত্মসম্মানবোধে কেবলই শেল হয়ে আঘাত করেছে-বারবার।
এই বুকের ভেতর তাই কষ্টের গভীর ক্ষত । কেউ বোঝেনা, বোঝারও কেউ নেই।
চেয়েছিলাম কবি হতে, শুন্য পকেট আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে কবি হতে পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছি।রুঢ় বাস্তবতা আমাকে কবি হতে দেয়নি। এক মুঠো সাদা ভাতের জন্য বাসের কন্টাকটারি থেকে শুরু করে মিনা বাজারের সেলসম্যান, আর টিউশনি করে বেরিয়েছি।তারপর, অনেকটা আশ্চর্যজনক ভাবেই কোন এক সরকারি ব্যাংকের প্রথম সারির “কেরানী”র চাকরি।
বাবা কে হারিয়েছি ১৫ বছর। ভালো করে তার চেহারাটাও মনে করতে পারিনা।প্রায় পথে বসা, দুটো এতিম সন্তান নিয়ে আমার বিধবা মায়ের যে কেমন করে দিন কেটেছে , তা কেবল আমরাই জানি। তবু সরকারি আনুকুল্যে পাওয়া মায়ের ছোট্ট চাকরি, বাবার অল্প পেনশন আর মায়ের দৃঢ়টায় আজ কত দূর আর কতটুকু আসতে পেরেছি, তা এখনো বুঝতে পারছিনা।
২.
৭ বছর। ২৫৫৫ দিন। মিনিট হিসেব করলে আরও বেশি।
কাকতালীয় ভাবে তার সঙ্গে পরিচয়। ভালোলাগা, ভালোবাসা।
সে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর, আমি নিম্ন। তবু ভালোবাসা কি আর অতসব বোঝে ?
ঝগড়া- রাগ-অভিমান-মান ভাঙ্গানো-ভালবাসা এমনি করে সময় চলে গেছে অনেকদিন।
চেয়েছি একসাথে আজীবন থাকার, আমৃত্যু ।
কিন্তু, সেই সম্পর্কের মাঝে বিভেদ, শ্রেণী বিভেদ যার নাম।
আমার ঢাকা শহরে কোন বাড়ি নাই, ফ্ল্যাট নাই, এমনকি গ্রামেও কোন ভিটা নাই।
আমার মতো কপর্দক এর হাতে কে তার মেহেদি রাঙ্গা হাত রাখবে?
ভালোবাসা তো এখন সস্তা সেন্টীমেন্ট। অর্থ- বিত্ত- বৈভব এর সুখের চেয়ে তা বড় বেশি তুচ্ছ, আবেদনহীন ।
আমি গাজীপুর নামের এক “গ্রাম্য” এলাকায় থাকি, মির্জাপুর নামে এক “মনুষ্য বাসযোগ্যহীন” এলাকায় চাকরি করি, যেখানে উঁচু তলার ফ্ল্যাট নাই, আলোর রোশনাই ছড়ানো দামি শপিংমল নাই, নামি রেস্টুরেন্ট এমনকি ভালো ফাস্টফুড ও নেই।
স্বর্গের দেবী কেন আসবেন এমন জাহান্নামে?
আমি দিন আনা দিন খাওয়া গরিব, আমার কি সাধ্য দামি গয়না, শাড়ি,কস্মেটিক দেবার আর বিদেশ বেড়াতে নিয়ে যাবার?
শুধু ভালোবাসা দিয়ে আর জীবন চলে? ছি!
এখানে ভালোবাসার প্রবেশিধাকাধার সংরক্ষিত কিংবা দূরত্ব বজায় রাখুন।
চাওয়া আর না পাওয়ার এই অপূর্ণতা ভেতরের অহংকারি মন বড় বেশি জেদি করে তোলে, ভালোবাসা বাস্প হয়ে তখন শুরু হয় ব্যক্তিগত অযোগ্যতার প্রতি তীর নিক্ষেপ। আর আমি সেই অদৃশ্য বিষ মাখা তীরের আঘাতে ছটফট করি।
৩.
এতকিছুর পরও ভালোবাসি, ভালোবেসে যাই-প্রতি নিয়ত।
বিষ মাখা তীরের আঘাতে আমি আজ হৃদরোগে আক্রান্ত। হয়ত খুব তাড়াতাড়ি এই কঠিন পৃথিবীর বাঁধন মুক্ত হবো।
তাই ভালো!
মানুষ যেহেতু, আমি তাই কখনই ভুলত্রুটির বাইরে নই।তাই, আমার যা ভুল তা ফুল ভেবে ক্ষমা করে দিতে করজোড়ে মিনতি করছি, ক্ষমা চাইছি।
তবে চাইনা, আমার প্রস্থানে কেউ তার চোখের জল ফেলুক, নয়ন জলে ভাসুক, কারণে বা অকারনেই।
আমার মতো তুচ্ছ মানুষের চেয়ে কারো চোখের জল যে অনেক বেশি মুল্যবান, দুর্লভ!
বিদায় বেলার মিনতি, মরিলে কান্দিস না আমার দায়...