সরকার সম্প্রচার নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করেছে। এটি তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বেশ কিছু সুপারিশসহ তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এই সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া নিয়ে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই জানেন না, এই খসড়া সম্প্রচার নীতিমালায় কী আছে। এখানে খসড়া নীতিমালাটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
এক. প্রস্তাবনা
বর্তমান বিশ্বে রেডিও এবং টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী গণমাধ্যম। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে সারা বিশ্বে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচার সংস্থার অনুষ্ঠানমালা অবলোকনের দ্বার এখন বাংলাদেশেও উন্মুক্ত। আধুনিক বিশ্বের সকল রেডিও এবং টেলিভিশন নিজস্ব প্রযোজনার বাইরেও বেসরকারি/বহিরাগত সৃজনশীল ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এতে করে রেডিও এবং টেলিভিশন প্রযোজিত ও বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত অনুষ্ঠানের মাঝে সৃজনশীল ও নান্দনিক অনুষ্ঠানের সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে বয়সের তারতম্য আছে। দর্শকরদের মধ্যে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী আছে যাদের ওপর রেডিও এবং টেলিভিশন গভীর রেখাপাত করে। যেহেতু পরিবারের বিভিন্ন বয়োগোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ যুগপৎভাবে অনুষ্ঠান দেখেন, সেহেতু তাদের ওপর রেখাপাতের মাত্রারও হেরফের ঘটে। রেডিও এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না সেগুলিও বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে।
এছাড়াও সম্প্রচারকৃত অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনসমূহের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। শিশুবান্ধব সমাজ তৈরিতে সম্প্রচার মাধ্যমের দায়িত্ব অপরিসীম। সামাজিক নৈতিকতার স্খলন রোধে তাই সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে বিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন। এসব বিবেচনার কথা মনে রেখেই প্রতিটি বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনের কার্যক্রম তদারকি/নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য নীতিমালা করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। সকল বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলকে নিজ দায়িত্বে যথাযথভাবে এই নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
দুই. বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশন লাইসেন্স
(১) সুষ্ঠু সম্প্রচার অবকাঠামো এবং কমপিটিটিভ বাজার তৈরির জন্য একটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক লাইসেন্স নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো:
১. এই নীতিমালার অধীনে তথ্য মন্ত্রণালয় হতে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদ্যমান বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশনসমূহকে অনধিক তিন (৩) মাসের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সকল বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশনসমূহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামগ্রিক ভূমিকা রেখেছে।
২. বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশনের জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্রের ভিত্তিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে হবে।
৩. নতুন লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন অনুসারে এবং জনস্বার্থে লাইসেন্সের জন্য নোটিশ প্রচার করবে।
৪. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সম্প্রচার বাজারের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এবং বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের বাৎসরিক আর্থিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করবে।
৫. লাইসেন্স আবেদনের জন্য প্রার্থিত প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণ আর্থিক, কারিগরি এবং প্রস্তাবিত গ্রাহকবৃন্দের বিবরণ ও বিস্তারিত অনুষ্ঠানসূচি জমা দিতে হবে।
৬. লাইসেন্সের আবেদন সকল বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
৭. ফ্রিকুয়েন্সি বরাদ্দের জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তরঙ্গ ও বেতার যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিটিআরসি কর্তৃক আরোপিত সকল শর্তাবলি মেনে চলতে হবে।
(২) লাইসেন্স আবেদনের মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে:
১. লাইসেন্স প্রক্রিয়া স্বচ্ছ অবৈষম্যমূলক এবং জবাবদিহিমূলক হবে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
২. এজন্য লাইসেন্স মূল্যায়নের জন্য সরকার কর্তৃক পাঁচ (৫) সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি আবেদনের শেষ তারিখ হতে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।
৩. এক্ষেত্রে কারিগরি সামর্থ্য/ আর্থিক সঙ্গতি/ মানবসম্পদের দক্ষতা, উন্নতমানের এবং সৃজনশীল অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষমতা/বাজারের বিস্তার/ সাংস্কৃতিক প্রয়োজনীয়তা এবং জনগণের প্রয়োজন ও আগ্রহ বিবেচনা করে লাইসেন্স প্রদান করা হবে।
৪. বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আঞ্চলিক পর্যায়ে রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল বা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে কোন এলাকা বা জায়গায় সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হবে সেক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
৫. পরামর্শক কমিটি লাইসেন্স প্রত্যাখ্যানের কারণ লিখিতভাবে জানাবেন।
৬. লাইসেন্স স্বত্ত্ব স্থানান্তর করা যাবে না।
৭. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহীতা সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হলে সরকার অনুমতি / লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে।
৮. লাইসেন্স গ্রহীতাকে অডিট করা বার্ষিক হিসাব ও বার্ষিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।
৯. সম্প্রচার মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগ অনুমোদন করা যাবে। এক্ষেত্রে অনুমোদিত মূলধনের বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তবে উল্লেখ থাকে যে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধি এবং অন্যান্য প্রযোজ্য নীতিমালাসমূহ অনুসরণ করতে হবে। বিনিয়োগ বোর্ডের কাছ থেকে No objection Certificate গ্রহণ করতে হবে।
১০. লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেডিওকে পাঁচ বছরের জন্য এবং টেলিভিশনকে দশ (১০) বছরের জন্য প্রদান করা হবে এবং মেয়াদ শেষে পুনঃনবায়নের জন্য আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলটিকে স্বতঃক্রিয় ভাবে পাঁচ (৫) বছর শেষে আবেদনের অধিকার দেয়া যেতে পারে। আরো উল্লেখ্য যে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যদি লাইসেন্স সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়া হয় তবে পুনরায় সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলটি কার্যক্রম চালাতে পারবে। লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের অধীন দাখিলকৃত আবেদনপত্র অগ্রাহ্য বা প্রত্যাখ্যাত না হওয়া পর্যন্ত আবেদনকারী তার কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখতে পারবে।
(৩) লাইসেন্সের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন
১. কোনো রাজনৈতিক দল বা তাদের অঙ্গ সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান যার মালিকানা কোনো ব্যক্তির যিনি কোনো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ে পদ অধিকার করেন।
২. কোনো একক ব্যক্তি
৩. কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান, যা বিদেশী আইনে নিবন্ধিত ও পরিচালিত বা কোনো প্রতিষ্ঠান যা বিদেশী নাগরিকের মালিকানা দ্বারা পরিচালিত হয়।
৪. কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা কোন ধর্মভিত্তিক দল।
৫. যেকোনো ধরনের দল বা প্রতিষ্ঠান বা জোটবদ্ধ সংগঠন যার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা সম্পৃক্ততা আছে।
৬. যে সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত বিধিনিষেধ আছে অথবা যে সকল প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি।
৭. যে সকল প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে লিপ্ত ছিল বা আছে।
(৪) অভিযোগ ও আপিল মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে:
১. যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ফরমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এই নীতিমালার অন্তর্গত অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনাধিক ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এখানে উল্লেখ্য, যে অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে তা সম্প্রচারের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
২. অভিযোগ প্রাপ্তির পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ অভিযোগটির যথার্থতা যাচাই কর আনীত অভিযোগের বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে এবং নির্দেশ পালনের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স বাতিল বা সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবে।
৩. যথাযথ কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স প্রদান, বাতিল এবং পুনঃনবায়নের জন্য এবং অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপনের প্রচারের উপযোগিতা নিয়ে যে কোনো ধরণের তদন্তমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে। এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট সম্প্রচার মাধ্যমকে লিখিত নোটিশ প্রদান করবে।
৪. সরকার কিংবা সরকার অনুমোদিত প্রতিনিধি যেকোনো রেডিও বা টেলিভিশনের স্থাপনা পরিদর্শন এবং উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
৫. যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হন তাহলে সিদ্ধান্ত প্রদানের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে পুনঃবিবেচনার জন্য আপিল করতে পারবেন। আপিল আবেদন প্রাপ্তির পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ আপিলকারীকে যুক্তিসংগত সময়ে শুনানির সুযোগ প্রদান করে আপিলটি নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে।
৬. এই নীতিমালা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতার কারণে অসুবিধা দেখা দিলে সরকার উক্ত অসুবিধা দূরীকরণার্থে প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়াও জাতীয় সংসদ লিখিতভাবে যেকোনো ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে।
তিন. বেসরকারি অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচারোপযোগিতা এবং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি
(১) যেহেতু দেশের সম্প্রচার মাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণকল্পে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিষ্ঠা এবং তৎসম্পর্কিত নীতিমালা করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু নিম্নবর্ণিত সদস্যগণ সমন্বয়ে কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে, যথা:
১. চেয়ারম্যান
২. সদস্য
৩. সদস্য
৪. সদস্য (মহিলা)
৫. সদস্য (তথ্য মন্ত্রণালয় যুগ্ম-সচিব এ কমিটির সস্য সচিব হবেন)
(২) চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের নিয়োগ, পদত্যাগ, অব্যাহতি ইত্যাদি:
১. শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, প্রশাসন, সম্প্রচার বা ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিগনের মধ্য হতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন।
২. চেয়ারম্যান ও উক্ত অন্যান্য সদস্য খণ্ডকালীন ভিত্তিতে দায়িত্বপালন করবেন।
৩. চেয়ারম্যান এবং উক্ত অন্যান্য সদস্যের প্রাপ্য সম্মানী ভাতা এবং নিয়োগের অন্যান্য শর্তাবলি, এই আইনের নীতিমালা সাপেক্ষে সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হবে।
৪. চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য প্রত্যেক সদস্য নিয়েঅগের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসরের মেয়াদে স্বীয় পদে বহাল থাকবেন এবং পুনরায় নিয়োগের যোগ্য হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, কোনো সদস্যের মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেও সরকার যেকোনো সময় তাকে তার দায়িত্ব হইতে অব্যহতি প্রদান করতে পারবেন।
৫. সরকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে চেয়ারম্যান বা অন্য যেকোনো সদস্য স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন, কিন্তু সরকার কর্তৃক গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত পদত্যাগ কার্যকর হবে না।
৬. চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, শূন্য পদে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা চেয়ারম্যান পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক মনোনীত কোনো সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
৭. কমিটির কোন সদস্য কোন অসুবিধার কথা না জানিয়ে পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে তার স্থলে নতুন সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া যাবে।
৮. কর্তৃপক্ষ কাজে সহায়তার জন্য প্রয়োজনবোধে এক বা একাধিক কমিটি নিয়োগ করতে পারবে এবং উক্ত কমিটির সদস্য, সংখ্যা, দায়িত্ব এবং কার্যধারা নির্ধারণ করতে পারবে।
(৩) বিশেষজ্ঞ কমিটির কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ, যথা:
১. লাইসেন্স কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
২. সরকারের অনুমোদনক্রমে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ
৩. সম্প্রচারে সংবাদ প্রচার, বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন।
৪. রেডিও ও টেলিভিশনে নিয়োজিত জনবলের (সংবাদ পাঠক/পাঠিকা, সংবাদ রিপোর্টার/বেসরকারি অনুষ্ঠান নির্মাণে জড়িত শিল্পী ও কলাকুশলী) ও অনুষ্ঠানের মান উন্নয়ন ও শৈল্পিক উৎকর্ষ সাধনের স্বার্থে প্রশিক্ষণ নীতিমালা গ্রহণ করা।
৫. টেলিভিশন ও রেডিওতে বাংলা ভাষার সঠিক প্রয়োগ এবং ব্যবহার, এবং উচ্চারণের যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে যোগ্য মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সঠিক বাংলা উচ্চারণের একটি আদর্শ মান স্থাপন করতে হবে।
৬. সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে বা বিজ্ঞাপনে কোন ভুল তথ্য উপাত্ত প্রচার করলে অথবা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অসৎ উদ্দেশ্যে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টা করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৭. উপরি-উল্লিখিত কার্যাদির সম্পূরক ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য কার্যসম্পাদন।
(৪) বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা:
১. এই নীতিমালার অন্যান্য অনুচ্ছেদ সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষ সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবে।
২. চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ও সময়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে তথ্য মন্ত্রণালয় এইরূপ সভা আহ্বান করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রতি দুই মাসে কর্তৃপক্ষের অন্ততঃ একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
৩. চেয়ারম্যান বা তার অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে উল্লিখিত সদস্য এবং অপর ছয়জন সদস্যের উপস্থিতিতে সভার কোরাম গঠিত হবে।
৪. চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ধারা ৬-এ উল্লিখিত সদস্য কর্তৃপক্ষের সভার সভাপতিত্ব করবেন।
৫. কমিটির সভায় কোন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মতভেদ দেখা দিলে গরিষ্ঠসংখ্যক সদস্যদের মতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
৬. কর্তৃপক্ষের প্রতিটি সভার কার্যবিবরণী ও গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুলিপি সরকারের নিকট প্রেরণ করতে হবে এবং উক্ত সিদ্ধান্ত এই জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার পরিপন্থী হলে তা বাতিল বা সংশোধন করার জন্য বা কার্যকর না করার জন্য সরকার নির্দেশ প্রদান করতে পারবে এবং তদনুসারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চার. বেসরকারি সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত অনুষ্ঠান প্রচারের শর্তাবলি
শক্তিশালী গণসংযোগ মাধ্যম হিসেবে রেডিও এবং টেলিভিশনের দায়িত্ব অপরিসীম। তথ্য পরিবেশন, শিক্ষা প্রসার, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সকলকে উদ্বুদ্ধকরণ ও নির্মল আনন্দদান- এই চারটি ব্যাপার হবে অনুষ্ঠান প্রচারের মূল লক্ষ্য। এই চারটি মূল লক্ষ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশন এই নীতিমালা অনুসরণ করবে:
১. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠান রচনা করতে হবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সংবাদ ও তথ্যের প্রকাশ ও বিকাশ সাধন করতে হবে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ ও আদর্শ সমুন্নত রাখতে হবে।
২. সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নিম্নবর্ণিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে প্রচারকরণ, যথা:
· রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধানের ভাষণ
· গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা বা প্রেস নোট
· জরুরি আবহাওয়া বা স্বাস্থ্য বার্তা
· সরকার কর্তৃক সময়, সময় অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান
৩. দেশীয় সংস্কৃতির অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের আবহমান নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার প্রতিফলন, বাংলাদেশী সংস্কৃতির সঙ্গে জনসাধারণের নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ধারাকে ও দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে বাংলাদেশ সংস্কৃতির সুষ্ঠু প্রতিফলন ও পরিবর্ধনের চেষ্টা করতে হবে।
৪. সকল ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করতে হবে। কোনো জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বিশেষের প্রতি কোনোরূপ অবমাননা, শেষ কটাক্ষ বা সমালোচনা করা যাবে না এবং সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করতে হবে।
৫. উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, বিশেষ করে স্বেচ্ছাভিত্তিক অংশগ্রহণ জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং এই লক্ষ্যে ও বাস্তবায়নে আলোচনা অনুষ্ঠান ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ওপর যথাসম্ভব সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপিত করতে হবে। শ্রমের মর্যাদা ও কায়িক পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নিজ হাতে কাজ করা যে- অবমাননাকর নয় এবং এজন্য কোনো পেশা বা বৃত্তি যে হেয় নয়, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তোলা হবে।
৬. সাংস্কৃতিক ও চিত্তবিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের সঠিক মূল্যায়ন করে শ্রোতা-দর্শকদের নির্মল আনন্দ পরিবেশনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বাংলাদেশী সংস্কৃতির সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিল্প ও শিল্পী ও শিল্পীদের অনুসন্ধান ও আবিষ্কার করে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে হবে এবং জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।
৭. বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার যোগ্য মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের এবং এই উদ্দেশ্যে সঠিক বাংলা উচ্চারণের একটি আদর্শ মান স্থাপনের চেষ্টা করতে হবে। সংবাদ পাঠ ও সকল অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই উচ্চারণের মান শিথিল করা যাবে না।
৮. জাতির পিতার প্রতি কোনো প্রকার অবজ্ঞা বা অসম্মান প্রদর্শন করা যাবে না।
৯. কোনো আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার অসঙ্গতিপূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বা উপাত্ত দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেলিভিশন বা রেডিও বা অনুষ্ঠান পরিচালক জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
১০. সাম্রগ্রিক অনুষ্ঠান নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে সংবাদ, বিদেশী ছায়াছবি ও সংগীত প্রচারিত হবে এবং বিনিময়-অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে এই নীতি শিথিল করা যাবে।
১১. নাটক, লোক-সংস্কৃতিমূলক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে, তবে কোনোক্রমেই কোনো অঞ্চলের প্রতি কটাক্ষ করার জন্য আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
১২. কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার আন্দোলনে জনসাধারণকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
১৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা সম্পর্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে সদা সচেতন রাখতে ও এ সম্পর্কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। শালীনতা, রুচি ও দেশীয় কৃষ্টির প্রতি যথেষ্ট দৃষ্টি রেখে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম প্রচার করা হবে।
১৪. দেশের প্রতিটি নিরক্ষর মানুষকে স্বাক্ষর হতে সচেতন ও আগ্রহী করার জন্য অনুষ্ঠান রচনা ও প্রচার করা হবে।
১৫. জনসাধারণকে দেশের শিল্পের উন্নয়নের ও দেশের প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে।
১৬. যুব সম্প্রদায়ের সৃজনশীল চিন্তাধারা ও শক্তিকে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের পথনির্দেশ দিতে হবে এবং তাদের সমস্যা সমাধানের ফলপ্রসূ ইঙ্গিত প্রদান করতে হবে।
১৭. রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় তথা সমাজ জীবনের সর্বেক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের সমমর্যাদা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের পক্ষে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহিলা সমাজ আমাদের জাতিকে প্রত্যয়দীপ্ত রাখার ব্যাপারে সত্যিকারের অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
১৮. নৈতিকতাবোধের উন্নয়ন, সামাজিক কুসংস্কার থেকে মুক্তি এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপ অবদমনের দায়িত্ব পালন করার লক্ষ্যে সকল প্রকার দুর্নীতি দমন ও সমাধানের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করতে হবে।
১৯. অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার অশোভন উক্তি উচ্চারণ করা যাবে না।
২০. সংবাদ বা সংবাদ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে সত্যিকার হত্যাকাণ্ড, নৃশংস হত্যাকাণ্ড, দুর্ঘটনায় নিহত ও আত্মহত্যায় মৃতদেহ এবং নির্যাতিত, ধর্ষিত এবং ব্যভিচারের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কোনো নারী বা শিশুর স্থির বা সম্প্রচারিত চিত্র প্রদর্শন করা যাবে না।
২১. অনুষ্ঠানে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বা মতামত প্রচার করা যাবে না।
২২. জাতীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্মচারী এবং জনসাধারণকে দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য সচেতন করে তুলতে হবে।
২৩. আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মনোভাব জাগরুক করে তুলতে হবে।
২৪. কোনো মানুষ বা প্রার্থী নির্যাতনের দৃশ্য অনুষ্ঠানে প্রচার করা যাবে না। নাটকের প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেত্রে এই নীতি শিথিল করা যেতে পারে।
২৫. অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ও সর্বজনস্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা গৌরবান্বিত করতে হবে।
২৬. দেশী ও বিদেশী ছবি/অনুষ্ঠানে অশ্লীল চুম্বনের দৃশ্য সর্বতোভাবে পরিহার করতে হবে। হিংসাত্মক, সন্ত্রাসমূলক এবং দেশীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।
২৭. প্রত্যেকটি রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলের সুনির্দিষ্ট Charter of Duties থাকতে হবে।
২৮. কোনো নির্মাতা যদি বিদেশী কোনো সংস্থার সাথে যৌথ প্রযোজনায় অনুষ্ঠান নির্মাণ অথবা বিদেশে স্যুটিং করার জন্য আগ্রহী হন, তবে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।
২৯. কোনো আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার অসঙ্গতিপূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বা উপাত্ত দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেলিভিশন বা রেডিও বা অনুষ্ঠান পরিচালক জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
৩০. কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত বা গোপনীয় বা মর্যাদা হানিকর তথ্য প্রকাশ করার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।
৩১. বেসরকারি সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে The Censorship of Films Act, 1963 বা তার অধীন প্রণীত বিধি বা নীতিমালার পরিপন্থি কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।
উল্লিখিত বিষয়ের আলোকে নিম্নলিখিত উপাদান থাকলে টিভিতে প্রদর্শনীর জন্য অনুষ্ঠান অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে:
অ. জাতীয় আদর্শ বা উদ্দেশ্যের প্রতি কোনো প্রকার ব্যঙ্গ বা বিদ্রুপ, বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবমাননা বা ব্যঙ্গ কিংবা বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় চরিত্রের প্রতি কটাক্ষ অথবা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অখন্ডতা বা সংহতি ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন প্রবণতা।
আ. বিচ্ছিন্নতা বা অসন্তোষের সৃষ্টির জন্য জাতি বা শ্রেণী বিদ্বেষ প্রচার, কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্রুপ, অবমাননা বা আক্রমণ, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়, বর্ণ বা মতাবলম্বীদের মধ্যে বিদ্বেষ বা বিভেদ সৃষ্টি।
ই. রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে এমন ধরনের সামরিক বা সরকারি গোপন তথ্য ফাঁস।
ঈ. আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি।
উ. সশস্ত্র বাহিনী/পুলিশ বাহিনী অথবা দেশের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রুপ বা অবমাননা, অপরাধ নিবারণ ও নির্ণয়ে অথবা অপরাধীদের দণ্ডবিধানে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের হাস্যস্পদ করে তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে এমন দৃশ্য প্রদর্শন।
ঊ. কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের অনুকূলে এমন ধরনের প্রচারণা যা বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে বিরোধের কোনো একটি বিষয়কে প্রভাবিত করতে পারে কিংবা একটি বন্ধুভাবাপন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন ধরণের প্রচারণা যার ফলে সেই রাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সুসম্পর্ক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ঋ. কোনো জনগোষ্ঠী, জাতি বা দেশের মর্যাদা বা ইতিহাসের ক্ষতিকর ঘটনা/দৃশ্য বিনাস।
এ. ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি।
ঐ. নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যকলাপের কথিত অনুমোদন, সাধারণভাবে গ্রাহ্য শালীনতার আদর্শের অবমাননা, দুষ্ট এবং নৈতিকতা বর্জিত চরিত্রের প্রতি সহানুভূতি বা প্রশংসা, হীন উপায়ে মহৎ উদ্দেশ্য অর্জনের প্রতি যুক্তি প্রদর্শন এবং সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে বিয়ের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস।
ও. ধর্ষণ, ব্যভিচার, মহিলাদের ওপর অপরাধমূলক আক্রমণ, নারী ও শিশুদের নিয়ে অবৈধ ব্যবসা, উত্ত্যক্তকরণ, পতিতাবৃত্তি এবং দালালি, কামুক বা অশোভন দেহভঙ্গী নৈতিক মান অনুযায়ী গ্রাহ্য শয্যাদশ্যের বর্হির্গত কোনো দৃশ্য সংযোজন।
ঔ. শারীরিক নিগ্রহ অথবা মাত্রাতিরিক্ত প্রসব বেদনা প্রদর্শন, যৌন ব্যাধি, অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ, জখম ও ছেদন ইত্যাদি দৃশ্য, সত্যিকার ফাঁসিতে লটকানো বা বীভৎস হত্যাকাণ্ড, শ্বাসরোধ করে হত্যা এবং আত্মহত্যার দৃশ্য প্রদর্শন।
ক. অপরাধীদের কার্যকলাপের কৌশল প্রদর্শন যা অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি প্রবর্তনে সহায়ক হতে পারে।
খ. যদি কোনো অনুষ্ঠানসমূহ জনসাধারণকে অপরাধে প্ররোচিত করে বলে সাধারণ ধারণার জন্ম নেয় তাহলে সে ছবি বা চলচ্চিত্রকে সার্টিফিকেট দেয়া চলবে না যদিও তাতে এটা দেখানো হয় যে, অপরাধীরা তাদের দণ্ডের জন্যে দণ্ডিত হয়েছে।
পাঁচ. সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রচারের শর্তাবলি
রেডিও ও টেলিভিশন অত্যন্ত শক্তিশালী গণমাধ্যম। সংবাদ ও অনুষ্ঠান ইত্যাদির পাশাপাশি টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন জনসাধারণকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞাপনের সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেক ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয় না। টেলিভিশন বিজ্ঞাপন কোনো একটি পণ্য বা সেবার খবর অগণিত দর্শক-শ্রোতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের প্রচলিত আইন, রীতি-নীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে বিজ্ঞাপন সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, যাতে দর্শক-শ্রোতাগণ বিভ্রান্ত না হন। বিজ্ঞাপনের ভাষা ও উপস্থাপনা হবে শ্রুতিমধুর, শোভনীয়, পরিমার্জিত ও নান্দনিক। নিম্নবর্ণিত শর্তাবলি প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট রেডিও বা টেলিভিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১. রেডিও এবং টেলিভিশন বিজ্ঞঅপন দেশের প্রচলিত আইন, রীতিনীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বিজ্ঞাপনে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বা সংহতি বিনষ্ট হয়, এমন কোনো মনোভাব প্রদর্শন করা যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য এবং হিংসাত্মক ঘটনা প্রদর্শন করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বা আইন অমান্য করার পক্ষে সহানুভূতি সৃষ্টি করে এমন কিছু দেখানো যাবে না।
২. বিভিন্ন ধর্ম বা মতাবলম্বীদের মধ্যে বিদ্বেষ বা বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এমন বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।
৩. বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি করতে পারে, এমন বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।
৪. দর্শক-শ্রোতাকে শুধু পণ্যের ক্রেতা মনে না করে তাঁকে সৎ, চিন্তাশীল, জ্ঞানী, দূরদর্শী এবং মুক্তমনা মনে করতে হবে।
৫. টেলিভিশন বিজ্ঞাপন শোভনীয়, সুন্দর, সুরুচিপূর্ণ ও পরিমার্জিত হতে হবে। পরিবারের সকল সদস্যসহ একসাথে বসে উপভোগ করতে বিব্রতবোধ করতে হয় অথবা দৃষ্টিকটু মনে হয়, এমন বিজ্ঞাপন পরিহার করতে হবে।
৬. রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিদেশী কূটনীতিক এবং জাতীয় বীরদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
৭. রেডিও এবং টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের ভাষা, দৃশ্য কিংবা নির্দেশনা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অনুভূতির প্রতি পীড়াদায়ক হবে না। ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে মসজিদ, মাজার, মন্দির, গীর্জা ইত্যাদি ধর্মীয় উপাসনালয়ের স্থির চিত্র কিংবা চলমান চিত্র প্রদর্শন করা যাবে না। তবে বিজ্ঞাপন চিত্রে ব্যবহৃত বিষয়বস্তুর প্রয়োজনে ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত না করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রদর্শন বিবেচনা করা যেতে পারে।
৮. টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী অথবা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা অবমাননা করা যাবে না। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নির্মিত কোনো একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে প্রতিরক্ষা বাহিনী, পুলিশ বা অন্য কোন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সস্যদের প্রদর্শন করা যাবে না। তবে, জনস্বার্থে জনসচেতনতা ও সমাজ সংস্কারমূলক বিজ্ঞাপনে প্রয়োজনবোধে এসব বাহিনীর লোকদের বিজ্ঞাপনচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিজস্ব কোনো ঘোষণা বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করা যেতে পারে।
৯. বিজ্ঞাপনে প্রতিযোগী পণ্যের তুলনা বা নিন্দা করে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করা যাবে না। বাজারে একই জাতীয় পণ্যের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতা রয়েছে। তাদের পণ্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে অমর্যাদাকর বা তাচ্ছিল্য বা খাটো করে কোনো উক্তি করা যাবে না।
১০. সংবাদের আকারে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। অনুষ্ঠান হতে বিজ্ঞাপন ভিন্নতর হতে হবে। নাটক বা যেকোনো অনুষ্ঠানের ভেতরে বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রচার করা যাবে না।
১১. বিজ্ঞাপনর অডিও মানসম্মত এবং শ্রুতিমধুর হতে হবে। অতি কোলাহলপূর্ণ ও কর্ণপীড়াদায়ক হবে না। বিজ্ঞাপনে নোংরা ও অশ্লীল শব্দ, উক্তি, সংলাপ, জিংগেল ও গালিগালাজ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
১২. জ্ঞাতসারে নকল পণ্যের কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না এবং কোনো ধরনের নকল বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।
১৩. বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনন্টিটিউট (বিএসটিআই) এর তালিকাভুক্ত পণ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপনে প্রচারের ক্ষেত্রে বি.এস.টি.আই প্রদত্ত মান নিয়ন্ত্রণ সনদপত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে (যেখানে প্রযোজ্য) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মান নিয়ন্ত্রণ সনদপত্র উপস্থাপন করতে হবে। পণ্য বা সেবার নিশ্চয়তা সম্পর্কিত তথ্য সঠিক এবং তা ক্রেতার আদায়যোগ্য হতে হবে। বিজ্ঞাপনে প্রচারিতব্য প্রশংসাপত্র/সনদপত্রের মূলকপি তথ্য মন্ত্রণালয়কে দেখাতে হবে এবং সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
১৪. ঔষধপত্র ও ঔষধ জাতীয় পণ্য, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদির বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অথবা তার অধীনস্থ অধিদপ্তরের অনুমোদন/ ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে এবং ছাড়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
১৫. বিজ্ঞাপনচিত্রে পেশাগত পরামর্শ পরিহার করতে হবে। ঔষধপত্র, চিকিৎসা বিষয়ক পণ্যের বিজ্ঞাপনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসকদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরামর্শ প্রদান করা যাবে না এবং তাদের পরিচয় প্রচার করা যাবে না। অনুরূপভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত পণ্যের বিজ্ঞাপনে পেশাগত পরামর্শ পরিহার করতে হবে। তবে, সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন যেমন- এইডস, ডায়েরিয়া, ডেঙ্গু, যক্ষা, মহামারি ইত্যাদি প্রতিরোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, এসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিচয়সহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের পেশাগত পরামর্শ দেখানো যেতে পারে।
১৬. বিজ্ঞাপনে এমন কোনো বর্ণনা বা দাবি প্রচার করা যাবে না- যাতে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাব