(রানার গ্রামের ডাক হরকরা
রাতের পর রাত ক্লান্তিহীন মানুষের সুখ দুঃখের
খবরের বোঝা বয়ে সে পৌছে দেয় দোরে দোরে
কিন্তু তার খবর কে রাখে)
রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার রানার চলেছে,রানার!
রাত্রির পথে পথে চলে কোন নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার, রানার
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।।
রানার! রানার!
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে।
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়।
আরো জোরে, আরো জোরে, হে রানার দুর্বার দুর্জয়
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ,আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও-পূর্ব কোণ
অবাক রাতের তারারা আকাশে মিট্ মিট্ করে চায়;
কেমন করে এ রানার সবেগে হরিণের মত যায়।
কত গ্রাম, কত পথ যায় সরে সরে
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে।
হাতে লন্ঠন করে ঠন্ ঠন্, জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ; রানার! এখনো রাতের কালো।
এমনি করেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে মেলে
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে
অনেক দুঃখে, বহু বেদনায়, অভিমানে, অনুরাগে,
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে
রানার! রানার!
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে?
ঘরেতে অভাব, পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তার চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে।
এর দুঃখের চিঠি পড়বেনা জানি কেউ কোন দিনও
এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ।
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে
দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি-
এ-কে যে ভোরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি।
রানার! রানার! কি হবে এ বোঝা বয়ে?
কি হবে ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে? ।।
রানার! রানার! ভোর তো হয়েছে-আকাশ হয়েছে লাল
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল? ।।
রানার! গ্রামের রানার!
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার
রানার, রানার……।
শিল্পীঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
সুরকারঃ সলিল চৌধুরী
গীতিকারঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য