ঠাশ!!করে শব্দটা হতেই আশেপাশে যারা ছিল তারা সবাই শব্দ যেদিকে হয়েছে সেদিকে ফিরে তাকালো।যে থাপ্পরটা খেয়েছে সে গালে একটা হাত দিয়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল যে থাপ্পরটা দিয়েছে তার দিকে।কিন্ত থাপ্পর দেয়া মেয়েটা ফোঁশ করে একটা নিঃশ্বাসে বাকি ঘৃনাটুকু উগরে দিয়ে তার বড় বড় চোখের জলন্ত দৃষ্টি সরিয়ে হন হন করে উল্টা দিকে হাঁটা দিল।আর থাপ্পর খাওয়া ছেলেটি তার বজ্রাহত বন্ধুদের মাঝে ,অধিকতর বজ্রাহত হয়ে গালে হাত দিয়ে বসে রইল।
মেয়েটির বান্ধবী চৈতি, যে মেয়েটির পিছু পিছু দৌড়ে এসেছিল সর্বনাশ ঠেকাতে কিন্ত পৌঁছানোর আগেই তা ঘটে গেছে, সেই মেয়েটি আবার তার পিছু পিছু দৌড়ে গিয়ে বলল,শিলা তোর ভীষন সাহস!!! শিলার মুখটি তখন সেই শরতে, ক্যাম্পাসের গেটের পাশে গাছের নিচে বিছিয়ে থাকা শিউলী ফুলের মতই শুভ্র লাগছিল ।রাগ আর উত্তেজনার কারনেই বোধ হয় সে ফর্সা মুখে কিছুটা লালচে আভা।সে বলল,এতে সাহসের কি দেখলি?যত্তসব স্টুপিড,রাস্কেল ছেলে!!সবকিছু নিয়ে ফাজলামি!!আমাদের এতগুলো মাসের পরিশ্রম এভাবে নষ্ট করে দিল!!পারলে খুন করতাম ওটাকে।বড়লোকের ছেলে হয়েছে বলে জীবনকে সিরিয়াসলী নিতে শেখেনি ভাল কথা তাই বলে অন্যদের নিয়েও কি ফান করবে?চৈতি ভয়ে ভয়ে বলল,কিন্ত সে ছেলে মানুষ।যদি অপমানের প্রতিশোধ নিতে তোর কোনো ক্ষতি করে?শিলা ঠোঁট উলটে জবাব দিল,আমার সাথে আবার লাগতে আসলে জান নিয়ে ফিরে যেতে দেব না।
এদিকে থাপ্পর খাওয়া ছেলেটির বন্ধু ছেলেটিকে বলল,তুষার এখান থেকে উঠে পড়।সবাই কেমন ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে।তুষার সহ অন্য সবাই দেখল কথাটা মিথ্যা নয়।তাই তারা ক্যান্টিন চত্তর থেকে উঠে লাইব্রেরীর মাঠে গিয়ে বসলো।চুপচাপ এক মনে কিছুক্ষন সিগারেটের ধোঁয়া গলাধকরন করে অপমানের জ্বালা না মিটাতে পেরে শেষে তুষার বলে উঠল,এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে হবে!শোভন বলল, অবশ্যই।কিন্ত কিভাবে?রবি বলল,তুষার গিয়ে শিলাকেও এভাবে সবার সামনে থাপ্পর মেরে আসবে।কাজল এদের মধ্যে একটু পড়ুয়া।সে বলল,মেয়ে লোকের গায়ে হাত তোলা?কি সর্বনাশ!তাহলে তো তুষার নারী নির্যাতন কেসে ফেঁসে যাবে।রবি বলল,তাহলে সবার সামনে শিলাকে গিয়ে চুমু খাবে।কাজল হতাশ হয়ে বলল,তাহলে আর রক্ষা নেই।ডাইরেক্ট এটেম্পট টু রেপ কেস।এবার তুষার মুখ খুলল।সে বলল,এই অপমানের জ্বালা তখনি মিটতে পারে যখন ঐ মেয়ে যে গালে চড় মেরেছে সে গালে চুমু খাবে।সেটা তো কোনো মেয়ে এমনি এমনি করবে না।তখনই করবে যখন সে আমার প্রেমে পড়বে।সো, এই মেয়ের সাথে প্রেম করতে হবে।একে পটাতে হবে।তোরা বল কিভাবে একে পটানো যায়।
মিঠু এতক্ষন চুপচাপ শুনছিল।সে আঁতকে উঠে বলল।ও কাজ করতে যাস না।আমি শিলার সাথে একই কলেজে পড়তাম।সে সময় তার একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল।সিরিয়াস কিছু না।এই যে ছেলেরা কয়দিন পিছু পিছু ঘুরে, তারপর মেয়ে রাজি হলে গিফট টিফট দেয়,চটপটি ফুচকা খায় এইসব।ঐ বয়েসে যেমনটা হয় আর কি?তো শিলা একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে দেখল সে ছেলে আর এক মেয়ের সাথে চটপটির দোকানে খাচ্ছে।আর একদিন দেখল ভরদুপুরে কলেজের পেছনে বকুলতলায় বসে আছে সেই মেয়ের হাত ধরে।ছেলেকে জিগাসা করার পর সে জানালো যে শিলার চাইতে তার এখন ঐ মেয়েকে ভাললাগে তাই সে ওর সাথেই থাকবে।স্বাভাবিক মেয়ে হলে এরপর কেঁদে কেটে এক করত।এমনকি হয়ত হারপিক কিংবা ডেটল খাওয়ার চেষ্টা করত।কিন্ত শিলা এক বিকালে নির্জন রাস্তায় সে ছেলেকে একা পেয়ে ধরে আচ্ছা মত পিটিয়ে দিল।আগেই বলে নিচ্ছি সে স্কুল জীবন থেকেই ভাল এথলেট ছিল।তার পক্ষে দু একটা ছেলেকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়া অসম্ভব ছিলনা।ঐ ছেলে জন্মেও ভাবেনি এমন কিছু হতে পারে তাই আচমকা মারও খেয়েছিল ভালই।সে ব্যাচারার নাকমুখ ফুলে এমন অবস্থা হয়েছিল যাতে কয়দিন বাইরে বের হতে পারেনি।কাওকে বলতেও পারেনি কে মেরেছে।এখন তুষার,তুই যে ঐ মেয়ের সাথে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রেম করতে চাইছিস,একটু এদিক সেদিক হলে সে তোর কি অবস্থা করতে পারে ভেবে দেখেছিস?এই কথা শুনে রবি ভয়ে ভয়ে বলল,যে তখনই অমন ছিল সে এখন কেমন ভয়ানক হয়েছে ভাবতে পারিস?দরকার নাই প্রতিশোধ নেয়ার,ছেড়ে দে।শোভন বলল,তাই বলে সবার সামনে একটা ছেলেকে সে চড় মারবে আর তার প্রতিশোধ নেয়া হবে না?বিন্দু মুখ বাঁকিয়ে বলল,এমনি এমনি তো মারেনি।তোরা যা করেছিস তা ভীষন অন্যায় হয়েছে।সারাটা বছর ধরে ওরা এই কম্বল আর শীতের কাপড়গুলো যোগার করেছে আর তোরা এক নিমেষেই সব নষ্ট করে দিলি?রবি বলল,কিন্ত ওরা তো সব সময় কেমন নাক উঁচু ভাব করে।দেখলি না সেদিন ক্যান্টিনে আমাদের টেবিল ছিনিয়ে নিল কেমন ঝগড়া করে?সে জন্যই তো একটু শিক্ষা দিলাম।এবার বিন্দু আর রবির একটা ঝগড়া বেধে যায়।আর যে যাই বলুক তুষার মনে মনে ঠিক করে ঐ বুনো ঘোড়াকে সে লাগাম পড়াবেই এবং এর জন্য যা করতে হয় সবই করবে।
টুপটাপ টুপটাপ রিমঝিম রিমঝিম করে ঝরেই চলেছে বৃষ্টি।কোনো বিরাম নেই বিশ্রাম নেই।মেঘের উপরে যেন ভেজা বসনে একদল কিশোরি নেচে চলেছে উদ্দাম নৃত্য আর তাদের পায়ের জলের নুপুর থেকে মুক্তোদানার মত খসে পড়ছে বিন্দু বিন্দু জল।সেই রাশি রাশি জলধারার দিকে একটানা তাকিয়ে থাকলে যেন চোখে নেশা লাগে।মন এমনিতেই উদাস হয় আর উদাস হয়ে উলটাতে চায় স্মৃতির পুরোনো ডাইরী।এক মাতাল হাওয়ার ঝাপটা শিলাকে স্মৃতির অলিগলি থেকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল।সে চোখ ফিরিয়ে দেখে চায়ের পানি ফুটে গেছে।চা বানিয়ে কাপে ঢেলে তার সাথে পিরিচে কিছু ড্রাইকেক নিয়ে শিলা তার লাইব্রেরীতে ঢুকল।মিতুল,স্নিগ্ধা আর জলির দিকে চায়ের কাপ আর ড্রাইকেক এগিয়ে দিয়ে নিজে একটা কাপ হাতে সে তার প্রিয় রকিং চেয়ারটাতে গিয়ে বসল।
শিলা আহমেদ কমলদিঘি যৌথ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সেই সাথে একই কলেজের মহিলা হোস্টেলের সুপারিন্ডেন্ট।দুইশজন ছাত্রীর বাসযোগ্য এই হোস্টেলের দোতলা বিল্ডিং এর পেছনেই বিল্ডিঙ্গের সাথে লাগানো তার একতলা বাড়িতে তিনি থাকেন।দুই বিঘা জমির উপর গড়ে ওঠা হোস্টেলটির পেছনে ঘাট বাঁধানো বড় পুকুর।পুকুরের চার পাশ ঘিরে মেহেগনি, জারুল আর আম,জাম,পেয়ারা ইত্যাদি ফলফলাদির বাগান।উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আয়তাকার হোস্টেল বিল্ডিঙ্গের বাইরে আর ভেতরের অংশে নয়নাভিরাম ফুল বাগান।লাল ইঁট বাধানো রাস্তাগুলির পাশে দেবদারু আর পাম গাছের সারি।ধবধবে সাদা দোতলা বিল্ডিঙ্গের উপরে লাল টালি দেয়া ছাঁদ।বাইরের জানালাগুলোর পাশে দেয়াল ঘেসে ছাদে উঠে গেছে রংবেরঙ্গের বাগানবিলাসের ঝাড়।ভেতরের দিকে বারান্দার প্রতিটা পিলার ঘেসে উঠেছে অপরাজিতার লতা।তার নীল নীল ফুলগুলি চোখ মেলে তাকিয়ে দিনরাত দোল খায় মিষ্টি বাতাসে।এই হোস্টেল যেন এক স্বপ্নের রাজ্য।এখান থেকে পায়ে হাঁটা দুরত্বে সাড়ে চার বিঘা জায়গার উপরে বাগানশোভিত সাদা দেয়াল আর লাল টালির ছাদের স্কুল আর কলেজ।এখানে কমলদিঘি সহ আসেপাশের গ্রামের মেয়েরা পড়ালেখা করে।কমলদিঘি একেবারে গহীন গ্রাম না হলেও গ্রাম তো বটেই।গ্রামের মাঝে শুধু মেয়েদের জন্য এত ভাল মানের স্কুল আর হোস্টেলসহ কলেজ যেন অকল্পনীয় এক রূপকথার মত।এই স্বপ্নের রূপকার শিলা আহমেদ কে গ্রামের লোক শুধু শ্রদ্ধাই করেনা বরং আন্তরিকভাবে ভালোওবাসে।কমলদিঘি থেকে দুরের গ্রামের মেয়েরা নামমাত্র খরচে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়ায় গ্রামের পিতামাতা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।যাদের সামর্থ্য আছে তাদেরও আর মেয়েকে শহরে পড়ানোর ঝামেলা করতে হয়না আর যাদের সামর্থ্য নেই তারাও তাদের মেয়েদের শিক্ষার পথে একধাপ এগিয়ে দিতে পারে নিশ্চিন্তে।
মিতুলরা এবার সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী।একবছর হতে চলল তারা এই হোস্টেলে থেকে পড়ছে কিন্ত কোন দিন শিলা ম্যাডামের মুখের হাসি ম্লান হতে দেখেনি।আজ বাংলা ক্লাসের সময় তারা দেখেছে এক ভদ্রলোকের সাথে শিলা আহমেদ লাল ইঁটের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে কথা বলছেন।বাইরের অনেক লোকই শুধু স্কুল দেখতে এখানে আসে তাই স্কুলে বাইরের মানুষ দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই।তবে মিতুলের মনে হলো এই লোকটি শিলা আহমেদের পুর্বপরিচিত।তাছাড়া লোকটি যথেষ্ট সুদর্শন আর বয়স ও ম্যাডামের কাছাকাছি।হোস্টেলে ফিরে মিতুল এব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেল কারন হোস্টেলের অফিসে বসে শিলা আহমেদ লোকটির সাথে কথা বলছিলেন।তবে সে ভীষন রকম অবাক হয়ে গেল তখন যখন লোকটি চলে যাওয়ার পর শিলা আহমেদ কে টেবিলে মাথা রেখে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখল।মিতুলের কাছে এটা যেন এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য।অফিসের জানালার ধার থেকে চুপিচুপি নিজেদের রুমে ফিরে সে রুমের অন্য দুজনের সাথে এ নিয়ে আলোচনায় মগ্ন হয়ে গেল।
শিলা আহমেদের বয়স এখন আটচল্লিশ।হোস্টেলের মেয়ে,স্টাফ আর কাজের লোকদের বাদ দিলে বলা যায় তিনি একাই থাকেন নিজের বাড়িতে ।তিনি সারাদিন স্কুল-কলেজে ব্যস্ত থাকেন,তারপর হোস্টেল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।তার বাড়ির সাথে মূল বিল্ডিঙ্গের সংযোগ ছাঁদ আর গ্রীল দিয়ে ঘেরা লম্বা একটা বারান্দা।সেই বারান্দা দিয়ে তিনি যখন ইচ্ছা মূল বিল্ডিঙ্গে গিয়ে মেয়েদের ভালমন্দ দেখাশোনা করেন।সদাহাস্যময়ী এই মানুষটাকে ঘিরে মেয়েদের মনে অনেক রহস্য।তারা জানে না শিলা আহমেদ বিবাহিত,বিধবা না ডিভোর্সী।তারা এটাও জানে না কেন এমন সুন্দরী শিক্ষিত একজন মহিলা এমন একটা গ্রামে একাকী জীবন অতিবাহিত করছে।আজ সন্ধ্যায় যখন বৃষ্টি নামল তখন মিতুল মরিয়া হয়ে ঘোষনা করল যে,যা হয় হবে কিন্ত আজ সে শিলা আহমেদের কাছে গিয়ে তার জীবনকাহিনী শুনতে চাইবে।মিতুলের বাঁকি দুই রুমমেট ও ভয়ে ভয়ে রাজি হয়ে গেল।তারপরেই তারা শিলা আহমেদের কাছে গিয়ে তাদের ইচ্ছা জানালো এবং তিনি এদের লাইব্রেরীতে বসিয়ে চা আনতে গেলেন।
চায়ে আনমনে একটা চুমুক দিয়ে শিলা আহমেদ শুরু করলেন,তোমরা আমার জীবনের কথা শুনতে চাও কিন্ত আমার জীবন কোনো চমকপ্রদ সুখের কাহিনী নয়।আমার ছোটবেলাটা আর দশটা মানুষের মতই সাধারন ভাবে কেটেছে তাই সেটা নিয়ে কিছু বলছিনা।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি একটা সমাজসেবী ছাত্র সংগঠনে যুক্ত হলাম।আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে তা দিয়ে অসহায় মানুষ্ কে সাহায্য করতাম।সেইবার আমরা সারাবছর ধরে নানা জায়গা থেকে শীতের কাপড় আর সংগৃহীত টাকা দিয়ে অনেকগুলো কম্বল কিনে জমা করে রেখেছিলাম গ্রামের গরীব মানুষের মাঝে বিতরনের জন্যে।একদিন সকালে গিয়ে দেখি সবকিছুর উপরে বাদামী কি যেন ছড়ানো আর তা থেকে বিকট দুর্গন্ধ আসছে।কাছে গিয়ে বুঝলাম গরুর গোবর পানি দিয়ে গুলিয়ে সব কাপড়ের উপর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।সেখানে আবার একটা নোটে নাম সই করে লেখা এটা ছিল আমাদের উচিত শাস্তি।আর দুদিন পরেই আমরা বিতরনে বের হব তাই সব আয়োজন করে ফেলা হয়েছে।এর মাঝে আসল জিনিসের এই অবস্থা দেখে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল এবং আমি গিয়ে দোষীদের সর্দারকে একটা চড় কষালাম।আসলে আমাদের ব্যাচের একটা বখাটে গ্রুপের সাথে আমাদের প্রায়ই খিটিমিটি লেগে থাকত,বিশেষ করে তুষারের সাথে আমার।ক্যান্টিনে বসার জায়গা নিয়ে কথা কাটাকাটি করে হেরে যাওয়ার শোধ নিয়েছিল তারা ঐ নীচ কাজটা করে।তারপর চড়ের প্রতিশোধ নিতেই তুষার প্রতিজ্ঞা করেছিল আমার সাথে সে প্রেম করবে।এসব অবশ্য আমি পরে তুষারের কাছেই শুনেছিলাম।
এই পর্যন্ত বলে শিলা আহমেদ চায়ের কাপে পর পর কয়টা চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন।মিতুল আগ্রহী হয়ে জিগাসা করল তারপর কি হলো ম্যাডাম?শিলা আহমেদ একটু হেসে আবার শুরু করলেন,তারপর তুষার আমাদের সংগঠনের নেতার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে কথায় কথায় তাকে পটিয়ে ফেলল এবং সেদিনই সংগঠনের সদস্য হয়ে গেল।আমরা তখন ক্যাম্পাসের একটা পুকুরের ধারে বড় বড় ড্রামে সাবান পানিতে কাপড়গুলো চুবিয়ে পরিষ্কার করছি।তুষার তার দলবল নিয়ে সেখানে গিয়ে কাজে হাত লাগালো।এমনকি দশটা কম্বল আর ত্রিশটা গরম চাদর কিনে সংগঠনে দান করে দিল।এভাবেই সে আমাদের একজন হয়ে গেল।তবে অন্যরা তার আচরনে ভুলে গেলেও সে আমার মন ভুলাতে পারেনি।সে তখনও ছিল আমার জন্য এলার্জি।তাছাড়া তখন থেকে সে সারাদিন আমার আগেপিছে ঘুরে বেড়াত।আমি যেখানে যেখানে কাজে যেতাম সেও সেখানে সেখানে যেতে শুরু করল।আমি কি যে বিরক্ত হতাম তা বলার মত না।এটুকু বলেই শিলা আহমেদ চুপ করে কি যেন ভাবতে লাগলেন।হয়ত পুরোনো দিনের মাঝে হারিয়ে গেলেন।
একটু পর মিতুল বলল,তিনি কি তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পেরেছিলেন?শিলা আহমেদ মৃদু হেসে উত্তর দিলেন।হ্যাঁ সে পেরেছিল ঠিকই কিন্ত জয়ী হতে পারেনি।মেয়েটিকে দূর্বল করে দিয়ে নিজেও সেই মেয়েটির প্রতি নিজের অসীম দূর্বলতার কাছে হেরে গিয়েছিল সে।আসলে আমার পক্ষে বাস্তবতা জ্ঞানহীন,বখাটে কোনো ছেলের প্রতি আসক্ত হওয়ার কারন ছিল না।কিন্ত তখন তুষার অনেক অনেক বেশি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল।লোক দেখানো পরিবর্তন নয় বরং সত্যিকারের স্থায়ী পরিবর্তন।আমার মনে হয় ওর এমন বদলে যাওয়ার পেছেনে বড় ভুমিকা ছিল আমাদের সংগঠনের।সে ছিল বড়লোক ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে,জীবন সম্পর্কে প্রকৃত কোনো ধারনাই ছিলনা তার।আমাদের সাথে থেকে মানুষের জীবনের দুঃখ কষ্ট দেখে দেখে তার মাঝে যেন নতুন কিছুর জন্ম হলো।মানুষের জন্য কাজ করতে করতে সে যেন প্রকৃত অর্থে দায়ীত্বশীল মানুষ হয়ে উঠতে থাকল দিনে দিনে।আমি সেই দায়ীত্বশীল মানুষটির প্রতি আসক্ত হয়েছিলাম। আরো বেশি আসক্ত হয়েছিলাম তার বাইরের ছটফটে আবরনের ভেতরে থাকা প্রচন্ড অনুভুতিপ্রবন,রুচিশীল,দরদী আর নরম মনের ছেলেটির প্রতি। ভীষন তীব্র ছিল সেই আকর্ষন।তবে হয়ত আমারটার চেয়েও তীব্র ছিল আমার প্রতি তার আকর্ষন।সেই চড় মারার ঘটনার আড়াই কি তিন বছর পর আমরা দুজনেই আবিষ্কার করলাম যে একে অপরকে ছাড়া নিজেদের জীবন আমরা ভাবতে পারছিনা।তখন যতটা সময় সম্ভব একসাথে কাটাতাম আমরা তবুও কখনো বিরক্তি বা ক্লান্তি আসত না।তার উপর ছিল আমার অসীম ভরসা,কোথায় কোথায় যে চলে যেতাম ওর সাথে নির্দ্বিধায়!!!একবার বন্যার সময় মাত্র দুজনে মিলে সেই পটুয়াখালিতে ত্রান দিতে গিয়েছি।সে সাথে ছিল তাই অচেনা জায়গাতে একা মেয়ে হওয়ার পরেও ভয় পাইনি।দিনে দিনে অবস্থা এমন হল যে আমরা একে অন্যকে আলাদা মানুষ বলে ভাবতে পারতাম না।দুজনের পরিবারও বিষয়টা সহজভাবেই মেনে নিয়েছিল।তাই পড়ালেখা শেষ হওয়ার পরে পরিবারের মানুষজন আমাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে এক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
এবার স্নিগ্ধা প্রশ্ন করল,আপনি তো খুব খুশি ছিলেন তাই না ম্যাডাম?প্রশ্ন শুনেই শিলা আহমেদের মুখ এক অপুর্ব খুশির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।তিনি উত্তর দিলেন,হ্যাঁ ভীষন খুশি ছিলাম আমি।তখন আমার চব্বিশ বছর বয়সের জীবনের সমস্ত পৃথিবী,আকাশ, বাতাস যেন আনন্দের ভরে উঠেছিল।তবে শুধু আমরা না আমাদের পরিবারের লোকজন,বন্ধু বান্ধব সবাই খুব খুশি ছিল।তাদের কাছে আমরা ছিলাম একেবারে পারফেক্ট কাপল।।তাছাড়া সবাই বলতো আমাদের দুজনকে নাকি একে অন্যের সাথে ভীষন মানায়।তাই খুব ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছিল।বিয়ের শাড়ি,গয়না,ফুল, খাবার সবকিছুর জন্য শপিং করে করে বাড়ি ভরে ফেলা হয়েছিল।সেই দিনগুলোর প্রতিটি রং,প্রতিটি সুর,প্রতিটি সৌরভ এখনও আমার মনকে দোলা দেয়।তোমরা শুনলে অবাক হবে যে আমার গায়ে হলুদের জন্য তুষারের ফুপি আর আমার ফুপিরা মিলে মোট একশ রকমের পিঠা বানিয়েছিল।এখন তো মানুষ বিরানী দিয়েই ঝামেলা শেষ করে ফেলে কিন্ত তখন গায়ে হলুদ মানেই ছিল পিঠা পায়েস।তবে এত রকমের পিঠা দিয়ে বুঝি তখনকার কোনো মেহমানই আগে আপ্যায়িত হয়নি।লোকের মুখে মুখেই ছিল সেই গায়ে হলুদের আলোচনা।কিন্ত এতকিছুর পরেও আমার গায়ে হলুদ আর সব মেয়ের চেয়ে কেন স্পেশাল ছিল জান?কারন হয়ত কোনো মেয়েই গায়ে হলুদে এমন ফুলের গহনা পড়েনি যে ফুল তার হবু স্বামী নিজের হাতে চাষ করেছে।জানি তোমরা অবাক হচ্ছ কিন্ত সত্যিই সে নিজের বারান্দার টবে আমার জন্য লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধা লাগিয়েছিল,নিজে যত্ন করে সেই গাছে ফুল ফুটিয়েছিল।সেই ফুলের গহনা দিয়েই আমি সেজেছিলাম।ছেলেটার মাঝে অদ্ভুত সব পাগলামী খেয়াল কাজ করত।হয়ত এজন্যই ওকে আমার আরো বেশি ভাল লাগত।
এটুকু বলে শিলা আহমেদ চেয়ার থেকে উঠে একটা পুরোনো এলবাম মিতুলের দিকে এগিয়ে দিলেন।অন্যরা সেদিকে হুমড়ি খেয়ে আসলো।এলবাম খুলে সেখানে শিলা আহমেদের পুরোনো ববকাট চুলের ছবি দেখে তারা একেবারে বোকা বনে গেল।এখনের শান্ত দিঘির মত চেহারার লম্বা চুলের মহিলাটির সাথে ছাত্র জীবনের সেই দুরন্ত মেয়েটিকে যেন মেলানো যায় না।এলবাম দেখতে দেখতেই মিতুল প্রশ্ন করল,তারপর কি হলো ম্যাডাম?একটা নিঃশ্বাস ফেলে শিলা আহমেদ বললেন,তারপর?তারপর সবকিছু শেষ হয়ে গেল।মিতুলরা সবাই চমকে উঠে শিলা আহমেদের দিকে তাকালো।তিনি তখন জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছেন।হয়ত নিজের চোখের জল কেউ দেখুক তা চাইছেন না বলেই।বাইরে তাকিয়ে থেকেই তিনি বললেন,তখন দুজনেরই গায়ে হলুদ হয়ে গেছে, বিয়ের মাত্র একদিন বাকি,হঠাত তার মাথায় আর এক পাগলামী খেয়াল চাপল।আমি বরাবরই অপরাজিতা ফুলের বর্ননা শুনে খুব মুগ্ধ ছিলাম কিন্ত কখনো চোখে দেখিনি।এটা শুনে সে একদিন বলেছিল যেখান থেকে পারে জোগাড় করে একরাশ অপরাজিতা দিয়ে সে আমার ঘর ভরিয়ে দেবে।বিয়ের আগের দিন সে বন্ধুর মোটর সাইকেল ধার নিয়ে শহরের বাইরে গিয়েছিল।ফেরার পথে তার এক্সিডেন্ট হয়।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিল এতে তুষারের কোনো দোষ ছিল না।একটা ছোট বাচ্চা হঠাত তার সামনে দৌড়ে এসেছিল।তাকে বাঁচাতে গিয়েই সে মোটরসাইকেল সহ পাশের খাদে পড়ে গিয়েছিল।মাথায় ভীষন আঘাত পাওয়ায় তার সেখানেই মৃত্যু হয়।
আমি যখন তাকে দেখলাম তখন সে শান্ত হয়ে লক্ষীছেলের মত ঘুমিয়ে আছে।আমি তার কপাল স্পর্শ করলাম হাত দিয়ে।উফ!কি ভীষন ঠান্ডা ছিল তার শরীর!আমি বুঝতে পারছিলাম যে নিজের শরীরের সমস্ত উষ্ণতার ভাগ দিয়েও ওকে আমি আর উষ্ণ করতে পারবো না।আমি আঙ্গুল দিয়ে তার মাথার চুল স্পর্শ করলাম কিন্ত বরাবরের মত তার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠল না।তার শার্টের বুক পকেটে একটা খামের মধ্যে ছিল লম্বা লম্বা পাঁচ ছয়টা শুকনো অপরাজিতার ফল আর সবুজ লতানো ডালে একটি তাজা ফুল।হয়ত সে কোথাও সেই ফুল গাছের খোঁজ পেয়েছিল।বিয়ের রাতে আমাকে উপহার দেবে বলেই ছেলেটা সেই ফুলের বীজ আনতে গিয়েছিল।কিন্ত সে আর ফিরল না আমার কাছে আগের মত হাসিমুখে।
বাইরে তখনও রিমঝিম করে বৃষ্টি ঝরেই চলেছে আর ঘরের ভেতরে নিরব বৃষ্টি নেমেছে চার জোড়া চোখে।চুপচাপ অনেক সময় কাটানোর পর,মিতুল জিগাসা করল আপনি এখানে কেন আসলেন?শিলা আহমেদ তখন নিজেকে সামলে নিয়েছেন।তিনি আবার এসে চেয়ারে বসে বললেন,ও চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারতাম না যে বেঁচে আছি কিনা।তবুও আমি চাইছিলাম নিজেকে সামলে নিতে।কিন্ত ঐ শহর আমাকে সবসময় ওর কথা মনে করিয়ে দিত।আমি চেষ্টা করলাম কাজের মাঝে ডুবে যেতে কিন্ত পরিচিত সবাই আমাকে সমবেদনা জানিয়ে জানিয়ে জীবনের নিদারুন দুর্ঘটনা ভুলতে দিত না।কিন্ত আমি চাইতাম ওর সাথে কাটানো সুন্দর স্মৃতিগুলো নিয়ে বাঁচতে।ও পৃথিবী থেকে চলে গেছে এই বেদনাদায়ক কথাটি মনে করতে চাইতাম না।বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর আমার অবস্থা দেখে অনেকেই আমাকে অন্য কারো সাথে নতুন করে জীবন শুরু করতে বলা শুরু করল।আগের সবকিছু সহ্য হলেও এই জিনিসটা আমার সহ্য হল না।তাই নিরুপায় হয়ে আমি এই গ্রামে,সবার চোখের আড়ালে চলে আসলাম।এটা আসলে ছিল তুষারের দাদুর বাড়ি।একবার ওর সাথে এখানে এসে আমি কিছুদিন কাটিয়ে গিয়েছিলাম।তখন থেকেই তুষারের দাদু দাদি আমায় খুব স্নেহ করতেন।তারা আমায় সাদরে গ্রহন করলেন।একমাত্র তারাই আমাকে বুঝলেন,আমার মনের অবস্থা বুঝলেন।আমি কিভাবে অন্য কারো সাথে আমার জীবন শুরু করবো?আমার জীবন তো ওর সাথে শুরু হয়েছে,ওর সাথেই তার শেষ হয়ে গেছে।ওর সাথে আমার সংসার করাটাই তো শুধু বাকি ছিল?সেটাও নাহয় হবে অন্য কোনো জগতে।কিন্ত ওর বদলে অন্য কাওকে ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।ওর সাথে থেকে আমি এত আনন্দ পেয়েছি যে সারা জীবনে আর কোনো সুখ না হলেও আমার চলবে।মাঝে মাঝে একজন মানুষই জীবনটাকে এতটা ভরিয়ে দিতে পারে যে সে চলে গেলেও তার স্থানটা শুন্য হয়না।তাই সেখানে অন্য কাওকে কখনোই বসানো যায় না।
এরপর তুষারের দাদুর দেয়া জায়গাতে আমি গ্রামের মেয়েদের জন্য স্কুল খুললাম।তারপর দিনে দিনে সবকিছু এই অবস্থায় এসেছে।এই যে স্কুল আর হোস্টেল,এই সব জায়গাজমি দাদুরই ছিল।একসময় এগুলো তুষারের হতে পারত কিন্ত এখন সবকিছু আমার নামে লিখে দেয়া হয়েছে।দাদু দাদির মৃত্যুর পর আমি এই হোস্টেল গড়ে তুলেছি বসত বাড়ির উপর।যে বাড়িতে আমি থাকছি সেটাতেই আগে তারা থাকতেন আমি শুধু কিছুটা পরিবর্তন করে মূল বিল্ডিঙ্গের সাথে জুড়ে দিয়েছি।অনেকে এসব দেখে অবাক হয়ে যায় কিন্ত সত্যি কথাটা হচ্ছে এত জায়গা আর টাকা না পেলে আমি মনের মত করে সব গড়তে পারতাম না।তুষারের বাবা অনেক সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন আমার নামে।আমার নিজের জন্য তো কিছুই দরকার নেই শুধু খাওয়া থাকার ব্যবস্থা হলেই চলে।তাই সেসব এই স্কুল কলেজ গড়তে আর চালাতেই ব্যয় করেছি।তারা সত্যি সত্যি আমাকে ছেলের বউয়ের মত দেখেন আমিও তাদের আমার আত্মীয় মনে করি।তাদের আশীর্বাদেই আমি এখন একরাশ তাজা ফুলের মত মেয়ের মাঝে দিন কাটাচ্ছি আর অধীর অপেক্ষা করছি জীবনের শেষ দিনের,যেদিন দুজনের অনন্ত প্রতীক্ষা শেষ হবে এবং আবার ওকে দেখতে পাব।এই হচ্ছে আমার জীবন।এখন বল তোমাদেরও কি আমার আত্মীয় আর বন্ধুদের মত আমাকে খুব অভাগা বলে মনে হয়?
মিতুলরা মাথা নেড়ে অসম্মতি জানায়।যে জীবনে এমন বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত ভালবাসা পেয়েছে এবং এতটা তীব্রভাবে কাওকে ভালবাসতে পেরেছে তাকে আর যাই হোক অভাগা বলা যায় না।এলবামের একটা যুগল ছবিতে মিতুলের চোখ আঁটকে যায়।পাশাপাশি হাসিমুখে বসা একটা অপূর্ব ছবি।ছবির পেছনে লেখা তুষার আহমেদ ও শিলা ইয়াসমিন,কক্সবাজার শিক্ষা সফরে।চলে আসার সময় শিলা বললেন,আজ যে লোকটি এসেছিল সে তুষারের বন্ধু শোভন।প্রথম দিকে আত্মীয় বন্ধুরা আমাকে দেখতে প্রায়ই আসত।মৃত্যুর আগে আমার মাও এসে আমার সাথে থাকতেন কখনো কখনো।তারা অনেকেই এই স্কুল কলেজ গড়ে তুলতে অনেক রকম সাহায্য করেছে।এখন সবাই নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত আর নিশ্চিত হয়ে গেছে যে এখানে আমি ভাল আছি তাই অনেকদিন পর সময় হলে আসে।তাকে দেখে আর কথা বলে কেন জানিনা আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল।তোমাদের সাথে কথা বলতে বলতে অনেক সুখের স্মৃতি মনে পড়ায় এখন বেশ ভাল লাগছে।
সে রাতে মিতুলের ঘুম আসতে অনেক দেরী হয়ে গেল।আজ যেন তার ভাবনার জগতটা এলোমেলো হয়ে গেছে।জীবনের সমস্ত প্রলোভন কে পেছনে ফেলে একাকী এই নির্জনে দিনের পর দিন বসবাস করাটা কম কথা নয় একজন মেয়ের জন্য।হাজারটা বিপদ আপদ আর প্রতিকূলতা আসে একাকী মেয়ের জীবনে।সেগুলো কাটিয়ে উঠে নিজেকে একটা কিংবদন্তিতে পরিনত করাও কম কথা নয়।তাছাড়া দূর্বল মুহুর্তও তো আসে মাঝে মাঝে যখন একজন সঙ্গীর অভাব খুব বেশি করে বোধ হয়।আর মাতৃত্ব?কোনো মানিকরতনের বিনিময়েও তো নারীরা এই সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চায় না।একজন মানুষের মাঝে কোন ঐশ্বর্যের সন্ধান পেলে অন্য একজন মানুষের হৃদয় এতটা পূর্ন হতে পারে যে সে পৃথিবীর সব সুখ তুচ্ছ করে দেয় তা ভেবে মিতুল অভিভুত হয়ে যায়।হাতের মুঠোয় ধরে রাখা অপরাজিতা ফুলটির দিকে তাকিয়ে সে ভাবে যে,তুষার তার কথা রেখেছে।প্রেয়সীর জন্য তার অতুলনীয় শেষ উপহারে সে বেদনার রঙ্গে রাঙ্গানো কিন্ত অপূর্ব সুন্দর অসংখ্য অপরাজিতায় ভরিয়ে দিয়েছে শিলার ঘর!