বলুন তো জগতে কার মধ্যে ঈর্ষা নেই? উত্তরটা পানির মত সহজ, মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে ঈর্ষা নেই। তাহলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই যে, তুমি, আমি, আমরা, আমাদের প্রিয় জগতের সবার মধ্যেই ঈর্ষা রয়েছে। তবে একটি কথা প্রচলিত আছে, ঈর্ষা নারী ও পুরুষ ভেদে কম-বেশি হয়। নারীদের মধ্যে ঈর্ষার পরিমাণটা একটু বেশী।
@=বান্ধবীর জামাইটা দেখতে এত সুন্দর কেন?
@=ওর শাড়িটা এত দামী কেন?
@=আমার গহনাগুলো ভাবীরটার মতো নয় কেন?
@=ও বাড়ির গাড়ির মডেলটা কেন আপডেটেড?
প্রশ্ন হচ্ছে কী নিয়ে ঈর্ষা করছেন? যে ঈর্ষা আপনার মনকে ছোট করে দেয়, সব সময়ে অসুখী করে রাখে এবং যে ধরনের ঈর্ষা দ্বারা আমরা সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি তা থেকে রক্ষার উপায় কি?
আমরা হিংসার দৃষ্টিতে দেখিঃ
@=যারা আমাদের চেয়ে বিত্তশালী, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদেরকে আমরা হিংসার দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু কত কষ্ট করে যে তারা বিত্তশালী হয়েছে একবারও ভেবে দেখি না।
@=যখন কোন সহকর্মী নিজের চেয়ে বেশি বেতন পান। তখন আপনি/আমি হিংসার দৃষ্টিতে দেখি। একবারও ভেবে দেখি না যে এর পেছনে তার মেধা ও শ্রম কতখানি ছিল।
@=যখন সহপাঠী উচ্চবিত্তের স্বামীর সাথে বিয়ে হয় তখনও আপনি/আমি সহজেই ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ি। কিন্তু আপনি/আমি একবারও ভেবে দেখি না যে বড় বড় বিত্তশালীর ঘরের জ্বালা যন্ত্রণাও বড় আর বেশি হতে পারে?
ঈর্ষান্বিত হয়ে আমরা প্রায়শই নকল সুখ, শান্তি আর স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু নকল সুখের পিছনে যে খাঁটি যন্ত্রণার চেহারাটা রয়েছে এবং যা সহজে দেখা যায় না, তা উপলব্ধি করেছি কি একবারও? অন্যের দিকে তাকিয়ে অন্যের নকল সুখ দেখে দেখে তো সময় নষ্ট করি। কখনো উপলব্ধি করি না যে, তার অনেক দুঃখ রয়েছে, এমন কি আপনার/আমার চেয়েও তা অনেক দুঃখজনক। তারপরও কি আমরা ঐ সুখ চাইব?
হ্যাঁ বন্ধুরা, আজ থেকে অন্যের দিকে তাকিয়ে এভাবে আর সময় নষ্ট করব না। সুখ নদীর ওপারে নেই, বরং আমরা যে পাড়ে আছি সেই পাড়েই সুখ রয়েছে। তাই নিজের দিকে খেয়াল করব।
আমরা যদি সর্বদাই অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকি তাহলে নিজের মধ্যে অজানা সব মহত্তর গুণাবলী আর ভাল দিকগুলো দেখতেই পাব না বা উপলব্ধিও করতে পারব না। ফলে সহজেই আমরা হিংসা দ্বারা আক্রান্ত হব। আর এ জন্য আমাদের নিজের ভালো দিকগুলোর ওপর নজর দিতে হবে এবং ক্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে। আর এভাবে আমরা সহজেই হিংসা আর ঈর্ষামুক্ত দৃঢ় অথবা শক্তিশালী মন গড়ে তুলতে পারব। যা সহজেই অন্যদের সাথে শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
(দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত মরিয়ম বেগম এর "ঈর্ষা থেকে কিভাবে নিজেকে দূরে রাখবেন ?" লেখা থেকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে সাজিয়েছি)