আমাদের গ্রাম থেকে ২ মাইল পুর্বে পাহাড়; শিশুকালে দেখেছি, পাহাড়ের দিগন্তরেখা থেকে সকালবেলা সুর্য বেরিয়ে আসে, ক্রমেই ইহা উপরের দিকে উঠে; একসময় মাথার উপর হয়ে পশ্চিম দিকে চলে যায়; সন্ধ্যায় পশ্চিমের দিগন্তরেখার নীচে চলে যায়। এই দৃশ্য থেকে ধারণা হয়েছিলো যে, সুর্য ঘুরে। পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা ছিলো, চারিদিকের দিগন্ত বিস্তৃত সমতল ভুমি ও আকাশ মিলে পৃথিবী। ২য় শ্রেণীতে পৃথিবীকে ( The Earth ) চিনায়ে দিলেন একজন শিক্ষক; তিনি ব্যাখ্যা করলেন যে, পায়ের নীচে যেই ভুমি আছে, ইহা ভয়ানক বিশাল পরিমাণ মাটি, পাথর, বালি, খনিজের আকর ও লাভার সমন্ময়ে গঠিত একটি পিন্ড (গোালকার বস্তু ); আমাদের মাথার উপরে যা আছে উহা আকাশ, উহা পৃথিবীর অংশ নয়, উহা মহাশুন্যের অংশ। তিনি একই সময়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, সুর্য ঘুরে না, আমাদেরকে বুকে ধারণ করে পৃথিবীই ঘুরছে।
স্কুল শিক্ষকের কথা মেনে নিয়েছিলাম; কিন্তু নিজে কেন যেন উহাকে অনুধাবন করতে পারছিলাম না সহজে; তাতে অসুবিধা হয়নি, শিক্ষক যখন বলেছেন, উনার কথাই সঠিক; কারণ, তিনি জ্ঞানী মানুষ, তিনি সবার থেকে বেশী জানেন। কিছুদিনের মাঝেই উহা মনের মাঝে গেঁথে গেলো; আমার আগের ধারণাটি হারিয়ে গেলো। শিক্ষক জ্ঞানী মানুষ,আমার নিজের ধারণাকে বাদ দিয়ে, উনার বক্তব্যকে গ্রহন করাটাই আমার জীবনের "১ম মুক্তচিন্তা" ছিলো। মাঝে মাঝে কেমন কেমন লাগতো: পৃথিবী যদি ঘুরে, আমরা ইহার উপর হাঁটছি কি করে, ঘরের মাঝে ঘুমাচ্ছি কিভাবে? ঘুর্ণনের কারণে ঘরবাড়ী পড়ে যাচ্ছে না কেন? তবে, নিজকে সান্ত্বনা দিতাম যে, শিক্ষক যা বলেছেন উহাই সঠিক, আমাকে আরো জানতে হবে; ভুগোলের বই পড়ে বুঝার পর, সেই শিক্ষকের ব্যাখাগুলো পুরোপুরি পরিস্কার হলো।
সুর্য ঘুরার ব্যাপারটা ও 'ভুমি, দিগন্ত ও আকাশ মিলে পৃথিবীর' ধারণা কখন যে হারিয়ে গেছে সেটাই খেয়াল করতে পারিনি; আগের ভাবনার যায়গায় নতুন, কিন্তু সঠিক ধারণা মনের মাঝে স্হান করে নিয়েছে; ইহাই মুক্তচিন্তার ১ম উদাহরণ ছিলো আমার জন্য। তারপর, স্কুল, কলেজ , ইউনিভার্সির জীবন, কর্মজীবন, ব্লগিং, ইত্যাদি মানব জাতির লব্ধজ্ঞানকে বুঝতে সাহায্য করেছে ও করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৯