somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়! যদি মরনের কথা একবার স্বরণ হতো?

০৯ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গভীর রাত,মুয়াজ্জিন মাইকে ঘোষনা দিলো,সেহরীর সময় হয়েছে,সবাই সেহরী খেতে উঠুন। পাশ ফিরে উঠতে যাবো,তখনই খেলাম বড় ধরনের একটা ধাক্কা।
আবছা আলোতে দেখলাম আমার মত দেখতে পাশে একজন শুয়ে আছে। এইটা আবার কে?? ভয়ে ভয়ে তাকে নাড়া দিলাম,দেখলাম অচেতন কোন কথা বলছে না, শরীর ঠান্ডা। কিছুক্ষণ পরেই মনে হলো ভদ্রলোক
মারা গেছেন। চিন্তা করলাম এই লাশটা এখানে কেন???
আবার দেখতে পুরোপুরি আমার মত?? স্বপ্ন দেখছি না তো?
না সত্যিই তো।
অনেকক্ষণ চিল্লাইয়া লোক জড়ো করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু একি কেউ আসছে না। একটু পর দেখলাম রুমের লাইট জ্বালাল পাশের রুমের একজন। ওই লাশটার কাছে এসে আমার নাম নিয়ে বললো ভাই সেহরি খাইবেন না?? সময় হইছে উঠেন। আমিতো পুরো অবাক, এইসব হচ্ছেটা কি??
তার কাছে গিয়ে বললাম ওই মিয়া তোমার মাথা খারাপ হইছে?? এই লাশ আমার রুমে আসলো কেমতে???
এইটা কার লাশ?? দেখি সে আমার কথায় কোন কর্ণপাত করলো না। সেও লাশটা ধরে অবাক হলো, এবং চিল্লাইয়া উঠলো, মুহুর্তেই আশপাশের সবাই জড়ো হলো। লাশটা একটু দেখে সবাই ইন্নালিল্লাহ পড়তে লাগলো। আর তো আশেপাশে কান্নার রোল পইরা গেছে। মুয়াজ্জিন বেচারা সেহরীর জন্য ডাকতে ডাকতে এমনিতেই হয়রান হইয়া গেছে, এখন আবার নতুন এলান করতে হবে। মুয়াজ্জিন যখন আমার বাবার নাম
নিয়ে বললো অমুকের ছেলে অমুক ইন্তেকাল করেছে, তখন মনে হইলো বিরাট ধরনের হাই বোল্ডেজের শক খাইছি। সবাই আমাকে বাদ দিয়ে লাশটা নিয়েই ব্যস্ত হইয়া পরলো। কাউকেই বুঝাতে পারলাম না,আমি বেঁচে
আছি। মনে হইলো সবাই বুঝি পাগল হইয়া গেছে একজনরে জিদ্দে একটা ধাক্কাও মারছিলাম, দেখলাম সে বিন্দু পরিমাণও
প্রতিবাদ করল না। ভাবখানা এমন সে উষ্টা খাইয়া পরছে। তারপর লাশটা গোসল দেয়ার জন্য মসজিদে নিয়ে যাওয়া হলো। মুয়াজ্জিন সাব আরেকজনকে নিয়ে
আসলেন গোসল দিতে। দুইজন বলাবলি করতে লাগলেন,আরে! মৃত্যু কার কখন আসে বলা যায় না!
এইরকম তাগরা মানুষ মারা যাইবো কে ভাবছে, কাল বিকালেই তো আমাদের সাথে হাসিখুশী ভাবে কত কথা বললো। আমি লাশটার পাশাপাশি ছিলাম দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলাম। গোসল দেয়ার পর দেখলাম মসজিদের কাছে একটা এম্বুলেন্সও আসলো।
তারপর লাশটা এম্বুলেন্সে উঠানো হল। হঠাৎ বাবাকে দেখলাম,কয়েকজন তাকে ধরে আনছেন,বুঝাই যাচ্ছে,ভদ্রলোক কি পরিমাণ কান্না করছেন। উনি ড্রাইভারের সাথে গিয়ে বসলেন। আমিও এক চান্সে উইঠা বসলাম লাশটার পাশেই বসলাম,চিন্তা করলাম
দেখি কি হয়। গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে সেখানেই দাফন
করা হবে। এখনো আমার কাছে সবকিছু ক্লীয়ার
না, কিছুই বুঝতাছি না। বাসার কাছাকাছি এম্বুলেন্সটা
আসতেই দেখলাম বাসার আশেপাশে প্রচুর মানুষ। কত পরিচিত মানুষ কান্নাকাটি করছে। গাড়ী থেকে নেমেই আম্মার রুমে গেলাম দেখা করতে। দেখি আম্মা ঘুমাচ্ছে, আর পাশে পরশী কয়েকজন মহিলা বসা। তাদের কথা দ্বারা বুঝলাম আম্মা কাঁদতে কাঁদতে দুইবার বেহুশ হইয়া
গেছেন,এখন উনাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হইছে। লাশ দেখার সুযোগ করে দেয়া হলো সবাইকে।
বড় আপু মেজো আপু ছোট আপুকে যখন লাশ দেখানো হলো,আহা লাশ ধরে সেকি কান্না! সে এক হৃদয়স্পর্ষী দৃশ্য। কিন্তু কাউরেই বুঝাইতে পারলাম না যে, আমি মরি নি আমি বেঁচে আছি, এটা অন্য কারো লাশ। কেউ আমার কথা শুনতে পারছে না। অবাক ব্যাপার একদিন আগেও ঠান্ডা সর্দী লাইগা ছিলো, দুই তিন যাবৎ ঠিকমত তারাবীও পড়তে পারছিলাম না,কিন্তু আজ কিছুই নাই,আমি পুরোপুরি সুস্থ,আর শরীরটাও তুলার মতন হালকা মনে হলো। কবরস্থানে গিয়ে দেখলাম চাচা এবং
বড় আপুর কবরের পাশেই একটা কবর খনন করা হইছে। তারপর আম্মাকে লাশ না দেখাইয়াই স্কুল মাঠে জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো, আসরের পর জানাজা। স্কুল মাঠ লোকে লোকারণ্য, একটুও
জায়গা ফাঁকা ছিলো না। বাবা হালকা একটু কথা বলার পর ইমাম সাহেব একটু বয়ান করে জানাজা নামাজ পড়ালেন। লাশ গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক সময় দাফন করা শেষ। এখন লাশ দাফন করে সবাই কবর পাড়াতে লাগলো। তখন আমার মনে হলো আসলেই আমি আর এই জগতে নাই!
আহ! জাইনা শুইনা কত গুনাহ করলাম।
তখন আমার আর কিছু মনে না পড়লেও হঠাৎ আমার ফেসবুক আইডির কথা মনে পড়ল! কি হবে আমার প্রিয় ফেসবুক আইডিটার? নোটিফিকেশনে কত কিছুই না আসতে থাকবে! আর কোনদিন সেগুলার আর রিপ্লাই দেয়া হবে না...! মেসেঞ্জারে কত কত মেসেজই না জমা হবে! একটারও তো উত্তর দিতে পারবো না আর কোনদিনও! সবাই কি ভাববে আমাকে তখন? কেউ কি বুঝবে যে, আমি আর নেই পৃথিবীতে! আমি মারা গেছি! এ জগৎ সংসার ত্যাগ করেছি...!!! যদি কেউ বুঝতে পারে তবে সে একজনের দুয়াও তো আমি একটু বেশী পাবো! হায়! কেউ যদি বুঝত! আমার হয়ে আমার মৃত্যু সংবাদটা ফেসবুকে আমার সব বন্ধুদের জানিয়ে দিত...!!! তাহলে আমার ৫০০০ ফ্রেন্ডদের থেকে অন্তত একবার করে হলেও ৫০০০ হাজার বার আমার গুণাহ মাফের দুয়া পাইতাম!
আহ! কত গুণাহই না জীবনে করেছি আমি!
আহ! যদি আরেকটা সুযোগ পাইতাম তাহলে কত যে আমল করতাম! সব সময় মসজিদ মাদ্রাসাতেই পরে থাকতাম, কিন্তু তাতো এখন আর হবার নয়।
ইফতারের ১০-১৫মিনিট আগে দাফন শেষ হইলো। সবাই যার যার মত চলে গেলো, কিন্তু বাবা বসে থাকলো, তাকেও জোর করে নিয়ে যাওয়া হলো। একটু পর দেখি আমি ওই লাশ বডিটার মধ্যে যাচ্ছি। এবার আমি পুরোপুরি নিজেকে ফিরে পেলাম। তাকিয়েই দেখি চারদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না! একদম নিকষ কালো অন্ধকার!
অনেক ভয়ে আছি হয়তো একটু পরই মুনকির-নাকির আসবো, বিভিন্ন প্রশ্ন জিগাইবো, না পারলেই বাইরানি শুরু।
.
.
মরনের কথা একটু মনে করিয়ে দিলাম লেখাটি ও ছবিটি সংগৃহিত।।
.
.
.
লাইট অফ করে অন্ধকার ঘরে পুরো হিস্টোরিটা চিন্তা করলাম, ভাবলাম এগুলা হচ্ছেই, একদিন তো হবেই।
হঠাৎ শোয়া থেকে উঠে বসলাম,শরীরের প্রতিটা লোম খাড়াইয়া গেছে। প্রতিটা মানুষের এভাবেই প্রতিদিন
মৃত্যুকে স্মরণ করা উচিৎ, এটাকেই বলে মোরাকাবা।তাহলে আশা করা যায়, গুনাহের দিকে মন যাবে না। কবরের প্রস্তুতিও নিতে পারবো।
কপি।

আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দান করুন আমিন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×