জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে
বেশিরভাগই
আসে গ্রাম আর মফস্বল থেকে।তাদের
ভাষায়
আঞ্চলিকতা থাকে,ছেলেরা কুঁচকানো
শার্ট
পরে,সাধারণ একটা ব্যাগ থাকে।মেয়েরা
কম
দামী
জুতো পরে, উঁচু পেন্সিল হিল পরতে
জানে না।
কড়া রোদে ওরা টিউশনি করাতে যায়
রোদের
তাপে ওদের শরীরে কোন ফুসকুড়ি দেখা
দেয় না,নোংরা গণরুমে অনায়াসে
থাকতে
পারে,সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল
খেললেও
দিব্যি সুস্থ থাকে,ওরা যেমন কড়া মসলা
দেওয়া গ্রিল
চিকেন খেয়ে হজম করতে পারে তেমনি
শুকনো মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত আয়েশ
করে
খেতে পারে।
.
শোন ননীর পুতুল, ওদের ক্ষ্যাত বলে
গালি
দিয়ো না। যাদের মুখের আঞ্চলিকতা
শুনে
তুমি
হাসতে হাসতে মরে যাও, তোমার মত
বাংলা
ইংরেজি
মিশিয়ে কথা বলতে না জানলেও তারা
ঠিকই
শুদ্ধ
উচ্চারণে ইংরেজিতে প্রেজেনটেশান
দিয়ে
আসে।তুমি ওদের অানস্মার্ট বলে গালি
দিতে পার
কিন্তু আসল অানস্মার্ট তো তুমি যার
পনের
মিনিট কড়া
রোদে থাকলে শরীরে ফুসকুড়ি
উঠে,একবেলা
বাসি খাবার খেলেই ডায়রিয়ার রোগী
হয়ে
হাসপাতালে থাকতে হয়,আধঘণ্টা
বৃষ্টিতে
ভিজলেই
নিউমোনিয়ায় ভুগতে হয়।
.
ভদ্রলোক তুমি সাঁতার জানো না,কোমর
পর্যন্ত
পানিতে নেমে বাঁচাও বাঁচাও বলো, গলা
পর্যন্ত
পানিতে নেমে লাশ হয়ে ফিরে আসো
অথচ
জানো না ওরা একেকটা পানকৌড়ি,
পাল্লা
দিয়ে ওরা
নদীতে সাঁতার কেটেছে, চোখ লাল করে
ঘরে ফিরেছে,মায়ের হাতের পিটুনি
খেয়ে
পিঠ
শক্ত হয়েছে। সেই শক্ত পিঠে বাবার
ধানের
বস্তা
টেনেছে।
.
গ্রাম থেকে আসা ছেলেদের কাছে
জিজ্ঞেস
কর ওরা বলে দেবে সংগ্রাম কাকে বলে।
যে
হাতে ওরা নিপুণ ছবি আঁকে আর তুমি মুগ্ধ
হয়ে
দেখ সেই হাতে ওরা গরু নিয়ে মাঠে
গিয়েছে,খড় কেটেছে,বাবার সাথে
জমিতে
গিয়ে কাস্তে দিয়ে ধান কেটেছে।
ধানের
ঢাকি
তুলতে তুলতে মেয়েগুলোর কোমরে জখম
হয়েছে সেই জখমে ওরা সস্তা মলম
লাগিয়ে
আবার পড়তে বসেছে,নিয়ম করে ভাত
রেঁধেছে, ছাগল নিয়ে মাঠে
গিয়েছে,হাঁসকে
খাওয়াতে ঝিনুক ভেঙেছে।
.
ননীর পুতুল তুমি ঢাকার নামী দামী
কলেজে
পড়েছ, এসির হাওয়া খেতে খেতে ক্লাস
করেছো। তুমি যাদের গেঁয়ো বলে নাক
সিটকাও
সেই গেঁয়োরা ঘামে ভিজে চপচপে হয়ে
কলেজে ক্লাস করেছে,শীতের দিনে
ভাঙা
জানালা দিয়ে আসা শীতল বাতাসে
ঠকঠক
করে
কাঁপতে কাঁপতে পরীক্ষা দিয়েছে।তুমি
ওদের
সংগ্রামের মূল্য দিতে জানো না কেবল
জানো
বাবার টাকা উড়িয়ে একদল বন্ধুদের
নিয়ে
নামী
দামী রেস্টুরেন্টে গিয়ে চিকেন ফ্রাই
চিবুতে।
বাবার এসি করা গাড়িতে ক্যাম্পাসে
আসো
সমস্যা
নেই তুমি শুধু গাড়ির গ্লাস নামিয়ে ওদের
দিকে
তাকিয়ে অবজ্ঞার হাসি হেসো না,ওদের
নিয়ে সস্তা
মশকরা করো না,তোমার মুখে মশকরা
একদম
মানায়
না।তুমি বাবার টাকায় বাহাদুরি
দেখিয়ে
আনন্দ পেতে
পারো কিন্তু টিউশনির অল্প টাকায় ওরা
যখন
কৃষক বাবার
জন্য এক জোড়া জুতা,মায়ের জন্য শাড়ি,
বোনের
জন্য চুড়ি কিনে নিয়ে যায় তোমার
আনন্দের
চেয়ে ওদের আনন্দ বহুগুণ বেশি।
.
ননীর পুতুল তোমার যাবতীয় কাজ তোমার
মা
বাবা
করে দিয়েছেন,মা ভাত মাখিয়ে খাইয়ে
দিয়েছেন
আর বাবা দুধের
গ্লাস ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন।তোমার
মা
বাবা
কেবল তোমাকে পড়ার তাগিদ দিয়েছেন
আর
ওরা
কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ে আজ
পাবলিকিয়ান।এই
পাবলিকিয়ানরা একদিন ইস্ত্রী করা মসৃণ
শার্ট পরে
হয়ত তোমার অফিসের বস হয়ে বসে
থাকবে।
.
শোন ননীর পুতুল,এই গেঁয়োরা হোঁচট
খেয়ে পড়ে গেলে কোনদিন হাউমাউ
করে
কাঁদেনি সেই জখমে থুথু আর কচুর রস
লাগিয়ে
আবার হরিণের মত ভো দৌড় দিয়েছে,
জীবনযুদ্ধে
সেই হরিণদের পরাজিত সৈনিকের তকমা
দিতে পারে
সেই সাধ্য আছে কার।