somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার জন্য কবিতা

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তোমার জন্য কবিতা



সকাল আটটা । আর এক ঘন্টা বাদেই ভাইবা । ভেতরে বেশ উত্তেজনা বোধ হচ্ছে অজিতের। সরকারী বেসরকারী মিলে মোটামুটি এক হাজারের বেশী আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু পৃথিবীতে যেন সবচেয়ে আশ্চর্যতম বিষয় হলো একটা চাকুরী পাওয়া । বহুজাতিক কোম্পানীগুলোত ডাকেই না আর দেশী কোম্পানীগুলো নাক সিটকায়। পাড়ার কলেজ থেকে পড়ার জন্য মনে হয় সে এক অচ্ছুৎ ব্যক্তি। তুবও হাল ছাড়েনি অজিত।দরিদ্র পিতামাতার বড় সন্তান সে, ছোট ভাইটি উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে।সেও অজিতের মতোই টিউশনি করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। পিতার কেরানীর চাকুরী, মাস গেলে পাঁচ হাজার টাকা বেতন। উর্দ্ধগতির এই বাজারে টাকাটা কম বললে ভুল হবে বলতে হবে অতি সামান্য।মাস শেষে নই, মাসের প্রথম থেকেই টানাটানি । মৌলিক চাহিদাগুলো ওদের দিকে তাকিয়ে হাসে তবুও শহরের শেষ প্রান্তের বস্তিতে ভাঙ্গা চালের ঘরে সুখ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে অজিতরা। একটা চাকুরী , একটু উপার্জন বদলে দেবে সবকিছু। একটা চাকুরীর জন্য তিনবছর থেকে ঘুরছে সে। চাকুরীর আবেদনপত্রের খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে তার মাঝে মাঝে মনে হয়। কিছুদিন পর হয়তো চাকুরীর আবেদন করাই তার জন্য দায় হয়ে দাঁড়াবে।দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে আর চাকুরীদাতাদের বৃহস্পতিও তুংগে উঠছে। আবেদন খরচ বাড়লেই লাভটাও তরতর করে বাড়ছে। সবকিছুর দাম বাড়ছে আর চাকুরীর আবেদন খরচ বাড়বেনা তা কী হয়।
ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছে অজিত।এখনো ভাইবা কল শুরু হয়নি। তাকে সহ মোট পনের জন পরীক্ষার্থী। সবাই চুপচাপ। সবাই যেন পণ করেছে কোন কথা বলা যাবে না, কথা বললেই এক মার্ক কাটা।এর আগেও কয়েকটি ভাইবা দিয়েছে সে সবকটির ওয়েটিং রুমে যেন একই অবস্থা বিরাজ করে। সবাই চুপচাপ আর ভেতরে প্রচন্ড নার্ভাসনেস। ভাইবাবোর্ডের অভিজ্ঞতাগুলোও চমৎকার । কেউ বলে আপনি রিটেন ভালো দিয়েছেন বাট নট এক্সপেরিয়েন্সড, কেউ বলে উই নিড মোর ইয়ংগার পিপল দ্যান ইউ আবার কেউ বলে আপনার হোম ডিস্ট্রিকে তো জঙ্গি সন্ত্রাসীদের উথান আবার কেউ বলে বেতন পাবেন দশহাজার টাকা শর্ত হচ্ছে আপনার মূল সার্টিফিকেটগুলো আমাদের কাছে জমা দিতে হবে এবং একটি চুক্তি পত্রে সই করতে হবে আপনি আগামী পাঁচ বছর এই কোম্পানী ছাড়তে পারবেন না। সব শর্তই মেনে নিতে রাজি হয় অজিত, তবুও একটি চাকুরী জোটেনা।ক্লান্তি বেড়ে যায়। দীর্ঘশ্বাস বাড়তে থাকে। তবুও আশা জিইয়ে রাখে সে ।প্রচন্ডরকম আশাবাদী সে। মাঝে মাঝে ভাবে সে, তার এই আশাবাদীর ব্যাপারটা যদি নোবেল কমিটি জানতে পারে নির্ঘাৎ সে অপটামিস্ট এর উপর একখান নোবেল পেয়ে যাবে।
প্রথম ছয় জনের ভাইবা শেষ, অজিতের সিরিয়াল নম্বর তের।এই চাকুরীটা পেলে বেশ হবে, বেতনটাও নাকি বেশ ভালো।ঝকঝকে দেখে একটা বাড়ি ভাড়া নিবে সে, বাবা মাকে আর কোন কষ্ট পেতে দিবেনা, ছোটভাইকেও আর টিউশনি করতে দিবেনা।দারিদ্র্যতা থাকবেনা, কষ্ট থাকবেনা বৃদ্ধ বাবা মা অন্তত শেষ বয়সে একটু আরামে থাকতে পারবে।এর কিছুদিন পর হয়তো মা বলবে বিয়ে থা কর বয়সতো অনেক হলো, বুড়ো হয়ে যাচ্ছিস তোর বন্ধুরাতো অনেকে দু-তিন বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে।মাকে সে বলবে, না মা ওসব হবেনা অন্য কেউ বাড়িতে এসে অশান্তি তৈরী করবে তার চেয়ে এই বেশ ভালো আছি। তবুও ক্লাসের ফার্স্ট গার্লের কথা মনে করে বুকের ভিতর চিন চিন করে উঠে।কোনদিন তার দিকে ঘুরেও তাকায়নি মেয়েটি, তবুও কেনজানি তাকেই মনটা বারবার ভালোবাসতে চাইত, কী যেন একটা মায়া ছিল ওর চেহারায় ওর চোখে।কিন্তু সে কথা বলা হয়নি কখনো। বুকের কষ্ট বুকেই রেখে দিয়েছে সে। নিরাপদ দুরুত্ব থেকে ভালোবেসে গিয়েছে তার ডির্ম গার্লকে।
মি. অজিত সরকার এবার আপনার পালা । একডাকে সৎবিৎ ফিরে পেল অজিত। কোথাকার কল্পনা কোথাই চলে গিয়েছিল।
সতেরো মিনিট পরে ভাইবা বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসলো অজিত। এই সতেরো মিনিট যেনো হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছিলো। সময় বোধহয় হঠাৎ করেই তার চলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। প্রথম প্রশ্নটিই ছিল মি. অজিত আপনি কবিতা লেখা বন্ধ করে দিলেন কেন? কেনো আপনি দু বছর থেকে কোন কবিতা লেখেন না? আপনার একটি নতুন কবিতার জন্য আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি গত দুবছর হলো। এই দুবছরে আপনার পুরোনো কবিতাগুলো বারবার পড়ে মুখস্ত করে ফেলেছি। আপনার কবিতা আমাকে বারবার স্পর্শ করে আমাকে শিহরন জাগায়। বাকরুদ্ধ হয়ে যায় অজিত, ভাইবাবোর্ডে তিনজনের মধ্যে কে এই মহিলা যে তার কবিতা নিয়ে বলছে। একসময় সে কবিতা লিখতো, দিন নাই রাত নাই কবিতা লিখত। মাঝে মাঝে সাইবারক্যাফেতে বসে ফেইসবুকে কবিতাগুলো ছাড়তো। সে তো দুবছর কোন কবিতা লিখেনা, ফেইসবুক থেকেও অনেকদূরে । কে এই নারী , অখ্যাত কবির বিথ্যাত ভক্ত।
মি. অজিত ভক্তরা কবিদের ঠিকই খুঁজে নেয় অনেকগুলো আবেদনের ভিতর যাচাই বাছাই করতে গিয়ে আপনার আবেদনটি পেয়ে আশ্চর্য হয়েছিলাম, কবিদেরও চাকুরীর দরকার হয় ভেবে। তাই স্তব্ধ কবিকে দেখতে ভাইবাতে আপনাকে ডেকেছি। এই রিক্রুটমেন্ট প্রকিয়ার আমি চেয়ারম্যান, আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।হে স্তব্ধ কবি প্লিজ আপনি আবার লেখা শুরু করুন এই চাকুরী নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবেনা এই চাকুরী আপনি পেয়ে গেছেন আপনি আবার লিখুন।শেষমূহুর্তে অজিত উঠে দাঁড়ায় সে চিনতে পারে নারীটিকে । সে বলে ম্যাডাম মাফ করবেন আমি আপনার চাকুরীটা নিতে পারছিনা তবে হ্যাঁ আমি আবার কবিতা লিখবো, আমি আসলে ভুলেই গেছিলাম আমি কবিতা লিখতে পারি আসলে বাস্তবতা মানুষকে সব কিছু ভুলিয়ে দেয়। ধন্যবাদ।
যার জন্য হৃদয়ের ভিতর চিন চিন করে ব্যাথা করতো তার থেকে আর যাই হোক চাকুরী নেওয়া যায়না তার জন্য শুধু কবিতা লেখা যায়, শুধু কবিতা লেখা যায়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×