প্রতিদিন স্কুল শেষ করে চাকুরীটা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবে স্বপ্নীল । এভাবে চাকুরী করা সম্ভব নয় । একটা বয়স্ক লোক তাকে প্রতিদিন ফলো করছে , অহেতুক প্রশ্ন করছে । হতে পারে উনি এই কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ট্রাস্টি ,তাই বলে তাকে ডিস্ট্রাব করার কোন মানে হয়না । স্কুলে তো আরো ম্যাডাম তাদের বাদ দিয়ে শুধু তার সাথেই উনি এমন করেন । তবুও সব কিছু সয়েই চাকুরীটা করতে হবে । শুভর জন্যই আজ তার সবকিছু করতে শিখতে হয়েছে । সংকীর্নতার দেয়াল ভেংগে দিতে হয়েছে । কত না ভালোবাসতো শুভকে কিন্তু সে ভুলে গিয়ে দিব্যি সুখে আছে । মা কতবার বলেছে মানুষের জীবনে এরকম হতেই পারে তাই বলে তো জীবন থেমে থাকতে পারেনা কিন্তু স্বপ্নীলের এক কথা সে জীবনে একজনকেই ভালোবেসেছে আর কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা । শুভ তুমি আমার সাথে এমন করলে কেন তুমিই তো বলেছিলে একটা চাকুরীই সব কিছু বদলে দিতে পারে তুমি তো চাকুরী পেয়েছিলে তোমার মনের মতো চাকুরী তবুও কেন আমাকে ভুলে গেলে কেন আমার সাথে এমনটা করলে ,প্রতিদিন এই কথাটাই ভাবে স্বপ্নীল । শুভ ছেলেটা কত স্বপ্ন দেখতো বড় হওয়ার ,স্বপ্নীলকে বলেছিলো দেখো একদিন আমি বড় হবোই সেদিন সব বাঁধা তুচ্ছ করে তোমাকে আমার করে নিবো । শুভকে স্বপ্নীল প্রথম দেখেছিলো প্রিয় বান্ধবী কেয়ার বিয়েতে ,কেয়ার মামাতো ভাই শুভ । প্রায় ছয়ফুট লম্বা একটা ছেলে,গৌর বর্ন, মাথায় ঝাকড়া চুল প্রথম দেখাতেই যেকোন মেয়েকে আকর্ষন করার যথেষ্ট গুন আছে। ২০বছরের একটা ছেলে অথচ কি দারুন ব্যক্তিত্ব সবাইকে কত রেসপক্ট করে। ওর ব্যক্তিত্বে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায় । আর বিয়ের হলুদে গিটার হাতে যখন গান গাইছিলো তখন মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়না ওহ কি গলা ।দরাজ কন্ঠে গান গায় । স্বপ্নীল মুগ্ধ হয়েছিলো শুভকে দেখে । ১৮ বছর বয়সে সে যেন তার রাজকুমারের দেখা পেয়েছিলো । কিন্তু রাজকুমারের তো রাজকন্যাকে নাও পছন্দ হতে পারে ।কিন্তু সেই বাধাটা ভেংগেছিলো শুভ নিজেই । তারপর ৯ বছরের এক কঠিন প্রেম কিন্তু বিশুদ্ধ । স্বপ্নীল কাকতলীয় ভাবে শুভর ভার্সিটিতে আর ওর ডির্পাটমেন্টেই চান্স পেয়েছিল । আর ভালোবাসায় পেয়েছিলো পূর্নতা ।সেইসব দিনের কথা এভাবে ভুলে যেতে পারলে শুভ ,তুমি এতটা নিষ্ঠুর কেমন করে হলে । আমাকে এত স্বপ্ন দেখিয়ে তুমি হারিয়ে গেলে কেন, আমার গায়ের রংটা না হয় তোমার মতো উজ্জল নয় ,তুমি বর্ন বৈষম্যকারী ছিলেনা তবু্ও কেন …?
তুমি ছিলে আর দশটা ছেলের থেকে আলাদা । তুমি আমার হাত স্পর্ষ করতেও অনুমতি নিতে তুমি আমার ঠোঁটে ভালোবাসা একেঁ দিতে চেয়েছিলে আমারো মন চেয়েছিলো, কিন্তু বাঙ্গালী নারীদের বিয়ের আগে এতটা স্পর্ধা ভালোনা তুমি আমার নিষেধ মেনে নিয়েছিলে,বলেছিলে তবে এটা তোলা থাক বাসর রাতের জন্য । কিন্তু তোমাকে সেই অনুভূতি না দিতে পারার জন্য নিজের উপরই খারাপ লেগেছিলো । বিশ্বাস করো আমার সবটাই তোমার,আমার অন্তর আত্মা এই অস্থায়ী দেহ সবই তোমার ,শুধুই তোমার ।
তুমিতো যুক্তিবাদী ছিলে তুমি তো নারীদের সম্মান করতে তবুও তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারলে আসলে ছেলেরা এমনই হয় খুব স্বার্থপর । শুভ তুমি আমাকে এতটা স্বপ্ন না দেখালেও পারতে । নিম্নমধ্যবিত্তদের এত স্বপ্ন দেখতে নেই ।তুমি যেদিন আমাকে তোমার মায়ের সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলে সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম যদি তোমার মা আমাকে পছন্দ না করেন তবে কী হবে ,তোমার মা আমার সামনেই তোমাকে বলেছিলো এত রূপবতী মেয়ে পছন্দ না হয়ে উপায় আছে ,এ কথা শুনে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম তুমি বলেছিলে তুই একটা পাগলী মায়ের তো পছন্দ হয়েছে তাও কাঁদছিছ কেন এখন একটা চাকরী হলেই তোকে বৌ করে ঘরে নিয়ে আসবো। তুমি কথা রাখোনি তুমি ভুলে গেছো ।তবু্ও তোমার কথা প্রতি মূহুর্তে মনে হয়। একটা স্বার্থপরের কথা কেন এতবার মনে হবে । তুমি আমাকে স্বপ্ন দেখেয়িছেলে একটা সাজানো সংসারের , সেই স্বপ্নের সংসার করা হয়নি তোমার অবহেলায় । তুমি বলেছিলো আমাদের প্রথম সন্তান হবে ছেলে আর তার নামো তুমি ঠিক করে রেখেছিলে শুভ্রনীল ।কিন্তু ...। তুমি আমাকে ভুলে গেছো সুখে আছো অন্য কোথাও । আমাকে তোমার আর মনে পড়েনা , যেই তুমি আমাকে একবেলা না দেখতে পারলে ছটফট করতে , দিনে কত বার ফোন দিতে তার ইয়াত্ত নেই । অথচ আমাকে ভুলে বেশ ভালো আছো । আসলেই তুমি আর সবার থেকে আলাদা আর অনেক বেশী স্বার্থপর ।
শুভ তুমি যখন পাশে থাকতে তখন কোন লোভী পুরুষ আমার দিকে তাকানোর সাহস পেতনা অথচ আজ একটা বৃদ্ধ লোক যে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্ট্রি সেও আমাকে কায়দা করে টিজ করে আমি মেনে নিয়েছি, এসব তোমার জন্যই হয়েছে । এভাবেই আমাকে সব কিছু মেনে নিতে হয়। শুধু মেনে নিতে পারবনা তোমার জায়গায় অন্য কাউকে। শুভ যেদিন তুমি চলে গেলে সেদিনের সব কথা প্রতিটা মূহুর্তের কথা মনে পড়ে দিনটা ছিল শুক্রবার তোমার চাকুরী কনফার্ম হয়েছে বৃহঃবারে রোববারে তোমার জয়েন করার কথা তোমার মনের মতো চাকুরী হয়েছিল । তুমি শুক্রবারে আমার সাথে দেখা করার জন্য আসতে চেয়েছিলে কিন্তু তুমি আসোনি তুমি হারিয়ে গিয়েছো । তোমার হারিয়ে যাওয়ার খবরটা পেয়েছিলাম কেয়ার কাছে ।কি অবিশ্বাস্য মিল দেখো যে আমাদের প্রথম পরিচয় করে দিয়েছিলো সেই আবার আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিলো। আমার মনে হয় তুমি ঐ দুর্ভাগা বাসে ইচ্ছে করে উঠেছিলে, যাতে খুব তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া যায় অন্যভূবনে। তোমার যখন এতই তাড়া ছিলো তবে আমাকে ভালোবেসেছিলে কেন ।তুমি আর নেই একথা শোনার পর, বিশ্বাস করো আমি এক ফোঁটা অশ্রুও ফেলিনি ,একটা স্বার্থপরের জন্য কেন অশ্রু ফেলাবো ।আমাকে একা করে চলে গেছো অনেক দূরে কোনদিন ফিরে আসবেনা । নিশ্চয় আমার অসহায়ত্ব দেখে মজা পাও ভাবো মেয়েটা কত বোকা ,একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করলেই পারে । কিন্তু শুভ তুমি জানোনা স্বপ্নীল তার শ্বাসপ্রশ্বাস যতক্ষন চালু আছে ততক্ষন শুধু শুভকে ভালোবেসে যাবে ।শুভ কোথাও নেই শুধু আছে স্বপ্নীলের হৃদয়ে । আবেগ দিয়ে হয়তো জীবন চলেনা তবুও কারো কারো জীবনে আবেগই সবকিছু। ভালো থেকো শুভ।