somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্র তরঙ্গে স্নান

১৩ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢেউগুলো যেন দূর, দূর, দূর হতে উড়ে আসা একরাশ শিমুল তুলো
আমি এক ধুনুরির ধনুক যেন, বুনে যাই নকশিকাঁথার বালুচর।
এখানে সব কিছু থেমে গেছে আজ; আছে শুধু সুরের এই নোনা লহরী,
এই সেই স্বপ্নের বালুকাবেলা; অরফিয়াসের সেই সুর নগরী।

পাখিগুলো যায় উড়ে উড়ে বহুদূর, দৃষ্টির শেষ সীমা ছাড়িয়েও দূর,
চোখ বুজে নিমিষেই চলে যাই আজ, পৃথিবীর শেষতম রেখা-সমুদূর।
কোন এক মাউরি শিল্পী হয়ে এঁকে যাই আঁকাবাঁকা পটের রেখা,
নেই কোন দুঃখ, কোন অভিমান; মন খুলে হৃদয়ে তাকিয়ে দেখা-

আমি আর নেই আজ আমার মাঝে, মিশে গেছি নীল এই সাগর জলে,
আছে শুধু অদ্ভুত এই আলোড়ন, ছেয়ে থাকা স্বপ্নিল নবজাগরণ।

------------------------------------------------

প্রথমবার যেবার সমুদ্রে গেলাম সেবার পানিতে খুব একটা নামি নাই, ভয় ছিল যদি ডুবে যাই। আমি আবার সাঁতার পারি না। মোটামুটি পাড়ে হাটাহাটি করে; বড়জোর হাটু পানিতে নেমেই পার করে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার গেলাম বেশকিছুদিন পর। আগের মতই হাটু পানিতে নেমেই স্যালুট করে ফেরত এসেছিলাম, পার্থক্য এই যে অনেক দীর্ঘ সময় পানির কাছাকাছি ছিলাম। ঐ পর্যন্তই। এরপর তৃতীয়বারও যাওয়া হল। ব্যাপারটা খুব বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এই চিন্তা করে ভাবলাম যে এবার একটু ডুব দেয়ার চেষ্টা করবো, সাগরে গিয়ে পানিতে ঝাপাঝাপি না করা- খুব বাজে দেখায় ব্যাপারটা।

আমি সাগরের কাছে গেলাম- ধীরে ধীরে এগুচ্ছি, গভীরে। দুপাশে ছড়ানো হাতে পানির ঝাপটা এসে লাগছে, ঢেউ এর ধাক্কায় মাঝে মাঝে বেঁকে যাচ্ছি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সামনে। আমার হাত এখন পানির নীচে চলে গেছে, ভারসাম্য রক্ষার জন্য উপরে উঠিয়ে নিলাম; পানি এখন প্রায় বুকের কাছাকাছি। ঢেউ যখন এসে আছড়ে পড়ছে আমার উপর- নিঃশ্বাস আটকে, চোখমুখ শক্ত করে বেসামাল হওয়া থেকে বাঁচাতে চাচ্ছি নিজেকে। আর যখন ঢেউ ফেরত যাচ্ছে এমন প্রবল টান, পায়ের নীচে বালি সরে যাচ্ছে, পা ধরে কেউ যেন টেনে নিয়ে যেতে চায়। হাতগুলো দুপাশে ছড়িয়ে পাখির মত উড়ার প্রয়াস যেন আমার; পুরা দেহে এক মাতাল তরঙ্গের অনুনাদ!

আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, শেষ কোন একরোখা যোদ্ধার মত, শেষবারের মত। ঠিক কখন, কিভাবে, কতটুকু জোরে এসে ঢেউটা আমাকে ধাক্কা দিয়েছিল, তা মনে নেই। মনে রাখার বোধ চালু হয়েছিল যে মুহূর্তে তখন আমি কোনদিকে ফিরে, পানির কতটা নীচে হাবুডুবু খাচ্ছি তাও অতটা খেয়াল নেই, প্রাণপণে শুধু কিছু একটা ধরার জন্য আনাড়ির মত হাত-পা নাড়াচ্ছি!

কতক্ষণ যুদ্ধ করেছিলাম জানি না, শেষমেশ যখন হাল ছেড়ে দিয়েছি, হাতে পিচ্ছিল বালির পরশ পেলাম সহসা। শেষ একটা ঢেউ এসে থাপ্পড় দিয়ে আমাকে ছুঁড়ে দিল তীরের দিকে। বিদ্ধস্ত এবং রণক্লান্ত আমি কোনমতে তীরে এসে চিতপটাং। আরও বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে চোখ খুলে তাকালাম।

যতদূর চোখ যায় নীল আকাশ!
যতটুক কানে আসে সাগরের গর্জন!
নিঃশ্বাসে ভারী মাতাল হাওয়া!
নোনা স্বাদে ভরা মুখ!
স্পর্শে একরাশ সমুদ্র!

দুপাশে হাত-পা ছড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভিট্রুভিয়াস ম্যান এর মত আমার এই ট্রিলিয়ন সেলের জৈব সত্তায় এসে সমুদ্রের ঢেউ এর শেষ রেখাগুলো মিলে মিশে এক আশ্চর্য স্পন্দন তৈরি করছিল। এই কবিতাটির জন্ম হয় সম্ভবত তখন।


সমুদ্রময় তরঙ্গ
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×