কবিতা তোমাকে আজকাল কিছু বলা হয়ে ওঠে না
প্রায়ই ভাবি-
তোমার জন্য নিয়ে আসব একটা মিহি রঙ নীলপাপড়ি কবিতা
পরক্ষণেই ভাবি, না তোমার জন্য একটা-
সোনারোদ সূর্যসকাল নিয়ে আসব
আবার ভাবি- না-তোমার জন্য আরো.. আরো মনোহর
অন্যরকম একটা ব্যথামধুর চন্দ্রসুখী রাত নিয়ে আসব
-একটি সৌম্য স্নোফলস আর মুনলিট নাইট
বিজন প্রান্তর জ্যোৎস্নাজমিন হিরকরাজার দেশ তোমার পদতলে..
কিন্ত্ত তুমি জানো? বেনোজলে হিজলের ফুলের মত
ভেসে যায় আমার শব্দমালা
যতবার জয়ী হব ভাবি ততবার ভরে যায় পরাজয়ের ডালা
আমি হেরে যাই কবিতা।
আমার জ্যোৎস্নারঙ শব্দরা ক্রমশ লাল হয়ে উঠে
প্রবল তাচ্ছিল্যে হাসে ঠোঁটের ধনুকবাঁকা হাসি
উষর নিষ্ফলা জমিনে কোন শব্দ ফলেনা কবিতা।
জানো কবিতা যে ফসল ফলায় উপোস দেয় সে বেশি?
যে মানুষ বাঁচায় সে মরে সবার আগে?
পৃথিবীর করূণ আর্তি আমার কর্ণকুহরে
ভালো নেই কবিতা
একদম ভালো নেই
একেবারে ভালো নেই।
নিজেকে নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত এখন
আনমনা হতে ভালবাসি-
মানুষের জীবন নিয়ে রহস্যবাদী হই
তারপরও সবকিছু ভেদ করে একটা আর্তি আকুল করে
কলিজার মধ্যে একটা বিষাক্ত চাবুক সপাং সপাং আঘাত করে
কোথায় যাবো কবিতা!
একফোটা ভাল নেই
একবিন্দু ভালো নেই...
চোখের সামনে চলে ঈশ্বরের সাম্বানৃত্য
সুরম্যপ্রাসাদ, হেরেমখানা, ডজন ডজন দুধেল রমণী
ঈশ্বর পাশা খেলেন আর শিয়ালের মত মাঝে মাঝে চিৎকার করেন।
তোমার কাছেই ফিরবো ভাবছি কবিতা
পৃথিবীর আর সকলের মত নাহোক
আমার মত, পরাজিতের মত
তোমার কাছে লজ্জা নেই।
কবিতা আমি তোমার কাছেই ফিরব
চরম স্বৈরাচার ঈশ্বরের ফাঁসির দাবি নিয়ে
শক্তির কাছে নতজানু ঈশ্বরের 'কল্লা চাই কল্লা চাই 'স্লোগানমুখর
পলাশরঙ্গ দুপুরে বিবেকপ্রতিবন্ধী মানুষের হৃদযের অন্ধকারগহীনে আলো জ্বেলে
শান্তি সাম্যের দাবিতে মুখর পাঁজর ফুলিয়ে উদ্বাহু একদিন তোমার কাছেই আসব
একদিন তোমাতেই হবে আমার আশ্রয়।
তিনি যা খুশি করেন
দিনকে রাত রাতকে দিন বিবেকহীন
তিনি যেদিকে আলো ফেলেন আমরা শুধু সেদিকেই দেখি
তিনি যা দেখান আমরা তা-ই দেখতে বাধ্য হই
তাই আমি কেবল ধুধু অন্ধকারে বসে আছি কবিতা
আমি কোন আলো চাইনা
দু'হাতে চোখ দুটো ঢেকে আলোময় পৃথিবীকে আমি অন্ধকার করে দিই
অন্ধকারে শুনি অগুনতি মানুষের কান্না
অন্ধকারেই দেখি অগুনতি মানুষের কষ্টের রং অন্ধকারের মতই কালো
ওখানে কোন আলো নেই বলে
আমরা তা দেখিনা।
কবিতা আমার পেছনে আশাবাদের মূলো
আমার পেছনে পারলোকিক মূলো
সামনে ক্ষুধা, বঞ্চণা, প্রতারণা, রক্তচক্ষু
হেরেমখানা গাভীন ঈশ্বরীদের খেমটা নাচ।
আমার সামনে ফাঁকি
ফাঁকিতে আমার কাজ নেই
আমার জীবন নিয়ে পাশা খেলবার অধিকার নেই
আসমান ও জমিনের কারো
মানুষের জীবন নিয়ে পাশা খেলা আমি ঘৃণা করি।
এই ঈশ্বরীয় আদালতের আমি পরোয়া করিনা
আমি জ্বলে উঠব কবিতা
আমি একদিন জ্বলে উঠব
অগ্নিগিরির মত
নক্ষত্রের মত
সূর্যের মত
জ্বলজ্বল শিখা হবে আমার চিতা
কাষ্ঠ হবে আদালত বিচার বিচারক
আমাকে নিয়ে
মানুষের জীবন নিয়ে
তামশা পেয়েছ শালা চামচার দল?
পূর্ব থেকে পিশ্চম উত্তর থেকে দক্ষিণ
একদিন মানুষের পৃথিবী হবে কবিতা
একদিন মানুষের শাসন হবে কবিতা
আইন আদালত বিচার বিচারক
কবিতা একদিন হবে
প্রেম এবং প্রীতির
শান্তি এবং সাম্যের।
আমি একদিন আমার স্বপ্নের কবিতা লিখবই
আমি একদিন সেই কবিতা নিয়ে আসব তোমার কাছে
আমার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ, আমি তোমাকে বলছি
আমি আসব তোমার কাছে আমার সেই কাঙ্ক্ষিত কবিতা নিয়ে..
তুমি অপেক্ষায় থেকো কবিতা।