পৃথিবীর রাজ্যে অর্থই সর্বময়। ক্ষুধার রাজ্যে অসহায় মানুষ। মানুষের রাজ্যে আমি নিজেও সর্বহারা। কেটে ফেলা জলের পুকুর জুড়ে শুধুই আফসোস শব্দের আস্ফালন। চলে গেলো দুইহাজার উনিশ খ্রিস্টাব্দ। কতো কিছু করার ফাঁদে আসমান ভাসমান হতে হতে আমি এখন দূর নক্ষত্রের পথে। করা হয়নি কোন কিছুই যা করার ছিলো কথা। এরপর আর কখনো করা হয়ে উঠবে না। হারিয়ে ফেলা দীর্ঘ তেত্রিশ বছরে ছিলো না বড় প্রাপ্তি সেটা বলা যাবে না, ছিলো যা প্রাপ্তি হলো, তা দিয়ে জীবনের খাতায় লেখার মতো কিছুই নেই।
বনের যৌবন থেকে একরকম অর্ধচন্দ্র খেয়ে নিজের কক্ষে চলে এসেছিলাম তারপর থেকে বিপরীত মুখে ফেরা হয়নি সেন্ট হেলেন বা সেন্টিনেল দ্বীপের সেই জনসমুদ্রে। একরকম ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবো ভেবে হেঁটে হেঁটে একটা সমুদ্র তৈরী করে ফেলেছি কিন্তু তাতে জলের কোন আশ্রয় নেই। জলের কোন পাহাড় নেই।
লোকে বলে মানুষের প্রতিভা নাকি আটকে রাখা যায় না। আমার বেলায় সেটাই হয়েছে প্রতিভার ফাঁকে আটকে আমি আড়ালে চলে গেছি।
দুই হাজার উনিশ ছিলো প্রকাশ করার স্বকাশ-সকাল এরপর যা হবে তা রবে না লেখা কোন ইতিহাসের পাতায়। কে যেন বলেছিলো, পাহাড়ে পাথর জন্মে এখন মনে হচ্ছে পাহাড়টা আমি পাথরটা আমার ভাগ্য। নিজেকে গড়ে তোলার দিনে খড়ে পুড়ে ঝরে গেলাম আমি। দীর্ঘ তেত্রিশ বছরে আমার বন্ধুর সংখ্যা দেড় ডজনের কিছু বেশী যদিও আমার নিজের কোন সাফল্য নেই তবুও তাদের সাফল্যে আমি সবসময়ই নেপচুনের কক্ষপথ অনুসরণ করেছি।
পিতৃপ্রদত্ত এ জীবন হেলা-ফেলায় অবহেলায় অলাভজনক খেলায়-খেলায় শেষ হয়ে গেলো। প্রতিভা নিয়ে সুকান্ত কবি মরে গেছিলো, ক্ষুদিরামও বিপ্লবী হয়েছিলো কিন্তু তাদের দর্পের কাছে আমি নস্যি হয়েও পৃথিবীর আলোবাতাস খেয়ে নিচ্ছি।
কেউ হয়তো বলবে, অর্থই সব নয়। হতে পারে তাদের পকেটে পর্যাপ্ত অর্থ আছে বলেই। আমার নেই থাকলে জীবনে ইতিহাস লিখে যেতে পারতাম। এখন ক্ষুধার রাজ্যে আমি অর্থহীন, অর্থের রাজ্যে বন্ধুহীন, সম্পর্কের রাজ্যে সঙ্গীহীন। বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছে নিয়ে একটু একটু করে মরে যাচ্ছি।
__
সুসং নগর, উইলকিংসন রোড
২০১৯/১২/৩১
__