আমরা অনেকেই ঘুম থেকে উঠার পরও আলসেমিতে চোখ তুলতে চাইনে, ঘুমের ঝোক কাটাতে গরম গরম চা, মুখে পানি ছিটা দেয়া এসব করে ঘুম ছাড়াই । রাকিব মাস্টারের নিত্য দিনের অভ্যাস ঘুম থেকে উঠেই আগে বাসি খবরের কাগজে মিনিট দশেক চোখ বুলানো। মাস্টার সাহেবের দু’বছরের ছোট্ট মেয়েটি কিন্ত সবার আগেই ঘুম থেকে জেগে ওঠে কোন কোন দিন মুয়াজ্জিন সাহেবদেরও আগে জেগে যায় ছোট্ট রাইসা , সবার সাথে জুড়ে দেয় কথপোকথন । অনেক পাকা পাকা কথা বলে রাইসা ঘুমন্ত সব পরিশ্রান্ত প্রণিদেহগুলো জাগিয়ে দেয় । রাইসার কথায় সংগ দিতে দিতে মাস্টার মশাই বাসি খবরে চোখে বুলিয়েই যান। কখনও কখনও রাইসা খবরের কাগজের প্রথম পাতার ছবি গুলো দেখে বাবা কে নানা অবান্তর প্রশ্নও করে , বাবা সে প্রশ্নগুলোর উত্তর কখনও শান্ত স্বভাবের হয়ে, কখনও রেগে, কখনও বা নিরবতা অবলম্বন করে দিয়ে যান। রাইসা কখনও রাজনীতির পাতা, কোন দিন বিনোদন পাতা, কোন দিন বিশেষ ক্রোড় পত্রের যে বিষয়গুলো রঙিন আর সাজুগুজুওয়ালা মডেল বা মানুষ থাকে সে সকল পাতা থেকেই বেশি প্রশ্ন করে ।
বাবা, বাবা, দ্যাখেন কি ছুন্দর আপু (বিনোদন পাতার মডেল কে দেখিয়ে) । রাকিব মাস্টার কখনও ঘাড়টিও না ঘুড়িয়ে মেয়ের প্রশ্নের জবাব দেন ।
-- হুমম, তোমার সনি আপু (মাস্টার সাহেবের বড় ভাগ্নি)
--বাবা, বাবা, কত মানুছ (রাজনীতি পাতার মিটিং বা মিছিল দেখিয়ে ) দ্যাখেন ।
চিরাচরিত নিয়মে মেয়ের কথার উত্তর দেন মাস্টার সাহেব-
-অনেক মানুষ- ওখানে মেলা হচ্ছে আম্মু ।
অন্যান্য সকালের মত সেদিনও রাকিব মাস্টার বাসি খবরের সম্পাদকীয় দেখছিল -
পাশেই তার ছোট্ট রাইসা মনি খবরের কাগজের রঙিন পাতা নিয়ে বিভিন্ন ছবি দেখছিল । এদিকে ঘাড় নিচু করে মাস্টার সম্পাদকীয় পড়ছিল - পাশে বসা রাইসা একটি ছবি দেখে বলছে
বাবা ওরা কাঁদছে কেন ? ওদের কী হয়েছে ? ওদের আম্মু নাই বাবা ? রাকিব সাহেব সেদিনও মেয়েকে হা, হু বলে পাশ কাটিয়ে বাসি খবর গুলি আত্মস্ত করে চলছিল । কিন্ত মেয়ের উৎপাতে আর বেশিক্ষণ পড়তে পারলেন না । অবশেষে ঘাড় উচিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন - মেয়ের চোখে জল সেই সাথে অবুঝ মেয়েটির একটি আঙ্গুল চারজোড়া কচি চোখের ছবির উপর - বাবা ওরা কাঁদছে কেন ? ওদেরকে কে মেরেছে? ওদের কি আম্মু নাই ?? রকিব মাস্টারের চোখ খবরের কাগজের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় শিরোনাম হওয়া দু’জন রহিঙ্গা শিশুর করুণ দৃষ্টি সংবলিত একখান ফটোগ্রাফের উপর আটকে গেল । সেই ছবি দেখেই ছোট্ট রাইসা বার বার বাবাকে প্রশ্ন করছে...
রাকিব মাস্টার ততক্ষনে মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিচেছন-
হ্যা মা, ওরা কাঁদছে - কাদঁছে মানবতা,
ওদের মা নেই, বাবা নেই, ওদের দেশ নেই।
ওরা নিঃস্ব, ওরা অসহায়।
ওদের মত আমাদের বিবেক ডুকরে ডুকরে কাদঁছে
চোখ বুজে আছে মানবতা- নিষ্ঠুরতা ওদের গ্রাস করে নিয়েছে-
রক্ত গঙ্গার উপর গড়া গড়ি খাচেছ মানবতা- ওদের দেখার কেউ নেই
ওরা যে রাখাইন রাজ্যের, ওরা যে রহিঙ্গা!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১০