গত তিন দিন ধরে চলা কণ্ঠশিক্ষা অনুশীলনের শেষ দিন ছিলো আজকে । শিক্ষক হিসেবে ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীত গুরু আচার্য জয়ন্ত বোস। এ ধরণের কসরতের মত কোন 'ওয়ার্কশপ' এ আমার অংশগ্রহন এবারই প্রথম। তিনি শেখানোর সাথে সাথে কিছু “রাগ” পরিবেষণ করছিলেন , শুনতে শুনতে করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরো কক্ষটি । তিনি এতোটাই ভালো করেছেন যে, তার ভালোর কদর কিভাবে করবো বুঝি নি। শুধু ভেবেছি , তিনি নিজেকে এতো দূর পৌঁছিয়ে যে লেভেল নির্মাণ করে যাচ্ছেন পরবর্তীতে সেটা না যানি কোন পর্যায়ে পৌঁছুবে। একটি মানুষের কণ্ঠ থেকে যে কত শত সুমধুর ধ্বনি , কত শত ভাবে মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে , সেটা তার অনেক কঠিন নিজস্ব আঙ্গিকে গেয়ে - পরিবেষণ করে উজ্জ্বল উদাহারন রেখে গেলেন। প্রতিটি ধাচে তিনি যেভাবে কণ্ঠকে সুক্ষভাবে সুমধুর পথে এগিয়ে নিয়ে চলছিলেন , সেটা দেখে , বুঝতে বাকি রইলো না যে , “ধ্বনিবিজ্ঞানের সাথে গাণিতিক পরিমাপের একটি সুক্ষ সম্পর্ক রয়েছে”। সেই সাথে মানুষের মস্তিষ্কের । এটাও হইত বলা যায় , মানুষ আসলে এক জাতীয় কিছুকে একইভাবে দেখে বা শুনে তৃপ্তি লাভ করে না । সে একই বিষয়কে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পরখ করতে চাই , আর সেই পরখ করানোর চিন্তা থেকেই হইত সুরের উদ্ভব। সেই সুর যেটা একই বিষয়কে বার বার অচেনা করে তোলে । অনুষ্ঠানে থাকা অবস্থায় শুধুই ভেবেছি ,"কোনটা অতিরিক্ত আর কোনটা স্বাভাবিক ?" মানুষ এতো দুরও আগাতে পারে ! মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠিতে অসম্ভব এর মাত্রাটা আসলে কোথায় ? , যে কাজ যার কাছে খুব প্রিয় কিংবা ভালোবাসার জাইগা সেটা নিয়ে সে এগিয়ে যেতে যেতে অতিরিক্তের চরম শিখরে পৌঁছে যেতে পারে। সেটাই পরবর্তীতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে গন্য হতে পারে । এই গুরুও ঠিক সেটাই করছেন । কথা প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, যে কোন শিল্পী তার করতে যাওয়া শিল্পকে তখনই ভালো করতে পারবে , যখন সে মন থেকে ধরে নিতে পারবে " সময় তার একবারই, এটা দ্বিতীয়বার করার কোন সুযোগ তিনি পাবেন না" , সেটাই আসলে প্রকিতির অমোঘ নিয়ম , সব কিছু এক বারেই ঘটার সম্ভাবনা রাখে উদাহারন হিসেবে গুরু লালন সাঁইজির দেহতাত্ত্বিক কসরতের কথা বলতে পারি । তিনি যেমন দেহের মাঝে বাগান- বাড়ী- গুরু কিংবা ঈশ্বরের অস্তিত্ব খুঁজে ফিরতে ফিরতে সম্ভাবনার দ্বার এর এমন জাইগায় গিয়ে ঠেকলেন , যেখান থেকেই হইত লাখ লাখ অমানুষিক ভ্রান্ত ভক্ত তৈরি হয়েছে যারা সাইজির লেভেল টপকানোর মত চিন্তার নয়। অথচ, শেষ হয়ে যাচ্ছে , জীবন-যৌবনের কতটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। শুধু লেভেল টকানোর মত “পুরুষোচিত” আশাতেই একজন মানুষ একটি আদর্শকে গ্রহণ করবে , ঠিক সেটাও না । আবার সময় টা কেনো- কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বা আদ্য সময়ের কোন মুল্য আছে কি না , সেটাও অনেক ভাব্বার বিষয়। কিন্তু , একটি কথা রয়ে যায় , এতো গুণী মানুষের ঐতিহাসিক ক্ষেত্রকে যারা ভালোবাসার টানে নিজের অস্তিত্তের ভিতরে নিয়ে আগাতে চান , তাদের অনেকেই মানসিকভাবে অনেক নির্যাতনের স্বীকার হন , কেননা তারা(ঐতিহাসিক মানুষরা) এক জীবনে যতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন ঐ কেন্দ্রিক সব্বাই থেকে এগিয়ে যাওয়ার তীব্র বাসনাই তাকে অমানুষিক করে তোলে । হইত সেটা মানুষের অস্তিত্তের মধ্য রয়ে যাওয়া “ লাইফ ফোরস” । আবার সব সময় এগিয়ে থাকার প্রচেষ্টাটাই উত্তর উপনিবেশিক কালে অমানুষিক হিসেবে গন্য হয়। অনেক ছড়ানো- ছিটানো কথা , যানি ভালো লাগবে না । তবুও, বলতে ইচ্ছে হলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:২৬