সংবাদ এসেছিলো । লালু মারা গেছে। লালু আর কেউ নয়, এটা দীর্ঘ দিন আমাদেরই বাড়ীতে থাকা একটি কুকুর ছিল। যে দায়িত্ব, ভালোবাসা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও সংযম নিয়ে আমাদেরকে আগলে রাখতে এসেছিলো, যা মানুষকে নিঃসন্দেহে তাক লাগিয়ে দেবার মত। সে যেনো আমাদের পরিবারেরই একজন ছিলো। মানুষের মধ্য মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেলে আমরা তাকে পশু হিসেবে বিনির্মাণ করি । কিন্তু আমরা কি আদো পশুদের অস্তিত্তের মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি?। কিছু কিছু পশুদের অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য মানুষকেও হার মানায়। যেমন দায়িত্ব পালনের ব্যাপার টি। পাঁচ বছর আগে সে রক্তে ভেজা ভাঙা পাঁজর নিয়ে যখন তীব্র কাতরাচ্ছিল । জানা গিয়েছিলো , যে বাড়ীতে থাকতো উনারা খেতে দিতো না, একদিন তীব্র ক্ষুধা নিয়ে পাশের বাড়ীতে কোন অপরাধ করলে কুকুরটিকে মেরে ফেলার মত করে মেরেছিলো। ব্যাপারটি আমার আম্মার নজরে আসলে, আমরা বাড়ীতে নিয়ে এসেছিলাম তাকে । সারিয়ে তুলেছিলাম তাকে। কখনো তাকে বলে দিতে হয় নি , তার দায়িত্ব কি। তার সীমানা কতোটুকু । কি করা যাবে , কোনটি করা ভাল নয় । কিছুই তাকে বলে দিতে হয় নি। অসংখ্য ভালো ভালো খাবার তার সামনে দিলেও , খাইতে ইঙ্গিত দেবার আগ পর্যন্ত সে খাই নি। পরিবারের প্রতিটি সদস্য , কে- কখন- কিভাবে তাকে ভালোবাসবে , সব তার নখদর্পণে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ কারো জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতেও দেখেছি তাকে । চেনা মানুষ গুলোর আগমনী বার্তা সে আগেই পেতো কিনা যানি না , তবে যতবার গোপালগঞ্জ থেকে বাড়ীতে গিয়েছি ততবারই তাকে রাস্তার পাশে লেজ নাড়িয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। আমাকে দেখেই সবাইকে আসার সংবাদটা জানিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। পরিবারের কেউ মারা গেলে তাকেও খাবার না খেয়ে নির্জীব হয়ে বসে থাকতে দেখেছি। মায়া কান্না অনেকেই কাঁদে , কিন্তু ভেতর থেকে তৈরি হওয়া পুঞ্জীভূত ভালোবাসা থেকে আসা চোখের জল কয় জন ফেলতে পারে। আমি কেঁদেছিলাম । ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো সে । ধুঁকে ধুঁকে পরের দিনই মারা গিয়েছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৬