কথা হচ্ছিলো এক ছোট ভাইয়ের সাথে প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে। সে নাকি আজকে দুইজনকে ফাঁস কৃত প্রশ্ন সল্ভ করতে দেখেছে । হ্যা, ঠিক ধরেছেন সে নমুনা দেখেছে মাত্র। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরিক্ষা এমনকি প্রাথমিক পরিক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়। সেটা আমরা সবাই যানি । তবে কেনোইবা এই প্রশ্ন ফাঁস সাধারন বিষয়ে পরিণত হচ্ছে?, এটা চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের উপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে ?, দেশের প্রশাসন, আমলা, সরকার কেনইবা এতো চুপ থাকে? । সবগুলো প্রশ্নের বিশ্লেষণে আমরা ঐতিহাসিক ধারা দেখতে পায়। সব কিছুই যেনো আমাদের গা সওয়া হয়ে যায়।
আমরা দেখি ১৯৭৯ সালে এসএসসি পরিক্ষার প্রথম প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে । তখন সংবাদপত্রে, টিভিতে চলত মুখে ফেনা তোলা বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা। এমনকি মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত তৎকালীন নয়া বিষয়ের প্রতিবাদী গুঞ্জন। কিন্তু আজ ?, যানি অনেক লেখালেখি হয়েছে, আলোচিত হয়েছে কিন্তু সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি । কেননা আমরা জানি না , এর মূল কোথায়, কেনইবা তারা শিক্ষার্থীদের অপরিপক্ক রেখে ক্রীড়নক এ পরিণত করতে চাই?
কারণ হিসেবে উঠে আসবে শক্তিমান ও শক্তিহীন শ্রেণীর মধ্যকার সম্পর্কের সুক্ষ ধারাটি ঠিক রাখার রহস্য । কেননা একজন শিক্ষার্থী যখন প্রশ্ন পেয়ে পরিক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল করে, তার অবচেতন মনে অসম্পূর্ণতার চিত্রটি কিন্তু অঙ্কিত থাকেই । সে সদা শঙ্কিত থাকে পাছে কেউ যদি জেনে যায়! , সে মানসিক দিক, নীতিগত ও দক্ষতার দিক থেকে প্রকিত পক্ষেই যখন নিজেকে অসম্পূর্ণ হিসেবে আবিষ্কার করে ঠিক তখনই সে প্রশ্ন করতে ভুলে যায়। সে তার অপারগতাটাকে ধামা চাঁপা দেবার জন্য আশ্রয় নেয় উক্ত প্রতিষ্ঠানের/ সংগঠনের এর ‘সাহেব’ দের ছায়াতলে যারা তাকে সর্বদা পেতে সমর্থ হয় মোসাহেব হিসেবে। আবার কর্মক্ষেত্রে সে বসের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তটাকেই অকাট্য হিসেবে মেনে নিতে শিখে যায় । আবার সময় বাড়তে বাড়তে যখন অনেক ‘অভিজ্ঞ’ সাহেব হিসেবে অবতীর্ণ হয় তখন সেও তার কৃতকর্ম যেনো প্রশ্নের আওতায় না আসতে পারে সেজন্য মোসাহেব তৈরির কারখানায় অবদান রাখতে থাকে । তুষের আগুন যদি একবার ...! সে ভয় তো অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার লড়াইও হতে পারে ।
শিক্ষা জিবনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক... এতো গুলো ধাপ পেরিয়ে যেমন একজন শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার অনুমতি পায় ঠিক তেমনি প্রশ্নপত্র প্রণয়নের, ছাপানো ও বিতরণ দিয়ে মোট ৩৯ টি ধাপ পার হতে হয়। আর সেখানে প্রশ্নপত্রের সাথে আলতো নান্দনিক সংস্পর্শের সোভাগ্য অর্জন করে বিভিন্ন শিক্ষক , কর্মকর্তা- কর্মচারী। দৈনিক কালের কন্ঠের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ সমস্ত ধাপ গুলোর মধ্য ১৯ টিতেই রয়েছে প্রশ্ন ফাঁসের শঙ্কা । আমার কথা ঐ দিকে নয় । প্রত্যেকটিতেই শঙ্কা থাকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে । সরকারি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ঐ ভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে যেটা দিয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন ‘গুরুদের’ সংস্পর্শে আশার প্রয়োজন হয়েই পড়ে।আবার ‘গুরুদের’ মোসাহেবী করে চাকরী পাওয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও স্থায়িত্বের প্রশ্ন সেখানে মুখ্য । সেখানে তাদের নীতি- দুর্নীতির মধ্যকার পার্থক্য মনে নেওয়ার মত হরমোন হইতো নিঃসৃতই হয় না ! । আসলে কোন কিছুকেই স্বতন্ত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেননা প্রত্যেকটিই একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত । নিয়মকে খারিজ করা,নিয়মকে স্থাপন করা, সমাজ কাঠামো তৈরি ও ভাঙার মধ্য গভীর রাজনৈতিক ও শক্তি সম্পর্কিত মজার খেলা রয়েছে। যেটা আবারো আমাদের আশাহত করে তোলে। একসাথে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে যেমন শিক্ষকদের জিম্মি করে শিক্ষার্থীদের মেধা শুন্য করার চক্রান্ত চলছে আবার ঐ দিক থেকে ঘটে চলছে প্রশ্ন ফাঁসের অহরহ কাহিনী। অন্যদিকে শিক্ষা ক্ষেত্রের ব্যায়কে সঙ্কুচিত করার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল তো আমরা পাচ্ছিই। অনেক কিছু না বলা কথা রয়ে গেলো । পাঠকদের মতামত দেবার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১:৫৯