স্বপ্নটা আমি আবারো দেখলাম। ঘুম ভেংগে গেছে ; বরাবরের মত প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। বিছানায় হাটু মুড়ে বসলাম। চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।
স্বপ্নটা অদ্ভুত। খুব ছোট একটা বাচ্চা, খুব হাসি খুশি। খেলছে। আমি তাকিয়ে আছি হঠাৎ কি হল, একটা কালো অপার্থিব পশু; বড় বড় ধারালো দাঁত, কুৎসিত চেহারা ; কোথা থেকে দৌড়ে এল। বাচ্চাটা ভয় পেয়ে চিৎকার করছে। পশুটা ওকে ধরে ফেলল, ধড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলল মূহুর্তেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিশুটি "মা! মা!!" করে আর্তনাদ করছিল। রক্তে চারদিক ভেসে যাচ্ছে। আমার ডুবে যাচ্ছি রক্তের সাগরে। কানের কাছে কেবল বাজছে, "মা! মা!" -এমন সময় আমার ঘুম ভেংগে যায়।
স্বপ্নটা দেখার পর আমি অনেকটা সময় ঘোরের মধ্যে থাকি। কাঁদি - সারাটা রাত।
দিনের আলো যখন ফোঁটে, আমি আবার স্বাভাবিক কর্মব্যস্ত মানুষটি হয়ে যাই। সময়ের স্রোতে ভাসতে থাকি।
ভোরবেলা চায়ের কাপ হাতে খবরের কাগজ খুলতেই এক কোণায় চোখ পড়ল। " আজ বিশ্ব মা দিবস "। আমি অবসাদগ্রস্থ হয়ে যাই। আমার মনে পড়ে, আমি কোনদিন আর মা হয়ে উঠতে পারব না। কোন শিশু আমাকে গলা জড়িয়ে কখনো বলবে না, "মামনি, তোমাকে অনেকগুলো ভালবাসি! " আমিও কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ানি গান শোনাতে পারব না। কেউ আমার কাছে রোজ রোজ গল্প শোনার বায়না করবে না। আমিও খাবার নিয়ে কারো পিছন পিছন ছুটে বেড়াবো না। চোখের কোণে একবিন্দু শিশির জমে।
আমার সময় থেমে যায়। আমি হারিয়ে যাই প্রায় ১০ বছর আগে, যখন আমি কেবল যৌবনে পা দিয়েছি। ২১ বছরের আকর্ষণীয় তরুণী। প্রচন্ড উচ্ছ্বলতা আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর। চোখে রঙিন স্বপ্ন।
... ... ...
হঠাৎ জড়িয়ে পড়ি ভালবাসার জালে। কত আবেগ অনুভূতি আর ভালবাসা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম এক নতুন জীবনের। তখন ভালবাসা হঠাৎ মন থেকে দেহের সাথে মিলে গেল।
কোন একদিনের কোন এক চরম ভুল!
আজ আমি যার জন্য ব্যকুল, তার আগমনী বার্তা তখন আমার কাছে চরম দুঃসংবাদের মত শোনালো। আমি ছুটে গেলাম আমার সন্তানের পিতার কাছে। সে আমাদের অস্বীকার করল।
... ... ...
অতঃপর সমাজে বেঁচে থাকার তাগিদে, ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে আমি খুন করলাম তাকে। ওই লাল মাংসপিণ্ডটা আমাকে সেদিন একটুও বিচলিত করে নি। বরং স্বস্তি দিয়েছিল।
আজ এতগুলো বছর পর, আমি সন্তানহীন এক পাষণ্ড মা, যে কিনা নিজের সন্তানের হন্তারক। আমিই সেই দান্তব কুৎসিত পশু।