নিশ্চিন্দিপুরের অপুকে নিশ্চয়ই সবার মনে আছে? না, অমি সেই অপুর কথা বলছি না। অপু, আমাদের পরিবারের সবচেয়ে আদরের মানুষ-আমার ছোট বোন। আজ ওর জন্মদিন। ও ভূমিষ্ঠ হবার আগেই বাবা এই নামটি ওর জন্য বেছে রেখেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী সিনেমায় যে ছোট্ট শিশুটি অপু চরিত্রে অভিনয় করেছে, ছেলেবেলায় অনেকটা সেরকমই দেখতে ছিল সে, বড় বড় চোখে ধারালো চাহনি। বড় হওয়ার সাথে সাথে অবশ্য আদল পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেকটাই, তবু আদুরে ভঙ্গি আর ধারালো ভাবের পরিবর্তন হয়নি একটুও। ছোট বলে পরিবারের প্রতিটি মানুষের ভালবাসায় সে সিক্ত হয়েছে প্রতিমুহূর্তে। এখন সে পরিণত এক তরুণী, স্বনামধন্য একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নিজের কাছে নিজে সে অনেক বড়, কিন্তু আমাদের কাছে? সেই আদুরে ভঙ্গি আর ধারালো চাহনির ছোট্ট অপু হয়েই আছে, চিরকাল থাকবে। ওর বয়স আর এক বছরও বাড়বেনা আমাদের কাছে। মাঝে মাঝে আমরা বড়রা ছোট বলে ওর ওপর দু একটা খবরদারি করলে ও ভীষণ রেগে যায়, ভারিক্কি চালে জবাব দেয়-তাকে ছোট ভাবার কোন কারণ নেই, সে এখন সম্মান শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ........ অপুর এই গম্ভীর আচরণে আমরা আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসি। আবার মাঝে মাঝে ঠিক এর উল্টো স্বর শোনা যায় ওর কণ্ঠে। কোন কাজে সাহায্য করার কথা বললে যখন সে মিষ্টি হেসে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলে "আমি তো ছোট, বড়দের কাজ পারি না" তখন তার চেহারায় প্রবলভাবে ছেলেমানুষী ফুটে ওঠে।
আমি ওর থেকে খুব একটা বড় নই, তবু আমার মনে পড়ে ওর জন্মক্ষণের কথা, ওর হাঁটতে শেখার কথা, ওর প্রথম মা ডাক শেখার কথা, ওর এই হঠাৎ বড় হওয়ার কথা-সব মনে পড়ে আমার। এই সেদিনের ছোট্ট অপু - ধীরে ধীরে কত বড় হয়ে গেল, ভাবতে অবাক লাগে! সময় কত দ্রুত জীবনের পখে দৌড়োয়। চুমো দেবার জন্য মুখ বাড়ালে যে শিশুটি আহ্লাদে গলে গিয়ে গাল পেতে দিত, সেই ছোট্ট অপুর আজ জন্মদিন।
প্রাণের গহিনে সঞ্চিত আমার সকল শুভবোধ, আমার সকল ভালবাসা এক করে আমি ওকে জন্মতিথিতে শুভেচ্ছা জানাই। "অপু", শুভ হোক জন্মদিন-বিশ্বের আঙিনায় অনেক বড় হও, তবে আমাদের কাছে ছোট্টটিই থেকো। আমরা তোমায় অনেক ভালবাসি, তা কি তুমি জান?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০০৯ ভোর ৬:০২