পশ্চিমা দেশগুলির যৌথ শক্তিও পারছে না এদের নির্মূল করতে।। তাহলে কি মনে সন্দেহ জাগতে পারে না যে, আসলেই সন্ত্রাস তথা এদের নির্মূল চলছে না আমরা ব্লাকমেইলের শিকার??
প্রশ্নটা আজ অংকুর থেকে ক্রমেই বৃক্ষে রূপান্তরিত হচ্ছে।। একটা সময় ছিল যখন আল-কায়েদা নিয়ে সারা বিশ্ব বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব ব্যাতিব্যাস্ত ছিল। পাকিস্তানতো কায়েদা কায়েদা করতে করতে, ফ্রাংকেনস্টাইনই তৈরী করে ফেলেছে।। তেমন বোধহয় আরব বিশ্বও।। তবে এখানে এটা এসেছে বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন রূপে এবং বিভন্ন সময়েও।। পশ্চিমাশক্তিগুলি যখন হঠাৎ করেই দাবার ছক উল্টে দিয়ে, পুরাতন মিত্রদের পরিহার বা বলি দিয়ে নজেদের ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক দূর্বলতা ঢাকার চেষ্টায় তথাকথিত “ মুসলিম সেন্টিমেন্ট” নিয়ে চাল দেয়া শুরু করলো তখন থেকেই খেলাটা বদলে যেয়ে ধীরে ধীরে অশান্ত হতে শুরু করলো বর্তমান বিশ্বের রনাঙ্গন মধ্যপ্রাচ্য।।
তিউনেশিয়ার বিন আলি, ইয়েমেনের আলি সালেহ্, মিশরের মোবারক থেকে নিয়ে লিবিয়ার গাদ্দাফী।। (সবাই পুরানো এবং পরীক্ষিত বন্ধু)!! চেষ্টা চলছিলো অন্যান্ন দেশেও।। কিন্তু সেসব দেশের সতর্কতা আর আইনের কঠোর প্রয়োগে সফল না হলেও, উল্লেখিত দেশগুলিতে সফল হলো।। আসলে বিভক্তির সীমারেখা টেনে দেওয়া হলো।। শুরু হয়ে গেল হাজার বছরের ঐতিহ্য ভুলে ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি।। শুরু হয়ে গেল কে কাকে মেরে বীর আর নিহত হয়ে শহীদ হবে।। প্রায় প্রতিদিনই নীরিহ মানুষ যারা রাজনীতির কিছুই না বুঝে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সংসার চালাতো, তারা হয়ে উঠলো যোদ্ধা!! রক্ত দিচ্ছে, আর ঝড়াচ্ছেও।। সাথে যাচ্ছে নারী, শিশুসহ অসংখ্য মানুষের রক্তঝরা আর গৃহহীন হওয়া।। প্রান যেন কিছুই না।। ঘর-সংসার যা তিলি তিলি গড়া তাও।।
আর সিরিয়ার ব্যাপারে প্রথমেই নিজেরা জড়িত না হয়ে স্থানীয় পাওয়ার হাউসগুলিকে লেলিয়ে দিল ।। ইরাকে তো আগে থেকেই যুদ্ধ চলছিলো।। উল্লেখিত দেশগুলির মাঝে মিসর কঠিন হস্তে দমননীতি চালিয়ে ঠিক থাকলেও বাকী দেশগুলি চুড়ান্ত রক্তক্ষয়ের মাঝে এগিয়ে চলছে।। কুর্দীরাও জড়িত এই মহারনে।। যারা বিস্তৃত সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক থেকে ইরান পর্যন্ত।। বর্তমান যুদ্ধের ফলাফল যাইহোক না কেন, ভবিষ্যতে এরা যদি এক হয়ে স্বাধীন কুর্দীস্তান প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তখন এদেশগুলিতে কি নূতন করে যুদ্ধ শুরু হবে না??
প্রসঙ্গতঃই মূল বিষয় থেকে সরে এসেছিলাম।। পুরো পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করে নিলাম আর কি।। আইএস ভীতিকর একটি নাম।। যা পুরো মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ হয়ে বংলাদেশেও কাল ছায়ায় ঢেকে দিচ্ছে।। যার দমনে পৃথিবীর প্রধান সব শক্তি এক হয়েছে।। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর শক্তধর চারটি দেশের সাথে অন্যান্য ৬৬দেশ একত্র হয়েও পারছে না একে নির্মূল করতে গত দুইবছরেরে আপ্রান চেষ্টায়ও!! আর কতদিন লাগবে?? কেন?? তাহলে কি আইএসই বিশ্বের “শক্তিধর দেশ” না সংগঠন!! কারন যে দেশগুলি আফগানিস্তান থেকে পকিস্তান হয়ে লিবিয়া, ইরাকে যে অত্যাধুনিক টেকনোলজী ব্যাবহার করে াড়ির নাম্বার প্লেট র্যন্ত সংগ্রহ করতে পারে তারাও ব্যর্থ !! ইসরাইলের মত দেশ অহরহ হামাশর বিরুদ্ধে এই টেকনোলজী ব্যাবহার করে নিখুত আক্রমন চালিয়ে যাচ্ছে।। সেখানে!! আই এস কি ভাবে তা এড়িয়ে যেতে পারছে??
আসলে এটা একটা দুধেল গাই ( কায়েদার মতই), যা পক্ষান্তরে পশ্চিমা স্বার্থই রক্ষা করে চলেছে।। প্রথমতঃ সস্তায় তেল বিক্রয় করে, বিভিন্ন দেশকে জুজুর ভয় দেখিয়ে সমরাস্ত্র ক্রয় করতে বাধ্য করছে।। কাদের কাছ থেকে?? সাথে নিজেরাও।। সঠিক পথে না হলেও।।
এ যেন ঠিক আফগান পুনরাবৃত্তি।। প্রধান দেশগুলি জানে জানে, তারা নিজেরা যদি সম্মুখসমরে অবতর্ন হয় তবে পৃথিবী ধ্বংশ হতে কয়েক মুহুর্ত লাগবে।। তাই তারা প্রভাব বলয় বিস্তারে নিজেরা অবতীর্ন হয়ে প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত হয়।। শিকার করে অন্যের কাধে বন্দুক রেখে।। হোক তা শিয়া-সুন্নীরূপে বা আফগানের মুজাহেদীন।। আফগানে রাশিয়া দূশ্যপটে আবির্ভুত হবার সাথে সাথেই পশ্চিমাদেশগুলি সাথে চামচাদের সহায়তায় সৃষ্টি হয়ে গেলো তথকথিত মুজাহেদীন।। আজ যারা ত্যাজ্য, অস্পৃহ্য।। কারন আজ লক্ষ্য পূরন হয়ে গেছে।। কিন্তু তা পরে বুমেরাং হয়েই ফিরে এলো ইরাকে, প্রায় তিনহাজার আমেরিকান সৈন্যর মৃত্যুতে।। আফগানেতো আছেই।।লিবিয়ায় ক্ষমতা বদলের রূপকার রাষ্ট্রদূতসহ চারজনের করুন মৃত্যু।।
এখন পলিসি বদলে যাচ্ছে।। ঠেলে দেয়া হচ্ছে পিছনের জনগনকে সামনে।। জনগনও নেশায় বুদ হয়ে রক্ত ঝড়িয়ে যাচ্ছে নিজেরা খুন না হওয়া পর্যন্ত।।
লিবিয়া,সিরিয়া, ইয়েমেন থেকে ইরাক আজ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের দখলে।। কে কি করতে পারছে?? কিছুই না।। মাঝখান থেকে ভুগছে সাধারন জনতা!! তথাকথিত আকাশপথের আক্রমনে কারা রক্ত দিচ্ছে??
ফলাফল কিন্তু যতটা না পক্ষে, তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে খোদ আমেরিকা থেকে নিয়ে ফ্রান্স, জার্মানী, লন্ডন থেকে ব্রাসেলস পর্যন্ত।। বিভিন্ন রূপে।। এখানে মিডিয়ার কল্যানে আমরা জানছি, এসব হচ্ছে ব্যাক্তিগত হিংসা-দ্বেষ থেকে!! কিছু কি আড়াল করা হচ্ছে না?? যেখানে টুইন টাওয়ার ধ্বংশ নিয়ে খোদ আমেরকাতেই আজ হাজরো প্রশ্ন উঠছে!!
একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইএসের বিচ্ছিন্ন আক্রমন এবং সাথে চলছে ইরাক, সিরিয়া সহ লিবিয়ায় বিরাট এলাকা দখল।। পশ্চিমা বিশ্বসহ সেসব দেশের সরকারী বাহিনীর আক্রমন সত্বেও।। সরকারী বাহিনীগুলি সম্মুখসমরে, করছে মাটিতে আর রাশিয়াসহ পশ্চিমা শক্তিগুলি নিরাপদ দুরত্বে থেকে আকাশপথে !!
ফলাফল কয়েকটি দেশ ছাড়া বেশির ভাগ দেশেই পশ্চিমা শক্তির উপস্থিতি এবং সমরাস্ত্র বিক্রয় বেড়ে গেছে।। আর রাশিয়াও ধীরে ধীরে নিজের প্রভাববলয় বাড়িয়ে চলছে।। চলছে তারও ব্যাবসা।। মাঝখান থেকে আমরা হাতি-ঘোড়া প্রান দিচ্ছি অকারনে।। এছাড়াও বড় ভয়ের কারন এদের এই শক্তি,প্রভাব আর অস্ত্র কেনাবেচার খেলায় আইএস ছড়িয়ে পড়ছে মহামারীর আকারে।। বিভিন্নরূপে।। হয়তো একদিন কায়েদার মত থামবে কিন্তু তখন অনেক রক্ত গড়িয়ে যাবে দজলা,ফোরাতের স্রোতে আর আরবের মরুভূমিতে শুকাবে।।
আশা করি এগুলোরও মুখোশ উন্মোচিত হবে একদিন।। কারন ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।। সত্যি প্রকাশ হবেই।।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৮