somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন কহিনূর এবং অবহেলিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কহিনুর মায়নমার তথা বার্মার একজন সংখ্যালঘু মুসলিম মহিলা।বার্মার এই জনগোষ্ঠী সাধারনতঃ রোহিঙ্গা নামেই বিশ্বে পরিচিত।এবং বিশ্বের যে কয়টি নির্যাতিত সম্প্রদায় আছে,তাদের একটি।
সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের উপুর্যুপরি আক্রমনে টিকতে না পেরে নূতন একটা জীবনের সন্ধানে সে ঘর ছাড়লো।এই নূতন জীবনের সন্ধানে সে তার পুরনো জীবনকে ঝুকিতে তার সঙ্গী ছিল সামান্য খাবার আর পানীয়। যা তার এবং তর পরিবারকে ফেলতে পারতো মৃত্যু ঝুকিতে। এর চেয়েও বড় ভয় ছিল চোরাচালানীদের হাতে পড়ে পতিতা হিসাবে বিক্রয় হবার। কিন্তু তাদের ধারনাতেও ছিল না যে,লক্ষ্যে পৌছুবার পরেও তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আসবে না।
আমরা বার্মা থেকে বিতারিত হয়েছি,হয়েছি বাংলাদেশ থেকেও। এখন আমরা ভারতে। এখানকার জনসাধারন বলছে যে,ভারত আমাদের দেশ নয়,তাহলে আমরা কোথায় যাব? এটা শুধু আমারই প্রশ্ন না,আমার মত সব শরনার্থীর প্রশ্ন??একটি তাবুর ভিতরে বসে ২০ বছর বয়সী কহিনুরের প্রশ্ন সাক্ষাৎকার নেয়া সাংবাদিকদের কাছে।।একই সাথে তার দৃষ্টিতে ফুটে উঠে,আমাদের জমি নেই,সরকারের অস্বীকৃতির কারনে শরনার্থীর মর্যাদাও না পাওয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েরাও বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।হাসপাতালে গেলে ভর্তি হতে পারছি না,যতই অসুস্থ হই না কেন।কারন আমরা রোহিঙ্গা।চোখভরা পানি নিয়ে জানায় কহিনূর। যে দুই বছর আগে তার দুই বছরের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে বোনের পরিবারের সাথে পালিয়ে এসেছিলো।।সাথে আছে গত ২ বছরে বার্মা থেকে প্রান বাচানোর তাগিদে পালিয়ে সা আরো প্রায় ৮৬,০০০হাজার জনগোষ্ঠী।।
এবার রোহিঙ্গাদের ইতিহাসে একটু নজর বুলানো যাক,সংক্ষেপে।যদিও পুরুষানুক্রমে বার্মার পশ্চিমের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বসবাস। তারপরেও বার্মার বৌদ্ধ সরকার তাদের ধর্মের মূলমন্ত্র অহিংসাকে ভুলে যেয়ে ১৯৮২ সালে যে নাগরিকত্ব আইন পাশ করে তাতে এই সম্প্রদায়কে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়।।এমনকি তাদের আইডেন্টিটি কার্ড থেকেও বঞ্চিত করা হয়।ফলশ্রুতিতে স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে চাকুরী,বিবাহ এমনকি জন্ম-মৃত্যুর সনদপত্রের অধিকারও হারিয়ে তারা পরিনত হয়”দেশর ভিতরেই,নাগরিকত্বহীন” সম্প্রদায়ে।।
২০১২সালের দাঙ্গায় প্রান হারায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা। প্রান বাচাতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলি যেমন বাংলাদেশ,ভারত,থাইল্যান্ড ও মলয়েশিয়ার শরনার্থী শিবিরগুলিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বেচে থাার তাগিদে ভিড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অনৈতিক,বেআইনী কার্যকলাপেও। ফলে নিজেদের ঝুকিতে ফেলার সাথে সাথে তারা অবনতি ঘটাচ্ছে আশ্রয়কারী দেশর আইন-শৃংখলারও।।
এক জরীপে দেখা যায় সারা বিশ্বে প্রায় ১কোটি “দেশহীন” জনগোষ্টির মাঝে রোহিঙ্গারাও একটি বিরাট অংশ।জাতিসংঘের তত্বাবধানে হেগে প্রথম গ্লোবার ফোরাম অন ষ্টেটলেসদের ব্যাপারটা উঠে এসেছে। পরবর্তিতে আগামী ১২বছরের মাঝেই এদের পূর্নমর্যাদায় পুনর্বাসিত করা!!
দেশে দেশে শরনার্থী শিবিরগুলিতে থাকা এই বিশাল জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবন-যাপন করছে।পাচ্ছে না রাজনৈতিক আশ্রয়ও। আইনের বাধ্যবাধকতার কারনে।ফলশ্রুতিতে বঞ্চিত হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষা থেকে। চাকুরী পাচ্ছে না। এমনকি মানব সমাজের মৌলিক চাহিদা চিকিৎসা এবং বাসস্থান থেকেও। টাকা থাকলেও শরনার্থী পরিচয়ের কারনে বসাভাড়াও নিতে পারছে না।যদিও এদের সংখ্যাও খুবই নগন্য। থাকতে হচ্ছে ফুটপাত অথবা পরিত্যাক্ত জমিতে প্লাষ্টিক শীটের নড়বড়ে তাবুতে।।গরমে পুড়তে হচ্ছে আবার শীতে মরতেও হচ্ছে অকাতরে। সিংহভাগেরই আয়ের পিছনে থাকে,দিনমজুরী আর বাসা-বাড়িতে রোজখাটা। কেউ কেউ প্রান বাচানোর তাগিদে “আত্মসন্মান”। চুরি,ছিনতাই সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়ে অনেকে।ফলশ্রুতিতে আশ্যয়দাতা দেশগুলির সরকারসহ নাগরিকদেরও বিরাগভাজনের লক্ষ্য হতে হচ্ছে।বিশেষকরে শরনার্থী শিবিরের এলাকাগুলিতে “যত দোষ নন্দঘোষের”মত এদেরও মেনে নিতে হচ্ছে সত্য-মিথ্যা সব অভিযোগ।।
কহিনুরের শেষ বক্তব্য ছিল আইন আমি জানি না,বুঝতেও চাই না।চাই না ফুটবলের মত লাথি খেয়ে খেয়ে এদেশ-সেদেশে আশ্রয় নিতে।লোকজন আমাদের নিয়ে খেলছে।সভ্য এবং উন্নতবিশ্ব আমাদের ব্যাপারে একটা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক। দেওয়া হোক এক টুকরো জমি পৃথিবীর যে কোন স্থানে,যাকে আমরা আমাদের দেশ বলতে পারি।।
এখন দায়িত্ব আমাদের। কি এবং কতটুকু আমরা করতে পারবো এই হতভাগা,নির্যাতিত আর “দেশহীন” জনগোষ্ঠীর জন্য??
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×