*
বৃষ্টি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে কপালে টিপ লাগাচ্ছিল।
এখনই একটু বাইরে বের হবে ও।
আজ প্রথম রন্জুর সাথে দেখা হওয়ার কথা বৃষ্টির।
**
রন্জুর সাথে বৃষ্টির পরিচয় ফেসবুকের একটা জোক্স গ্রুপ থেকে।
বৃষ্টির এক বান্ধবীর পোস্ট করা জোক্সে রন্জু এমন এক হাস্যকর কমেন্ট করেছে, যে বৃষ্টি নিজে থেকেই রন্জুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে। রন্জুও সাথে সাথে এক্সেপ্ট করেছে।
সেই থেকে ফেসবুক চ্যাটিং। অল্প কিছুদিন চ্যাটিং হবার পরে একদিন রন্জু বৃষ্টির ফোন নাম্বার চেয়ে বসলো। খানিকক্ষণ চোন্তা ভাবনা করে একসময় বৃষ্টিও ফোন নাম্বার দিয়ে দেয়।
***
রন্জু মাঝেমাঝে দিনের বেলা ফোন দিতো বৃষ্টিকে।
আর বৃষ্টি রন্জুকে ফোন দিলে রাত ১২ টার পরে দিতো। কল রেট কমের জন্য না অন্য কিছু, কে জানে !!
ভালোবাসার সবচেয়ে রোমান্চকর অনুভূতিটা বোধহয় সেটাই-যখন ২ জনই জানে ২ জন ২ জনকে পছন্দ করে, কিন্তু কেউ কাউকে বলে না।
****
এখন অবশ্য রোজা। বৃষ্টি রোজার ভিতরেই রন্জুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। রন্জু বৃষ্টিকে ইফতারির দাওয়াত দিয়েছে। ইফতারির দাওয়াত দিলেই কি সবাই ভালো হয়ে যায়, না? বৃষ্টি কিছু বোঝে না, না ??
ওরা একটা চাইনিজ রেস্টুর্যান্টে বসেছিল ইফতারি করার জন্য। ইফতারি শেষে রন্জু বৃষ্টিকে বাসায় পৌঁছে দিতে চাইলো, বৃষ্টি রাজি হলো।
*****
ওরা সি.এন.জি.তে করে পাশাপাশি বসে যাচ্ছিল।
সি.এন.জি. একটা চিপা রাস্তা দিয়ে ঢুকলো, যেখানে পাশাপাশি ২ টা রিক্সা যাওয়াই মুশকিল।
হঠাৎ রন্জু বলে উঠলো, "এই শোন, আশেপাশে এত গাড়িটাড়ি দেখলে আমার হার্টে খুব প্রবলেম হয়, বুক ধড়ফড় করে, আমি কি তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি ??"
বৃষ্টির হঠাৎ কি হলো জানে না, ওর ও খুব ইচ্ছা করছিল রন্জু ওর হাতটা একটু ধরুক।
বৃষ্টি হাত বাড়িয়ে দিলো। রন্জু ওর হাত শক্ত করে ধরলো।
হাত ভালো ভাবে ধরে রন্জু বললো, "শোন, আমার হার্টে কোন প্রবলেম নেই। তোমার হাত ধরার জন্য এমনি বানিয়ে বানিয়ে বলেছি!"
এরপরে বৃষ্টি হাত ছাড়ানোর অনেক মেকি চেষ্টা করলেও মনে মনে চাচ্ছিলো রন্জু আরো শক্ত করে ওর হাত ধরে থাকুক।
বাসায় যেয়ে অবশ্য বৃষ্টি রন্জুকে ফোন করে জানিয়েছিল,"ভাইয়া আপনার হাত ধরার টেকনিকটা খুব ভালো ছিল। আমার যদি কখনো কোন ছেলের হাত ধরতে ইচ্ছা হয় তাহলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করবো"
এরপরে?
******
এরপর থেকেই শুরু হলো ওদের ফোনালাপ।
বৃষ্টি রন্জুকে আপনি করে বলতো। রন্জু বললো, "আমাকে তুমি করে বলো"
বৃষ্টি বললো, "I will try my best."
বৃষ্টির প্রথম কথাই ছিল, "এ্যাই, আমরা বিয়ে করবো কবে??"
রন্জু তো থ ! এতো তাড়াতাড়ি !! বেশী বেশী, না ??
এভাবে প্রতিদিন ওদের সারারাত কথা চলতো। সেহেরীর আগ পর্যন্ত চলতো।
*******
আজ ঈদ।
বৃষ্টি অবশ্য আজ সারাদিন ব্যস্ত থাকবে। বাসায় আত্নীয়-স্বজন আসবে। সন্ধ্যার দিকে এখটু বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বের হবে। আজ রন্জুকে একদম সময় দেওয়া সম্ভব হবে না। জানে বেচারা একটু মন খারাপ করবে, কিন্তু কিছু করার নেই।
কাল রন্জুর সাথে দেখা করবে ও। রিলেশানের পরে এটাই হবে ওদের প্রথম ডেট। কত প্রস্তুতি নিলো এজন্য এই কয়দিন বৃষ্টি!
কাল একদম রন্জুর বউ সেজে যাবে বৃষ্টি। রন্জুর মনের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিবে ও। রন্জু বলছিল কি নিয়ে যেন ওর মনে অনেক ব্যথা। বউ থাকতে কষ্ট কিসের !! ওর জীবনে যত যা কিছুই থাকুক, বৃষ্টি সব ধুয়ে দিবে।
হা হা! আর এখন তো রোজাও শেষ! এখন আর ভালোবাসতে কোন বাধা থাকবে না।
********
ঈদের পরের দিন। বৃষ্টি একটা রেস্টুর্যান্টে রন্জুর জন্য অপেক্ষা করছে। ওয়েটার এসে কয়েকবার ঘুরে গেছে। বৃষ্টি প্রতিবারই বলেছে সে আরো খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে চায়।
বৃষ্টির অপেক্ষা করতে খারাপ লাগছে না। অন্য কোন ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে হলে হয়ত সে রেগে যেত, বিরক্ত হতো। কিন্তু রন্জু কোন এক বিশেষ কারণে সবার থেকে আলাদা, তার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করা যায়।
বৃষ্টি বসে বসে তার আর রন্জুর ভবিষ্যত জীবনের ছোট ছোট রোমান্টিক ঘটনার মধ্যে একটা ঘটনা কল্পা করে ফেললো:
-
' রন্জু বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিল। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে একটা মোটা গল্পের বই। বৃষ্টি ঘুমাতে যাবার আগে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হালকা সাজুগুজু করছিল। রন্জু হাত থেকে গল্পের বইটা নামিয়ে রাখলো। পূর্ণদৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে ঘুরে তাকালো। "এই শোন। "
: কি ??
: আমার কিন্তু বিয়ের আগে ২ টা রিলেশন ছিল। প্রথমটা ৪ মাসের জন্য, পরেরটা ১০ দিনের জন্য।
বৃষ্টি উঠে দাড়ালো। শাড়ির আঁচল ফেলে দিয়ে রন্জুর উপর ঝাপ দিলো... '
-
বৃষ্টি বসেছে রাস্তার পাশে একটা দোতলা রেস্টুর্যান্টে।
রেস্টুর্যান্টের নীচে রাস্তায় কিসের একটা জটলা। অনেক লোকজন জমেছে। মনে হয় কোন এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। রেস্টুর্যান্টের ওয়েটাররা বলাবলি করছে, একটা ছেলে নাকি এক্সিডেন্ট করেছে, রক্তে ছেলেটার সাদা পান্জাবি নাকি লাল হয়ে গেছে।
যাই হোক, বৃষ্টির এখন এসব কথায় কান দেওয়ার সময় নেই। তার কাজ হলো শুধু রন্জুর জন্য অপেক্ষা করা।
বৃষ্টি কানে হেডফোন লাগালো। কোন একটা চ্যানেলে গান হচ্ছে:
" দোলে পলাশের নোলক
দিতে চাও আমায় ফাঁকি !
মন দিলে না বঁধু, মন নিলে শুধু
আমি কি নিয়ে থাকি !! "
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:০৬