somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন বর্ষের স্মৃতিকথন

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাল্য বেলায় পাঠ্য পুস্তক তেমন না পড়লেও সিনেমার বিচিত্রা টিভি গাইড এসব বেশ মনযোগ সহকারেই পড়তাম। সে দিনের সেই চিলে কোঠায় কত গানের ক্যাসেট কত পত্রিকা কত হস্তচিত্র সবই ধুলোমলিন পরে আছে। জানি এগুলো আমার স্পর্শ ছারা আর কখনো প্রাণ ফিরে পাবেনা। দেশে গেলেও এখন আর আগের মত সে আগ্রহ সে সময় হয়ে ঊঠে না। সময়ের আবর্তে এভাবেই একসময় সবকিছুর আবেদন হারিয়ে যায়। তবে জমানো সে সব গান, পত্রিকা, আঁকা ছবি, গল্পের বই এগুলোর দর্শন আমাকে খুব সহজে অতীতে নিয়ে যায়, হারিয়ে যেতে পারি এক অদ্ভুত মোহচ্ছন্নতায়।



কুমার বিশ্ব জিৎ এর গান "তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে আসবে'' শুনতে বেশ ভালো লাগতো, ভালোলাগার অবশ্য কারণ ছিলো। ক্লাস ফাইভে থাকতে এই গানটি লেখা একটি চিরকুট পেয়েছিলাম একজন অবলা সরল কন্যার কাছ থেকে। তখন তো আবার চিঠি পত্র আদান প্রদানের যুগ। মোবাইল ইন্টারনেট ফেসবুক ভূমিষ্ঠ হয়ে পারেনি। আসলে ঐ সময়টি ছিলো এমনই, সবকিছুই রঙিন মনে হতো । প্রতিটা ঘটনা মনে দাগ কেটে যেতো এখন হয়তো হৃদয়ে অনেক ময়লার আস্তরণ জমেছে এজন্য সহজে দাগ কাটেনা।



যাইহোক ... সেই চিরকুট দাতাকে কুমার বিশ্বজিৎ এর গানটি শুনলেই মনে পরে যেতো। অনেক বছর পরের ঘটনা, একদিন আমি রাস্তায় হাটছি হঠাৎ দেখি বোরখা পড়া একজন ভদ্র মহিলা একটি শিশু সন্তান সাথে নিয়ে হেটে আসছে। সামনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে বললো কেমন আছিস। নারীদের মুখে তুই তুকারি আমি তেমন শুনিনি। সবাই তুমি বা আপনি করেই বলতো। আমিও সবাইকে এমনি বলতাম। তাছাড়া আমি আবার চিঠি বা গোলাপ পেতে পছন্দ করতাম দিতে নয়। তাই অপরিচিত কাউকে চিঁঠি দিতে যেয়েও “তোর এত্তবড় সাহস আমারে চিঠি দিস”এরকম ডায়লগ শোনার সৌভাগ্য হয়নি। আর চিঠি দিবোই বা কেমন করে মেয়েদের সামনে গেলে আমি একটু অবশ হয়ে যেতাম। গরম কালেও এটা হতো। অবশ্য এই অবশ ক্লাস সিক্স পর্যন্ত অব্যহত ছিলো।



যা বলছিলাম ... আমি একটু থতমত খেয়ে বললাম জ্বি আমি ভালো আছি আপনি কেমন আছেন? ভাবলাম কোনো দুষ্ট আন্টি হবে। এবার বোরখা আবৃত জননী নিজেই বিব্রত হয়ে আমাকে বলছে আমাকে চিনতে পারলি না। আমি বলি না আন্টি চিনবো না কেনো? মুখ না খুললে তো বুঝতে পারবো না। সাথে সাথে তার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে নিলো। চেহারাটা আমার পরিচিত মনে হলো কিন্ত মনে করতে পারলাম না। বলললো আমি নুরজাহান। তখন আমার মনে আসলো আরে! তুই!! কিছু মনে করিসনা। এত পালটে গেলে কি করে চিনবো বল। তুই তো এখন একজন মহিলা আর সে নুরহাজার ছিলো কত পিচ্ছি। এই নুরজাহানই চিঠি দিয়েছিলো। এরপর স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েদের কমন জিনিস স্বামীর নামের পিছনে হাজারো উপমা ইতিহাস এ থেকে জেট পর্যন্ত বিশেষণ লাগিয়ে বললে শান্তি পায়তাই করলো হ্যান করে ত্যান করে।আমি অনিচ্ছা ভরে তাঁরা স্বামীর ১০০ বছরের জীবনি শুনলাম। একটু শ্লেষমাখা হাসি হেসে বিদায় জানালাম। ভাবলাম নারী জীবন নিয়ে, তাঁরা কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের ধুসর প্রান্তে।



একটা সময় এসে সিনেমার বিচিত্রা পড়া বাদ দিয়ে রাশি ফল পড়তে শুরু করলাম। এবং প্রচণ্ড বিশ্বাস করতে শুরু করলাম। একবার বছরের শুরুতে দেখলাম আজকে প্রেম রোমান্স শুভ সব যায়গায় ইতিবাচক সারা পাবেন। আমার এক ক্লোজ বন্ধুরও একই রাশি, বর্তমানে সেনা অফিসার। এখনো দেখা হলে ক্ষোভের সাথে বলে সে ঘটনা, আমি নাকি মানুষ না। আমি বলি দোস্ত আমি এখন আর ঐ রকম নাই। তুই বিশ্বাস করে দেখতে পারিস। এখন যদি কাউকে ভালো লাগে আমাকে বলিস তাকে আমি নিজেই যেয়ে প্রোপোজ করবো তোকে আর ঝুকিতে ফেলবো না। এবার বলে তোকে পাঠালে তো যেয়ে নিজের কথাই বলবি।এসব আড্ডা এখন আর তেমন হয়না।কারণ ও কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে বৌকে ভীষণ ভালোবাসে।



আসল ঘটনা তো বলাই হলো না, এবার বলি... যেহেতু একই রাশি ভাবলাম ওকে দিয়েই এক্সপেরিমেন্ট করি ও যদি সফল হয়। তাহলে আমিও ঝাঁপিয়ে পড়বো। শত্রুকে দিয়ে বাঘ মারতে পাঠালাম শত্রু মরলেও ভালো বাঘ মরলেও ভালো অনেকটা এরকম বলা যায়। বাসার গাছ থেকে তরতাজা গোলাপ আনলাম, এবার একটি সুন্দরী মেয়েকে প্রোপোজ করতে বন্ধুটিকে পাঠালাম। আমি নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখছি প্রেমিক বন্ধু আমার মেয়েটির কাছে যেয়ে কথা বলা শুরু করলো তখনো ফুল দেয়নি। এর মধ্যে পাশ থেকেই বাদাম কিনে আনতে গিয়েছিলো মধ্য বয়স্ক এক ভদ্রলোক তিনি মেয়েটির চাচা, আমার বন্ধুর পিছন থেকে এসে পিঠে হাত দিয়ে জামার কলার ধরলো। মুহুর্তে আমি এলাকা ত্যাগ করলাম, জানিনা দৌড়ে না ঊড়ে গিয়েছিলাম।

এভাবেই হয়তো মানির মান আল্লাহ রাখে।

সব শেষে বলতে চাই ১৩ সালের মত আরেকটি সাল বাঙালির জীবনে আর না আসুক। অনেক দিন ধরে রাশি চক্র পড়া হয়না। জ্যোতিষ যেখানে নিজের ভাগ্য নিজে বদলাতে পারেনা অন্যের জন্যে আর কি করবে। তাই নতুন বছরে রাশি চক্র না পড়ে নিজ কর্মের দিকে মনোযোগ দিন। কঠোর শ্রম অধ্যবসায় ও সততাই দিতে পারে চূরন্ত সাফাল্যে।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×