somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমা বনাম ছিঃনেমা

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক দিন হলো ব্যস্ত জীবনের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে সিনেমা দেখা হয়নি। আজ একটু অবসর পেয়ে একটি সিনেমা ডাউনলোড করলাম। আজকের সিনেমার আলোচনায় আসার আগে একটু অমলিন সাদাকালো স্মৃতির দৃশ্যপটে ঘুরে আসা যাক। জীবনে প্রথম যে সিনেমা দেখেছিলাম সেটা ছিলো “সমাধান” নায়ক ছিলো সম্ভবত রাজ্জাক। তখন হাফ প্যান্টেই আছি ফুল প্যান্ট ছিলো অনেকটা সুদূরপরাহত। এলাকায় একমাত্র আমাদের বাড়িতেই টেলিভিশন ছিলো। ন্যাশনাল ব্র্যান্ডের ২১ ইঞ্চি, সাদা কালো তো অবশ্যই। রঙিন টেলিভিশন তখন প্রচলন হয়নি। বি বি সি শোনার জন্য একমাত্র থ্রি ব্যান্ড রেডিও’র অবস্থানও ছিলো আমাদের বাড়িতেই। বড়দের সাথে রোজ সন্ধ্যায় ঘটা করে বি বি সি শুনতাম, বুঝি আর না বুঝি। রাতে শুনতাম ঘুমে হাবুডুবু অবস্থায় ভঁয়েজ অব আমেরিকা। আর টেলিভিশনে মাঝে মধ্যে কখণো মাসে আবার কখনো দু মাসে একটি সিনেমা হতো অথবা ঈদের সময়তে ।

অবশ্য ঐ সময়টাতে চিন্তাও করতাম না খবরে মিথ্যা বলা হতে পারে নিউজ পেপারে মিথ্যা ছাপাতে পারে। এজন্যই আমি আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের ভক্ত ছিলাম তাদের গরীব দেশগুলোতে সাহায্য সহযোগিতা করার খবর শুনে। যখন বুঝতে জানতে শিখলাম এসব সবই ভোগাস; বরং সাহায্যের চেয়ে ধ্বংসের তালিকাই দীর্ঘ। কোমল প্রানে কঠিন একটা ধাক্কা খেলাম।
সিনেমা দেখার জন্য আশ পাশের এলাকা থেকে অনেক মানুষ এসে বাইরে অবস্থান করতো। সিনেমা শুরু হলে তাদের প্রবেশের সুযোগ দেয়া হতো। আমার গোল্লাছুট খেলার সঙ্গীদের জন্য ছিলো অগ্রাধিকার। প্রথম সিনেমা ‘সমাধান’ দেখে আবেগ আপ্লূত হয়ে যাই। প্রথম সিনেমায়’ই নেশা ধরে গেলো, এরপর টানা অনেক বছর টেলিভিশনে প্রচারিত সিনেমা বাদ যায়নি। সিনেমার নানা দিক নিয়ে কত গবেষণা ... । মারপিটের ছবি বেশী ভালো লাগতো। ফারুক, মাহমুদ কলি, উজ্জল, জসীম পাকিস্থানের নাদিম ঘুরে ফিরে এদের সিনেমাই ভালো লাগতো। রাজ্জাক, আলমগির তো আছেই। নায়িকাদের ভিতরে ববিতা,শাবানা, রোজিনা এরাই ভালো ছিলো তবে এই সময়টায় নায়িকাদের সাথে তেমন খাতির হয়ে উঠেনি, কারণ ছোট বেলায় একটু লাজুক টাইপের ছিলাম বলে বাস্তবে আপুদের যেমন ভঁয় পেতাম তেমনি সিনেমার নায়িকাদেরও একটু ...। যাই হোক একটা সময় ঠিকই ফুলপ্যান্ট হলাম। তরতর করে বড় হয়ে গেলাম অল্প বয়সে বেশী উচ্চতা লাভ করলাম। পারলে আকাশ ছুঁয়ে দেখি। উচ্চতার সাথে সাথে বুদ্ধি শুদ্ধি খুব একটা বাড়েনি। এখনকার মত তখনো দু’একটা আহম্মকি করে ফেলতাম। আসলে বয়সটা তোঁ এমনই। কতকাল আর টেলিভিশনের সাদাকালো জীবনে থাকা যায়। চোখে মুখে রঙিন স্বপ্নের হাতছানি। এক আত্মিয়র সাথে সিনেমা হলে গিয়ে ফ্রি সিনেমা দেখলাম। আত্মিয়’র বাবা আবার সিনেমা হল অবস্থিত ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন বলে ভি এই পি টিকিট ফ্রি পেলাম। হলের প্রথম সিনেমা ছিলো “দেশ বিদেশ”। সে কি অনুভূতি বলে বোঝানো যাবেনা। কত্ত বড় বড় রঙিন ছবি ...। এটাতেও মারপিট ছিলো... সিনেমা দেখতে দেখতে কতবার নিজেকে নায়কের আসনে নায়িকার পাশে বসিয়েছি আবার কখনো গুণ্ডাদের রাম ধোলাই দিয়েছি তার ইয়াত্তা নেই। তখন অবশ্য দেশী নায়িকারা মোটা তাজা করন জাতীয় কিছু সেবন করতো না। পান্তা ভাত তোঁ না ই। দেখতে কিছুটা হালকা পাতলা ছিলো তাই কল্পনায় পাশে বসাতে বেশী ভঁয় লাগেনি। এবার নায়িকাকে দেখে একটু ভালো লাগতে শুরু করেছে। ঐ যে বললাম বয়সটা একটু বেড়েছে।

প্রসঙ্গতই একটি তথ্য না জানালেই নয়। একটি প্রোগ্রামে “ফায়ার” সিনেমার নায়িকার সাথে দেখা। নাম জানিনা, একজনে বললো উনি নায়িকা। দুরু দুরু হৃদয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার ও আপনাদের এই হাল কেনো? তিনি স্বহাস্যে উত্তর দিলো দেখুন দর্শক যেমন চায় তেমনি তো থাকতে হবে নাকি? আমি বললাম তাহলে আপনাদের নির্দোষ বলা যায়, আচ্ছা আমি কি তাহলে দর্শক না? উত্তর দেয়ার আগেই টেনে নিয়ে গেলো খেতে। অবশ্য প্রোগাম শেষে বিদায় বেলায় আবার দেখা হলে আস্তে করে বললাম দেখুন শুধু রিকশা চালক ভাইরাই কিন্ত দর্শক না।

যা বলছিলাম, এভাবেই একদিন জীবনের বেশ কিছু মূল্যবান সময় পার করে এলাম। জীবনের সবগুলো সিনেমায় কত ঘণ্টা টাইম নষ্ট হয়েছে তার হিসেব করলে দেখা যাবে সবই ব্যার্থ সময়, কিছুই শিখতে পারিনি; বরং এই সময়টা যদি ঘাস কাটতাম তাতে ঘাসের হিমালয় হতো।

জীবনে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব মিলালে হয়তো বেশী নিরাশ হতে হবেনা। কারণ এক জীবনে সব পাওয়া যায়না, সব স্বপ্ন পূরণও হয়না। তবে যেভাবে যেমন আছি কম কীসে। কত মানুষ আমার চেয়ে কম ভালো আছে। এই যে অক্সিজেন নিতে পারছি এটাও বা কম কীসে, অনেকে কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে অক্সিজেন নিচ্ছে। যদিও ফ্রি জিনিসের আমরা মূল্য কমই দেই। এটা জাতিগত সমস্যা বলে খুব বেশী ভুল হবেনা। এজন্যই দোকানে গেলে দেখা যায় একটা কিনলে ১৪ টি ফ্রি।

জীবনের এই কঠিন রেসে নেমেও মাঝে মাঝে সিনেমাকে বিনোদনের সঙ্গী করেছি... ভালো সিনেমা খুব কমই হয়। বেশীরভাগ সিনেমাই ভাগ্যহত মানুষের জীবন কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠে অথবা ক্ষয়ে যাওয়া গভীর প্রণয়ের প্রলাপ। এক সময় ঢাকার সিনেমাকে শুধু রিকশা চালক ভাইদের( রিকশা চালকদের তাচ্ছিল্য করে বলছি না) উপভোগ্য মনে হওয়ায় নিজেকে প্রত্যাহার করলাম। ঢাকার সিনেমা বাদ দিয়ে বোম্বে হলিউড সবই চষে বেড়ালাম। কিছু সিনেমা দাগ কেটে গিয়েছে সবগুলোর নাম মনে নেই টাইটানিক, ব্রেভ হার্ট, ওপেন ওয়াটার ছবিগুলো অন্যতম। এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো বিখ্যাত হলিউড মুভি সবই দেখেছি কিন্তু বিখ্যাতগুলো আমার কাছে তেমন ভালো লাগেনা। কেনো বিখ্যাত হয় তাও বুঝতে পারিনা। জানিনা পিছনে কি রহস্য। এ মুহুর্তে এ ছবিগুলোর নামই মনে পড়ছে।

বোম্বের সিনেমায় খানদের প্রায় সিনেমাই দেখলাম আমির আর শাহরুখ এদের বেশী পছন্দ করতাম পরে সালমান অবশ্য যোগ দিয়েছে পছন্দের তালিয়ায়। এদের আগে ছিলো মিঠুন ও সঞ্জয় দত্ত। হিন্দি সিনেমা প্রথম দেখি মিঠুনের “প্রেম প্রতিজ্ঞা” এটাতে একটি গান আছে এখনো মাঝে মাঝে শুনি। “পেয়ারে কাভি কাম নেহি কারেনা, মার যায়েজ্ঞে আসিকি বাড়েনা” রোমান্টিক একশান সিনেমা ছিলো। মিঠুন ক্ষুদার্থ বসে রাস্তার পাশে রুটি খাছে অমনি গুন্ডারা এসে খাবারে লাথি দিয়ে ময়লা দেয়। এরপর শুরু প্রতিবাদ।

ছবিটি ভালোই ছিলো। দ্বিতীয় হিন্দি ছিলো “বেতাব” সানি দেওয়াল ও নায়িকার একটি ভোগ(উচু) দাঁত আছে নাম মনে নেই। এটাতেও একটি জনপ্রিয় গান আছে “যব হাম যাওয়া হোঙ্গে”। এরপর দীর্ঘ সিনেমা দেখার ইতিহাসে কিছু ভালো ছবি দেখলাম “দিল চাহতা হায়’ “থ্রি ইডেয়ট” ‘কর্মা’ পুরনো, ‘তারে জামিন পার’, ‘ইশক’, ভীর জারা, কাভি খুশী কাভি গাম, কুছ কুছ হোতা হায়, স্লাম ডগ মিলিনিয়র,। তবে শিক্ষামূলক সিনেমা থ্রি ইডেয়ট আর তারে জামিন পার এরকম আর পাইনি। যাই হোক এখন আর নায়িকাদের ভঁয় পাইনা। ঐশ্বরিয়া,কাজল, প্রতী জীনতা এদের ভালোই লাগতো। এবার আসল কথায় ফিরি ... যে সিনেমাটি ডাউনলোড করলাম “যব তাক হায় জান” শাহরুখ আর ক্যাটরিনার। কাহিনী আমার কাছে ভালোই লেগেছে রোমান্টিক কাহিনী কিন্তু একটা যায়গায় এসে আঁটকে গেলো না সিনেমা আঁটকে যায়নি আমি নিজেই আঁটকে গেছি, দুটি নায়িকা আছে দুজনেই হাফ প্যান্ট পরে ৯৮ ভাগ দৃশ্যে অভিনয় করেছে। এদের দেখে আমার সেই ছোট্ট বেলার ইংলিশ প্যান্ট পরার কথা চোখে ভেসে উঠলো। মানছি তাদের পাদুকা যুগল বেশ সুন্দর। যদিও দু নায়িকার একজনকে হাফপ্যান্টে বেমানান লেগেছে কারণ পা দুটি মাঝে মাঝে টুন টুনির ঠাং এর মতই শরু মনে হয়েছে। তাও ধরলাম সুন্দর। যশ চোপরা বুড়ো ব্যাটা এমন ছবি বানায় কেমন করে? হয়তো আমাকে সবাই এখন গেঁয়ো ভাবছেন। তাতে কিছু আমার করার নেই। আমি আসলে সব কিছুর একটা ব্যাল্যান্স দেখতে পছন্দ করি। নাইট ক্লাবে ডান্স যদি নগ্ন হয় সেটা নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্ত একটি নিষিদ্ধ সিনেমা যদি অশ্লীল হয় তাতে কিছু বলার নেই। আধুনিক মানে অশ্লীলতা নয়। তবে একা দেখার জন্য বেশ ভালো ছবিটি। শাহরুখ বেশ শালীন পোশাকে ছিলো। প্রায় বছর খানিক পর সিনেমা দেখতে বসে মনে হলো কাপড় অপচয় রোধেই মনে হয় নায়িকারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা কিন্তু তাও না, পরে ভাবলাম এরা গরীব কি না ? তাও নয়... তাহলে পোশাক একটু বড় হলে দোষ কি? মোট কথা.. যে, বিনোদন পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করতে দ্বিধা হয় বা সবার সামনে একটু বিব্রত হতে হয়, তাকে কি সুস্থ বিনোদন বলতে পারি ??


২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×