কেমন গেলো একটি বছর ! ফিরে দেখা...সামনে তাকাও এরকম কত বাণী মিডিয়াগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছেয়ে যাবে ।কেউবা দিবে ভবিষ্যৎ বাণী, আসছে বছরের তিল তিল অগ্রিম খবর পেশ করবে। আমারও খুব শখ যদি জানতে পারতাম আমার ভবিষ্যৎ? তাহলে মরার আগ মুহুর্তে একটা গভীর ঘুম দিয়ে আত্মাকে আসমানে পাঠিয়ে দিয়ে আজরাইল সাহেবকে বলতাম যে আপনি কষ্ট করে ধরিত্রীর বুকে এই নাদান আবর্জনা আনতে কেন যাবেন আমি নিজেই চলে এসেছি এখানেই রেখে দিন। ইচ্ছামত মৃত্যু ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি।
যা বলছিলাম , ফিরে দেখার বাণী... কিন্তু সেগুলোর বেশীর ভাগই হয়তো বাণী হয়ে থেকে যাবে, কখনো কাগজের ঠোঙা অথবা আর্কাইভ।হয়তো কেউ অতীতকে স্মরণে এনে বর্তমানকে ভারি করবে , কেউ আবার না পাওয়ার হিসেবকে দীর্ঘ করে নিজেকে হতাশার চাঁদরে মুড়ে দিবে,কেউ স্বজন হারানোর বেদনাকে খুঁড়ে খুঁড়ে জাগিয়ে অনুভূতিকে বিদীর্ণ করবে।
কেউ হয়তো ফিরে যাবে একাত্তরে কেউবা বাহান্নতে ।দোকানদার হালখাতা করবে তারপরেও কিছু বাকি রয়েই যাবে ।আবার কেউ নিজের ক্যামেরার লেন্সকে আর একটু সাফ করে নিবে, রাস্তায় অনাকাঙ্ক্ষিত বা কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যকে লুটে নিতে অথবা সাদা কালো জীবনকে রঙিন আঙ্গিক দিতে। কারো কাছে কখন বছর যায় আর কখন আসে তার হিসেব ই নেই।কারণ--
ঘরে নেই ক্যালেন্ডার,
ঘটে নেই চাল।
সময়ের হাতধরে শুধু ভাবে,
এভাবে আর কত কাল।
কি হবে নতুন বছর দিয়ে,
জীবন যে বেসামাল।
কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা, তাকালাম না হয় ফিরে একটু পিছনে, একটি বছরই তো? কথা ছিলো অবিদ্যামুক্ত হওয়ার নিজেকে সফলতার দিকে এগিয়ে নেয়ার। কিন্তু কতটুকু নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। গত বছরের ভুল থেকে কতটুকু শিক্ষা নিয়েছি। নাকি শুধু কথার কথা বলতে হয় তাই বলা এরকমই? প্রবৃত্তির শৃঙ্খল যদি ভাঙতে না-ই পারলাম তবে কেন আবার নতুন ভোরের আলোর পথে পা বাড়ালাম?
তাহলে কি নতুন ভোর পরে আসলে ভালো হতো? কিন্তু না আমার জন্য তো প্রকৃতির আয়োজন থেকে থাকতে পারেনা। একজন ক্ষুদ্র মানুষের জন্য কোন মিছিল-ই থেমে থাকতে পারেনা। তাহলে কি আমার ভুল ছিলো?
হ্যাঁ ঠিক তাই... আমি সে দোকানির মত বাকি হালখাতা করেছি প্রতি বছর বাড়িয়ে চলেছি লোকসানের খাতা। আর এভাবেই ক্ষয় করেছি সময় নামক পুঁজি।
এখন কাজ বেশী কারণ সময়ের কাজ সময়ে না করার জন্য বাকি কাজ, আর জীবনের মিছিলে সমান তালে এগিয়ে যেতে গেলে নতুন ভোরের কাজ অর্থাৎ বর্তমানের কাজ। সত্যজ্ঞান লাভের পরে যদি অন্ধকারে থাকি যদি ব্যার্থতায় নিমজ্জিত হই সে দাঁয় অন্য কারো নয়। এ দাঁয় আমার একান্তই...আমার ।
আপাত দৃষ্টিতে নিজের ভুল দেখা না গেলেও একান্তে নিজেকে নিয়ে পর্যালোচনা করতে পারলে বোঝা যাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপ ,ক্ষুদ্র ব্যাক্তিকেন্দ্রিকতা, ক্ষুদ্র অহম, ক্ষুদ্র হিংসা, ক্ষুদ্র স্বার্থপরতা, ক্ষুদ্র অনিয়ম’ই আজ মহীরুহ দেয়াল হয়ে আমার সাফাল্যের পথে অন্তারায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক তখনই অন্তরআত্মা বলে উঠে --- উঠো এখনো সময় আছে ইচ্ছে করলে এখনো অনেক ভালো কাজ করতে পারবে। তাই... আর একবার প্রবৃত্তির শৃঙ্খল ছিঁড়ে জেগে উঠি নিজেকে ভেঙ্গে চুরে গড়ে তোলার জন্য।
কুম্ভকর্নের মত ঘুমানোর সুযোগ নেই।এখণ থেকেই পৃথিবীতে ঘটবে নৈতিক মানবিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণ। অনেক দিন, মাস, বছর, যুগ ধরে খারাপ অবস্থায় ছিলো প্রতিটি জনপদ, যা জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। একটা সময়ে ইউ টার্ন করবেই সে সময় মনে হয় এসেছে কারণ এর চেয়ে খারাপ আর হতে পারেনা।
এজন্যই নিজেদেরকে এখনই নৈতিকতা মানবিকতায় তৈরি করতে হবে। অনেক নষ্টের মাঝেও ভালো কাজও হচ্ছে আমরা সেদিকে তাকাইনা। কারণ নষ্ট খবর বাতাসের আগে ছড়ায়।ভাবছেন এত আশার কথা কেন বলছি?? কেন বলছি সেটি অনেক বড় আলোচনা ।
অন্য কোনদিন সুযোগ হলে আলোচনা করবো। শুধু এটুকু বলে রাখি যেখানেই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঘটেছে সেখানেই সভ্যতা পৌঁছেছে।অতীত ইতিহাস তাই বলে।ব্লগে অনেকেই সময়ের হাত ধরে হারিয়ে গিয়েছে , আবার কেউ নতুন আবাস গড়েছে ,সবার জন্য সমভাবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো। আমিও হারিয়ে যাওয়া অবস্থায় পোস্ট দিয়ে ফেললাম।
সবাইকে নতুন ভোরের শুভেচ্ছা। আপনাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হোক ফুলে ফুলে মাড়ানো। নৈতিক মানবিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণ শুরু হোক ২০১৩ থেকেই।