সব অপরাধ-ই দুটি কারণে সংগঠিত হয়।দুর্নীতির ক্ষত্রেও একই সূত্র, দুর্নীতি সাধারণত দুই রকম, অভাবের ও স্বভাবের কারণে । অভাবের কারনে দুর্নীতির সংখ্যা খুব বেশি নয়।অভাবের কারণে যে দুর্নীতি সংগঠিত হয় তা সরকারই দুর করতে পারে।বেতন ভাতা বৃদ্ধির মাধ্যেমে প্রানধারনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সু-বন্দবস্ত যদি করে তাহলে অভাবের দুর্নীতি অনেকটা কমে যাবে।যদিও আমাদের দেশে বেড়ায় ক্ষেত খায় বেশীরভাগ সময় ।
স্বভাবের কারণে দুর্নীতি -- এটির ব্যাপারে যত পারা যায় তত কঠিন হতে হবে সরকার ও সাধারণ নাগরিক সবাইকে। স্বভাবের কারণে দুর্নীতিতে কোনো লাভ হয়না কারণ ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে অনেকে পি এইচ ডি, ডক্টরেট করে দেখেছে ,সবাই নির্মম ভাবে বিবিধ রকম স্বাস্থ্যহানিকর থেরাপি খেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। থেরাপির কারণে আমাবস্যা আসলে শরীরে ব্যথায় খিচুনী হয়। যারা দুর্নীতি করে এদের পরিসমাপ্তি কখনো ভালো হয়না, এদের সন্তানরা কোথাও উন্নত মানুষ হয়েছে দেখা যায়নি বরং বখে গিয়েছে।একসময় এদের সব প্রিয় বস্তুই হয় ধংসের কারণ।যত অবৈধ সম্পদ বাড়িয়েছে তত এরা ফিলিংস অফ ইনসিকিউরিটিতে ভুগে ভুগে আক্রান্ত হয়েছে মনদৈহিক জরা ব্যাধিতে।সত্য হচ্ছে এই টাকা খরচের ক্ষেত্র প্রকৃতি এভাবেই নির্মান করে দেয়। ।দেশের সর্বচ্চ শিক্ষাঙ্গন থেকে পাশ করে বের হয়েও পারেনা নৈতিকতার পরিচয় দিতে। এজন্য নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে পরিবারে ও শিক্ষাঙ্গনে । না হলে এমন একটি সময় আসবে যখন হারিকেন জ্বালিয়েও একটি আলোকিত মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । এমন দিন আমাদের না আসুক।
এজন্যই আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে এসে সুস্থ্য সুন্দর জীবনদৃষ্টি আয়ত্ত করা প্রয়োজন। এবং প্রতিটি সুন্দর জানাকে মানায় রূপান্তরিত করতে হবে । আমরা ভালো ভালো কথা আলোচনা করি হরহামেশাই কিন্ত তা নিজের জীবনচারে প্রতিফলিত হয়না। বিষয়টি এমন “আমি যা করি তোমরা তা করোনা আমি যা বলি তা করো’’ এ প্রসঙ্গে নবীজির একটি হাদিস আছে--‘’তোমরা এমন যুগে আছো যেখানে জ্ঞানীর সংখ্যা বেশি বক্তার সংখ্যা কম ও দাতার সংখ্যা বেশি গ্রহীতার সংখ্যা কম। শীঘ্রই এমন দিন আসবে সেদিন জ্ঞানীর সংখ্যা কমে যাবে বক্তার সংখ্যা বেড়ে যাবে,দাতার সংখ্যা কমে যাবে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়ে যাবে’’ আমরা হয়ত এই হাদিসের শেষ অংশে অবস্থান করছি।
শুধু বলতে চাই কিছু শুনতে চাইনা ।
প্রতেকেই মোরা ইমাম গাজ্জালি বা লোকমান হেকিমের মত প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী। এজন্যই নিজের মাথায় কাকের মল নিয়ে অন্যের মাথায় আনন্দ খুঁজি।এই আধুনিক বিশ্বের সব চেয়ে বড় আশীর্বাদ হচ্ছে আমরা কোন ভুল করিনা সব ভুল ব্যাটা নন্দ ঘোষ করে গেছে।(নন্দ ঘোষের জন্য দোয়া কাম্য) গত বছর প্রবাসী এক লেখকের একটি লেখা পড়ছিলাম বেশ মজাই লাগছিলো। ‘’মিছরির ছুরি হুজুরের ছোট বিবি কিছুটা ‘আশকারা’ পেয়ে মাঝে মধ্যে দুয়েকটি প্রশ্ন করে বসেন।
বিবির প্রথম প্রশ্ন, আচ্ছা হুজুর, আমরা আপনার কিতাবগুলোতে হাত রাখলেই লাফিয়ে ওঠেন। অজু-গোসল ঠিক আছে কি না জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু আপনি নিজে দিব্যি আপনার পাছা (শব্দটি শুনে হুজুর চোখ গরম করলে সংশোধনী টানে) গোস্তাকি মাফ করবেন, বলতে চাচ্ছি, ইয়ে মানে, আপনার পাছা-মোবারক কিতাবের ওপর রেখে বসে পড়েন।
হুজুরের উত্তর, বেয়াদব মাইয়া মানুষ। আমি হলাম গিয়ে জ্ঞানের এক কিতাব। কাজেই এক কিতাবের ওপর অন্য কিতাব বসলে অসুবিধা কোথায়? ‘’
আমাদের অবস্থা এর চেয়ে উন্নত বলা যায়না । সমাজের উঁচু তলার এক ব্যবসায়ী যখন নিচু তলার মানুষ হয়ে যায় তখন অবাক হতে হয়। সুযোগ পেলেই জ্ঞান দিতে চাই অথচ নিতে চাইনা।এটাকে জাতিগত ভাবেই আমাদের মেরুদন্ডহীন হওয়ার প্রকাশ বলা যায় । সমঝোতার হাত বাড়াতে পারিনা বাড়াই ঘৃনার হাত। আমরা পারি আবেগের স্রেতে ভেসে যেতে, পারিনা সত্যের মুখোমুখি দাড়াতে।মৃত ছেলে স্বামী বাবার দুঃখ ত্যানায় প্যাচিয়ে বিলাপ করতে পারি, মৃত ব্যাক্তির জন্য শোকে মুহ্যমান হতে পারি। পারিনা বাচানোর স্বপ্ন নিয়ে মৃত পথযাত্রী মানুষের পাশে দাড়াতে।
অন্যে দুঃখে সস্তা আবেগে কাঁদতে পারি কিন্তু পারিনা অন্যের আনন্দে হাসতে।নিজের ছেলে পরীক্ষায় পাশ করলে তসবি জপের মত বেখেয়ালে একজনের কাছে তিরিশবারও প্রকাশ করি হিরার টুকরো ছেলের কৃতিত্বের কথা। পাশের বাড়ির গরীব ছেলেটি বেশি ভালো রেজাল্ট করলে গজগজ করি ভাবি এই ব্যাটা পাশ করলো কেনো? ও তো মাটির টুকরা। অন্যের দোষ নিয়ে প্রতিযোগিতা করি , গুন নিয়ে নয়। অন্যায় দেখে প্রতিবাদে মুখর হই প্রতিকারে নয়। ঠিক এমনি আমাদের জাতীয় জীবনকেও গ্রাস করছে
হীনমন্যতা,পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষা ও ছোট মানসিকতা।এই সব আবর্জনা হৃদয়ে ধারন করে কোনো জাতি মাথা তুলে দাঁড়ানোর কথা নয়।আর একারনেই স্বাধীনতার ৪১ বসন্ত পরেও সুখী সমৃদ্ধ একটি কল্যাণ রাস্ট এখনো পাইনি। এখনো স্বপ্ন দেখি একটি দরদী মহাসমাজের।