ভূমিকা
মানুষ একটি উপকারি জন্তু। প্রাণীজগতে বৈচিত্রের দিক দিয়ে মানুষের নাম প্রথম সারিতে রয়েছে। বলা হয়ে থাকে মানুষ না থাকলে নিখিল বিশ্বের প্রাণীজগৎ বৈচিত্রশূন্য থাকতো। তুলনামূলকভাবে কম মগজের অধিকারী হলেও আমাদের বিনোদনের জন্য মানুষ পৃথিবীতে অনেক কিছু করে থাকে। পৃথিবীর বৈচিত্র রক্ষায় মানুষের প্রয়োজনীয়তা অসীম।
বর্ণনা
মানুষ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন চৌধুরী, খান, মিঞা, মির্জা, সৈয়দ ইত্যাদি। মানুষের চারটি পা আছে। দু'টো দিয়ে হাঁটে, একটি দিয়ে গরুর রশি ধরে, আর একটি দিয়ে লেজ ধরে। একটি মুখ আছে। সেটি দিয়ে হইট হইট করে। মানুষের সুন্দর দুটি চোখ আছে। অনেকে সে চোখে ফ্রেমে বাঁধাই করা দু’টো আয়না পরে। এটাকে পাওয়ার ডিসিস বলে। ঘাস খায় না বলে মানুষ এ রোগে ভোগে। অনেক আগে একবার কয়েকজন মানুষের চোখের পাওয়ার এতো কমে গেছে যে, ওরা চাঁদ দেখার জন্য শত শত কোটি টাকা খরচ করে আকাশে উড়ে গেছে। অথচ আমরা ঘরে বসেই চাঁদ দেখতে পারি। মানুষের লেজ নেই। তাই ওরা মশারি, কয়েল ও এরোসল ব্যবহার করে। চারটি পায়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না বলে ঘুমানোর জন্য হেলান দিয়ে বসতে হয়, নয়তো শুতে হয়। এরা দাঁড়িয়ে ঘুমাতে পারে না।
লাইফ স্টাইল
মানুষের শরীর গরুর মতো সুন্দর নয়। তাই এক জাতীয় আবরন দিয়ে শরীর লুকিয়ে রাখে। এর মধ্যে কিছু আবরণ গোপন করে রাখে। বেশিরভাগ মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ভয় পায়। এ জন্য একটি ছোট্ট ঘরে প্রবেশ করে লুকিয়ে লুকিয়ে সাড়া দেয়। গবেষকদের মতে এ প্রাণীর মাঝে গোপনীয়তার চর্চা অনেক বেশি। আমাদের খাওয়ার পর অবশিষ্ট শাক, লতাপাতা ছাড়াও এর সাথে ভাত নামক এক প্রকারের খাবার খেয়ে থাকে। এর বাইরে ঘুষ, সুদ, কমিশন, চুমু, ছ্যাকা, মাইর ও গুলি ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এসব খাবার বেশি খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে মারাও যায়।
মানুষ গালিগালাজ করে। গালি দেয়ার দরকার হলে এরা হয় সংসদ ভবনে যায়, নইলে ব্লগে লগ ইন করে। তবে সংসদ ভবনে গালি দিলে কোন সমস্যা না হলেও ব্লগে গালি দিলে মডুরা ব্যান করে দেয়।
বুদ্ধিমত্তা
বুদ্ধির দিক দিয়ে মানুষ গরুর সমকক্ষ হতে পারেনি। তাই এখনো বই পড়ে। জ্ঞানার্জনের জন্য বিলেতে যায়। এমনিতে মানুষ খুব ভালো। ওরা গরুকে গুতো দেয় না। মানুষ পেপার পড়তে পারে ও টিভিতে ইভা রহমানের গান দেখতে পারে।
গরুর মতো জোরে চিৎকার করতে পারে না বলে এরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ইদানিং মানুষ খুব অলস হয়ে গেছে। এরা দুই পা সামনে ফেলিয়া গরু খোঁজে না। গুগলিং নামের নতুন পদ্ধতিতে ঘরে বসে খোঁজে। এ পদ্ধতি আরো অনেক গোপন কিছু দেখে থাকে।
পৃথিবীতে মানুষ অনেক কাজ করে। বিয়ে করে, ডেসটিনি করে, নিজে নিজে গোসল করে, খাম্বা বিক্রি করে, বস্তায় টাকা ভরে গাড়িতে করে চলাফেরা করে, এমনকি পকেটের পয়সায় টিভি চ্যানেল খুলে গানও করে।
বংশবৃদ্ধি
মানুষের বংশবৃদ্ধি সম্পূর্ণ তার নিজ ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। অঞ্চলভেদে বংশবৃদ্ধির সূচক উঠানামা করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওদের পিতৃ এবং মাতৃ পরিচয় দুটাই লাগে। তবে বংশবৃদ্ধি যাই হোক, খুব সহসা এ বিচিত্র প্রাণীর বিলুপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। মানুষ খুব ভালো। ওরা নিজেদের অস্তিত্বের আগে গরুর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করে। এ কারণে ক্লোনিং নামক এক সিস্টেমে গরু জন্ম দেয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। অবশ্য সমালোচকরা এ পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে গরুকে অলস বানানোর জন্য বিনা পরিশ্রমে সন্তান জন্মদানের পদ্ধতি বের করেছে মানুষ। এটাকে তাঁরা ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
উপকারিতা
মানুষের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ওরা আমাদেরকে গোসল করায়। গোসল করানোর সময় পুরো শরীরে আদর করে দেয়। মনের সুখে গরুর বর্জ্য পরিষ্কার করে এবং টয়লেট ধুয়ে দেয়। এমনকি আমাদের সন্তান প্রসবের বিষয়টি মানুষই দেখে। মানুষের সাথে গরুর জন্মের সম্পর্ক। গরুর খাবারের সুবিধার্থে মানুষ ধান, পাট, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন প্রকারের ফুড কালটিভেট করে। আমরা খেয়ে শেষ করতে না পারলে ওরা খেয়ে সাহায্য করে। আমরা যখন কাউকে শিং দিয়ে জোকস মারি, অন্যরা তখন হাসে। জোকস মেরে মানুষ হাসাতে আমাদের ভালো লাগে। মানুষ কিছুটা বলদ প্রকৃতির। ঠিকমতো দুধ দিয়ে যদি ওদেরকে ইচ্ছামতো লাত্থি মারি, তাহলে মাইন্ড করে না। হাসতে হাসতে বলে “দুধ দেয়া গরু লাত্থি মারলেও আরাম লাগে!”
অপকারিতা
মানুষের ঢংয়ের শেষ নাই। আমাদের জন্যই ফুড কালটিভেট করে, আবার সে ফুড ফিল্ডে ঘেরা দিয়ে রাখে। ওদের মধ্যে বোকা শ্রেনীর যারা আছে, তাদেরকে মাঝে মাঝে গরু বলে আন্ডারস্টিমেট করে। আমাদের গলায় হাত বুলাতে বুলাতে চরম উত্তেজনা এনে দিতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারে না। এরা হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর। ওরা চোখের ভাষা বুঝতে পারে না। এমনকি মুখের ভাষাও না। আমরা যাই বলি না কেন, ওরা কেবল হাম্বা শোনে। ভাষাজ্ঞান একেবারে নিম্নমানের। এরা পাগলাটে স্বভাবের। বৌয়ের সাথে ঝগড়া করে এসে আমাদের পাছার উপর ঝাল ছাড়ে।
উপসংহার
কোন প্রাণীরই ক্ষমতা অসীম নয়। অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেই জীবন চলে। একটা সময় আসবে, যখন মানুষও আমাদের মতো সবকিছু শিখে ফেলবে। তখন আর তাদেরকে স্কুলে যেতে হবে না। বসে বসে খাবে আর রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়বে। পৃথিবীর সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ভেঙে আমাদের জন্য ঘাস চাষ করবে। সুদিন আসবেই। পরিশেষে বলতে হয়, সবকিছু মিলিয়ে পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় মানুষের ভূমিকা অপরিসীম।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩