আমার কাছে নীল রংটাই পছন্দ। আর এই পছন্দের রংটাকে পছন্দ করে নীলা নামের এক মেয়ের সাথে আমার পরিচয়। মানুষতো তাই মনের বিচিত্রতায় কেন জানি তার সাথে কথা বলতে, তাকে দেখতে, তার চোখে চোখ রেখে অপলক চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করতে থাকল আমার ব্যস্ততম মুহুর্তগুলোও। সপ্তাহের মধ্যে আমরা আমাদের খুজে পেলাম দুজনার মাঝে। অনুভূতির মাপজোকে আমরা দুজনই সমান, এ প্রমাণ দিলাম তখনই যখন দেখলাম আমরা দুজনই কলেজ যাবার নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৌছাতাম কলেজ ক্যান্টিনে। সবারই ভাল লাগবে এরকম একটা রূপসী চেহারা ছিল তার। তার ম্যাচিং করা পোষাকও দায়ী অনেকটা তাকে ভাল লাগার পিছনে। আরো বেশী আপন হয়ে গেলাম আমরা নবীন বরণ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে কখন যে কি হয়ে গেল টেরই পেলাম না। সেদিনই প্রথম সে তার হাতটা রাখল আমার হাতে। সমস্ত পৃথিবীটাই সেদিন আমার মনে হয়েছিল। কাসের পড়া বুঝিয়ে নিতে আমার মেসে যেদিন এলো সেদিনই প্রথম কোন মেয়ে আমার ঠোটে কিস করল। আমার সমস্ত পৃথিবী উল্টে পাল্টে গিয়েছিল সেদিন। মিষ্টি হাসি দিয়ে সেদিন বিদায় নেবার পরও আরো কয়েক দিন সে এসেছিল। কাসের ফাকে হিসাব চলত আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। পাশ করে বেরুলেই চাকরী। তারপর আমাদের বিয়ে। আমাদের ছেলের নামটাও সে ঠিক করে রাখল ‘নিলয়’।
সবকিছুই স্বাভাবিক চলছিল। কিন্তু আচমকা নদীর গতির মত দেখলাম তার পরিবর্তন। দেখেও না দেখার ভান করল। কথা বলতে চাইলেও এড়িয়ে গেল। দু-চার দিন কলেজেও এলো না সে। খোজ নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। এভাবে ৪২ দিন। তেতাল্লিশ দিনের মাথায় তাকে আবিষ্কার করলাম নতুন রুপে, নতুন আঙ্গিকে। অন্য একজনের সাথে। আমার সাথে যে ভাবে হেসে হেসে কথা বলত ঠিক সেই ভাবে। সেদিন সে একবারও আমার দিকে তাকায়নি। তারপর পুরো এক সপ্তাহ তাদের আমি ল্য করেছি। এরই মধ্যে বেশ গভীরে গেছে তাদের সম্পর্ক। এ রকম ব্যবহারের পেছনে আমার কোন দোষ খুজে পেলাম না আমি। অবশ্য আমার অবস্থান অনেক আগেই তার কাছে নিশ্চিত করেছিলাম। তবে কি? ভালবাসায় কি নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখতে হয়? নাকি জীবনে চৌদ্দজনের সাথে ভালবাসার অভিনয় করতে হয়? খুব বেশী ভালবাসি বলেই কি এত কষ্ট পাচ্ছি? এরকম শত সহস্র প্রশ্নের উত্তর খুজতে আমার সঙ্গী হল সিগারেট। ভালবাসা ব্যাপারটা পুরোপুরি কেমন জানি গোলমেলে হয়ে উঠল আমার কাছে। আবার এটাও মনে হয় স্নায়ুর তাড়না মিটানোর জন্য যা ইচ্ছা তাই করা। ঠিক হলুদ রঙের চশমার মত। হলুদ রঙের চশমা চোখে ধরলেতো সবকিছু হলুদই লাগবে।
অনেক বড় গোলমাল ছিল আমার হিসাবে। তার নতুন বন্ধুটির সাথে যোগ বিয়োগে আমার দিকের পাল্লাটা ছিল অনেক উপরে। হিসাবের ধাক্কাটা সামাল দিতে আমার রেজাল্ট খারাপ হলো। অনেক বন্ধু আমাকে পরিত্যাগ করল। অনেক নতুন বন্ধু যোগ হলো আমার জীবনের পাতায়। কয়েক সপ্তাহের মাঝে সিগারেটের স্থানে জায়গা করে নিল গাঁজা।
সেদিন সবচেয়ে খুশি হয়েছিলাম, যেদিন সে নিজে আমাকে তার বিয়ের কার্ডটা হাতে ধরিয়ে দিল। আমি লজ্জায় তার মুখের দিকে তাকাতে পারিনি। ‘এক বাবার এক ছেলে। ভালই মানিয়েছে তাদের জুটি’ এ রকম গুঞ্জনের মাঝে একগোছা রজনীগন্ধা ফুলের সাথে আমার মনের সবকিছুকে চিরবিদায় জানাতে গেলাম তাদের বিয়ে বাড়িতে। মাথা নিচু করে তাকে সেটা দিতেই তার মুখে হাসি সমেত শুনলাম ‘কি দরকার ছিল এসবের’।
এই ঘটনার দু বছর পর আমি বসে ভাবছি, সত্যিইতো কি দরকার ছিল এসবের।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:২৮