হরতাল শব্দটি মূলত একটা গুজরাটি শব্দ (গুজরাটিতে হাড়্তাল্) যা সর্বাত্মক ধর্মঘটের প্রকাশক। মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।হরতালের সময় সকল কর্মক্ষেত্র, দোকান, আদালত বন্ধ থাকে। তবে সাধারণত এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারসার্ভিস, গণমাধ্যমসমূহ এর আওতার বাইরে হয়ে থাকে।রতাল, রূপভেদে বিশ্বের প্রায় সব দেশে বর্তমান থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশেই এই রাজনৈতিক হাতিয়ারটির ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
[সুত্রঃ উইকিপিডিয়া]
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় হরতালকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবেই মানা হয়, এই উক্তিটির চর্চা আমরা সব সময়ই করে থাকি। দাবি দাওয়া-আলোচনা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে আদায় না হলে সর্বশেষ পন্থা হিসেবে চূড়ান্ত পর্যায়ে এই পন্থাটিকে ব্যবহার করা হয় প্রতিপক্ষকে বাধ্য করার জন্যে।
হরতালের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলা আদালত খারিজ করে দিয়েছেন এই বলে যে, হরতাল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।
সুত্রঃপ্রথম আলো ১১জুন ২০১২
যে দলই বিরোধী দলে থাকুক না কেন, হরতালকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে দাবি করে, আর সরকারি দলে থাকলে হরতাল বিরোধী কথা বলে।
যদিও ১৯৯০ সালের পর থেকে জাতীয় ইস্যু নিয়ে অথবা জনদাবি নিয়ে কোন প্রধান বিরোধী দল হরতাল দেয় নাই,
যখনই তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন বাধাগস্ত হয়েছে তখনই তারা হরতালকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছে,
কোন দলই হরতাল নিষিদ্ধের কথা ভাবেনি কখনো, কারন তারা জানে বিরোধীদলে গেলে হরতালই তাদের একমাত্র হাতিহার।
"বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিরোধীদলে গেলেও কখনো হরতাল দিবেনা" জনসম্মুখে এমন জ্বালাময়ী বক্তিতা দেয়ার পরও ২০০১-২০০৭ সাল পর্যন্ত ১৩০দিন হরতালের ডাক দেয়।
আসুন দেখে নেই আওয়ামিলীগ, বিএনপি কে কত দিন হরতাল দিয়েছেঃ
১৯৯১-১৯৯৬ বিরোধী দল আওয়ামীলীগঃ ১৭৩দিন
১৯৯৬-২০০১ বিরোধী দল বিএনপিঃ ৫৩দিন
২০০১-২০০৭ বিরোধী দল আওয়ামীলীগঃ১৩০দিন
২০০৯-২০১৩ বিরোধী দল বিএনপিঃ৯০ দিন
[সুত্রঃ প্রথম আলো]
সুতরাং দেখা যায় যে, যে দলই বিরোধী দলে থাকুক না কেন,
যখন ই তাদের ক্ষমতায় যাওার পথ সঙ্কুচিত হয়েছে তখনই হরতালকে ব্যাবহার করেছে নিষ্ঠুর ভাবে।
শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে গত ২০ বছরে ৪৫০দিনেরও বেশি হরতাল হয়েছে।
বাংলাদেশে হরতালের নামে যা শুরু হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জ্বালাও, পোড়াও, মানুষ হত্যা এসব কোনো রাজনৈতিক অধিকার হতে পারে না।নেতাদের গদিতে গিয়ে এদেশকে চেটেপুটে খাওয়ায় এক নিষ্ঠুর বাহনা মাত্র। যে বাহনার মাসুল সাধারণ জনগণকে দিতে হয়, নেতাদের নয়।
তাই আমরা চাই কঠোর আইন প্রয়োগ করে এদেশ থেকে চিরতরে হরতাল নামক রাজনৈতিক নোংরা খেলাটি নিষিদ্ধ করা হোক।