নতুন বউ গুটিসুটি মেরে খাটে বসে আছে। সারা দিন অনেক ধকল গেছে। তাই এখন খুব ক্লান্ত সে। তার পরেও মনের কোণে কোথায় যেন খেলা করছে ভীষণ আনন্দ। কেনই বা আনন্দিত হবে না? অনেক বছর অপেক্ষার পর সে তার রাজপুত্রের দেখা পেয়েছে। এটা কি কম খুশির কথা?
কিন্তু রাজপুত্র বাসরঘরে আসতে এত দেরি করছে কেন? কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার? নতুন বউয়ের কপালে একটু দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল।
হঠাৎ কার পায়ের আওয়াজ! নতুন বউ লাজুক মুখ নিয়ে আড়চোখে দরজার দিকে তাকাল।
হ্যাঁ। ছোট ছোট পা ফেলে আসছে তার বর।
কিন্তু একি! বর তার পাশে এসে না বসে ঘরের এক কোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল কেন? কী হলো তার? তাকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন? সে কি কোনো কথা বলবে না?
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল বউ।
কিন্তু না, বর তখনো নীরব। শেষমেশ নতুন বউ লজ্জা ভেঙে নিজেই জিজ্ঞেস করে ফেলল, ‘এই যে! শুনছ? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’
কোনো উত্তর এল না বরের কাছ থেকে।
বউ আবার জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার? কিছু বলো!’
গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল বর, ‘আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।’
নতুন বউ ভয় পেয়ে গেল। কী ব্যাপার? বিয়ের রাতেই ঝগড়া! লক্ষণ তো ভালো ঠেকছে না!
বউ বলল, ‘মানে কী? প্লিজ, এমন না করে কিছু বলো। কী হয়েছে?’
আবার উত্তর দিল বর, ‘জীবনেও না। কোনো মন্তব্য করব না আমি।’
বউ এবার একটু রাগ করল, ‘কিন্তু কেন? আমার কী অপরাধ? কী করেছি আমি?’
বর এবার অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দিল, ‘এই বিয়ে হয় নাই।’
বউ হুংকার দিয়ে উঠল, ‘মানে? আমি নিজে কবুল বলেছি। তুমিও বলেছ। তাহলে বিয়ে হয় নাই মানে কী? উল্টাপাল্টা বলছ কেন?’
‘একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের বিয়ে হতে হবে। তা না হলে আমি বিয়ে মানি না। মানব না।’ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বরের জবাব।
পরিশেষ:
বাসররাতেই ওই বরকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিয়ে বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে। ভণ্ডদের সে বড় ঘৃণা করে।
এদিকে ওই বরের পরে আর বিয়ে হয়নি। ‘স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের’ বিয়ে আর বউ খুঁজতে খুঁজতেই তার যৌবন কেটে গেছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন:
ক) ওই বরের পরিচয় দাও।
খ) ‘স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের বিয়ে’ বলতে কী বোঝো?
গ) আলোচ্য অনুচ্ছেদে বরের শরম আছে বলে তুমি মনে করো কি? না থাকলে কেন নেই?
[সংরহকিত]