ইসলাম-বিরোধী চক্রের কিছু ব্লগার নিজেদেরকে 'নাস্তিক/নিধর্মী' দাবি করে মুসলিম পরিবারে সংঘটিত বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনাকে অসততার আশ্রয় নিয়ে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করে একদিকে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে 'অমানবিক, বর্বর' প্রমাণ করার জন্য সদা-সর্বদা তৎপর অন্যদিকে আবার নিজেদেরকে 'মানবতাবাদী, প্রগতিশীল' দাবি করে বুক চাপড়ানো হচ্ছে। কিন্তু নাস্তিক হয়ে ইসলামে বিশ্বাসীদেরকে 'অমানবিক, বর্বর' প্রমাণ করতে যাওয়া এবং নিজেকে 'মানবতাবাদী, প্রগতিশীল' দাবি করা যে নিতান্তই হাস্যকর ও অযৌক্তিক – তা তারা বোঝে কি-না, কে জানে। যৌক্তিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্ভব হলে আমি নিজেই নাস্তিক থেকে যেতাম। কেউ কেউ হয়ত জেনে-বুঝেই এই চক্রের সাথে জড়িত। এই লেখাতে খুব সংক্ষেপে তাদের ভণ্ডামীকে উন্মোচন করা হবে।
এই 'নাস্তিক/নিধর্মী' দাবিদার ইসলাম-বিরোধী চক্র দিনের আলোয় নিজ ঘরের মধ্যে হাতি দেখতে পায় না কিন্তু রাতের অন্ধকারে জঙ্গলের মধ্যে সুঁচ খুঁজে পায় ঠিকই। উদাহরণস্বরূপ, ব্যভিচারের অপরাধে গ্রাম-গঞ্জে কোনো নারীকে দোররা মারার খবর শোনার সাথে সাথে 'অমানবিক, বর্বর' বলে মায়াকান্না শুরু করে দিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে আক্রমণ করা হয়, যদিও সেটি রাষ্ট্রের দেখার বিষয়; অথচ হিটলার যে মিলিয়ন মিলিয়ন নিরীহ ইহুদীকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে তা নিয়ে তাদের কোনো রকম মায়াকান্না নেই। হাস্যকর মনে হয় না?
যাহোক, প্রকৃত মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল হতে হলে মৃত্যুপরবর্তী জীবন ও এই মহাবিশ্বের একজন মহান স্রষ্টায় বিশ্বাস করতেই হবে, যিনি অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে সবারই সূক্ষ্মভাবে ন্যায়বিচার করতে সক্ষম। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথই খোলা নেই। কারণ মৃত্যুপরবর্তী জীবন ও স্রষ্টাকে অস্বীকার করা মানে মৃত্যুর সাথে সাথে অনন্ত কালের জন্য সবকিছুর অবসানেও বিশ্বাস করা। আর মৃত্যুর সাথে সাথে সবকিছুর অবসানে বিশ্বাস করা মানে অপরাধী ও নিরপরাধীর মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; নৈতিকতা ও অনৈতিকতার মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; খুনি-ধর্ষক ও ভাল মানুষের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; টেররিষ্ট ও সেইন্ট এর মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; স্বাভাবিক মৃত্যু ও আত্মঘাতি মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; বুদ্ধ ও হিটলারের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; মাদার তেরেসা ও বিন লাদেনের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; গান্ধী ও আদভানী-মোদী'র মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; নেলসন ম্যান্ডেলা ও পলপটের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; জালালুদ্দীন রুমী ও জর্জ বুশের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; জীব ও জড়ের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; চ্যারিটি সংগঠন ও জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; ইত্যাদি; ইত্যাদি।
যে সকল যুদ্ধাপরাধী ইতোমধ্যে মারা গেছে তাদের বিচার কে করবে? লক্ষ লক্ষ নিরীহ নারী-পুরুষকে যে হত্যা ও ধর্ষণ করা হলো তাদেরই বা কী হবে? তারা কি কখনোই ন্যায়বিচার পাবে না? হিটলারের বিচার কে করবে? মিলিয়ন মিলিয়ন ইহুদীকে যে হত্যা করা হলো তাদের কী হবে? বিন লাদেন ও আল-কায়েদা সন্ত্রাসীদের বিচার কে করবে? এলকে আদভানী ও নরেন্দ্র মোদীর বিচার কে করবে? স্ট্যালিন, পলপট, মাও, আশোক, চেঙ্গিস খাঁ, হালাকু খাঁ, জর্জ বুশ, এলকে আদভানী, নরেন্দ্র মোদী, ও সাদ্দামের মতো বড় বড় গণহত্যাকারীদের বিচার কে করবে? এরা সবাই বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে? তাই কি? তাদের দ্বারা যারা খুন ও ধর্ষিত হয়েছে তাদের কী হবে? ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার অপরাধীদের বিচার কে করবে? তাদের দ্বারা যারা বলি বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরই বা কী হবে? তারা কি কখনোই ন্যায়বিচার পাবে না? কে ও কীভাবে তাদের ন্যায়বিচার করবে?
এ'রকম আরো অনেক কিছুকেই অস্বীকার করতে হবে (One can't have it both ways)! অতএব, যারা স্বগর্বে মৃত্যুপরবর্তী জীবন ও স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তারা উপরোল্লেখিত বিষয়গুলোকেও স্বগর্বে অস্বীকার করতে রাজি আছে কি-না? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে প্রকাশ্যে ও বুক ফুলে তা বলতে হবে। শুধুমাত্র ব্লগের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মতো মিডিয়াতেও প্রচার করতে হবে। আর উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে কে ও কীভাবে উপরোল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য করবে? কে ও কীভাবে তাদের ন্যায়বিচার করবে? জেনে-বুঝে এত কিছুকে অস্বীকার করে প্রকৃত মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী, প্রগতিশীল, ও আধুনিক চিন্তা-ভাবনার অধিকারী হওয়া কী করে সম্ভব? সেই সাথে ইসলামে বিশ্বাসীদেরকে 'অমানবিক, বর্বর' বলার নৈতিক ও যৌক্তিক অধিকার তাদের আছে কি-না?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২০