somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আস্তিকতা বনাম নাস্তিকতা: একটি বিশ্লেষণ - ১

০৯ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আস্তিকদের সাথে যুক্তি-তর্ক করে তেমন একটা মজা পাওয়া যায় না। কারণ তাদের নাকি শেষ একটা ‘অস্ত্র’ আছে, আর সেটি হচ্ছে ‘বিশ্বাস।’ কতই না সুবিধা, তাই না! যখনই কেউ যুক্তি-তর্কের এক পর্যায়ে ‘বিশ্বাস’ নামক অস্ত্রের আশ্রয় নেয় তখন আর এগোনো সম্ভব হয় না। নাস্তিকদেরও সে'রকম কোন ‘অস্ত্র’ আছে কি-না, কে জানে! দেখা যাক দেখি।

এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাস একটি অন্ধ-বিশ্বাস কি-না – একজন সংশয়বাদী ও সত্য সন্ধানী হিসেবে বিষয়টা নিয়ে আমার এক বন্ধুর সরণাপন্ন হয়েছিলাম। বন্ধুটি যা বলেছে তার সারমর্ম প্রথমে পাঁচ তারার মধ্যে তুলে দেয়া হলো। বন্ধুর ভাষায়…

*****
ছোট্ট একটি গল্প দিয়েই শুরু করা যাক তাহলে। এক সংশয়বাদী বন্ধুকে একদিন গল্পটি বলছিলাম। গল্পটি এরকম:

একদা কিছুই ছিল না। মহাশূন্যও না। হঠাৎ করে একদিন মহা-বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাশূন্য, বস্তু, ও শক্তি ইভল্ভ (!) করলো। তারপর ধীরে ধীরে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি ও গ্রহ-নক্ষত্র ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে পানি ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে আলো-বাতাস ইভল্ভ (!) করলো। সেই সাথে দৈবক্রমে অনেক রাসায়নিক পদার্থও ইভল্ভ (!) করলো। দৈবক্রমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়ম ইভল্ভ (!) করলো। তারপর হঠাৎ করে একদিন মিউট-বিস্ফোরণের মাধ্যমে কোন এক পুকুর থেকে ব্যাকটেরিয়া-সদৃশ সরল একটি অণুজীব ইভল্ভ (!) করলো। তবে সেই অণুজীব পুংলিঙ্গ নাকি স্ত্রীলিঙ্গ নাকি ক্লীবলিঙ্গ ছিল তা জানা নেই! তারপর সেই অণুজীব থেকে ধীরে ধীরে উদ্ভিদজগত-সহ মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতি ইভল্ভ (!) করলো এবং সকল প্রকার প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যও ইভল্ভ (!) করলো।

গল্পটা শেষ না হতেই বন্ধুর প্রতিক্রিয়া – থামলে ভাল লাগে! এই ধরণের আজগুবি কল্পকাহিনী তোকে কে শুনালো-রে? ওয়েল, এক নাস্তিক বন্ধু। হুমম! তোর বন্ধু তো দেখা যাচ্ছে দৈব ঘটনায় একজন মহা অন্ধ বিশ্বাসী!

ওয়েল, তাহলে একটা কৌতুক শোন। চার বন্ধু নিজ নিজ দেশ নিয়ে গর্ব করছে:

আমেরিকান বন্ধু: জানিস, আমাদের দেশ এমন একটি মেশিন বানিয়েছে যেটা কিনা একেবারে মেঘের উপর দিয়ে যায়! {এরোপ্লেন}

জার্মান বন্ধু: আরে মেঘের উপর দিয়ে যাওয়া এ যুগে আর নতুন কী? আমাদের দেশ এমন একটি মেশিন বানিয়েছে যেটা কিনা একদম সাগরের নীচে দিয়ে যায়! {সাবমেরিন}

ইন্ডিয়ান বন্ধু: তোদের মতো আমাদের দেশ অতটা উন্নত কিছু না করতে পারলেও তারা একটি মেশিন বানিয়েছে, যার এক দিক দিয়ে ডিম ঢুকিয়ে দিলে অপর দিক দিয়ে হাঁস-মুরগি বেরিয়ে আসে! {ইনকিউবেটর}

বাংলাদেশী বন্ধু: ওয়েল, তোরা তো ভাল করেই জানিস যে আমাদের দেশ খুবই গরীব! মেঘের উপর কিংবা সাগরের নীচে দিয়ে যাওয়ার মতো মেশিন তৈরীর কোনই সামর্থ্য নেই! আর আস্ত ডিমই বা পাবে কোথা থেকে? বললেই হলো নাকি! তবে তারা একটি রি-সায়ক্লিং মেশিন বানিয়েছে, যার এক দিক দিয়ে হোটেলের উচ্ছিষ্ট হাড়-হাড্ডি ঢুকিয়ে দিলে অপর দিক দিয়ে ভ্যাঁ-ভ্যাঁ, হাম্বা-হাম্বা, কক-কক করতে করতে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে এমনকি রিচার্ড ডকিন্সের মতো লেজবিহীন মানুষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসে! {ইভ্যলুশন মেশিন}

এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। নাস্তিকরা বারংবার ভয়াবহ রকমের একটি ভুল করে যাচ্ছেন। তারা 'বিশ্বাস'-কে মাপকাঠি ধরে নিয়ে মহা-উপসংহার টানছেন। যেমন:

১) ঘোড়ার ডিমে বিশ্বাস একটি অন্ধ বিশ্বাস; কিন্তু বাস্তবে ঘোড়ার ডিম বলে কিছু নেই!
২) ভূত-প্রেতে বিশ্বাস একটি অন্ধ বিশ্বাস; কিন্তু বাস্তবে ভূত্‌-প্রেত্‌ বলে কিছু নেই!
৩) ইউনিকর্নে বিশ্বাস একটি অন্ধ বিশ্বাস; কিন্তু বাস্তবে ইউনিকর্ন বলে কিছু নেই!
৪) রাক্ষস-খোক্কসে বিশ্বাস একটি অন্ধ বিশ্বাস; কিন্তু বাস্তবে রাক্ষস-খোক্কস বলে কিছু নেই!
n) এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাসও একটি অন্ধ বিশ্বাস; সুতরাং বাস্তবে স্রষ্টা বলেও কিছু নেই!

এবার তুই-ই বল, কোন যুক্তিবাদী মানুষ কি ১,২,৩,৪,… নাম্বার বিশ্বাসের সাথে n-নাম্বার বিশ্বাসকে গুলিয়ে ফেলবেন বলে মনে হয়? গুলিয়ে ফেলাটা কি যুক্তিবিদ্যার চরম সীমাবদ্ধতাকেই প্রকাশ করবে না? এ তো অ্যাপেলের সাথে অরেঞ্জের তুলনার চেয়েও বেশী ভয়াবহ। মূলার সাথে কলার তুলনাও মনে হয় অনেক বেশী যুক্তিসম্মত। একেবারে মাকাল ফলের সাথে স্ট্র্যবেরির তুলনা হয়ে গেল না!

নাস্তিকরা ভেবে বা না ভেবে পুনঃ পুনঃ একটি বুলি আউড়ায় এই বলে যে, আর দশটা বিশ্বাসের মতো এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাসও একটি অন্ধ বিশ্বাস। একটু-আধটু চিন্তা করা তো দূরে থাক, অন্ধ বিশ্বাস কাহাকে বলে তাহা যেমন জানার প্রয়োজন মনে করে না তেমনি আবার অন্যদেরকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করে না। মানুষ তাহলে কীভাবে বুঝবে অন্ধ বিশ্বাস কাহাকে বলে? নিম্নের পয়েন্টগুলো আগে বিবেচনা করে দ্যাখ:

- চোখের সামনেই অসীম একটি মহাশূন্য আছে (Where did the space come from?)। সেই মহাশূন্যের মধ্যে প্রায় অসীম পরিমাণ বস্তু ও শক্তি আছে (Where did all these energy and matter come from? Did they evolve from nothingness?)। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি ও গ্রহ-নক্ষত্র আছে। মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতি আছে। প্রত্যেক প্রজাতির মধ্যে আবার বিচিত্র রকমের ও বিচিত্র বর্ণের উপ-প্রজাতি আছে। বিচিত্র রকমের ও বিচিত্র বর্ণের উদ্ভিদ, খাদ্যশস্য, ও ফল-মূল আছে।

- এখন পর্যন্তও কেউ শূন্য থেকে কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি। কারো পক্ষে তা কখনো সম্ভবও হবে না। এখন পর্যন্তও কেউ নির্জীব বস্তু থেকে সামান্য একটি জীবও সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি।

- বিজ্ঞানীরা কিছু ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল ল্য’ আবিষ্কার করেছেন (Where did the physical laws come from? Did they also evolve, and how?)।

- কার্য-কারণ সূত্রের প্রচলিত একটি যুক্তি: (a) Whatever begins to exist has a cause of its existence; (b) The Natural Universe began to exist; (c) Therefore, the Natural Universe has a cause of its existence.

- বিগ-ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে। এই তত্ত্ব আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত বস্তুবাদী নাস্তিকরা এই মহাবিশ্বকে "চিরস্থায়ী" বলে বিশ্বাস করতেন। সাধারণ বোধ অনুযায়ী কোন কিছুর শুরু থাকা মানে তার পেছনে কারণও থাকতে হবে। কেউ কেউ হয়ত বলতে পারেন, কারণ ছাড়াও কিছু কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বিগ-ব্যাং যে কোন কারণ ছাড়াই ঘটেছে তার পক্ষে প্রমাণ কী? প্রকৃতিতে যেহেতু বেশীরভাগ ঘটনার পেছনেই কারণ থাকে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিগ-ব্যাং এর পেছনেও কারণ থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ হিসেবে কেউ আকস্মিক দুর্ঘটনাকেও ধরে নিতে পারেন কিন্তু সেটা কতটুকু সন্তোষজনক ও যুক্তিসম্মত হবে? এমনি এমনি কি কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! বিগ-ব্যাং এর অর্থ হচ্ছে মহা-বিস্ফোরণ (What exploded and what triggered the Big-Bang?)। কোন রকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কোন কিছু বিস্ফোরিত হয়ে চারিদিকে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে পুনরায় একত্রিত হয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি ও গ্রহ-নক্ষত্র সহ প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? কেন ও কোন্‌ শক্তিবলেই বা এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ করলো এবং এখনো করছে?

- বিজ্ঞান হচ্ছে মানুষেরই আবিষ্কৃত সীমিত একটি টুল। বিজ্ঞান নিজে থেকে যেমন কিছু করতে পারে না তেমনি আবার কিছু সৃষ্টিও করতে পারে না। বিজ্ঞানীরা এই টুলকে ব্যবহার করে সৃষ্টি জগতের কিছু মেকানিজমকে ব্যাখ্যা করেন মাত্র।

- নাস্তিকরা বলে থাকেন বিজ্ঞান নাকি ‘গড এর গ্যাপ’ পূরণ করছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধরণা। বিজ্ঞান মানুষের প্রচলিত বিশ্বাসের কিছু কিছু গ্যাপ পূরণ করতে পারে কিন্তু এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার গ্যাপ যে কীভাবে পূরণ করে সেটা একমাত্র তারাই ভাল জানেন! তবে প্রত্যেকটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মাধ্যমে কিছু অজানা তথ্য যেমন উন্মোচিত হয় তেমনি আবার অনেক নতুন নতুন গ্যাপেরও সৃষ্টি হয়। যত বড় বিজ্ঞানী, তাঁর কাছে কিন্তু ততই গ্যাপ বেশী। তবে যারা নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ প্রশ্নের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চায় তাদের কথা আলাদা। সত্যি বলতে কি, বিজ্ঞান কিন্তু নাস্তিকদের বিশ্বাসের গ্যাপই পূরণ করছে।

- এই মহাবিশ্বটা শুধুই আকস্মিক ও দৈব ঘটনার ফলাফল হলে অনেক প্রক্রিয়া বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে নির্ধারিতভাবে চলার কথা না। যেমন মহাবিশ্বের শুরু থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র নিজ নিজ অক্ষে সুবোধ বালকের মতো ঘুরছে! একটি শক্তি (?) বিস্ফোরিত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে পুনরায় একত্রিত হয়ে ছোট ছোট বল তৈরী করে নিজ নিজ অক্ষে শূন্যে ঘোরা শুরু করে দেয় নাকি? কেন ও কী এমন শক্তিবলে ঘুরছে যে একদমই থামছে না! সুতরাং খুব জোর দিয়েই বিষয়টিকে একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। অনুরূপভাবে, সৃষ্টির শুরু থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে এ পর্যন্ত একটি প্রাণীও বেঁচে থাকেনি। অতএব, খুব জোর দিয়েই বলা যায় যে মৃত্যু একটি ধ্রুব সত্য। কোন রকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে অনেক প্রক্রিয়া নির্ধারিতভাবে চলার আদৌ কোন সম্ভাবনা আছে কি?

- বিজ্ঞানীদের মতে লাইফ ফর্ম করার জন্য নাকি ‘বিশেষ’ একটি পরিবেশের দরকার। অর্থাৎ যে কোন পরিবেশে লাইফ ফর্ম করতে পারে না। আজ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে একটি বিশেষ পরিবেশে নাকি লাইফ ফর্ম করেছে। তার মানে বিষয়টি নির্ধারিত। অনির্ধারিত হলে যে কোন পরিবেশে ও যে কোন সময় লাইফ ফর্ম করার কথা।

- আজ থেকে কয়েক দশক আগ পর্যন্তও ডিএনএ'র গঠন প্রণালী সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের তেমন কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু আজ ডিএনএ'র অত্যন্ত জটিল গঠন প্রণালী ও জীবের আরো কিছু তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিষয়টিকে স্রেফ অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির কারসাজি বলে যুক্তিবাদী মন মেনে নিতে পারে না।

- মানুষের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় কেন ও কীভাবে ইভল্ভ করলো? ডিএনএ বৃদ্ধির সাথে ইন্দ্রিয় বৃদ্ধির সম্পর্কই বা কী? অত্যন্ত পরিষ্কার যে, ডিএনএ তথ্য বহনকারী একটি চালক হিসেবে কাজ করে। প্রত্যেক মানুষের ডিএনএ ইউনিক অর্থাৎ কারো সাথে কারো মিল নেই। সত্যিই এ এক বিস্ময়! তা-ই যদি হয় তাহলে এটি নিঃসন্দেহে একটি নির্ধারিত বিষয়। অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির পক্ষে এই ধরণের ইউনিক ও নির্ধারিত নির্বাচন সত্যিই হাস্যকর। সবকিছুই বোবা-কালা-অন্ধ প্রকৃতির কারসাজি হলে এই অসাধারণ ইউনিকনেস বজায় থাকার কথা না। মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্টের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। শুধু তা-ই নয়, সবকিছুই বোবা-কালা-অন্ধ প্রকৃতির কাজ হলে মাঝে-মধ্যে মানুষের পেট থেকে বানর, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির বাচ্চা অথবা বানর, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির পেট থেকে মানুষের বাচ্চা বের হয়ে আসার কথা। তা কিন্তু হচ্ছে না। অতএব, এগুলোর পেছনে একটি স্বজ্ঞাত নিয়ন্ত্রিত শক্তি যে কাজ করছে তাতে কোনই সন্দেহ নেই।

- কেউ কি কখনো শুনেছেন আম গাছে হঠাৎ করে জাম ধরেছে? কচু গাছে লিচু? অ্যাপেল গাছে কাঁঠাল? কুমড়া গাছে জাম্বুরা? ঝাউ গাছে লাউ? পান গাছে ধান? মূলা গাছে কলা? এ'রকম কিছু কখনোই শোনা বা দেখা যায় না। আজ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে চড়ুই পাখি যে'রকম বাসা বানাতো, আজও ঠিক সে'রকমই বাসা বানাচ্ছে! কোন উন্নতি যেমন নেই তেমনি আবার নেই কোন অবনতি। আজ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পশু-পাখিদের যে কাজ ছিল, আজও তারা ঠিক একই কাজ করছে। তার মানে এগুলো সবই আগে থেকেই নির্ধারিত। আর নির্ধারিত কোন বিষয়ে নিয়ন্ত্রিত শক্তির প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক।

- জীবজগতের দিকে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টি দিলে তাদের শারীরিক গঠনের মধ্যে একটা সমরূপতা লক্ষ্য করা যায়। সবকিছুই অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির কারসাজি হলে দীর্ঘদিন ধরে এই সমরূপতা বজায় থাকার কথা না। কিছু কিছু প্রাণীর লেজের মাথায় এক গোছা কেশ কেন ও কীভাবে ইভল্ভ (!) করলো, যেখানে অন্যান্য প্রাণীদের নেই! পশু-পাখিদের শিং ও জিহবা কেন ও কীভাবে ইভল্ভ করলো। হাতির লম্বা শুঁড় কেন ও কীভাবে ইভল্ভ করলো। একই পশু-পাখির গায়ে একাধিক রং-ই বা কেন ও কীভাবে ইভল্ভ করলো। প্রত্যেকটি প্রাণীর জন্মের পর ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তাদের গতি-প্রকৃতি, জীবন-যাপন প্রণালী, ও বুদ্ধিমত্তার দিকে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টি দিলেও মনে হবে যেন তারা কোন স্বজ্ঞাত শক্তি দ্বারা পরিচালিত এবং কোন-না-কোন ভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত। এগুলোকে শুধুই অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির কারসাজি বলে বিশ্বাস করাটাই আসলে অন্ধ বিশ্বাস।

- ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেকটি জাতির মধ্যে যদি সমীক্ষা চালানো হয় তাহলে দেখা যাবে নারীদের তুলনায় পুরুষরা উচ্চতায় বেশী এবং সেই সাথে বেশী শক্তিশালী ও সাহসী। এমনকি বেশী উচ্চতার নারীরাও পুরুষদের তুলনায় কম শক্তিশালী ও সাহসী হয়। বিষয়টাকে পূর্ব নির্ধারিত মনে হয় না? বিবর্তনবাদ তত্ত্ব এ বিষয়ে কী বলে? নাস্তিকদের অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতিও নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করে নাকি!

- পৃথিবীতে জীবজগতের বিকাশের পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যও ইভল্ভ করেছে। অন্যান্য গ্রহে যেমন জীব-জন্তু নেই তেমনি আবার কোন খাদ্যদ্রব্যও নেই! সুতরাং স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, জীবজগৎ ও খাদ্যদ্রব্য একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিষয়টাকে সু-পরিকল্পিত বলে মনে হয় না? প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ কেন ও কীভাবে ইভল্ভ করলো? কোন পাগলেও কি বিশ্বাস করবে যে মিলিয়ন মিলিয়ন ফল-মূল ও শস্য-উদ্ভিদ একটি জীব থেকে ইভল্ভ (!) করেছে! কোন গাধাও কি বিশ্বাস করবে যে তিল গাছ থেকে তাল গাছ ইভল্ভ করেছে! ঘাস থেকে বট গাছ! বিবর্তনবাদের আলোকে অ্যাপেল ও কাঁঠালের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা? আখের সাথে তরমুজের-ই বা কী সম্পর্ক, যদিও দুটোতেই পানি আছে! স্রেফ অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির মাধ্যমে এগুলো ইভল্ভ করা আদৌ কি সম্ভব?

- নাস্তিক ডারউনবাদীরা ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ নামে একটি অস্পষ্ট পারিভাষিক শব্দের উপর জোর দিয়ে আসছেন। তাদের মতে প্রকৃতি নাকি বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন এবং সামনে-পেছনে কোন কিছু দেখে না! কিন্তু প্রকৃতি যে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন এবং সামনে-পেছনে দেখে কি-না – সেটা তারা জানলেন কীভাবে! উদাহরণস্বরূপ, ছাগলের আগের ও পরের ধাপ নির্ধারিত নির্বাচন নাকি অনির্ধারিত নির্বাচন – সেটা তারা কীভাবে নিশ্চিত হলেন! এ-কি স্রেফ অন্ধ বিশ্বাস নয়!

- মানুষের ব্রেন কেন ও কীভাবে ইভল্ভ করলো যে, সেখানে আবার অসংখ্য তথ্য স্টোর করে রাখা যায়। অনির্ধারিতভাবে ইভল্ভ করে মানুষ ও পশু-পাখি আবার কীভাবে নির্ধারিতভাবে কাজ করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্তও নিতে পারে!

- নাস্তিক ডারউনবাদীরা নিজেরা বুদ্ধিমান হয়ে বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্বকে আবার অস্বীকার করে আসছেন। অর্থাৎ তারা বলতে চাইছেন যে, এই মহাবিশ্বের সবকিছুই বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির মাধ্যমে ইভল্ভ করেছে এবং এর মধ্যে কোনরকম বুদ্ধিমত্তা কাজ করেনি। তবে বুদ্ধিমত্তা কাজ না করার স্বপক্ষেও কিন্তু কোন প্রমাণ নাই! এটিও একটি অন্ধ বিশ্বাস। বুদ্ধিমত্তাকে অস্বীকার করার পেছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে স্রষ্টায় অবিশ্বাস। স্রষ্টাকে এড়াতে যেয়ে এই মহাবিশ্বের সবকিছুকেই বুদ্ধিমত্তাশূন্য ও অন্ধ বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে! ভাল কথা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তারা নিজেদেরকে আবার বুদ্ধিমত্তাশূন্য ও অন্ধ মেনে নিতেও নারাজ! তারা একই সাথে গাছেরও খাইতে চায় আবার তলারও কুড়াইতে চায়। তারা অদৃশ্য সবকিছুকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেও নিজেদের বুদ্ধিমত্তায় এসে হঠাৎ করে থেমে যায়! এক্ষেত্রে নাকি ‘আলাদা’ ব্যাখ্যার দরকার! তার মানে কোন এক জায়গাতে থেমে যেতে হয় তাহলে!

- ডঃ রিচার্ড ডকিন্স তার না-বিশ্বাসকে সমর্থন করার জন্য বিবর্তনবাদকে যেহেতু বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির কারসাজি বলেছেন সেহেতু অনেকেই তার কথাকে আবার অন্ধভাবে বিশ্বাস করে! সবচেয়ে হাস্যকর যেটা মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে, ডঃ ডকিন্স চোখ বন্ধ করে নিজে মাঙ্কি সেজে বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের কোন এক সম্ভাবনাকে কীবোর্ডের এক ঠেলায় মাত্র কয়েক বছরে নিয়ে আসতে চান! অর্থাৎ ধরা যাক, উনি মাঙ্কি সেজে সেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটক হুবহু লিখতে চান এবং তাতে একশত ট্রিলিয়ন বছর লাগবে। প্রকৃতপক্ষে আদৌ সম্ভব না। যাহোক, উনি একটি প্রোগ্র্যাম লিখেছেন যেটার কাজ হচ্ছে হ্যামলেট নাটক অনুযায়ী অর্থবহ একটি বর্ণ বা শব্দ টাইপ হওয়ার সাথে সাথে সেটা আলাদা করে স্টোর করে রাখা। মজার ব্যাপার হচ্ছে একবারও কিন্তু ভুল হওয়া চলবে না। মাত্র একবার ভুল হলেই পুরো প্রক্রিয়া আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ডঃ ডকিন্স যে প্রশ্নটা নিজেকে করছেন না সেটা হচ্ছে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতি এরকম প্রোগ্র্যাম কোথা থেকে পায়, কীভাবে যথাযথভাবে নির্বাচন করে, এবং কোথায়-ই বা তা স্টোর করে রাখে! উনি নিজে মাঙ্কি সেজে কীবোর্ডে দুই ঠেলা দিয়ে পুরো মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করতে চান! বাস্তব মাঙ্কি থাকতে নিজেকে মাঙ্কি সাজতে হবে কেন বাবা! একটি মাঙ্কি ধরে নিয়ে এসে কম্পুটারের সামনে বসিয়ে দিলেই তো ল্যাটা চুকে যায়! উনি আসলে বৃত্তাকার যুক্তির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন। স্রষ্টাকে আগেই ‘নাই’ ধরে নিয়ে নিজে মাঙ্কি সেজে কম্পুটারের কীবোর্ড ঠেলে আমজনতার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করছেন। যখনই কেউ বিভিন্ন শর্ত দিয়ে প্রোগ্র্যাম লিখবেন তখন সেটা সেই শর্তগুলোর মধ্যে নির্ধারিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ প্রোগ্র্যামারের ঈশারা-ইঙ্গিত অনুযায়ীই প্রোগ্র্যাম চলবে। ডঃ ডকিন্স একদিকে প্রকৃতিকে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন বলছেন অন্যদিকে আবার নির্ধারিত প্রোগ্র্যাম দ্বারা সেই বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার চেষ্টা করছেন! হয় তিনি নিজেই নিজেকে বোকা বানাচ্ছেন অথবা আমজনতাকে বোকা বানানোর চেষ্টায় আছেন।

- ঘুমকে কার্যত মৃত অবস্থা ধরা হয়। এই যে একটি নিদ্রিষ্ট সময় ঘুমের পর মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃ পুনঃ চেতন পায়, সেটা কি কোনই সংকেত বহন করে না? স্বপ্নকেও রহস্যময় কিছু একটা সংকেত বলেই মনে হয়। কার্যত মৃত অবস্থায় দূর-দূরান্তের সিনারিও কীভাবে দেখা সম্ভব। কীভাবে চোখের পলকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া সম্ভব। কথাবার্তা এবং বিভিন্ন ঘটনাই বা কীভাবে স্মরণ রাখা সম্ভব!

- একটি শিশু মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় (মায়ের পেটকে ধরা যাক প্রথম মহাবিশ্ব) কখনো কি কল্পনা করতে পারে অতি সামান্য একটু জায়গার বাইরে বিশাল এক মহাবিশ্ব অপেক্ষা করছে! যারা ইতোমধ্যে মায়ের অন্ধকার পেট থেকে বেরিয়ে আলোকিত দ্বিতীয় মহাবিশ্বে পদার্পন করেছে তাদের কাছে প্রথম মহাবিশ্ব (মায়ের পেট) একই সাথে একটি তথ্য ও বাস্তবতা। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে কেউ যদি আরো অনেক বিস্ময়কর তৃতীয় একটি মহাবিশ্ব অনুমান করে তবে সেই অনুমান অযৌক্তিক বা অন্ধ হবে কেন? কারণ এই অনুমান তো একটি বাস্তব তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হচ্ছে।

- বাস্তব জগতের অনেক কিছুই সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না – যেমন ন্যায়বিচার। তবে যারা ন্যায়বিচার এড়িয়ে যেতে চায় তাদের কথা আলাদা। ধরা যাক, একজন খুনী এক হাজার মানুষকে হত্যা করলো। এই হত্যার ন্যায়বিচার এই পৃথিবীতে কীভাবে করা সম্ভব? বাস্তব জগতে সেই খুনীকে বড়জোর একবার মাত্র হত্যা করা সম্ভব। তাহলেই কি ন্যায়বিচার হয়ে যাবে? তাছাড়া মৃত মানুষদের জীবিত করাও তো অসম্ভব। নাস্তিকরা কি এই প্রশ্নের যৌক্তিক ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারবেন? প্রচলিত নিয়মে যেটা করা হয় সেটা হচ্ছে এক ধরণের ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচার নয়। আর খুনীকে যদি চিহ্নিত করা না যায় সেক্ষেত্রেই বা কী হবে। এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যার যৌক্তিক ও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা এই জগতে দেয়া অসম্ভব। নাস্তিকরা আসলে ন্যায়বিচার ও অপরাধের শাস্তি এড়িয়ে যেতে চায়। চুরি-ডাকাতি-হত্যা-ধর্ষণ করে অপরাধীর শাস্তি হবে না – এ আবার কেমন মামার বাড়ির আবদার!

- স্যার আইজ্যাক নিউটনের একটি উক্তি: The most beautiful system of the sun, planets, and comets, could only proceed from the counsel and dominion on an intelligent and powerful Being.

- স্যার ফ্র্যানসিস ব্যাকন বলেন: It is true, that a little philosophy inclineth man’s mind to atheism, but depth in philosophy bringeth men’s minds about to religion; for while the mind of man looketh upon second causes scattered, it may sometimes rest in them, and go no further; but when it beholdeth the chain of them confederate, and linked together, it must needs fly to Providence and Deity.

- আকস্মিকভাবে লাইফ ফর্ম করার ব্যাপারে রজার পেনরোজ নামের এক বৃটিশ ম্যাথেমেটিশিয়ান বলেন: This now tells how precise the Creator’s aim must have been, namely to an accuracy of one part in 10^10^123. This is an extraordinary figure. One could not possibly even write the number down in full in the ordinary denary notation: it would be 1 followed by 10^123 successive 0’s. Even if we were to write a 0 on each separate proton and on each separate neutron in the entire universe- and we could throw in all the other particles for good measure- we should fall far short of writing down the figure needed.

- বিখ্যাত জ্যোতির্বেত্তা কার্ল স্যাগান বলেন: An [dogmatic] atheist is someone who is certain that God does not exist, someone who has compelling evidence against the existence of God. I know of no such compelling evidence. Because God can be relegated to remote times and places and to ultimate causes, we would have to know a great deal more about the universe than we do now to be sure that no such God exists.

- বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো, ও অ্যারিস্টটলও স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিলেন। যুগে যুগে কিছু মহা-মানব স্রষ্টার ছোঁয়া উপলব্ধি করার দাবী করেছেন। তাঁদের মধ্যে সবাই মিথ্যাবাদী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এক্ষেত্রে কিন্তু একজন সত্যবাদী হওয়াই যথেষ্ট।

- জন্মের পূর্বে আমরা কোথা ছিলাম আর মৃত্যুর পরই বা কোথায় যাবো – বিষয় দুটি এখন পর্যন্তও রহস্যপূর্ণই রয়ে গেছে। জীবিত ও মৃত মানুষের মধ্যে যে কিছু একটা পার্থক্য আছে সেটা সবাই এক-বাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য। গণিতের সমীকরণের সাহায্যে পার্থক্যটাকে এভাবে লিখা যেতে পারে: জীবিত মানুষ = মৃত মানুষ (জড় বস্তু) + X. যারা বিশ্বাস করে মৃত্যুর পর জড় বস্তু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, তাদের ক্ষেত্রে X-এর মান হবে শূন্য। অর্থাৎ তাদের কাছে জীবিত ও মৃত মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই! মৃত্যুর সাথে সাথে X-এর মান শূন্য হয়ে যাওয়া কি সম্ভব? শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে কোন কিছুরই ধ্বংস বা বিনাশ নেই, শুধু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয় মাত্র। ফলে জড় বস্তু না হয় জৈব সারে রূপান্তরিত হলো, কিন্তু X-এর কী হবে। X তো কোন বস্তু নয় যে সেটাও জৈব সারে রূপান্তরিত হবে। X তাহলে কোথায় যাবে।

- স্রষ্টাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নাস্তিকরা অত্যন্ত যৌক্তিক একটি প্রশ্নকে কৌশলে ‘নাই’ করে দিতে চায়। ধরা যাক, একজন বিজ্ঞানী অজানা এক গ্রহে যেয়ে একটি মেশিন দেখতে পেলেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞানীর মনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উদয় হবে:

১) মেশিনটির নির্মাণকারী কে?

২) মেশিনটি কীভাবে তৈরী করা হয়েছে এবং কীভাবে কাজ করে?

নাস্তিকরা বিজ্ঞানের দোহায় দিয়ে প্রথম প্রশ্নকে (যেটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ) বেমালুম ‘নাই’ করে দিতে চায়। বিজ্ঞানের বাইরে কোন প্রশ্নে না যাওয়া মানে কিন্তু বিজ্ঞানকেই পরোক্ষভাবে "গড" হিসেবে মেনে নেয়া। ধরা যাক, একজন বিজ্ঞানী একটি রোবট ও একটি মেশিন তৈরী করলেন। এবার রোবট-টা যদি বিজ্ঞানী থেকে সরাসরি কোন সাহায্য না নিয়েও মেশিনের কার্যপ্রণালী কোনভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয় তাহলেই কি সেই বিজ্ঞানীর অস্তিত্ব ‘নাই’ হয়ে যাবে? তাহলেই কি রোবট ও মেশিনের উপর বিজ্ঞানীর অবদান হাওয়া হয়ে যাবে? তা কিন্তু মোটেও নয়। কোন একটি মেশিনের কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করতে পারা মানে এই নয় যে, সেই মেশিনের কোন নির্মাণকারী নেই; যদিও নাস্তিকরা এমনটাই বলার চেষ্টা করেন।

- বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি নিয়ে অনেকে স্রষ্টার দক্ষতাকেও সমালোচনা করে থাকেন। ভাবখানা যেন এমন: আমরা ইতোমধ্যে অনেক কিছুই সৃষ্টি করে ফেলেছি! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন না। এই সমালোচনা কিন্তু তাদের দিকেই বুমেরাং হওয়ার কথা। স্রষ্টা হয়ত চাননি, তাই অন্যান্য গ্রহে প্রাণের সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বিষয়টি বোবা-কালা-অন্ধ প্রকৃতির ফলাফল হলে অন্যান্য গ্রহেও প্রাণ অথবা উদ্ভিদ সৃষ্টি হওয়ার কথা। তাছাড়া এই মহাবিশ্বের মতো আরো কতগুলো মহাবিশ্ব যে আছে, কে জানে! ফলে অন্যান্য মহাবিশ্বেও তো প্রাণ থাকতে পারে। আমরা যে মহাবিশ্ব নিয়ে ভাবছি সেটি হয়ত স্রষ্টার কাছে একটি ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো। অধিকন্তু, বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা মানে প্রমাণ হয় না যে এই মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা নাই।

- নিউটন ও আইনস্টাইন যথাক্রমে গতিসূত্র ও আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব আবিষ্কার করলেও মানবতার উপর সেগুলোর অবদান তাঁদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেননি। এমনকি অন্যান্য মানুষ তাঁদের আবিষ্কারের সুফল ভোগ করলেও তাঁরা নিজেরাই কোন সুফল ভোগ করে যেতে পারেননি। মৃত্যুর সাথে সাথে সবকিছুর অবসান হলে নিউটন ও আইনস্টাইনের কাছে গতিসূত্র ও আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের আর কোনই মূল্য নেই! তাঁদের আবিষ্কার মানবতার কোন উপকার বা অপকারে আসছে কিনা – সেটাও তাঁরা আর কোন কালেই জানতে পারবেন না! এমনও তো হতে পারতো যে, আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব আবিষ্কারের পরের দিনই পৃথিবীটা কোন কারণে ধ্বংস হয়ে গেল। সেক্ষেত্রে আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের কী মূল্য থাকতো! কিন্তু এমন যদি হয় যে, তাঁরা অন্য কোন মাত্রা থেকে সবকিছু জানতে পারছেন বা কোন একদিন জানবেন – তাহলেই কেবল তাঁদের অবদান স্বার্থক বলে মনে হয়।

- আগামীকালই যদি কোন এক দৈব দূর্বিপাকে পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যায় সেক্ষেত্রে জ্ঞান-বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদির কী মূল্য থাকবে! তাহলে কীসের আশায়-নেশায় মানুষ ছুটছে! সবই কি তাহলে পার্থিব মায়া! মানুষের দর্শন কি এতটাই সংকীর্ণ! মানুষের একটি সুদূর-প্রসারী ভিশন থাকাটা অযৌক্তিক হবে কেন? সুতরাং এমন যদি হয় যে, এই মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে গেলেও এমন একজন আছেন যিনি আবারো সবকিছুকে নতুন করে তৈরী করতে সক্ষম হবেন – তাহলেই কেবল সবকিছু যথাযথভাবে অর্থবহ মনে হয়।

- অপ্রমাণিত কোন কিছুকে ‘আছে’ ধরে নিয়ে তার সন্ধান করাটাই হচ্ছে যুক্তিসম্মত পন্থা। কিন্তু আগেই ‘নাই’ ধরে নিয়ে আবার ‘নাই’ প্রমাণ করতে যাওয়াটা শুধু অযৌক্তিক-ই নয় সেই সাথে চরম বোকামীও বটে। মজার ব্যাপার হচ্ছে নাস্তিকরা স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস করেও যুক্তিতর্ক দিয়ে আবার তার অনস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেন! তার মানে হয় স্রষ্টা তাদের পিছু ছাড়ছেন না অথবা তারাই স্রষ্টার পিছু ছাড়তে পারছেন না! এ-কি এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা নয়? মানুষ কিন্তু ঘোড়ার ডিমে অবিশ্বাস করে আবার তার অনস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করে না! প্রকৃতপক্ষে মানুষ যেমন কখনোই ঘোড়ার ডিমের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করে না তেমনি আবার কোনদিনই কেউ ঘোড়ার ডিমের অনস্তিত্বও প্রমাণ করার চেষ্টা করেনি। এখানেই স্রষ্টা ও ঘোড়ার ডিমের মধ্যে তফাৎ, যেটা বোঝার মতো জিনিস নাস্তিকদের মাথায় নেই।

- বেঁচে থাকা অবস্থায় একজন মানুষ মৃত্যুর পর মাত্র দুটি অপশন উপলব্ধি করতে সক্ষম: স্রষ্টা ও মহাশূন্যতা। যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ প্রথম অপশনকেই বেছে নেয়ার কথা। এখানে ভয়-ভীতি বা লোভ-লালসার কারণ খুঁজতে যাওয়াটা কিন্তু মূর্খতারই নামান্তর। তার কারণ হচ্ছে এটিই একমাত্র যুক্তিসম্মত অপশন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অপশনকে বেছে নেয়াটাই কিন্তু চরম নির্বুদ্ধিতার মধ্যে পড়ে।

এ'রকম আরো অনেক পয়েন্ট তুলে ধরা সম্ভব। এই মহাবিশ্ব সহ সবকিছুকে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রকৃতির ফলাফল বলে বিশ্বাস করাটাই আসলে স্রেফ অন্ধ বিশ্বাস। উপরোল্লেখিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে স্রষ্টায় বিশ্বাসকেই অনেক বেশী যৌক্তিক মনে হয়। এই বিশ্বাস অবশেষে ভুল প্রমাণিতও হতে পারে, যদিও প্রমাণ করা অসম্ভব, কিন্তু এ'রকম একটি বিশ্বাসকে কি কোন যুক্তিবাদী মানুষ "অন্ধ বিশ্বাস" বলতে পারে? এ'রকম একটি বিশ্বাসকে কি ঘোড়ার ডিমের সাথে তুলনা করা যায়? বরঞ্চ যারা এমন উদ্ভট কথাবার্তা বলে তারাই কি প্রকৃতপক্ষে অযুক্তিবাদী ও অন্ধ নয়? ঘোড়ার ডিম, ভূত-প্রেত, রাক্ষস-খোক্কস, ইউনিকর্ন ইত্যাদি নিয়ে তো জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা কখনো মাথা ঘামান না। নাস্তিকরাও কখনো এগুলোর অনস্তিত্ব প্রমাণের জন্য উঠে-পড়ে লাগেনি। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এগুলোর অস্তিত্ব বা অনস্তিত্বের সাথে মানুষের কী-ই বা আসে যায়!

দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৬
৩০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×