somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ পদ্ম ফুটেছে

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কি আশ্চর্য্য, রাত সাড়ে এগারটা বাজতে না বাজতেই লোকটা শুভ রাত্রী মেসেজ দিল। যে লোক রাত ২-৩টা পর্যন্ত জেগে থাকে সে আজ সাড়ে এগারটায় শুভ রাত্রী জানাচ্ছে। কিছুইকি মনে নেই তার? মনটা খারাপ হয়ে যায় পদ্মর। মন খারাপ নিয়েই তাকে রিপ্লাই করে গুড নাইট লিখে। পদ্ম অপেক্ষা করে,হয়ত তাকে চমকে দেয়ার জন্য এমনটা করছে,অথবা রাতে হয়ত মনে পরতে পারে। জানালার পাশে বসে পদ্ম অপেক্ষা করতে থাকে। চারপাশ নিরব হতে থাকে, একে একে বাইরের সব আলো নিভে যেতে থাকে। নিরব,নিস্তব্ধ পরিবেশে পদ্মর অপেক্ষার পালা শেষ হয় না।

রাত ১২টা বাজার সাথে সাথেই সকল নিস্তব্ধতা ভেঙ েটুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। একে একে শুভেচ্ছা মেসেজে ভরে উঠে পদ্মর সেলফোনটি।কেউ কেউ কল করে জন্মদিনের গানটি গেয়েও শুনাচ্ছে। ফেইসবুকের ওয়ালটা বন্ধু বান্ধব আত্বিয় স্বজনেরা লিখে লিখে ভড়িয়ে তুল্ল। দেখলে মনে হবে যেন কোন নির্বাচনি এলাকার দেয়াল। পদ্মর সুভাকাংখির সংখ্যা অনেক। আর থাকবেই না কেন? পদ্ম খুব মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। খুব লক্ষিও বলা যায়। খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে। আর এজন্যেই তাকে সবাই এত ভালবাসে।

সবার এত এত শুভেচ্ছা বার্তাতেও পদ্মর যেন মন ভরছে না। কি যেন একটা নেই,কিসের যেন একটা অভাব বোধ কাজ করছে তার ভেতর। শুধুই কি সেই লোকটার শুভেচ্ছার জন্য? কি অদ্ভুত একটা লোক। এই তো কিছুদিন আগেই তার জন্মদিন গেল, তখন পদ্ম'তো ভুল করেনি তাকে শুভেচ্ছা জানাতে।ঠিক ১২টায় তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। আর আজ তার জন্মদিনের কথা বেমালুম ভুলে গেল?
ইকটু ইকটু করে রাত বারতে থাকে। শুভেচ্ছা বার্তা আসাও শেষ হয়ে যায় এক সময়। অপেক্ষা করতে করতে কখন যে পদ্ম ঘুমিয়ে যায় সে নিজেও টের পায়নি।

সকালে ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই ঘুম জড়ানো চোখে পদ্ম মোবাইলটা হাতে নেয়। একটা মেসেজ এসেছে দেখা যাচ্ছে। চোখ ডলতে ডলতে মেসেজটি ওপেন করে পদ্ম। হুম সেই লোকটা মেসেজ,কিন্তু শুভ জন্মদিনের জায়গায় শুভ সকাল লেখা। নাহ! লোকটা মনে হয় আসলেই ভুলে গেছে! মনটা খারাপ করে পদ্ম তাকে শুভ সকাল লিখে পাঠিয়ে দেয়।

লোকটা সারাদিন আর কোন মেসেজ দিল না। পদ্ম সারাটাদিনই অপেক্ষা করেছে। সকাল গিয়ে দুপুর হল তবু কোন খবর নেই লোকটার। অভিমান করে পদ্মও একটাবার তাকে খোজ করেনি। যে লোকটা সারাদিন তার সাথে গল্প করতো সে আজ একেবারেই নিঃশ্চুপ! প্রতিদিন কম করে হলেও তার সাথে ২০০-৩০০ মেসেজ আদান প্রদান করা হত। আর আজ একটা বিষেশ দিনে তার কোন খবর নেই। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সূর্য্যটা ডুবি ডুবি করছে, আকাশ তার রুপ ইকটু ইকটু করে বদলে নিচ্ছে। মাগরিবের আজান দেয়া শুরু হয়। ঠিক সেই সময়ে লোকটার মেসেজ এল।
>> BG??
নিরস উত্তর দেয় পদ্ম >> Naa.
আবার মেসেজ আসে >> Cll rcv korte parba?
লোকটা সাধারণত কল করার আগে এভাবে জেনে নেয় পদ্মর কাছ থেকে। কেননা পদ্মর ভাইয়ারা অথবা বাবা থাকলে পদ্ম কল রিসিভ করে না। শুধু মাত্র তার সহপাঠিদের কল রিসিভ করে। আর এই লোকটার কল'তো রিসিভ করাটা আরও কঠিন। কেননা পদ্ম এখনও আপনি থেকে তুমিতে আসতে পারেনি। ফোনে কাউকে আপনি করে কথা বলতে গেলে হয়ত তার ভাইয়ারা প্রশ্ন করতে পারে।
পদ্ম ভাবল সারাদিন পার করে লোকটার হয়ত এখন মনে পড়েছে,এখন হয়ত হাজারটা অজুহাত দেখাবে, সরি বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। মুখ বাকা করে পদ্ম মেসেজে শুধু ok লিখে পাঠিয়ে দেয়।

রিং হচ্ছে মোবাইলে,মোবাইল সাইলেন্ট মুডে ছিল। আলতো করে ফোনটা হাতে নেয় পদ্ম। রিসিভ করে কানে দিয়ে হেলো বলতেই লোকটা বলা শুরু করে।
-জানো আজ একটা মজার ঘটনা ঘটেছে,তোমাকে ঘটনাটা শুনাতেই কল করলাম।
পদ্ম দীর্ঘস্বাস ছাড়ে, কেননা লোকটার এখনও মনে পড়েনি তার জন্মদিনের কথা। একটা মজার ঘটনা শুনাতেই কল করেছে শুধু। লোকটা বলতে থাকে..
-আমার বাড়ির পাশে একটা দীঘি আছে, দীঘির পানি খুব সচ্ছ,কোন ময়লা নেই, শেওলাও নেই। পানিতে তাকালে নিজের মুখ দেখা যায়।আজ সকালে এসে দেখি পুব আকাশের সুর্য্যের হলদে রোদ পড়েছে দীঘির জলে। হলদে রোদের কারণে পানিগুলো স্বর্ণের মত ঝিকিমিকি করছে। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে যেন পুরো দীঘিটা স্বর্ণ দিয়ে বাধাই করা। দীঘিটার ঠিক মাঝখানটায় একটা ফুলের গাছ আছে। গাছে একটা কলিও এসেছে,মনে হচ্ছিল ফুলটা আজকেই ফুটবে। আমার হঠাৎ ইচ্ছে হল ফুল ফোটা দেখব। দীঘির পাড়ে বসে গেলাম ফুল ফোটা দেখার জন্য। ভেবেছিলাম দুই এক ঘন্টার মধ্যেই ফুলটা ফুটবে। কিন্তু না,ইকটু ইকটু করে সময় বাড়তে লাগলো,ঘড়ির কাটা ঘুড়তে লাগল,সূর্য্যটা গড়িয়ে মাথার উপর উঠতে লাগল ফুলটাও ইকটু ইকটু করে ফুটতে লাগল। এভাবে সকাল গড়িয়ে দুপুর হল,দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল,ঘড়ির কাটা ঘুড়তে লাগল,সূর্য্যটাও গড়াতে লাগল আর ফুলটাও ফুটতে লাগল। বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নেমে এল সূর্য্যটা গড়াতে গড়াতে যখন ডুবে গেল ঠিক সেই মুহুর্তে দেখি ফুলটা ফুটে গেছে। যেন হাত পা মেলে ফুলটা হাসি মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কি যে ভাল লাগছে এখন...
ফুলটার নাম কি জানো?
পদ্ম ফুল,শুভ জন্মদিন পদ্ম ফুল। আচ্ছা আমি কি সবার মত বোকা যে যার জন্ম সন্ধ্যায় তাকে রাত ১২টায় শুভ জন্মদিন বলে শুভেচ্ছা জানাবো? উফফফ, সেই রাত থেকে অপেক্ষা করছি এই মুহুর্তটার জন্য। সেই রাত থেকে শুধু একের পর এক অভিনয় করে যাচ্ছি। শুভ রাত্রী,শুভ সকাল আর সারাদিন চুপ করে থাকাটা কেবলই এই মুহুর্তটার জন্য!!

পদ্মর খুশিতে চোখে জল চলে আসে। পদ্ম খুব শক্ত মেয়ে,অনেক দুঃখেও তার চোখে জল আসে না। কিন্তু এই মুহুর্তে সে চোখের জল আটকাতে পারছে না। আনন্দ অশ্রু আটকে রাখা খুব কঠিন।লোকটাকে উত্তরে কিছু বলতেও পারছে না। গলা যেন বসে আছে

এরপর লোকটা একে একে আরও অনেক মজার মজার গল্প শুনাতে লাগলো। আমরা না হয় নাইবা শুনলাম সেগুলো। ওদেরকে ওদের মত করেই গল্পে মেতে থাকতে দেই...।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×