স্বার্থপর ও স্বার্থহীন, উদার ধৈর্যশীল মেয়ে চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় রোজা। যেসকল মেয়েরা রোজা রাখেন না বা রাখতে পারেন না, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, মেয়েটা স্বার্থপর এবং নীচু মানসিকতার। পক্ষান্তরে যারা যত কষ্টই হোক রোজা ছাড়েন না বিশেষ কোন কারণ ব্যতিরেকে তারাই ধৈর্যশীলা এবং পারিবারিক জীবনে বেশী সুখী এবং স্বার্থক।
আল্লাহ বলেন,
"হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারা-২:১৮৩)"
রোজা একটি আত্ত্বিক সাধনা, যা শুধু শরীরের জন্য নয় মনের জন্যও বিশেষ উপকারী। একমাত্র রোজার দ্বারাই আমরা খুব সহজে নিজের অভ্যন্তরীন ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি দুর করে ভিতর ও বাহিরে নির্মল হতে পারি। রমজানের উপকারীতা বলে শেষ করার নয়। যতযাই হোক- ধৈর্য, কষ্ট সহ্য করে রোজা পালন করতে পারলেই সর্বাধিক কল্যান রয়েছে।
আল্লাহ নিজে বলেন,
"রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে। এটা যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া (একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান) করা। যদি কেউ স্ব:স্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে। (সূরা বাকারা-২:১৮৪)"
(নোট: এখানে ইচ্ছাকৃত সৎকাজ অধিক কল্যানকর আর রোজা তারচেয়েও অধিকতর কল্যানকর বলেছেন।)
একজন মেয়ের জন্য খুবই সহজ বেহেস্ত যাওয়া বা সফলকাম হওয়া। মাত্র কয়েকটা কাজ যদি তারা সম্পন্ন করতে পারে আজীবন। এপ্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
"কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন, রমজান মাসে পূর্ণরূপে রোজা পালন করেন, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত আব্রু রক্ষা করে চলেন এবং স্বামীর অনুগত থাকেন; তিনি জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা হবে চাইলেই প্রবেশ করতে পারবেন। (সুনানে তিরমিজি)"
এপ্রসঙ্গে বলে রাখি-
[{রমজানে রজঃস্রাবের কারণে নারীরা তিন থেকে দশ দিন রোজা রাখতে পারেন না এবং নামাজও আদায় করতে পারেন না। অনুরূপভাবে নিফাস অবস্থায় অর্থাৎ সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালীন (সর্বোচ্চ ৪০ দিন) নামাজ ও রোজা পালন করতে পারেন না। এ সময়ের রোজাগুলো পরে আদায় করে নিতে হয়; কিন্তু এ সময়ের নামাজ আর আদায় করতে হয় না।
যেহেতু নিফাস বা প্রসবোত্তর স্রাবের সর্বনিম্ন কোনো সময় নেই; তাই স্রাব (রক্তক্ষরণ) বন্ধ হলেই নামাজ ও রোজা পালন শুরু করতে হবে (৪০ দিনের অপেক্ষায় থাকা যাবে না)।
অনেক নারী রোজা পালনের সুবিধার্থে ওষুধ খেয়ে রজঃস্রাব বন্ধ রাখেন। এটা যদি চিকিৎসকের পরামর্শমতে হয় এবং শারীরিক কোনো বড় ধরনের অসুবিধা না হয়; তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।
রোজা অবস্থায় রজঃস্রাব হলে ওই দিনের রোজা হবে না; কিন্তু রমজানের সম্মানে সেদিন ইফতার পর্যন্ত তার পানাহার থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। পরদিন থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রোজা রাখতে হবে না।
যাঁরা যেকোনো কারণে রোজা রাখতে পারেন না, তাঁরা রমজান মাসের রোজার সম্মানে ও রোজাদারদের সম্মানার্থে প্রকাশ্যে পানাহার থেকে বিরত থাকবেন।
কোনো নারী যদি রমজানের কোনো রাতে সাহরির সময় শেষ হওয়ার আগে স্রাব থেকে মুক্ত হন এবং যেকোনো কারণে গোসল করতে না পারেন; তাহলে সাহরি খেয়ে রোজা শুরু করবেন, পরে গোসল করে নামাজ আদায় করবেন।
অনেকে গতবাধা নিয়ত করেন। রোজার নিয়ত মুখে গতবাধা কোন কিছু বলার কোন হাদিস নেই, এখানে নিয়ত বলতে মনে মনে আপনি যে সংকল্প করলেন রোজা রাখার সেটা বুঝানো হয়েছে। তাইবলে ঘুম থেকে উঠে সেহরী খেয়ে আবার ঘুমাতে গেলেন ব্যপারটা কিন্তু তেমনও না। মনে মনে আল্লাহকে বলবেন- আপনি তার সন্তষ্টির জন্য রোজা রাখার ইচ্ছা পোষন করছেন এবং আল্লাহ যেন আপনাকে রোজা সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দেন এবং আপনার রোজা কবুল করে নেন, আমীন}]
মহামারীতে আজ মানবসমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কে কাল বেচেঁ থাকবো আর কে থাকবো না তা কেউ বলতে পারবেনা। আমাদের সামনে একটি বিরাট সুযোগ এসেছে সেটা হলো এই রমজান মাস। আমরা যারাই এই রমজান মাসটি পাবো, ইনশাল্লাহ রোজা রাখবো আর বেশী বেশী দোয়া করবো। যারা আগে কখনও রোজা রাখেননি তাদের হয়তো প্রথম ৩ থেকে ৪ দিন একটু কষ্ট হবে মানষিকভাবে, কিন্তু তারপর আমি কথা দিচ্ছি, আপনি এটার স্বাদ ও তৃপ্তি পাওয়া শুরু করবেন এবং আফসোস করবেন যে, কতই না সুযোগ আপনি না জেনে নষ্ট করেছেন এই রোজা না রাখার কারনে। এমনকি অসুস্থরাও রাখবেন বা রাখতে চেষ্টা করবেন, রোজা তো মুলতঃ শারিরিক, মানষিক ও আত্ত্বিক সুস্থতা আনয়নের জন্যই। এতে উন্নতি ছাড়া ক্ষতি হবার কোন কারন নেই।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (বিফলে যায় না)। তাদের একজন হলেন- রোজাদার ব্যক্তি।
আসুন আমরা সবাই নিয়ত করি এই রমজান মাসটা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর। হয়তো এটাই আমাদের শেষ রমজান, শেষ সুযোগ।
"রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফির লানা যুনূবানা ওয়াক্বিনা আ'যাবান্নার।"
(হে আমাদের প্রভু! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিন এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন।)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৫০