একটি সাধারণ কোষ ক্যানসার কোষে রূপান্তরিত হওয়ার পূর্বে হঠাৎ অক্সিজেনশূণ্য (anaerobic) হয়ে পড়ে এবং তার প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজের দরকার পড়তে থাকে, যাকে অনেকটা গাজন প্রক্রিয়ার (fermentation) সাথে তুলনা করা যায়। ক্যানসারের একটি মূল কারণ হলো- আমাদের দেহ কোষের অক্সিজেনযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের (respiration) বদলে অক্সিজেনবিহীন শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হওয়া।
ডঃ জোহান্না বাডওইগ (Dr. Johanna Budwig, Ph.D.) । তিনি ছিলেন জার্মানীর স্বাস্থ্যবিভাগের একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী এবং পিএইচডি ডিগ্রীধারী একজন বায়োক্যামিষ্ট। এই ভদ্রমহিলা সারাজীবন অমানুষিক পরিশ্রম করে বিনা ঔষধে বিনা অপারেশানে বিনা রেডিয়েশানে ক্যানসার মুক্তির একটি সহজ পন্থা আবিষ্কার করে দিয়ে গেছেন।
তিনি জানলেন ফ্যাটি এসিড ক্যানসার নিরাময়ে কার্যকরভাবে সাহায্য করে কিন্তু অগণিত ফ্যাটি এসিডের মধ্যে ঠিক কোন ফ্যাটি এসিডটি এই কাজ করে এবং কিভাবে সেটি ক্যানসার নির্মূল করে তা তিনি জানতেন না। প্রায় দুই যুগের প্রাণান্ত গবেষণার মাধ্যমে তিনি এই অসাধ্য সাধন করে গেছেন।ক্যানসার নিয়ে বাডওইগের এই গবেষণার এক পর্যায়ে এভাবেই তিনি জানতে পারেন যে, কোষে অক্সিজেনের অভাবেই ক্যানসার আক্রমণ করে অর্থাৎ যে-সব কোষে অক্সিজেন পৌছেঁ না, সে-সব কোষই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। কাজেই ক্যানসারে আক্রান্ত কোষে কোন প্রকারে যদি অক্সিজেন পৌছাঁনো যায়, তবে সেটি ক্যানসার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে এবং পুণরায় স্বাভাবিক কোষে পরিণত হবে। এক একটি ফ্যাটি এসিড নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা করে বিশ বছরেরও বেশী সময় ব্যয় করে শেষ পর্যন্ত তিনি আবিষ্কার করেন যে, ওমেগা-৩ গ্রুপের ফ্যাটি এসিডগুলি (omega-3 fatty acids) কোষে অক্সিজেন পৌছাঁতে সাহায্য করে থাকে। এদের মধ্যে লিনোলিক এসিড (ALA-Alpha Linolenic Acid) নামক ফ্যাটি এসিডটি সবচেয়ে কার্যকর , যা তিসির তেলে (Flaxseed Oil) সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায়। তাছাড়া মাছের তেল, অলিভ অয়েল এবং অন্যান্য তেলের মধ্যেও পাওয়া যায়।
আমাদের প্রাত্যাহিক খাবারে ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ এমনিতেই কম থাকে। তার মধ্যেও যে-সব ফ্যাটি এসিড আমরা খেয়ে থাকি, তাদেরকে হয় উচ্চ তাপের সাহায্যে তৈরী করা হয়, অথবা তাদের সাথে কেমিক্যাল মিশানো হয় আর না হয় তাদেরকে দীর্ঘদিন গুদামে ফেলে রাখা হয়। ফলে এই ফ্যাটি এসিডগুলো প্রকৃতপক্ষে মৃত ; এরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ে কোন সাহায্য করতে পারে না।
ডঃ জোহান্না বাডওইগ তার গবেষণায় দেখতে পান যে, তাঁর খাবার মেনু অনুযায়ী চলা ক্যানসার রোগীদের মাত্র তিন মাসের মধ্যে উন্নতি শুরু হয়ে যায়। টিউমার ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে। এমন রোগীরাও তাঁর ডায়েট অনুসরণ করে দীর্ঘদিন সুস্থ ছিলেন যাদেরকে ডাক্তাররা “বাড়ি গিয়ে ভাল-মন্দ খেয়ে নিন” বলে হাসপাতাল থেকে বিদায় করে দিয়েছেন। ডঃ জোহান্না বাডওইগ মাঝে মাঝে হাসপাতাল থেকে মারাত্মক মারাত্মক ক্যানসার রোগীদেরকে বের করে নিয়ে আসতেন, যাদেরকে ডাক্তাররা বলতেন “আর মাত্র কয়েকদিন বাচঁতে পারে”, সে আর প্রস্রাব করতে পারবে না, সে আর পায়খানা করতে পারবে না। অনেকে শুকনা কাশি দিতে থাকতেন কিন্তু কফ বের করার মতো শক্তিও তাদের ছিল না। সবকিছু আটকে গেছে, ব্লক হয়ে গিয়েছিল। রোগীর আত্মীয়দের আনন্দের সীমা থাকত না যখন দেখা যেতো এমন রোগীদেরও শারীরিক অবস্থা হঠাৎ উন্নতির দিকে যাওয়া শুরু হয়েছে।
বাউওইগ ডায়েট কেবল নির্দিষ্ট কোন ক্যানসার নয় বরং সকল ধরনের ক্যানসার নির্মূল করতে পারে। এদের মধ্যে আছে স্তন ক্যানসার (breast cancer), ফুসফুসের ক্যানসার (lung cancer), ব্রেন ক্যানসার (brain cancer), প্রোস্টেট ক্যানসার (prostate cancer), হাড়ের ক্যানসার (Bone cancer), কারসিনোমা (Carcinoma), মূত্রথলির ক্যানসার (bladder cancer), জরায়ু ক্যানসার (uterine cancer), মুখগহ্বরের ক্যানসার (esophageal cancer), পাকস্থলীর ক্যানসার ( stomach cancer), ব্লাড ক্যানসার (Leukemia), গ্ল্যাণ্ডের ক্যানসার (Hodgkin's disease), চামড়ার ক্যানসার (skin cancer) ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাডওইগ ডায়েট কেবল ক্যানসার নয় ; বরং বাত-ব্যথা (Arthritis), হাঁপানি (Asthma), পেশীর ব্যথা (Fibromyalgia), বহুমূত্র (Diabetes), উচ্চ রক্তচাপ (Blood Pressure), মাল্টিপল স্ক্যালেরোসিস (Multiple sclerosis), হৃদরোগ (Heart Disease), সোরিয়াসিস (Psoriasis), একজিমা (Eczema), ব্রণ (Acne) প্রভৃতি জটিল রোগেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ডঃ বাডওইগ তার সারা জীবনের গবেষণা এবং চিকিৎসা অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি বই লিখে গেছেন (Flax Oil As a True Aid Against Arthritis, Heart Infarction, Cancer, and Other Diseases)।
অনেকে তিসির তেল (flaxseed oil) ক্যাপসুল আকারে খেয়ে ফেলেন, কিন্তু এটি তিসির তেল খাওয়ার আদর্শ পদ্ধতি নয়। কেননা কোন তেলই পানিতে দ্রবণীয় (water-soluble) নয় । আর পানিতে দ্রবীভূত না হলে সেটি শরীরে ঠিক মতো শোষিত হবে না এবং কাজও করবে না। একে পানিতে দ্রবীভূত করতে যে-সব সহযোগী উপাদান দরকার, তা হলো ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, বি ভিটামিনস ইত্যাদি। অবশেষে ডঃ বাডওইগ এই সমস্যারও সমাধান করেছেন। তিনি ঘরে তৈরী ছানার / পনিরের (cottage cheese) সাথে মিশিয়ে তিসির তেল খাওয়ার এক হাজার রেসিপি তৈরী করে দিয়ে গেছেন, যেগুলো খেতে দারুণ সুস্বাদু । আপনি ইচ্ছে করলে এর সাথে আরো মজার মজার অনেক জিনিস যোগ করে স্বাদে বৈচিত্র আনতে পারেন। ছানা / পনিরের মধ্যে থাকা সালফারড প্রোটিনের (sulfured protein) সাথে মিশে ফ্যাটি এসিডটি পানিতে দ্রবীভূত (water-soluble) হবে এবং ফলে এটি আপনার শরীরে শোষিত হবে এবং তারফলে আপনার শরীরের প্রতিটি কোষ তার বৈদ্যুতিক চার্জ ফিরে পাবে। ফলে সুস্থ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলির অনাহারে ভোগে ভোগে মারা যাবে।
Flaxseed Oil Cottage Cheese (FOCC) or quark recipe) তৈরী করার পদ্ধতিঃ- চায়ের চামচে ৩ চামচ তিসির তেলের সাথে ৬ চামচ ছানা / পনির/দই মিশিয়ে ব্লেন্ডারে এক মিনিট মিশাতে হবে। মিকচারটি যদি খুব আঠালো হয়, তবে তার সাথে দুই/তিন চামচ দুধ মিশাতে পারেন (ছাগলের দুধ হলে বেশী ভালো) । তারপরও যদি খেতে রুচি না হয়, তবে সাথে আম-জাম-কাঠাল-আনারস-আপেল-আঙুর-কমলা-কলা-মুলা-গাজর ইত্যাদি যে-কোন এক বা একাধিক ফল-মূল-শাক-সবজি ইত্যাদি মিশিয়ে আবার ব্লেন্ডারে জুস করে খেতে পারেন। এভাবে দৈনিক তিন থেকে চারবার খেতে হবে।
তিসির তেলকে অবশ্যই ফ্রিজের ভেতর অথবা ঠান্ডা তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। ভেজাল থেকে দূরে থাকার জন্য তিসির তেল না কিনে বরং তিসি কিনে নিজে ভাঙিয়ে তেল করে নিতে পারেন।
বাডওইগ ডায়েটের মূল শ্লোগান হলো – “খাবারকে বিকৃত না করে প্রভু যেভাবে সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেভাবেই খান ।”
এই জন্য রান্না করা খাবার যতটা সম্ভব বাদ দিতে হবে। কেননা আগুনের তাপে এবং সাথে বিভিন্ন ধরনের ঝাঁঝালো মশলা ব্যবহারের কারণে সে-সব খাবারের ৯৯% খাদ্যগুণ / ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়, এমনকি অনেকসময় বিষাক্ত উপাদানে পরিনত হয়।
দোকানের এবং কল-কারখানায় তৈরী খাবার (বোতলজাত, কৌটাজাত, প্যাকেটজাত খাবার) একেবারে বাদ দিতে হবে। কেননা এদের সাথে রং-গন্ধ-প্রিজারবেটিভ হিসাবে অনেক রকমের কেমিক্যাল মিশানো হয়, যেগুলো ক্যানসার সৃষ্টি করে থাকে। এমনকি কারখানায় তৈরী মিনারেল ওয়াটারও খাওয়া নিষিদ্ধ । কেননা তাতে ক্লোরিনসহ আরো অনেক রকমের ক্যামিকেল মিশানো হয় এবং রেডিয়েশান ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, ক্লোরিন এবং রেডিয়েশান ক্যানসার সৃষ্টি করে।
মনে করুন, আপনি কোন শাক-শব্জী খাবেন। তাহলে একে রান্না করে না খেয়ে বরং কাচাঁই ব্লেন্ডারে জুস বানিয়ে খান। যদি স্বাদ না লাগে তবে সাথে আপেল-কমলা-আঙুর-বেদেনা-তরমুজ-ভাঙ্গি-আম-কাঠাল-জাম্বুরা ইত্যাদি কোন একটি ফলমূল মিশিয়ে নিতে পারেন।
সরাসরি চিনি অথবা গুড় খাওয়া যাবে না, একেবারে নিষিদ্ধ। কেননা চিনি/গুড় শরীরের বায়োকেমিক্যাল পরিবেশ অম্লীয় (Acidic) করে ফেলে এবং শরীরের অম্লীয় অবস্থা ক্যানসার সৃষ্টিতে এবং ক্যানসার ছড়াতে বিরাট সাহায্য করে। কাজেই মিষ্টি খাওয়ার প্রয়োজন হলে আম, কাঠাল, আপেল, আঙুর ইত্যাদি মিষ্টি ফলগুলি দিয়ে তার প্রয়োজন সারতে হবে (এবং তাহাও পরিমাণে যত কম হয় ততই মঙ্গল)।
গোশত-ডিম-ঘি ইত্যাদি প্রাণীজ খাবার বর্জন করতে হবে। কেননা এগুলো উপকারের চাইতে ক্ষতি করে অনেক অনেক গুণ বেশী।
চা বা কফি খাওয়া বর্জন করতে হবে ; কেননা এগুলো বিষাক্ত ক্ষতিকর পানীয়।
সামুদ্রিক খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। চিংড়ি মাছ এবং চিংড়ি মাছের (কাকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদি)মতো শক্ত খোলস বিশিষ্ট সকল মাছ / প্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ।
সকল প্রকার মশার ঔষধ, তেলাপোকার ঔষধ, কমদামী সাবান, ডিটারজেন্ট, ফ্লোরাইড টুথপেষ্ট, শ্যাম্পু, এমনকি কসমেটিকস নামে যত কেমিক্যাল প্রোডাক্টস আছে, এগুলোর স্পর্শ থেকে সারা জীবনের জন্য দূরে থাকতে হবে। কেননা এগুলোর সবই ক্যানসার সৃষ্টি করে থাকে।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন নিষিদ্ধ।
এলুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিল নিষিদ্ধ। তার বদলে যতটা সম্ভব স্টিলের, সিরামিকের, গ্লাসের, মাটির বা লোহার হাড়ি-পাতিল-থালা-বাসন-কাপ-পিরিজ ব্যবহার করতে হবে।
আইসক্রিম এবং দুগ্ধজাত খাবার বাদ দিতে হবে।
(এছাড়া আধুনিক যুগের সকল প্রকার যন্ত্র (মোবাইল-টিভি-কম্পিউটার) ইত্যাদি ক্যানসারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম। এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান, মেমোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষা ঘনঘন করলে ক্যান্সার হবার ঝুকি বেড়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি, আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠা পর্যন্ত সারাক্ষনই বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রাদির ভিতর বসবাস করি। যার বেশীর ভাগই অনিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এইজন্য ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ সহ নানাবিধ অসুখে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছি।
এই ফাঁকে আর একটা বিষয় না বলে পারছি না- ক্যান্সার নির্ণয়ের একটি বহুল ব্যবহৃত পরীক্ষা পদ্ধতির নাম হলো বায়োপসী (biopsy), যাতে টিউমারের ভেতরে সুই ঢুকিয়ে কিছু মাংস ছিড়ে এনে মাইক্রোষ্কোপের নীচে রেখে পরীক্ষা করা হয়, তাতে ক্যান্সার কোষ উপস্থিত আছে কিনা। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, এভাবে টিউমারকে ছিদ্র করার কারণে সেই ছিদ্র দিয়ে ক্যান্সার কোষ বেরিয়ে দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ক্যানসার রোগীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায় এবং তাদেরকে বাচাঁনো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেননা টিউমারগুলো আসলে ক্যান্সার নামক এই ভয়ঙ্কর বিষাক্ত পদার্থকে চারদিক থেকে গ্রেফতার করে, বন্দি করে রাখে। ইহা হলো ক্যানসারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য শরীরের একটি নিজস্ব প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে ইহারা সহজে সারা শরীরে ছড়াতে পারে না। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ছিদ্র করে তাদেরকে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। অনেক ক্যানসারের রোগী বায়োপসী পরীক্ষার পরপরেই দ্রুত আক্রান্ত হয়ে কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। তাছাড়া এই বায়োপসীতে ক্যানসার নির্ণয়ের ১০০% নিশ্চয়তা নাই। প্রায়ই মিথ্যা পজিটিভ অথবা ভুয়া নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
আর কেমোথেরাপি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা(Immune System) প্রায় ধ্বংশ করে দেয়। কেমোথেরাপীতে ১৫% রোগীও সুস্থ্য হয় কিনা সন্দেহ আবার কেমোথেরাপীর পর অনেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ী আসার কিছুদিন পরেই মারা যান, এমন ঘটনাও ভুড়িভুড়ি)।
ডঃ বাডওইগ তাঁর এই ফরমুলার সাথে অন্যকোন ধরনের চিকিৎসা চালাতে নিষেধ করে দিয়েছেন। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ৫ মিনিট হোক ১০ মিনিট হোক সূর্যরশ্মি / রৌদ্র শরীরে নিতে হবে। কারণ সূর্যের সাথে মানুষের এবং গাছপালার বেড়ে ওঠার এবং সুস্থ থাকার একটি আবশ্যকীয় সম্পর্ক আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, চামড়ায় তেল দিয়ে সূর্যরশ্মি নিলে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরী হয়, যা ক্যানসার প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
মানুষের জীবনটা আসলে একটি বিদ্যুতের খেলা। আর আমাদের হৃদপিন্ডটি হলো প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (Power station) । হার্টে লোডশেডিং হলে বৈদ্যুতিক ব্যাটারী (pacemaker) লাগিয়ে দেন। চীন দেশের ডাক্তাররা চার হাজার বছর আগেই এই ব্যাপারে ঈঙ্গিত করে গেছেন। আর হোমিওপ্যাথির জনক ডাঃ হ্যানিম্যান দুইশত বছর পূর্বে বিষয়টি হাতে-কলমে প্রমাণ করে গেছেন যে, মানুষের রোগ হওয়ার মূল কারণ হলো তার শরীরের বৈদ্যুতিক লেবেল বা এনার্জি লেবেলে গোলমাল হওয়া। ডঃ বাডওইগের মতে, আমাদের কোষ যখন তার বৈদ্যুতিক চার্জ হারায়, তখন সেটি অক্সিজেন গ্রহনে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং ক্যানসার আক্রান্ত হয়। ডঃ বাডওইগের মতে, কেমোথেরাপী (chemotherapy) এবং রেডিয়েশান (radiation) সুস্থ কোষের বৈদু্তিক প্রবাহ (energy flow) ধ্বংস করার মাধ্যমে তাদেরকে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া উপযুক্ত (ripe for cancer) করে তোলে। এতে উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী। তার মতে, আমাদেরকে সুস্থ কোষগুলির যত্ম নিতে হবে যাতে তারা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার দিকে না যেতে পারে। তাহলে এই সুস্থ কোষগুলিই ধীরে ধীরে ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিকে নির্মূল করে দিতে সক্ষম হবে।
এলোপ্যাথিক ক্যানসারের ঔষধ প্রস্তুতকারী বহুজাতিক কোম্পানীগুলি ডঃ বাডওইগকে প্রস্তাব দিয়েছিল, তিনি যেন কেমোথেরাপী, অপারেশান এবং রেডিয়েশানের সাথে তার আবিষ্কৃত প্রোটোকল মেনে চলার জন্য ক্যানসার রোগীদেরকে পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাবে রাজী হন নাই। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, তার খাবার ফরমুলা মেনে চললেই যে-কোন লোক যে-কোন ধরনের ক্যানসার, টিউমার থেকে মুক্তি পাবেন। সাথে কোন কেমোথেরাপী, অপারেশান, রেডিয়েশান ইত্যাদির প্রয়োজন হবে না । আসলে ক্যানসারের প্রচলিত এলোপ্যাথিক চিকিৎসা যেহেতু হাজার হাজার কোটি ডলারের বিরাট লাভজনক ব্যবসা, তাই এর বিরুদ্ধে কিছু বললে বা লিখলে মামলা এবং জেল-জরিমানার ঝুঁকি আছে। ডঃ বাডওইগের জীবনেও তেমনি ঘটনা ঘটেছিল। তিনি তাদেরকে একবার এভাবে আক্রমণ করেছিলেন যে, “টিউমারের সমস্যাকে স্রেফ মাত্রাতিরিক্ত মাংস বৃদ্ধির সমস্যা মনে করা ঠিক না এবং ফলস্রুতিতে মাংসবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সকল উপায় এবং উপকরণ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া।” ফলে জার্মানীর কেমোথেরাপি ঔষধ কোম্পানীগুলির লোকেরা ভাবলেন, এই মহিলাকে তার প্রচারণা চালাতে দিলে নিজেদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে তারা ডঃ বাডওইগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিল। আদালত দুই পক্ষের তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করে ডঃ বাডওইগের পক্ষে রায় দিয়ে বললেন, “এই ভদ্রমহিলার কাজের বিঘ্ন সৃষ্টি করবেন না।”
অনেকে বলেন-চক্রান্তের কারণে সাতবার নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েও নোবেল পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
যারা ডঃ বাডওইগের ল্যাবরেটরী এবং ক্লিনিক্যাল গবেষনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী, তারা এই লিংকগুলিতে একটু ঢু মারতে পারেন। http://www.budwigcenter.com/ এবং http://www.healingcancernaturally.com/
যাইহোক, লাইফ স্টাইল ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক কঠিন কঠিন রোগই নিরাময় করা সম্ভব, এটা প্রমানিত এবং হাজার হাজার উদাহরন আপনার আশেপাশেই পাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩০